পিছিয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাত। সমধিক পরিচিত আইসিটি খাত নামে। আইসিটি আজ আমাদের সবার জীবনকে ছুঁয়ে যায়। ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউই আজ আইসিটিকে এড়িয়ে চলতে পারছে না। জাতীয় জীবনও অচল এই আইসিটি ছাড়া। সময় আজ গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে এই উপলব্ধি জাগিয়েছে। মানুষ আজ সম্যক উপলব্ধি করছে- আইসিটিকে অনুষঙ্গ করেই জীবনযাপন করতে হবে। অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আইসিটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই।
এই উপলব্ধি আমাদের মধ্যেও জেগেছে ঠিকই, কিন্তু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তাবায়নে আমরা সে উপলব্ধির প্রতিফলন দেখাতে পারিনি বলেই আইসিটি খাতে আমাদের পিছিয়ে থাকা। এখন চরম সময় এসেছে অতীতের সব ভুলভ্রামিত্মকে পায়ে দলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা আছে : প্রথমত, এক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যেই এগিয়ে গেছে, তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো এবং দ্বিতীয়ত, নিজেদেরকে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত রেখে নিজস্ব নতুন নতুন পথের উদ্ভাবন।
এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদেরকে নজর রাখতে হবে অন্যদের এগিয়ে চলার ধারাপ্রবাহের ওপর। খুব বেশি দূরে যাবার দরকার নেই। আমাদের এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকানোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এটুকু স্পষ্ট, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের এগিয়ে চলা চোখে পড়ার মতো। ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আজ প্রধানত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই আইসিটি খাতের ওপর। অতি সম্প্রতি বিশ্ব বিপিও বাজারে ভারতের সরব উপস্থিতি আমাদেরকে আশান্বিত করে এই বলে যে, আমরাও পারবো বিশ্ববাজারে অন্তত ১ শতাংশে হলেও ভাগ বসাতে। ২০১০ সালে বিশ্ব বিপিও বাজারে পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ হাজার কোটি ডলার। এক্ষেত্রে সেরা অবস্থান নিশ্চিতভাবে থাকবে ভারতের। ভারতের পরপর আসবে চীন, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার অবস্থান। আমরা যদি বিশ্ব বিপিও বাজারের এক শতাংশ ধরার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করি, তবে আমরা ১৮০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ পাবো। মনে রাখতে হবে, এ খাতটি অন্য খাতের তুলনায় লাভজনক। কারণ, এ খাতে যে অর্থ আয় হবে, তার পুরোটাই বাংলাদেশে থেকে যাবে। মোবাইল ফোন কিংবা তৈরি পোশাক শিল্প খাতে অর্জিত আয়ের বিপুল অংশ চলে যায় দেশের বাইরে।
ভারত বর্তমানে বিশ্ব বিপিও বাজারের ক্ষেত্রে নিজেকে তৈরি করে একটি ‘destination of choice’-এ। একটি সমীক্ষা মতে, বিগত ৩ বছরে ভারতে বিপিও খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩৫ শতাংশ হারে। বর্তমান গতিতে ভারতীয় বিপিও এগিয়ে গেলে ২০১২ সালের মধ্যে এ খাতে ভারতের আয় ৩০০০ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। অর্থাৎ বিশ্ব বিপিও বাজারে এক-পঞ্চমাংশ থেকে এক-ষষ্ঠাংশই চলে যাবে ভারতের দখলে। আমাদের এখন এই খাতে সাফল্য অর্জন করতে হলে ভারতের অভিজ্ঞতাকে যেমনি কাজে লাগাতে হবে, তেমনি রয়েছে আমাদের কিছু আশুকরণীয়। এসব করণীয় উল্লেখসহ এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে চলতি সংখ্যার ‘রমরমা বিশ্ব বিপিও বাজার, ভারত এগিয়েছে, আমরাও পারবো’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।
আরেকটি বিষয়, বিশ্বব্যাপী এখন সময়ের সাথে আইসিটিবিষয়ক নানামুখী কাজ বাড়ছে। ফলে সেই সাথে কদর বাড়ছে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা। আইসিটি বাজার ধরতে হলে আমাদের প্রয়োজন হবে একটি আইসিটি জনবল গড়ে তোলা। উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই শুধু তা সম্ভব। এ ব্যাপারে তরুণদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। আশা করি তা পাঠে তরুণ প্রজন্ম উপকৃত হবে।
০ টি মন্তব্য