ওলট-পালট সংখ্যার মজা
১৭ একটি দুই অঙ্কের সংখ্যা। এটি উল্টো করে লিখে পাই নতুন সংখ্যা ৭১। এখানে ১৭ আর ৭১ সংখ্যা দুইটি হচ্ছে একটি অপরটির উল্টো সংখ্যা। আর ১৭ ও ৭১ হচ্ছে একটি ওলট-পালট সংখ্যাজোড়। অন্য কথায় বলা যায়, ১৭ ও ৭১ হচ্ছে পরস্পর রিভার্সিবল নাম্বার পেয়ার। এভাবে যে কোনো সংখ্যা নিয়ে এর উল্টো সংখাটি বের করে ওই সংখ্যার জন্য আমরা একটি ওলট-পালট সংখ্যাজোড় বা রিভার্সিবল নাম্বার পেয়ার তৈরি করতে পারি। এভাবে অসংখ্য সংখ্যার জন্য আমরা পাব অসংখ্য সংখ্যাজোড়। আসলে একটি সংখ্যার শেষদিকের ডিজিট বা অঙ্কগুলো প্রথম দিকে এনে ধারাবাহিকভাবে লিখে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায়, সেটি হবে মূল সংখ্যার উল্টোসংখ্যা বা রিভার্সিবল নাম্বার। যেমন: ২৭৪ সংখ্যাটির উল্টো সংখ্যা হচ্ছে ৪৭২, একইভাবে ৮৫৪১ সংখ্যাটির উল্টোসংখ্যা হচ্ছে ১৪৫৮। এভাবে আমরা আরো বেশি অঙ্কের বা বড় বড় সংখ্যারও উল্টোসংখ্যা সহজেই লিখতে পারি। এই রিভার্সিবল বা ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মজার বিষয়। এই উল্টা-পাল্টা সংখ্যাজোড় নিয়ে যোগ কিংবা বিয়োগ করলে বেশ মজার বিষয় বেরিয়ে আসে। আর এর ফলে তা ব্যবহার করে মানসাঙ্ক করার কিছু কৌশল বেরিয়ে আসে। এ লেখায় এরই কয়েকটি উদাহরণ নিচে তুলে ধরার প্রয়াস পাব।
যোগের বেলায়
১৩-এর উল্টোসংখ্যা হচ্ছে ৩১। আর ১৩ ও ৩১ মিলে তৈরি করেছে একটি ওলট-পালট সংখ্যাজোড়। এর মধ্যে মজাটা কী, তা আমরা সহজেই দেখতে পারি।
১ +৩ = ৪ এবং ৪ গুণ ১১ = ৪৪
অপরদিকে ১৩ + ৩১ =৪৪
আবার ৮২ ও ২৮ হচ্ছে একটি ওলট-পালট সংখ্যাজোড়।
৮ + ২ = ১০ এবং ১০ গুণ ১১ = ১১০
অপরদিকে ৮২ + ২৮ = ১১০
বিয়োগের বেলায়
এখানে আমরা ৩১ ও ১৩ নিয়ে ওলট-পালট সংখ্যাজোড়টির ক্ষেত্রে বিয়োগ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করার ফলে যে জার বিষয়টি পাই তাও সহজবোধ্য মজার বিষয়। এখানে বিয়োগের কাজটি করা হয় আগের যোগের মতোই। এখানে অঙ্ক দুটির বিয়োগফলকে ৯ দিয়ে গুণ করতে হয়।
৩ - ১ = ২, এবং ২ গুণ ৯ = ১৮
আবার ৩১ - ১৩ = ১৮
আমরা এও জানি ২৮ ও ৮২ নিয়ে গঠিত হয় একটি ওলট-পালট সংখ্যাজোড়। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই:
৮ - ২ = ৬ এবং ৬ গুণ ৯ = ৫৪
আবার ৮২ - ২৮ = ৫৪
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। যেমন:
২- ৮ = (- ৬), আবার (- ৬) গুণ ৯ = (-৫৪)
আবার ২৮ - ৮২ = (- ৫৪)
১৩ ও ৩১ নিয়ে গঠিত ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের বেলায় একই ধরনের ফল পাওয়া যাবে।
এভাবে যে কোনো দুই অঙ্কের সংখ্যার এ ধরনের ওলট-পালট সংখ্যাজোড় এই নিয়ম মেনে চলবে। যদি এই দুই অঙ্কেও মধ্যে একটি শূন্যও (০) হয়, তখনো এই নিয়ম মেনে চলবে। যেমন ২০ ও ০২ নিয়ে গঠিত ওলট-পালট সংখাজোড়ের বেলায় আমার দেখতে পাই:
২ + ০ = ২, এবং ২ গুণ ১১ = ২২
আবার ২০ + ০২ = ২২
একইভাবে বিয়োগের বেলায়:
২ - ০ = ২, এবং ২ গুণ ৯ = ১৮
আবার ২০ - ০২ = ১৮
কেনো এমন হয়?
