বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো- প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, প্রশমন, করণীয় ও ডিজিটাল উন্নয়ন সম্পর্কে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ। ঢাকা, পিরোজপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার মোট ২৬জন সাংবাদিক ও স্থানীয় এনজিও, সিএসও প্রতিনিধি, পেশাজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এই প্রশিক্ষণে যোগদান করেন।
স্বাগত বক্তব্য ও প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন প্রশিক্ষণের কোর্স কোঅর্ডিনেটর রেহান উদ্দিন আহমেদ রাজু। তিনি প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, টিএফজিবিভি (TFGBV) এবং ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ২৫ জন দক্ষ প্রশিক্ষকের একটি দল তৈরী করা। সাংবাদিক ও স্থানীয় এনজিও, সিএসও, পেশাজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সচেতনতামূলক ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমে ভূমিকা শক্তিশালী করা। পাশাপাশি প্রশিক্ষকদের স্থানীয় পর্যায়ে মেন্টরিং, পরামর্শ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তিনি প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কেও আলোচনা করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, মিটিং ধারণা, আয়োজন এবং সঞ্চালন, বয়স্ক শিখন নীতিমালা, লবিং, গণশুনানী, স্থানীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসির প্রয়োজনীয়তা ও অ্যাডভোকেসির কৌশল, স্টেকহোল্ডার চিহ্নিতকরণ, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আইনি কাঠামো, নারী নির্যাতন আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিএনএনআরসি বাস্তবায়ন করছে ‘স্ট্রেনদেনিং রেজিলিয়েন্স এগেইনস্ট টেকনোলজি ফেসিলিটেটেড জেন্ডার বেইসড ভায়োলেন্স (টিএফজিবিভি) এন্ড প্রমোটিং ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পটি। প্রকল্পটি নাগরিকতা: সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (CEF) কর্মসূচির অংশ। এটি বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা করছে জিএফএ কনসালটিং গ্রুপ এবং অর্থায়ন করছে সুইজারল্যান্ড ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা।
বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান প্রযুক্তির সহায়তায় জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা (TFGBV): ধারণা, ধরন, নেতিবাচক প্রভাব, ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট ও এর ধারণা, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনার প্রারম্ভে তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডিজিটাল উন্নয়ন, জাতিসংঘ তথ্য সমাজ বিষয়ক সম্মেলন, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল আচরণ, ডিজিটাল ইকোসিস্টেম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উপস্থাপনায় স্থানীয় নাগরিক সংগঠন, এনজিও এবং সাংবাদিকদের মাঝে ডিজিটাল ডেভলপমেন্ট ও প্রযুক্তির সহায়তায় জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের করণীয় এবং এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করার নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা ও অংশীজন নির্বাচনের ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ধারণা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন ইউএনএফপিএ-এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আবু সাইদ সুমন। তিনি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ধারণা, প্রতিকার ও প্রতিরোধে ইউএনএফপিএ কি করছে, কিভাবে করছে সেগুলো তুলো ধরেন। পাশাপাশি প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আইনী কাঠামো এবং সরকারী উদ্যোগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
জিএফএ ও নাগরিকতা কর্মসূচির ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট নূরুল ইসলাম দ্বিতীয় দিনে প্রারম্ভিক অধিবেশনে যোগ দেন এবং প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণকারীদের সাথে প্রশিক্ষণ এর উদ্দেশ্য ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের অনুভূতি ও ভবিষ্যতে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ও এলাকায় এই বিষয়টি নিয়ে কিভাবে আরো ব্যাপক পরিসরে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোকপাত করেন।
ইনফরমেশন ইন্টিগ্রিটিঃ ভুলতথ্য ও অপতথ্য সম্পর্কে মৌলিক ধারণা, ভুলতথ্য ও অপতথ্যের পরিণতি ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন বিএনএনআরসি’র প্রকল্প সমন্বয়কারী হীরেন পণ্ডিত।
প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উদ্যোগ, ইউএনউইমেন-এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন ইউএনউইমেন এর পরামর্শক, সাদিয়া তাসনীম। তিনি প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আইনী কাঠামো এবং সরকারী উদ্যোগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রশিক্ষণের অংশগ্রহণকারীগণ টিএফজিবিভি প্রতিরোধ সম্পর্কিত জ্ঞান এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া, টিএফজিবিভি প্রতিরোধ, প্রশমন ও করণীয় এবং ডিজিটাল উন্নয়ন বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল অর্জন করেন। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নেটওয়ার্ক গঠনের মাধ্যমে অব্যাহত সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং টিএফজিবিভি-সম্পর্কিত বিষয়সমূহ চিহ্নিত করে অ্যাডভোকেসির কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে টিএফজিবিভি প্রতিরোধ ও প্রশমনে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের ভূমিকা ও করণীয় নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করার ব্যাপারে কাজ করবেন। শেষে সঞ্চালন দক্ষতা প্র্যাকটিস অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা ও প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।








০ টি মন্তব্য