https://powerinai.com/

প্রযুক্তি

বৈষম্য নিরসনে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন

বৈষম্য নিরসনে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন বৈষম্য নিরসনে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন
 

বৈষম্য নিরসনে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন


মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ধনী ও গরিবের ব্যবধানও কমাতে হবে। করোনা মহামারির কারণে ধনী আরো ধনী হয়েছে এবং দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছে। ধনী, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্রের ব্যবধান শুধু বেড়েই চলছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি এ বিষয়টি নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে—এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।


দারিদ্র্য ও অসমতা বৃদ্ধির ফলে দেশে ও সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, তা কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। আর পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্য হ্রাসে দৃষ্টি দিতে হবে।


এই সমস্যা এখন প্রতিটি দেশের ও সারা বিশ্বের। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য গোটা বিশ্বকে আরো বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ ও বিল গেটসের মতো বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা আরো ধনী হচ্ছেন। পৃথিবীর ১০ ধনী ব্যক্তির মিলিত সম্পদ এই সময়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে। দৈনিক আয় বেড়েছে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার। অথচ মুদ্রার অন্য পিঠ দেখলে পৃথিবীর প্রায় ২০ কোটি মানুষ পড়ে গেছে নতুন গরিবের তালিকায়। বিশ্ব দেখছে এই চরম বৈষম্য। বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বাড়ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য ও পারিবারিক বৈষম্য। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের দূরত্বও বাড়ছে এসব কারণে।


অর্থনৈতিক বৈষম্যের সময় সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাবানদের জন্য কাঠামোগত নীতি বাছাই করা হয়। গরিব মানুষ, নারী আর জাতিগত বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষই এর ভুক্তভোগী। এই বৈষম্য রীতিমতো আপত্তিকর। এসব বৈষম্য হিংসাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, মানুষে মানুষে ব্যবধান বাড়িয়েছে এবং দূরত্বও বাড়াচ্ছে।


এরই মধ্যে আমাদের দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় আবার বেড়েছে। আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার বা দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা। গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ৫৯১ ডলার বা দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ২৩৩ ডলার। সরকারি হিসাবে মাথাপিছু আয় বাড়লেও এর সুফল সাধারণ মানুষ কতটা পাচ্ছে সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। করোনার কারণে দুই বছরে বেশির ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে বলে জানা যায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে।


ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগব্যয় কমাতে হচ্ছে। এদিকে সাধারণ মানুষ কষ্টে থাকলেও দেশে ধনীর অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে কোটিপতির সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে—এগুলো আশা-জাগানিয়া ও ইতিবাচক বিষয়। সেই সঙ্গে ধনী-গরিবের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে, সে বিষয়েও কাজ করতে হবে।


বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে অনেক ভালো করছে, তবে সেগুলো আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি—সব কিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা, চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বাংলাদেশ দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল, সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত ও আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলায়-অযত্নে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে।


সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ, দপ্তর, মন্ত্রণালয়গুলোকে সময়ে সময়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন খাতের বিকাশ ঘটে। সম্ভাবনাময় নতুন খাতগুলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনে ও অগ্রযাত্রায় বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই অক্ষম, দুর্বল, মেধাহীন নয়। তারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ, যারা এর আগে বেকারত্ব, দারিদ্র্য আর অসহায়ত্বের বেড়াজালে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল, তারা এখন নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনে এগিয়ে আসছে। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন অনেকে। এভাবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা, জনপদের চিত্র।


শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের সহযোগিতা, অটিজম, প্রধানমন্ত্রীর সরকারের প্রধান উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন বর্তমান সরকারেরই অবদান।


দারিদ্র্য বিমোচনের বিভিন্ন প্রয়াসে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই প্রশংসনীয় সাফল্য সত্ত্বেও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের যে আরো অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, সেটি পরিষ্কার হয়েছে সরকারি সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির যে চিত্র উঠে এসেছে তা বেশ উদ্বেগজনক। এতে বলা হয়, দারিদ্র্য নিরূপণের নতুন এক সূচকে দেশের সাড়ে ছয় কোটি মানুষ দরিদ্র। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সূচকে (এমপিআই) দেশে এ পরিমাণ দরিদ্র রয়েছে বলে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের ৩৬.১ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে ২০২১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৩ লাখে। এ হিসাবে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সংখ্যা ছয় কোটি ৫১ লাখ। বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ বেশির ভাগ ভোগ্য পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। তবে অনেক দিন ধরেই মধ্যবিত্তরাও চাপে আছে। কিছুদিন আগেও ন্যায্য মূল্যে ভোগ্য পণ্য কেনার জন্য টিসিবির ট্রাকসেলের লাইনে দেখা গেছে মধ্যবিত্তদের। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ তো বটেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তদেরও হাঁসফাঁস দশা। সেই সঙ্গে অনেক সামাজিক অভিঘাত রয়েছে, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে আমাদের।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।