https://gocon.live/

প্রযুক্তি

অল্টার-ইগো জানিয়ে দেবে আপনার না বলা ভাবনা

অল্টার-ইগো জানিয়ে দেবে আপনার না বলা ভাবনা অল্টার-ইগো জানিয়ে দেবে আপনার না বলা ভাবনা
 

অল্টার-ইগো জানিয়ে দেবে আপনার না বলা ভাবনা


এডওয়ার্ড কলিন তার বন্ধুদের কিংবা শিক্ষকের মনের কথা বলে দিতে পারে। সে বন্ধু বা শিক্ষক ক্লাসেই থাকুন কিংবা তার স্কুলের কেন্টিনে। এডওয়ার্ডের রয়েছে সেই বিশেষ ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবলে এডওয়ার্ড বলে দিতে পারে অন্যরা কী ভাবছে।


অপরদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক অর্ণব কাপুর দাবি করেছেন, তিনি তৈরি করেছেন এমনই একটি মাইন্ড রিডিং টুল। তবে এই মাইন্ড-সেট কাজ করে কিছুটা আলাদাভাবে। আসলে এডওয়ার্ড হচ্ছে ‘টুইলাইট’ চলচ্চিত্রের নায়ক। আর অর্ণব কাপুর হচ্ছেন এমআইটির একজন গবেষক ছাত্র।


অর্ণব দাবি করেছেন, তার তৈরি যন্ত্র একজনের মাথায় যেসব শব্দ ঘোরাফেরা করে, সেগুলো উচ্চারিত না হলেও পড়তে পারে। এই যন্ত্র কাজ করে কমপিউটারের সাথে। এই যন্ত্রের নাম Alter-ego। অর্ণব জানিয়েছেন, এই যন্ত্র সেই শব্দগুলো বুঝতে পারে, যেগুলো আমরা ভাবি, যদিও সে ভাবনা মুখে উচ্চারণ করি না। সোজা কথায়, এই যন্ত্র মানুষের না বলা কথা বুঝতে পারে। যন্ত্রটি ভোবেই সাড়া দেবে। আপনার চোয়াল নড়বে না, তবে আপনার ভাবনার শব্দগুলো ধরা পড়বে ওই যন্ত্রে। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে? এই সাদা যন্ত্রটি লাগানো থাকবে ঘাড়ের পেছন দিকে মাথার সাথে। যন্ত্রটির সাতটি পয়েন্ট স্পর্শ করে চোয়ালসহ মুখে। যখন স্নায়ুর সিগন্যাল চোয়ালে পৌঁছে, তখন এই সিগন্যাল এটি মুহূর্তেই পড়তে পারে। কিন্তু ‘Alter-ego’ শিখে নিয়েছে কিছু শব্দ পড়তে বা বুঝতে। এই শব্দগুলো ব্যবহার করে মস্তিষ্ক যে নির্দেশনা দেয়, যন্ত্রটি তা পর্যবেক্ষণ করবে।


যন্ত্রটির রয়েছে একজোড়া হেডফোন। এই হেডফোন মনের ভাবনা কানের ভেতর ভাগের হাড়ের মাধ্যমে বহন করে নিয়ে যায়। কানের বাহ্যিক শ্রবণ-কুহর তথা এক্সটার্নাল অডিটারিক্যানেল বা এয়ার ক্যানেল এখানে ব্যবহার করা হয় না। এর ফলে মুখমণ্ডলের কোনো পরিবর্তন হয় না। শরীরের ওপরও এর কোনো ছাপ পড়ে না। যন্ত্রটি অনেকটা নীরবে সাড়া দেয়।


আসলে কী এই যন্ত্রটি? এই বিজ্ঞানীর দাবি, এখন এই যন্ত্রটিকে জিজ্ঞাসা করলে সময় বলে দিতে পারে। কোনো মুদি দোকানের বিল তৈরি করতে বলুন, তা করে দিতে পারবে। আপাতত এসব কাজই করতে পারে এই যন্ত্র। কারণ, এই যন্ত্রটিকে মাত্র ২০টি শব্দ শেখানো হয়েছে। যদি আরো বেশি শব্দ শেখানো যেতে পারে, তবে আরো প্রচুর কাজ করতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে এই যন্ত্রের এ দাবি অর্ণবের। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণার মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি। কিন্তু ফল পেয়েছি খুবই ভালো। আশা করছি, একদিন আমরা সব শব্দ ‘অল্টারইগো’র কাছে পৌঁছাতে পারব।


বিচিত্র এই মাইন্ড-রিডিং হেডসেট নীরবে আপনার কমপিউটারে টাইপ করবে আপনার ভাবনা, ৯০ শতাংশ সঠিক ভাবে। এই হেডসেট ব্যবহারকারীর ভাবনার ব্যাখ্যা তুলে ধরে এর ব্যবহারকারীকে করবে সুপারপাওয়ারসম্পন্ন। যখন কেউ কোনো কিছু বলার কথা ভাবে, তখন মস্তিষ্ক সিগন্যাল পাঠায়। যন্ত্রটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি সেন্সর। এই সেন্সরগুলো হলো চোয়াল, থুতনির সাতটি মুখ্য এলাকা থেকে সিগন্যাল তুলে আনে। ‘নিউরোলিঙ্ক’-এর মতো অন্যান্য কোম্পানি তৈরি করছে কমপিউটার- ব্রেন ইন্টারফেস।


