৩৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রাউডফান্ডিং: বাংলাদেশের অস্থান কোথায়?
ব্রিটেনের একটি ব্যান্ডদল তাদের পুনর্মিলনী সফরের জন্য ভক্তদের কাছে সহযোগিতা কামনা করে। ১৯৯৭ সালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভক্তরা সাড়াও দিলেন। বিশ্ব পেল অর্থ সংগ্রহের যুগান্তকারী একটি ধারণা, যা বর্তমানে সারা বিশ্বে ‘ক্রাউডফান্ডিং’ নামে পরিচিত। এই ধারণা থেকে জন্ম হয়েছে প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম আর্টিস্ট শেয়ার। ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল। আর এর সফলতা পরবর্তী সময়ে ফান্ড সংগ্রহের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। সারা বিশ্বে এখন কয়েক হাজার ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম আছে। বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে চলছে এর কার্যক্রম। আমাদের দেশে স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম। আমাদেরকে প্রস্ত্তত হতে হবে একে স্বাগত জানাতে। এই প্রতিবেদন থেকে আমরা ক্রাউডফান্ডিংয়ের বিস্তারিত জানব এবং জানব বিশ্ব যেভাবে এর মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে ও এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী? তার আলোকে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুল হক ও এআর হোসেইন
ক্রাউডফান্ডিং কী?
শুরুতেই জানা যাক ক্রাউডফান্ডিং আসলে কী? সহজ ভাষায়, অনেক লোকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে ক্রাউডফান্ডিং বলে। মূলত ইন্টারনেট সেবাকে কাজে লাগিয়ে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ কথা বলা যায়, ক্রাউডফান্ডিং হচ্ছে অর্থ সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া। অতীতেও ক্রাউডফান্ডিংয়ের অসিত্মত্ব ছিল, কিন্তু বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে স্যোশাল মিডিয়ার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তারা এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যারা অর্থ প্রদান করবে এবং যার বা যেই সংগঠনের অর্থ প্রয়োজন, তাদের মধ্যে যোগসূত্র করে দেয়ার কাজটি করে থাকে ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম। যেমন- ক্রাউড-কিউভ ব্রিটেনের একটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম, যারা ব্রিটেনে পরিচালিত কোনো ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের সুযোগ করে দেয়।
ক্রাউডফান্ডিং কেনো ও কীভাবে?
ক্রাউডফান্ডিংয়ের যাত্রা গতি পায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে। ২০০৮ সালে আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলো যখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ধুঁকছিল, তখন ব্যাংকগুলো নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুই করতে পারছিল না। এমনকি পুরনো উদ্যোক্তাদেরও অর্থ সহায়তা পেতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছিল। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলো তাদের কার্যক্রম সঙ্কুচিত করে ফেলছিল। সেই সময়টাতে ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন আশার আলো দেখাতে শুরু করে। ২০০৯ থেকে মূলত ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মগুলো উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। এনজেল লিস্ট ও উইফান্ডার প্লাটফর্ম দুটি কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ পায়। সেই থেকে শুরু। এরপর একের পর এক সফলতার গল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রাউডফান্ডিং। ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে একজন উদ্যোক্তা বা কোনো একটি সংগঠন তাদের প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। যেকোনো প্রকল্প যেমন মোশন পিকচার প্রমোশন থেকে শুরু করে লাইব্রেরি বানানো, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, অসুস্থ-মেধাবী শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য, বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জনসাধারণের সাহায্যার্থে এমনকি ব্যক্তিগত ফান্ড গঠনের জন্যও ক্রাউডফান্ডিং প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়। এর জন্য আপনাকে শুধু বোঝাতে হবে আপনার ফান্ড বাড়াতে চাওয়ার উদ্দেশ্য।