তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষা
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ড্রপআউট বা ঝরেপড়ার হারটা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি৷ ফলে আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় উচ্চশিক্ষিত জনবল নেই৷ এর অন্যতম কারণ আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি৷ অবশ্য অনেকে এর কারণ হিসেবে আমাদের শিক্ষানীতিকে দায়ী করেন৷ এক দশক আগেও আমাদের দেশের ধনী পরিবারের ছাত্ররা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতো৷ এর ফলে দেশ থেকে চলে যেত প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা৷ এই অবস্থার পরিবর্তন এবং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বিশ্বমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯১ সালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইন চালু হয়৷ পরিবর্তন আসে দেশের উচ্চশিক্ষার পাঠক্রমে৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন শিক্ষায় এগিয়ে চলেছে৷ এর পরও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষায় দেশের ছাত্রদের আগ্রহে ঘাটতি লক্ষ করা যায়৷ ইতোমধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে৷ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষায় দেশের ছাত্রদের একটা দিকনির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যেই আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন৷ আমাদের আশা, মাধ্যমিকের পর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষার একটা গাইডলাইন পাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা৷ এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করেছেন মর্তুজা আশীষ আহমেদ এবং মাইনূর হোসেন নিহাদ ৷
১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন চালু করার পর এদেশে যত্রতত্র নানা মাত্রার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠতে থাকে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইতোমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে৷ অথচ শুরুর দিকে অনেকেরই ধারণা ছিল, যাদের বেশি টাকাপয়সা আছে তাদের জন্যই এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়৷ এখন এ ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ এখন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে৷ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পড়াশোনার দিকেও অনেক এগিয়েছে৷ কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যা ঙ্কিংয়েও বেশ উপরের দিকে স্থান করে নিয়েছে৷ তাই দেখা যায়, অনেক ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বেশি আগ্রহী৷
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃতির ফলে আধুনিক বিশ্বের সাথে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন ঘটছে৷ এর শুরুটা হয়েছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে৷ এটি এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ছে৷ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরনো আমলের পাঠসূচি বদলে আধুনিক পাঠসূচি অনুসরণ করছে৷ তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, এতকিছুর পরও তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের অসামঞ্জস্য থেকেই যাচ্ছে৷ আমাদের দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যবহারিকের প্রয়োগ কম৷ ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি শুধু সার্টিফিকেটসর্বস্ব৷ এতে করে ছাত্র-অভিভাবক সবাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান৷
প্রায় সবার মধ্যেই কে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করবে সেই দ্বিধার পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠান পড়াশোনার জন্য ভালো, সে ধরনের দ্বিধাও কাজ করে৷ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যা ঙ্কিংকিয়ে উপরের দিকে স্থান করে নিয়েছে৷ স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান সাইবার মেট্রিক্স ল্যাব তাদের জরিপের ওপর ভিত্তি করে এর র্যা ঙ্কিং প্রকাশ করেছে৷ ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে (webometrics.info থেকে জানুয়ারি, ২০০৮ পর্যন্ত সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী)৷ বিস্তারিত জানতে : http://www.webometrics.info/rank_by_ country_select.asp এই সাইটটি ভিজিট করুন৷
দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা
আমাদের দেশে এখন আইসিটিতে উচ্চশিক্ষার যথেষ্ট সুযোগ আছে৷ বিশবিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে৷ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন৷ দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আদর্শ, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো৷
বুয়েট
বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েট হচ্ছে দেশের সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুটা হয়েছিল আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আহছানউল্লাহ টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে৷ আহছানউল্লাহ টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল সে সময়ের নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ৷ সময়ের প্রবাহে আজ এটি দেশের সেরা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়৷ দীর্ঘদিন এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধীনে থাকলেও এখন এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়৷
উচ্চ মাধ্যমিকের পর শুধু দেশের সবদিক থেকে সেরা ছাত্ররাই এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে থাকে৷ এখানে আইসিটির দুটি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্স পড়া যায়৷ এগুলো হচ্ছে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং৷ স্নাতকের ক্ষেত্রে বছরে একটি সেমিস্টার এবং স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে বছরে ২টি সেমিস্টার চালু আছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে৷ স্নাতকের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ভর্তি পরীক্ষায় একবার বাদ পড়া ছাত্র দ্বিতীয়বার আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না৷
স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ছাড়াও এখানে আইসিটিভিত্তিক বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্সও চালু আছে৷ বিশ্বের নামীদামী প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ডে এসব সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে৷ সিসকো সিস্টেমসের বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক কোর্স এর মধ্যে অন্যতম ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একসময় দুই বাংলা মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কলকাতা৷ বঙ্গভঙ্গের পর থেকেই চিন্তাভাবনা করা হয় ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের৷ ১৮৬১ সালে স্থাপিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷ এটি দেশের প্রথম ও প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়৷ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সব রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এই বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পড়াশোনা এবং মানের ক্ষেত্রে কখনো এই বিশ্ববিদ্যালয় আপোস করেনি৷ তাই আজো দেশের এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এক বিশ্বস্ত বিদ্যাপিঠের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটিভিত্তিক যে বিষয়টি সবদিক থেকে আলোচিত তা হচ্ছে কমপিউটার বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্স৷ প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র এই অনুষদে পড়াশোনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে৷ বছরে একটি সেমিস্টারে এই বিষয়ে ছাত্র ভর্তি করা হয়৷
০ টি মন্তব্য