https://powerinai.com/

প্রযুক্তি

জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির প্রবেশ

জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির প্রবেশ জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির প্রবেশ
 

সভ্যতার সূচনাকাল থেকে আধুনিক যুগের প্রারম্ভ পর্যন্ত সভ্যতার অগ্রগতিতে যে স্থির ও মন্থর গতিময়তা ছিল, অগ্রগতির সেই সংজ্ঞা সম্পূর্ণ বদলে যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে। প্রযুক্তি হলো মানব সমাজের ওপর বিজ্ঞানের সেই আশীর্বাদ যাকে রূপকথার প্রদীপের দৈত্যের মতো কাজে লাগিয়ে অতি সহজেই অত্যন্ত কঠিন কাজ সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে।


বর্তমান যুগে প্রযুক্তি ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির চরিত্রগত তালিকা বহুমুখী ও দীর্ঘ হয়েছে। এই তালিকায় সম্ভবত সবচেয়ে বৈপ্লবিক সংযোজনটি হলো তথ্যপ্রযুক্তি।


সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য বিশ্বনবী বিস্তারিত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা বিকল হয়ে গেলে পৃথিবী যে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রযুক্তির ওপর আধুনিক সভ্যতার এহেন নির্ভরতা প্রযুক্তিকে অচিরেই বর্তমান যুগের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।


মানুষের জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্যায় থেকেই। এই সময় থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে মানবশক্তির ওপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করে যন্ত্রশক্তির ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। এই নির্ভরশীলতার দরুন বিশ্বজুড়ে একদিকে কাজে যেমন অভূতপূর্ব গতি আসে, অন্যদিকে কাজ নির্ভুলভাবে সম্পাদিত হতে থাকে। এই দুইয়ের সংযোজনে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অগ্রগামী দেশগুলো অতি দ্রুত আর্থ-সামাজিকভাবে বিশ্বে এগিয়ে যেতে থাকে।


সময় যতই এগোয়, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির মহিমা সম্প্রসারিত হয় এবং মানবজীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটতে থাকে। গত শতকের সত্তরের দশক নাগাদ বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে এই প্রবেশ আরো দ্রুতগতিতে হয়। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে আমরা আমাদের জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে প্রযুক্তি, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ করি না।


ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ


আমাদের রাজনৈতিক তথা আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগের কথা সর্বজনবিদিত। তবে এই প্রযুক্তির সবচেয়ে অধিক এবং বহুমুখী প্রয়োগ দেখা যায় আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন দানের দ্বারা পূর্ণ হয়ে আছে। বর্তমানে ঘরে বসে আঙুলের একটি মাত্র ছোঁয়ায় আমরা জানতে পারি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো তথ্য।


দূরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা বর্তমানে আর আগের মতো সময়সাপেক্ষ নয়। আজ পৃথিবীর প্রান্তিক কোনো অংশে উপস্থিত ব্যক্তির সাথে মুখোমুখি কথা বলা সম্ভব এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিরই সাহায্যে। আজ এর সাহায্যে আমরা সংরক্ষণ করে রাখতে পারি ব্যক্তিগত জীবনের মূল্যবান তথ্যাবলি। জ্ঞান অর্জনও তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদে আজ আর আগের মতো পরিশ্রমসাধ্য নেই।


বিশ্বমানের জ্ঞান ইচ্ছে মতো আঙুলের একটি ছোঁয়াতে হাজির হতে পারে আমাদের ঘরের আঙিনায়। তাছাড়া আধুনিক যুগে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মুহূর্তের মধ্যে আমাদের ব্যক্তিগত তথা অধিবিদ্যাগত জীবনে সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান মুহূর্তের মধ্যে করে দিচ্ছে।


ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব


আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব এককথায় অপরিসীম বা বর্ণনার অতীত। দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগের ফলে মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা অত্যন্ত কম সময়ের ব্যবধানে আমূল বদলে যেতে শুরু করেছে। আজ থেকে মাত্র কুড়ি বছর আগে যা চিন্তা করাও একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব হতো না বর্তমানে মানুষ তা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করছে।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানুষের কাছে উন্মোচিত করছে এক অনন্ত সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের পথ। এর ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে প্রতিনিয়ত। এইভাবে একদিকে যেমন তথ্যপ্রযুক্তি অত্যন্ত সহজে বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পাদনের সুযোগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটাচ্ছে।


প্রযুক্তির ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার কুফল


এ পৃথিবীতে কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কারই পাশর্^প্রতিক্রিয়াহীন হতে পারে না। প্রযুক্তিও তার ব্যতিক্রম নয়। মানুষের জীবনে যুগান্তকারী নানা পরিবর্তন এনে দিলেও সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে প্রযুক্তির বিভিন্ন কুফল রয়েছে। প্রযুক্তির ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার ফলে বর্তমান যুগে স্বাভাবিক সামাজিক বন্ধন ক্ষুণ্ন হচ্ছে।


মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর অধিক নির্ভরতার ফলে হারিয়ে ফেলছে স্বাভাবিক মানবিক বুদ্ধিমত্তা। এছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই বিকাশ ঘটছে সমাজের নানা অন্ধকার দিকের। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই বিশ্বজুড়ে মানবসভ্যতার ধ্বংসযজ্ঞের নানা জঘন্য পরিকল্পনা রচিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নানা ভয়ংকর মারণাস্ত্র, যা পৃথিবীকে অচিরেই ঠেলে দিচ্ছে এক অতল অন্ধকার গহ্বরে।


উপসংহার


বিভিন্ন খারাপ প্রভাব থাকলেও মানবসভ্যতার ওপর প্রযুক্তি, বিশেষত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগান্তকারী প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না কোনোভাবেই। মানবসভ্যতা বর্তমানে যে উন্নতির শিখরগামী, তার বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে।


প্রযুক্তি মানুষের কাছে উন্মোচিত করেছে অচেনা এক আকর্ষণীয় জগতের সিংহ-দরজা। সেজন্যই আমাদের সকলকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে কীভাবে প্রযুক্তির সব কু-প্রভাবগুলোকে যথাসম্ভব এড়িয়ে একে মানবসভ্যতার উন্নতির মহাযজ্ঞে ব্যবহার করা যেতে পারে।









০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।