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কোনো প্রকল্পের জন্য ফান্ড সংগ্রহের সুযোগ পাওয়া যায় ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মে। এর জন্য একজন উদ্যোক্তাকে তার প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে এবং এই প্রকল্পের জন্য কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা উল্লেখ করে পোস্ট করতে হয়। পোস্ট করা শেষে উদ্যোক্তা ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মের কমিউনিটি সদস্য ও শুভাকাঙক্ষীদের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে। কখনও কখনও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। ইন্ডিগোগো ২০১৪ সালে তাদের পরিচালিত ক্যাম্পেইনগুলোর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ সফলভাবে ফান্ডিং করতে পেরেছিল। যদি আপনার অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে যা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাই রেখে দিতে পারেন। এই সিস্টেমকে বলা হয় কিপ ইট অল। আবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে দিতে পারেন, যাকে বলা হয় কিপ অল অর নাথিং। ক্রাউডফান্ডিং ব্যবস্থায় ফান্ড বাড়ানোর মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে অনেক মানুষের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করা। যেমন- কোনো একটি প্রকল্পের জন্য যদি ১ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়, তাহলে তা ২০০ টাকা করে ৫০০ লোকে দিতে পারেন, আবার ১০০ টাকা করে ১০০০ লোকেও দিতে পারেন।
ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রকারভেদ
অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে ক্রাউডফান্ডিংকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে : ০১. ডোনেশন বা অনুদানভিত্তিক ক্রাউড ফান্ডিং। ০২. রিওয়ার্ড বা অর্থ প্রদানের বিনিময়ে কোনো পুরস্কার বা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ভিত্তিতে। ০৩. ইকুইটি বা ব্যবসায়ের শেয়ার দানের মাধ্যমে। ০৪. সুদভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম।
ডোনেশন বা অনুদানভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রমের মাধ্যমে মূলত সামাজিক কাজগুলোর জন্য ফান্ড বাড়ানো হয়। এই পন্থায় দাতা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান না। শুধু একটি ভালো কাজে সহায়তা করার জন্য তৃপ্তি লাভ ছাড়া। বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য অনুদানভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে। এছাড়া অসহায় কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত আর্থিক উন্নয়নের সাহায্যার্থেও অনুদান দেয়া যেতে পারে। ২০০২ সালে ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম কাজ শুরু করার এক বছর আগে ক্যারিন বসন্যাক নামে এক মহিলা তার ক্রেডিট কার্ডের লোন পরিশোধ করার জন্য সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। এর জন্য তিনি সেভ ক্যারিন নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করেন। এই আবেদনের মাধ্যমে তিনি ১৩ হাজার ডলার সাহায্য পেয়েছিলেন। এর সাথে আরও ৭ হাজার ডলার যোগ করে তিনি তার ক্রেডিট কার্ডের লোন পরিশোধ করেন। অনেকে ক্যারিন বসন্যাককে ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রথম উদ্যোক্তা বলে থাকেন।
রিওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং মডেলের মাধ্যমে এখন সবচেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়। মানুষ কোনো একটি প্রকল্পে অর্থ দেয়ার বিনিময়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা চায়। তাছাড়া যখন আপনার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য অর্থ চাইবেন, তখন অর্থদাতাকেও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত। এই ধারণা থেকেই রিওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং মডেল কাজ করে। একে জনপ্রিয় করে তুলে বিশ্বের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম আর্টিস্ট শেয়ার। সেখানে একজন শিল্পী, যিনি গান করেন, তার গানের অ্যালবামের মূল্য বাবদ ভক্তদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা দিয়েই তিনি অ্যালবাম প্রকাশ করার খরচ মেটান এবং অ্যালবাম বের হলে তার সিডি ভক্তদেরকে উপহার হিসেবে দেন। এই একই পদ্ধতিতে বিখ্যাত আইএম সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল। যেখানে সিনেমাটির প্রযোজক ছিলেন সাধারণ মানুষ। তারাই এর জন্য অর্থ দিয়েছিলেন, যাদের কেউই এখানে ডোনার নন, সবাই ফান্ডার।
