কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুত বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তির জগৎ। কয়েক বছর আগেও যেখানে চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি এআইয়ের মতো মডেলগুলো শুধু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত, এখন সেই প্রযুক্তিই এমন সব জটিল পরীক্ষায় সফল হচ্ছে, যেগুলোতে পাস করতে মানুষের বছরের পর বছর প্রস্তুতি নিতে হয়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন স্কুল অব বিজনেস ও এআইচালিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গুডফিনের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত এআই মডেলগুলো বিশ্বের অন্যতম কঠিন পেশাগত পরীক্ষা চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্টের (সিএফএ) সব ধাপ মাত্র কয়েক মিনিটে সম্পন্ন করেছে। এমনকি অত্যধিক কঠিন হিসেবে পরিচিত পরীক্ষার তৃতীয় ধাপও অনায়াসেই পাস করেছে এআই। গবেষণায় অংশ নেওয়া ২৩টি উন্নত এআই মডেলের মধ্যে ছিল ওপেনএআইয়ের ও৪-মিনি, অ্যানথ্রপিকের ক্লড ওপাস, ডিপসিকের আর১ এবং গুগলের জেমিনাই ২.৫ ফ্ল্যাশ। গবেষকেরা জানান, পরীক্ষার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। এই মডেলগুলো শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হয়নি, এগুলো মানুষের তুলনায় খুবই কম সময়েই তা সম্পন্ন করেছে।
সিএফএ ইনস্টিটিউটের পরিচালিত এই পরীক্ষা বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা খাতে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ যোগ্যতাগুলোর একটি। সিএফএ পরীক্ষার তিনটি ধাপ সম্পন্ন করতে সাধারণত কয়েক বছর সময় লাগে। প্রতিটি ধাপের প্রস্তুতিতে গড়ে এক হাজার ঘণ্টার মতো পড়ালেখা করতে হয়। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা, সম্পদ পরিকল্পনা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণের মতো জটিল বিষয়ে এআই এখন মানুষের মতোই দক্ষতা দেখাতে পারছে।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ‘চেইন অব থট প্রম্পটিং’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে এআই ধাপে ধাপে যুক্তি ও বিশ্লেষণ সাজিয়ে উপস্থাপন করতে পারে। ফলে প্রবন্ধধর্মী প্রশ্ন বা বিশ্লেষণধর্মী সমস্যা সমাধানে মডেলগুলো মানুষের মতো ভাবনাচিন্তা করতে পারে। তবে পরীক্ষায় পাস করলেও এআই এখনো সিএফএ চার্টার পাওয়ার যোগ্য নয়। মানুষের মতো পটভূমি ও উদ্দেশ্য অনুধাবনের ক্ষমতা এআইয়ের নেই। সিএফএ ইনস্টিটিউটের নিয়ম অনুযায়ী, প্রার্থীদের অন্তত চার হাজার ঘণ্টা প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা, দুজন পেশাগত ব্যক্তির রেফারেন্স এবং ব্যবহারিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ থাকতে হয়।
গুডফিনের সহপ্রতিষ্ঠাতা আনা জু ফি জানিয়েছেন, এআই বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা খাতকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। তবে পটভূমি ও উদ্দেশ্য বোঝা বা মানুষের মতো আচরণ ও দেহভঙ্গি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এআই এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখানেই মানুষের শক্তি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
০ টি মন্তব্য