https://www.brandellaltd.com/

শেষ হলো ৮ম বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স

শেষ হলো ৮ম বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স শেষ হলো ৮ম বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স
 
বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স (বিডিসিগ): টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট শিল্পে দক্ষ ও যুগোপযুগী জনবল, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্নেন্স (বিডিসিগ) যাত্রা শুরু করে। 

ফলস্বরূপ টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট শিল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আটটি ব্যাচে ৬০২ জন মানবসম্পদ তৈরি করে।

এর মধ্যে ৬৯ ভাগ পুরুষ ও ৩১ ভাগ নারী এই প্রক্রিয়ায় ১৫৫ জন সরকারী, বেসরকারীখাত, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, শিক্ষাবিদ, নীতি বিশেষজ্ঞ, রিসোর্স পারসন এবং নীতি নির্ধারক প্রশিক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। 

২৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বদ্যিালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদে শুরু হয় বাংলাদেশ স্কুল অফ ইন্টারনেট গভর্নেন্স (বিডিসিগ) এর ৮ম স্কুলিং।

এবারের স্কুলে অংশ নিয়েছেন ৮২ জন ফেলো। তিনদিন মেয়াদী এই ক্লাসে ইন্টারনেট প্রশাসনের আদ্যোপান্ত যেমন গভর্নেন্স, ইন্টারনেট গভর্নেন্স ও ডিজিটাল গভর্নেন্স, ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ডিএনএস ও ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম এবং বিগ ডাটা বিষয়ে হাতে কলমে শিখেছেন নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা।

তাছাড়া সমাপণী দিবসে নিরাপদ ইন্টারনেট, প্রযুক্তি ও আইন বিশেষ করে এআই পলিসি আইন, তথ্য বা উপাত্ত সংরক্ষণ আইন, টেলিকম আইন, ই-কমার্স আইন, স্মার্ট বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার জন্য আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত জানান বিআইজিএফ সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হক অনু, সেশন পরিচালনা করেন রেহান উদ্দিন আহমেদ রাজু।

গভর্নেন্স, ইন্টারনেট গভর্নেন্স ও ডিজিটাল গভর্নেন্স নিয়ে আলোচনা করেন এএইচএম বজলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী বিএনএনআরসি ও ভাইস চেয়ারপারসন, বিআইজিএফ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা করেন বুয়েটের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের লেকচারার আব্দুর রশীদ তুষার, ইন্টারনেট অব থিংস নিয়ে আলোচনা করেন প্রফেসর ড. এ বি এম আলীম আল ইসলাম।

এর পর ব্যবহারিক ক্লাসে ডেমনস্ট্রেশন করে বিষয়গুলো দেখানো হয়। দ্বিতীয় দিনে ইনটারন্যাশনাল ফেলোশীপ নিয়ে আলোচনা করেন বিডিসিগ সেক্রেটারি জেনারেল আশরাফুর রহমান পিয়াস, ডিএনএস ও ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান এবং শেষ সেশেনে বিগডাটা নিয়ে আলোচনা করেন বুয়েটের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের লেকচারার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।

এর পর ব্যবহারিক ক্লাসে ডেমনস্ট্রেশন করে বিষয়গুলো দেখানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা বিশেষ করে নিরাপদ ইন্টারনেট, প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট আইন, এআই পলিসি ও আইন, ডাটা প্রোটেকশন, ই-কমার্স এর মতো বিষয়ে আলোচনা এবং পরবর্তীতে কিভাবে আরো উত্তরোত্তর উন্নয়ন সম্ভব সে বিষয়ে আলোচানা হয়।  

সমাপণী দিবসের প্রথম অধিবেশনে নিরাপদ ইন্টারনেট সেশনে সভাপতিত্ব করেন অপরাজিতা হক, এমপি, তিনি বলেন, সাইবার স্পেসে নারী ও শিশুদের নিরপাত্তার ওপর জোর দেন এবং বলেন সাইবার নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।

ভুল তথ্য থেকে সুরক্ষা ও প্রতিরোধে সবার ভূমিকা রয়েছে। বিধি-বিধান প্রণয়নের দায়িত্ব সরকারের। তবে সেগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সকল স্টেকহোল্ডারের।

একজন আইন প্রণেতা হিসেবে তিনি এ বিষয়গুলো নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে যেতে প্রযোজনীয় সহযোগিতা করবেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  মোহাম্মদ খলিল উর রহমান, এনডিসি, পিএসই, টিই, মহাপরিচালক, সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগ, বিটিআরসি। 