ইকুইটি ক্রাউডফান্ডিং মডেল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল। এই মডেলটি মূলত বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তার মধ্যে সম্পর্কের কাজ করে। এইজন্য এই মডেলটি ক্রাউড ইনভেস্ট নামেও পরিচিত। এখানে একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়িক মডেলটি বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। আগ্রহী বিনিয়োগকারী তাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পান এবং বিনিময়ে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নেন। ফলে প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় করে যা লাভ করবে, বিনিয়োগকারী তার শেয়ার অনুপাতে লভ্যাংশ নেবেন। এই মডেল অনুসারে এখানে কেউ ডোনার বা ফান্ডার নন, সবাই বিনিয়োগকারী। ব্যবসায় বাণিজ্যে বিনিয়োগের এটি একটা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ধরা হয়, যা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে আলাদা। ব্যাংক ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলো যেখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না, সেখানে উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়ের জন্য ক্রাউডফান্ডিংয়ের এই মডেলটি অনুসরণ করে বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এখানে একজন বিনিয়োগকারী ঠিক কত পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবেন, তা দেশভেদে নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকে। আমেরিকাতে কোনো একজনের বার্ষিক আয় যদি ১ লাখ ডলারের কম হয়, তাহলে তিনি বছরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রোফাউন্ডার ২০১০ সালে প্রথম ইকুইটি ক্রাউডফান্ডিং মডেল নিয়ে কাজ করে। ২০১২ সালে আমেরিকাতে এর জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়, যা এ বছরের মার্চ মাসে চূড়ান্ত হয়।
সুদভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং হচ্ছে যেখানে অর্থদাতা তার আর্থ দেয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে সুদ নিয়ে থাকেন। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এইভাবে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত লোন হিসেবে এই মডেল অনুযায়ী অর্থ সংগ্রহ করার সুযোগ পান।
ডোনেশন বা রিওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম যেকেউ তৈরি করতে পারেন এবং আইনি কোনো বাধা ছাড়াই এর কার্যক্রম চালাতে পারবেন। কিন্তু ইকুইটি বা সুদভিত্তিক মডেলে ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম চালাতে গেলে অনেকগুলো আইনি দিক অনুসরণ করে তা চালাতে হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি নেয়া লাগতে পারে এবং যারা বিনিয়োগ করবেন তাদের কর শনাক্তকারী নাম্বার রেজিস্ট্রেশন করা লাগবে। পাশাপাশি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার কাগজপত্র থাকতে হবে।
বাংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিংয়ের যাত্রা
এ বছরের শুরুর দিকে ওয়াইজ রহিমের হাত ধরে আমরা একটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম পাই, যা প্রজেক্ট ডটসিও নামে এদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে ছোট আকারে দুটি প্রজেক্টে সফলভাবে ফান্ডিং সম্পন্ন করেছে প্রজেক্ট ডটসিও। প্লাটফর্ম বলতে এই একটি আছে আমাদের দেশে। তবে এএম ইশতিয়াক সারওয়ার এক আইটি উদ্যোক্তা ‘পার এ পার’ নামে শুরু করতে যাচ্ছেন আমাদের দেশের দ্বিতীয় ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে মাহাবুব ওসমান ও তার দল ক্রাউডফান্ডিং সফট নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। ৪ লাখ টাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিগত জুন মাসে যাত্রা শুরু করা এই ক্যাম্পেইনটি সফলতার দিকেই এগোচ্ছে। এ কথা বলা যায়, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে পারছি না। তবে যাত্রা শুরু যেহেতু করতে পেরেছি, এখন আমরা যদি একে স্বাগত জানাই তাহলে খুব বেশি দূরে নয় আমাদের দেশের উদ্যোক্তারাও বিলিয়ন ডলারের ফান্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
আমাদের দেশে ক্রাউডফান্ডিংয়ের আইনি দিক
আইনের নানা ধরনের জটিলতার কারণে আমরা ক্রাউডফান্ডিংয়ের সব সুবিধা হয়তো এখনই পাব না। তবে অনুদান ও রিওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং শুরু করতে পারি। আইনি বিভিন্ন দিক নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে (বাংলাদেশ সদ্য নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে) ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়, যা আমরা অনুসরণ করতে পারি।