একটি নতুন মাইন্ড-রিডিং ডিভাইসের অর্থ হচ্ছে, মানুষ শুধু ভাবনাকে ব্যবহার করেই নীরবে তাদের কমপিউটারে টাইপ করতে পারবে ভাবনা আর তা ৯০ শতাংশই সঠিক। ‘Ok Google  or Hey Siri’ বলে স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগ করার পরিবর্তে এই হেডসেট নীরবে ইন্টারপ্রিট করবে ব্যবহারকারী কী ভাবছে তা। এই সিস্টেমটিতে রয়েছে একটি ওয়্যারেবল ডিভাইস, যা সংযুক্ত একটি কমপিউটার সিস্টেমের সাথে। আর কমপিউটার সিস্টেমটি সরসরি সংযুক্ত এমন একটি প্রোগ্রামের সাথে, যা গুগলকে কুয়েরি করতে পারে। ডিভাইসটিতে থাকা ইলেকট্রোডগুলো চোয়াল ও মুখমণ্ডলে তুলে আনে নিউরোমাসকুলার সিগন্যাল। আর এসব সিগন্যাল ছোড়া হয় যখন কোনো মানুষ শব্দ নীরবে উচ্চারণ করে তাদের মাথার ভেতরে। এই সিগন্যাল পাঠানো হয় একটি মেশিন-লার্নিং সিস্টেমে। আর এই মেশিন-লার্নিং সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে সিগন্যালবিশেষের সাথে শব্দ-বিশেষের সম্পর্ক গড়ে তুলতে।


অর্ণব কাপুর বলেন, আসলে আমরা কাজ করছিলাম একটি আইএ ডিভাইস তথা ‘ইন্টেলিজেন্স-অগমেন্টেড ডিভাইস’ তৈরির জন্য। আমাদের ধারণা ছিল ‘আমরা কি এমন একটি কমপিউটার প্ল্যাটফরম পেতে পারি, যা হবে আরো বেশি ইন্টারন্যাল, মানুষ ও যন্ত্রকে কোনো উপায়ে একসাথে করে আমাদের নিজস্ব স্বীকারোক্তির.ইন্টারন্যাল এক্সটেনশন করা যায় কি না?’


গবেষণার শুরুতেই গবেষকেরা জানতে পারেন, মুখমণ্ডলের কোন অংশটি নিউরোমাসকুলার সিগন্যালের জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। এরা এ কাজটি করেন ১৬টি ভিন্ন ইলেকট্রোড দিয়ে চারবার মানুষের একই ধারার শব্দগুলোকে মুখের বিভিন্ন অংশে সাবভোকেলাইজড করে। এরা দেখতে পান, মুখের সাতটি সুনির্দিষ্ট স্থানে অব্যাহতভাবে সাবভোকেলাইজড শব্দগুলোর পার্থক্য ধরা যায়। এই তথ্য ব্যবহার করে এমআইটির গবেষকেরা সৃষ্টি করেন একটি প্রটোটাইপ, যা ঘাড়ের পেছনে টেলিফোন হ্যান্ডসেটের মতো লাগানো হয়। এটি হচ্ছে আমাদের আলোচ্য মাইন্ড-রিডিং ডিভাইস।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কত তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের মনের ভাবনাকে কমপিউটারে আপলোড করতে পারব। ফিউচারিস্ট, সায়েন্টিস্ট ও সায়েন্স ফিকশন লেখকেরা ব্রেন ও মেমরি সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। অনেকে বলেন, এটি ‘ট্রান্স হিউম্যানিজম’ ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। ট্রান্স হিউম্যানিজম হচ্ছে একটি বিশ্বাসের নাম। এ বিশ্বাস মতে, মানবদেহ এর বর্তমান পর্যায়ের ওপরে উঠতে পাওে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মাইন্ড আপলোডিংয়ের অনুশীলন করেছেন অনেকেই। এদের মধ্যে আছেন গুগলের প্রকৌশলবিষয়ক পরিচালক রে খুরজিইল। তার বিশ্বাস, ২০৪৫ সালের মধ্যে আমাদের পুরো মস্তিষ্কটা আমরা কমপিউটারে আপলোড করতে পারব। একই ধরনের প্রযুক্তি চিত্রিত করা হয়েছে অনেক সায়েন্স ফিকশন ড্রামায়। নেটফ্লিস্কের ‘অল্টারড কার্বন’ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’ পর্যন্ত অনেক সায়েন্স ফিকশনে আমরা তা দেখতে পাই। আরেকজন সুপরিচিত ফিউচারিস্ট হচ্ছেন ড. মিচিও কাকু। তার বিশ্বাস, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে আপনি আপনার মৃত প্রিয়জনের ব্যক্তিত্ব ও স্মৃতিও জীবিত রাখতে পারবেন।


মানুষের মস্তিষ্ক কী করে সংরক্ষণ করা যায়, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানী ও ভবিষ্যদ্বাদীদের রয়েছে বিভিন্ন তত্ত্ব। তাদের ভাবনার বিষয় কী করে আমাদের স্মৃতি কমপিউটারে আপলোড করা যায়, কী করে স্মৃতিকে হাজার হাজার বছর টিকিয়ে রাখা যায়। সে ধরনেরই এক ভাবনার ফসল অর্ণব কাপুরের আলোচ্য মান পাঠক যন্ত্রটি।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।