প্রশ্ন হচ্ছে, এমনটি হওয়ার পেছনে কারণ বা তত্ত্বটা কী? আমরা এর ব্যাখ্যা পেতে পারি বীজ গণিত থেকে।
আমরা যদি ৮২ সংখ্যাটিকে a ধরি এবং ২৮ সংখাটিকে b ধরি এবং x= 8 এবং y = 2 ধরি, তবে আমরা পাই: 82 = a = 10x + y
28 = b = 10y + x
তাহলে aও b-এর যোগফল দাঁড়ায়:
a + b = (10x + y) + (10y + x) = 11x + 11y = 11(x + y), অর্থাৎ
a + b = 11( x + y), একইভাবে বিয়োগফলের সময় বিয়োগফল দাঁড়ায়:
a – b = 9(x - y)
এ থেকে সহজেই ধরা যায় কেনো আমারা ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের মজার সম্পর্কটি পেতে যোগের বেলায় ওপরে অঙ্ক বা ডিজিট দুটির যোগফলকে ১১ দিয়ে গুণ করেছি, আর বিয়োগফলের বেলায় অঙ্ক দুটির বিয়েগফলকে ৯ দিয়ে গুণ করেছি।
তিন অঙ্কের সংখ্যার ক্ষেত্রে
তিন অঙ্কের বেলায় কী একই ধরনের কাজ করবে? এটি জানার জন্য আমরা বীজগণিতে একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি। x, y ও z এই তিনটি অঙ্কের একটি পূর্ণসংখ্যা a ও এর উল্টো সংখ্যা b-এর মান দাঁড়াবে যথাক্রমে:
a = 100x + 10y + z
b = 100z + 10y + x
অতএব ওলট-পালট সংখ্যা a এবং b-এর সমষ্টি পাই নিমণরূপ:
a + b = (100x + 10y + z) + (100z + 10y + x)
= 101 (x + z) + 20 y
একইভাবে, ওলট-পালট সংখ্যা a এবং b-এর বিয়োগফল পাই নিমণরূপ:
a – b = (100x +10y + z) – (100z + 10y +x)
= 99 (x –z) = 11 গুণ 9 (x – z)
এখানে দেখা যাচ্ছে, তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের সমষ্টি দুই অঙ্কের সংখ্যার ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের সমষ্টির চেয়ে অধিকতর জটিল। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই সংখ্যাজোড়ের পার্থক্য একই ধরনের সরল। এর ফলে তিন অঙ্কের সংখার ওলট-পালট সংখ্যা নিয়ে মানসাঙ্ক ততটা সহজ হবে না। তবে এখানে কাছাকাছি একটি কৌশল কাটানো যাবে প্রথম ও শেষ অঙ্ক নিয়ে, যদিও তখন তা পকাশ করবে দুই ডিজিটের একটি সংখ্যা। এবং তা হচ্ছে 9 (x – z), এবং তখন ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের পার্থক্য পেতে অঙ্ক দুটির মাঝখানে একটি ৯ বসিয়ে দিতে পারি।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরি, তিন অঙ্কের ওলটপালট সংখ্যাজোড়টি ৮৬২ ও ২৬৮। অতএব সংখ্যা দুটি পার্থক্য ৮৬২ - ২৬৮ = ৫৯৪। এখন এই ৫৯৪-এর মাঝখানের ৯ সংখাটি সরিয়ে নিলে পাই ৫৪, যা 9 (x – z) বা 9 (8 – 2)-এর সমান। অতএব তিন অঙ্কের সংখ্যার প্রথম ও শেষ অঙ্কের বিয়োগফলকে ৯ দিয়ে গুণ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, এর মাঝখানে একটি ৯ বসিয়ে দিলে ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের পার্থক্য পেয়ে যাব।
বীজগণিতের আরকেটু অগ্রসর পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা যে কোনো ওলট-পালট সংখ্যাজোড়ের সমষ্টি ও বিয়েরগফল বের করার একটি সাধারণ কৌশল বের করতে পারি, তবে সেটি সাধরণ পাঠকদের বোধগম্য হবে না। তাই সেদিকটির ওপর আলোকপাত করা হলো না।
০ টি মন্তব্য