যেসব দেশ ক্রাউডফান্ডিংয়ের ধারণা গ্রহণ করতে চায় তাদের শুধু সক্রিয় নীতিমালা গ্রহণ করলেই চলবে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন নীতিমালাগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যা এতে প্রবেশ, পরিচালনা এবং ব্যবসায়ের করার ক্ষেত্র দুর্বহ করে তোলে। যেমন- একটি ব্যবসায় গঠন প্রক্রিয়া ও এর সমাপ্তি অনেক বেশি জটিল ও দুঃসাধ্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সময় সাপেক্ষ এবং খরচের দিক থেকে অনেক বেশি ব্যয়বহুল।
তবে সম্প্রতি ভিন্ন উপায়ে বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলোর জন্য একটি নীতিমালা পাস করা হয়েছে। সেই একই নীতিমালায় ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে। অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক বা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি নিয়েও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
সম্ভাবনা ও সম্ভাব্য সফলতা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ক্রাউডফান্ডিংয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য কাজ করা ও নানাভাবে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের জন্য দেশে যাত্রা শুরু করেছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম। কিন্তু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলো হাই প্রফিটেবল ব্যবসায়িক ধারণা ছাড়া ফান্ডিং কার্যক্রম চালাবে না। পাশাপাশি তাদের কাজ তাদের নিয়ে যাদের কোটি টাকা প্রয়োজন। সেই ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের একটি সহজ মাধ্যম হতে পারে ক্রাউডফান্ডিং। তবে সবার আগে আমাদের দেশে যারা দাতা হিসেবে ভূমিকা রাখবেন বা রাখতে পারবেন, তাদের প্রস্ত্তত করতে হবে। তাদেরকে সচেতন করে তোলার কার্যক্রম নিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৩৫ কোটি লোক রয়েছে যাদের আয় বছরে ১০ হাজার ডলারের চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংকেরই এই প্রতিবেদন থেকে আমরা একটি ধারণা নিতে পারি, আমাদের দেশে এমন কতজন মানুষ রয়েছেন যাদের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ডলার বা তার বেশি। কিছু তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে এই সংখ্যাটা ১০ লাখের মতো পাওয়া গেছে। এদের মধ্য থেকে যদি ১ লাখ মানুষকে আমরা ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে পারি এবং তাদের আয়ের ১০০ ভাগের এক ভাগও যদি বার্ষিক সঞ্চয় বা বিনিয়োগ হিসেবে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়, তাহলে আমাদের দেশের ক্রাউডফান্ডিংয়ের ভলিউম দাঁড়াবে ১ কোটি ডলারে, যার ৪০ ভাগ ব্যবসায় বাণিজ্যের বিনিয়োগে ফান্ডিং করলে এই খাত থেকে বছরে অন্তত ৫শ’ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার সুযোগ তৈরি হবে, যা আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় আকারের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বিশ্বে যেভাবে ক্রাউডফান্ডিংয়ের উন্নতির গ্রাফ ওপরের দিকে উঠছে, আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়তে শুরু করলে ধারণা করা যায়, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এর ভলিউম ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
পরিশেষ
শুরুতেই আমরা ক্রাউডফান্ডিংয়ের সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে না পারলেও এর মাধ্যমে আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা সমাজের নানা সমস্যার সমাধানে অর্থের সঙ্কুলান করতে পারবেন সহজেই। ব্যবসায় বাণিজ্যের দিক থেকে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা এর সম্পূর্ণ সুফল পেতে পারেন। রিওয়ার্ডভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং সেবা ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বৈপস্নবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। পেবল স্মার্টওয়াচ এর একটি বাস্তব উদাহরণ। তবে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা
ক্রাউডফান্ডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই একাডেমিক রিসার্চ করার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স পারচেস করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন যেহেতু গবেষণার জন্য খুব ভালো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেই, তাই যারা গবেষণা করতে চান তারা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে সহজে তা করতে পারবেন বলেই আশা করা যায়।
০ টি মন্তব্য