আইন ও প্রযুক্তি শীর্ষক সেশনে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ আমিনুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান, বিটিআরসি, তিনি বলেন প্রযুক্তি আইন মেধা সম্পত্তি, ডেটা গোপনীয়তা, সাইবার নিরাপত্তা, এবং ই-কমার্স সহ উন্নত প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত একাধিক আইনি বিষয় কভার করে।

এটি প্রয়োজনীয় কারণ এটি ব্যক্তি এবং উদ্যোগের স্বার্থ এবং অধিকার রক্ষা করার সময় প্রযুক্তি ডিজাইন এবং ব্যবহারের জন্য একটি কাঠামো সরবরাহ করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল অনুষদের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইমুম রেজা তালুকদার।
স্মার্ট বাংলাদেশ শীর্ষক সেশনে সভাপতিত্ব করেন, প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, কমিশনার, বিটিআরসি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার সফলভাবে বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ এখন নতুন কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছেন।

স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর গড়ে উঠবে ২০৪১ সাল একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মোঃ শাহরিয়ার হাসান জিসান। ডিজিটাল ডিভাইড শূন্যে নিয়ে আসা শীর্ষক সমাপনী অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল উর রহমান, এনডিসি, পিএসই, টিই, মহাপরিচালক সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস বিভাগ, তিনি বলেন বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন, টেলিযোগাযোগের সম্প্রসারণ, মোবাইল প্রযুক্তি এবং প্রত্যন্ত, উপকূলীয় অঞ্চলে ইন্টারনেট-ভিত্তিক ডিজিটাল ডাক পরিষেবার প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করছে।

হাওর ও পার্বত্য এলাকা, দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক প্রকল্প, হাওর ও দ্বীপসমুহে হাই-স্পিড মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, হাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। 

বিটিআরসি ও প্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, সিটিও ফাইবার এট হোম বলেন, ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যে রূপকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

তবে জনগণের অধিকারের বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হবে, কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দীন আহমেদ, তিনি বলেন বাংলাদেশ টুজি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশের পর গত দুই দশকে দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজের আওতায় এসেছে।

বিটিআরসি কর্তৃক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য সেবা চালু হওয়ার কারণে শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেটের দামের বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।

ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণের পাশাপাশি সকলের জন্য স্মার্ট ডিভাইসের সহজলভ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায় ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে বিটিআরসি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস এবং ডাটামূল্যের সহজলভ্যতা, ডিজিটাল অবকাঠামো বিনির্মাণের ওপর গুরুত্বরোপ করেন তিনি।

টেকসই ইন্টারনেট সুবিধা, ইন্টারনেটের অর্থবহ ব্যবহার জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উন্নযনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এখনো অনেকে ইন্টারনেট সেবার বাইরে আছে।

তাদেরকেও এর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নারী-পুরুষ, ধনি-গরীব প্রত্যেক নাগরিকের কাছে হাইস্পিড, আন-ইন্টারাপ্টেড ও কোয়ালিটিফুল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে হবে। 

সমাপণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী, বিআইজিএফ চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন ইন্টারনেট আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তবে ইন্টারনেট সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়া উচিত এবং সবার জন্য সমানভাবে তা নিশ্চিত করা উচিত।

ডিজিটাল ব্যবধান কমাতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সম্ভব হলে ডিজিটাল ডিভাইড এর মূল্য কমাতে হবে। আমাদের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে অন্যান্য ডিভাইস সবার জন্য সহজলভ্য করা উচিত।

সবার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি জরুরি বিষয়। জনসাধারণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের হার প্রদানের জন্য টেলিকম কোম্পানিগুলির জন্য ভ্যাট এবং ট্যাক্স হ্রাস করুন।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বিভক্তি দুর করতে হলে সামাজিক বৈষম্য, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক সময়ের সাথে খাপ খাওয়াতে হলে যুবশক্তিকে শতভাগ প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। পুরো স্কুল সঞ্চালনায় বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু।

স্কুল পরিচালনায় আরো দায়িত্ব পালন করছেন বিডিসিগ সেক্রেটারি জেনারেল আশরাফুর রহমান পিয়াস, ভাইস চেয়ার নাজমুল হাসান মজুমদার ও ফেলোশীপ কমিটির সভাপতি ইকবাল আহমেদ।

ডিজিটাল বৈষম্য শুন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার নিয়ে সাজানো কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বহুপক্ষীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় শেষ হয় এই স্কুল। 

অনুষ্ঠান শেষে ফেলোদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরী কমিশন ও বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম এর যৌথ উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী ৮মবিডিসিগ অনুষ্ঠিত হলো।







০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।