সাইবার জালিয়াতি কথাটার সঙ্গে এখন কমবেশি সকলেই পরিচিত। প্রায়শই শোনা যায় যে, ইউজারদেরকে প্রতারিত করে হ্যাকাররা তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব করে দিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই কাজে জালিয়াতদের মূল অস্ত্র হল ভুয়ো এসএমএস বা ফোন কল। বলতে গেলে, প্রতিনিয়তই ভারতসহ গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন ঘটনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এবার মুম্বইয়ে ঘটা এরকমই একটি ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এল। অতিসম্প্রতি জানা গিয়েছে যে, ভুয়ো এসএমএসে উল্লিখিত লিঙ্কে অসাবধানতাবশত ক্লিক করার ফলে এক মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ টাকারও বেশি গায়েব হয়ে গিয়েছে। ঠিক কী ঘটেছে, আসুন জেনে নিই…
ভুয়ো মেসেজে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করায় অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব লক্ষাধিক টাকা
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মুম্বইয়ের আন্ধেরির বাসিন্দা উর্বশী ফেটিয়া (Urvashi Phetiya) নামে এক মহিলার মোবাইল নম্বরে পরপর ৩টি ওটিপি (OTP) মেসেজ আসে। এই মেসেজগুলির মারফত উর্বশীকে তার প্যান কার্ড আপডেট করতে বলা হয়। ওটিপিসহ আসা এই মেসেজগুলিতে ওই মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের একটি লিঙ্কেরও উল্লেখ ছিল। এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করা মাত্রই উর্বশীর মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড চলে আসে। এবং এসএমএসে উল্লিখিত নির্দেশিকা অনুযায়ী তিনি তৎক্ষণাৎ সেই পাসওয়ার্ডটিকে এন্টার করে ফেলেন, আর এর পরেই ঘটে যায় মারাত্মক বিপদ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম ওটিপিটি এন্টার করা মাত্রই ওই মহিলার মোবাইলে আরও তিনটি ওটিপি মেসেজ চলে আসে। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে ওই তিনটি ওটিপিও এন্টার করেন। এতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ঘূণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি যে তার জন্য কী ভয়ঙ্কর বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে। কিন্তু এর কিছু সময় পরেই উর্বশী জানতে পারেন যে, তার অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। সাথে একথাও জানা যায় যে, মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই তিনটি ট্রানজ্যাকশন মারফত ওই টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেয় হ্যাকাররা।
পুলিশ অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করছে
সংবাদমাধ্যমকে ওই মহিলা জানিয়েছেন যে, অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই এতগুলি ট্রানজ্যাকশন হওয়ায় ব্যাংকের তরফ থেকে তার কাছে ফোন আসে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে চায় যে প্রকৃতপক্ষে তিনিই ওই ট্রানজ্যাকশনগুলি করেছেন কি না। আর এর ফলেই উর্বশী বুঝতে পারেন যে, নিজের অজান্তেই তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। এরপর অনতিবিলম্বে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, আলোচ্য জালিয়াতির ঘটনাটির প্রসঙ্গে এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, যখন ওই মহিলা ভুয়ো মেসেজে উল্লিখিত লিঙ্কটিতে ক্লিক করেন, তখন তার ফোনের অ্যাক্সেস ফোন মিররিং অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যামারদের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। এর ফলে ফোনের যাবতীয় অ্যাক্টিভিটির ওপর নজর রাখতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। তবে যে নম্বর থেকে ওই মহিলার কাছে এসএমএস এসেছে, সেটিকে ট্র্যাক করার চেষ্টা চলছে।
নিরাপদে থাকতে হলে কী করবেন জেনে নিন
দিন-কে-দিন সাইবার জালিয়াতির ঘটনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও হ্যাকারদের বাড়বাড়ন্ত রোখার কোনো উপায় নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকতে হলে নিজেদেরকেই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। তাই ইউজারদের কোনো স্প্যাম কল কিংবা মেসেজের রিপ্লাই না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি কেওয়াইসি (KYC) আপডেট করা বা লটারির মারফত জেতা লোভনীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য কোনো লিঙ্কে ক্লিক করা কখনোই উচিত নয়। শুধু তাই নয়, ফোনে থার্ড-পার্টি সাইট থেকে কোনো অ্যাপ বা সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করা থেকেও বিরত থাকতে হবে ব্যবহারকারীদের। আসলে নিত্যদিনই বিভিন্ন ধরনের সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ পেতে সহজসরল মানুষদেরকে ঠকিয়ে চলেছে এক শ্রেণীর মানুষ, তাই এমত পরিস্থিতিতে তাদের হাত থেকে বাঁচতে হলে চোখকান খোলা রাখার পাশাপাশি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে চলাই শ্রেয়।
০ টি মন্তব্য