https://gocon.live/

সাম্প্রতিক খবর

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে
 

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই হবে


এসডিজি'র অভীষ্ট ৩:৬ এ বলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে কমিয়ে নিয়ে আসা। এসডিজি-র অভীষ্ট ১১:২ এ বলা হয়েছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও সুলভ পরিবহণ ব্যবস্থায় সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রাই কিন্তু আমরা অর্জন করতে পারিনি, অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। আমরা দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি! বরং বাড়ছে, আর বাকি থাকল ২০৩০ সাল সে লক্ষ্য অর্জনে এখন সবাইকে কাজ করতে হবে।


গত রমজানের ঈদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মোটর সাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। গত ঈদে ঢাকা থেকে মোটর সাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হলেও এবার চলেছে এক লাখ ২০ হাজার মোটর সাইকেল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়। ঈদ এবং এর আগে ও পরে পাঁচ দিনে ২৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। নিহত ৫১ জনের মধ্যে মোটর সাইকেল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃতু্য হয়। রাজধানী ঢাকাসহ আরো ১০ জেলায় গত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন? বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেসব কারণে রাস্তায় মৃতু্যর মিছিল লেগেই আছে। এসব অনিয়ম ও কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় পাঁচ বছরে ৩২ জনের মৃতু্য হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অপেশাদার, অস্থায়ী, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছেন এসব গাড়ি। খবরে প্রকাশ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৪৬টি ভারী গাড়ি চালানোর জন্য এখনো পর্যাপ্ত দক্ষ চালক নেই।


এর বাইরে মহাসড়কে কী হচ্ছে? চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১২ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। এর মধ্যে ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে শুধু একটি পরিবহণ। একটি পরিবহন এত দুর্ঘটনায় কেন? কারণ দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফিটনেস হারানোয় বাসগুলোর দূরপালস্নায় চলাচলের সক্ষমতা নেই। বেশির ভাগ বাসের এই পথে চলাচলের অনুমোদন নেই। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্সও নেই।


আমরা কোনোভাবেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা সড়ককে নিপাপদ হিসেবে দেখতে চাই। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে এপ্রিল মাসে দেশে সর্বমোট ৪২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নারী ও ৮১ জন শিশুসহ মোট ৫৪৩ জন নিহত ও ৬১২ জন আহত হয়েছেন। ১৮৯টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০৬ জন- যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।


একটি পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যবরণ করেন বা প্রতিবন্ধী হয়ে যান তখন সেই পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট হয়ে যায় নিত্যসঙ্গী। এরকম হাজারো পরিবার সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের উন্নয়নে সব সময় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আর সময় ক্ষেপণ নয় বরং সড়ককে নিরাপদ করতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়নসহ আইন প্রয়োগে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।


মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার সর্বোচ্চ ৪৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন- যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন- যা মোট নিহতের ১৬ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় মোট ২৩ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।


পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র মোটর সাইকেলে সবচেয়ে বেশি। মোটর সাইকেলের সহজলভ্যতা এর জন্য অনেকটা দায়ী। তাছাড়া মোটর সাইকেল চালকদের হেলমেট না পরা, ট্রাফিক আইন না মেনে দুইজনের অধিক মোটর সাইকেলে আরোহণ করা, মোটর সাইকেল চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃতু্যর মিছিলকে দীর্ঘায়িত করছে।


বাংলাদেশে মোটর সাইকেল বিক্রির পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কে মোটর সাইকেল চালানোর নিয়ম মানছেন না চালকরা, চালক ও আরোহীরা হেলমেট পরেন না এক মোটর সাইকেলে দুইজনের বেশি না ওঠার নিয়ম মানা হয় না, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত মোটর সাইকেল অহরহ চলাচল করে, অনেকের আবার মোটর সাইকেল চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই।


বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এভাবে মোটর সাইকেলকে সহজলভ্য করেনি। গণপরিবহণকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিকল্প হিসেবে মোটর সাইকেলের বিক্রয় ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে মোটর সাইকেল চালানো যাবে কিনা তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে মোটর সাইকেল চালাতে আইনসম্মতভাবে হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।


সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। এপ্রিলে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৬৩ জন শিক্ষার্থীর। এছাড়া রাজনৈতিক নেতা ১২ জন, ব্যবসায়ী ৩১ জন, শিক্ষক ১৩ জন, পুলিশ সদস্য চারজন, সেনাসদস্য একজন,র্ যাব সদস্য একজন, বিজিবি সদস্য একজন, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য দুজন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য একজন, চিকিৎসক দুজন, সাংবাদিক তিনজন, আইনজীবী চারজন, প্রকৌশলী দুইজন, সংগীতশিল্পী একজন, ব্যাংক কর্মকর্তা ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা ১১ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৯ জন, পোশাক শ্রমিক সাতজন, চালকল শ্রমিক দুইজন, ইটভাটা শ্রমিক চারজন, ধানকাটা শ্রমিক ছয়জন, মাটিকাটা শ্রমিক চারজন।


সচরাচর যেসব কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে তার মধ্যে অন্যতম হলো ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতার কারণে সড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ'র সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন।


এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষচালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ'র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পরিবহণের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা এবং এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহণে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সড়কে মৃতু্যর মিছিল অনেকটাই লাঘব করা যেত। যে কোনো দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সড়কে যে ভাবে মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে তা যে করেই হোক কমাতে হবে। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্তসংখ্যক চালক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।


এর আগে একই লক্ষ্যে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত ২২ সদস্যের কমিটি ২০১৯ সালে ১১১টি সুপারিশ তৈরি করেছে। এর মধ্যে ৫৪ নম্বর সুপারিশে ত্রম্নটিপূর্ণ গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছিল টাস্কফোর্স। ২০১৮ সালে, গত বছরের শেষের দিকে ও চলতি বছরের শুরুতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় তাদের ৯টি দাবির মধ্যে একটি ছিল ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এত প্রাণহানি, আন্দোলন, দফায় দফায় বৈঠক, সুপারিশ, টাস্কফোর্স গঠনের পরও প্রতিনিয়ত কেন সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলছে? এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কেন? সমস্যাটা কোথায়? বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির সবাই একই কথা বলছেন। বলছেন, যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি উচ্ছেদ, বাস ও ট্রাকের আয়ুষ্কাল নির্ধারণসহ অনুপযুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সড়কের চেয়ে পরিবহণের সংখ্যা বেশি। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছেই। আবার যত পরিবহণ রয়েছে, সে অনুযায়ী প্রশিক্ষিত চালক নেই। পরিবহণ সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন আসেনি। ফলে পরিবহণ সেক্টরও যুগ যুগ ধরে অপরিবর্তিত অবস্থায়ই রয়ে গেছে। যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়কের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি তুলনামূলক কাজের গতি। মনিটরিং ব্যবস্থা ও এনালগ যুগের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার এই অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।


সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এত বড় একটা আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন সত্ত্বেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ফুটওভারব্রিজের তেমন ব্যবহার নেই, নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া রাস্তার যেখানে-সেখানে যাত্রী নামানো-ওঠানোসহ চালকদের মধ্যে অবৈধ প্রতিযোগিতা ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের দৌরাত্ম্য কমেনি। আর এসব কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে, ফিরছে না সড়কে শৃঙ্খলা।


সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত ৬ দফা নির্দেশনামা দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা, টাস্কফোর্স দাখিল করা ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রম্নত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ চালকের অদক্ষতা ও প্রতিযোগিতাপ্রবণ মনোভাব, সুতরাং সর্বাগ্রে চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রদান নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ ও ধৈর্যের শিক্ষাও দিতে হবে। সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব দুঘর্টনা ও প্রাণহানির অন্যতম কারণ হওয়ায় পথচারী, যাত্রী, চালক সবাইকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সবাই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে পথচারী ও যাত্রীদের অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা সচেতন হলে দুর্ঘটনা প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ বাস্তব ক্ষেত্রে তেমন নেই। সড়ক-মহাসড়কে ছোট ও ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও অবলীলায় তা চলছে এবং ছোট-বড় দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে। মোটর সাইকেল চালকদের জন্যও নানা নির্দেশনা রয়েছে। তা তারা মানছে না এবং মানানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া ও প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো বন্ধ করা সম্ভব হয়নি এত দিনেও। আইনের প্রয়োগই যদি না হয়, তবে আইন করা আর না করা একই কথা। বাংলাদেশে চালক ও পথচারী উভয়ের জন্য কঠোর বিধান যুক্ত করে কার্যকর করা হয়েছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮।


এটা সত্য, আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক নাজুক। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ভাড়া; অন্যদিকে অদক্ষ চালককে গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দিয়ে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ানো হচ্ছে।


এদিকে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাতে দিয়ে অসংখ্য মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে।


এসব দিকে দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সর্বাগ্রে চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম অনেকাংশে টেনে ধরা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের লক্ষ্যে প্রণীত আইন-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। মাদক সেবন করে যাতে চালকরা গাড়ি চালাতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত বিরতিতে চালকদের ডোপ টেস্ট করতে হবে। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।


হীরেন পন্ডিত :প্রাবন্ধিক ও গবেষক








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।