ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রবৃদ্ধিশীল বেসরকারি খাত: বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের সমীক্ষা।
২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার ঢাকা: ব্যবসায়িক কমিউনিটি, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত সম্প্রসারণে প্রবৃদ্ধিশীল ভোক্তা বাজার, সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার নিয়ে ক্রমবর্ধমান গিগ ইকোনোমি, সাথে ডিজিটাল রূপান্তর এবং সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করে চলেছে। ২৫ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার প্রকাশিত 'দ্য ট্রিলিয়ন-ডলার প্রাইজ - লোকাল চ্যাম্পিয়নস লিডিং দ্য ওয়ে' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম ‘বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ’ সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপর্যয় সত্ত্বেও কীভাবে দেশটির অর্থনীতি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এর ওপর আলোকপাত করে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। শুক্রবার রাজধানীর দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এ সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন যে বঙ্গবন্ধু দেশের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মাটি ও মানুষের বিষয়ে গুরত্ব দিয়েছেন। এই সম্পদ দুটোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত করা সম্ভব।
প্রতিমন্ত্রী করোনা কালীন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তা সফলভাবে মোকাবেলায় প্রয়োগকৃত কৌশলগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, আমরা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে বিশ্বাসী। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি যে ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অন্তত ৫টি ইউনিকর্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গড়ে উঠবে।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক আগেই ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। এ বিষয়টি এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপকে এ ধরনের সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যেখানে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার চিত্র উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের কর্পোরেট কমার্শিয়াল ব্যাংকিংয়ের কান্ট্রি হেড রিয়াজ এ চৌধুরী। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হ্যান্স-পল বার্কনার, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের সিনিয়র পার্টনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জারিফ মুনির, প্রতিষ্ঠানটির পার্টনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শৈবাল চক্রবর্তী এবং বোস্টন কলসাল্টিং গ্রুপের পার্টনার তৌসিফ ইশতিয়াক সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এ প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করতে অপ্টিমিস্টিক আউটলুক (দৃঢ় আশাবাদ), গিগ ইকোনমি (ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল খণ্ডকালীন কাজ), ভোগ্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি, তরুণ ও ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা (হাই ইকোনমিক রেজিলিয়্যান্স), ডিজিটাল মাধ্যমের বহুল ব্যবহার, সরকারি উদ্যোগ এবং একটি বৃহৎ, সু-সংগঠিত বেসরকারি খাত সহ বিভিন্ন বিষয় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস ড. হ্যান্স-পল বার্কনার বলেন, “বাংলাদেশ এখন অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য রোল মডেল। এ দেশটি ইতোমধ্যে অনেক কিছু অর্জন করেছে; বিশেষ করে, দেশের বেসরকারি খাতের অপরিসীম অবদানের কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রূপান্তর এবং দেশের বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান এ গতিকে ত্বরাণ্বিত করেছে। লক্ষ্য অর্জন করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় বেসরকারি খাতের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে রূপরেখা আমাদের সমীক্ষায় প্রকাশ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের সিনিয়র পার্টনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জারিফ মুনির বলেন, “এ প্রতিবেদন নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। ৫-৭ বছর আগে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দেশের প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে; অন্যদিকে বেসরকারি খাত থেকে উদীয়মান চ্যাম্পিয়নরা তৈরি হয়েছে, যাদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে – পরিণত হবে ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনোমিতে। আমাদের উদীয়মান চ্যাম্পিয়নদের বৈশ্বিকভাবেও বিস্তৃতির লক্ষ্য রয়েছে এবং এক্ষেত্রে তাদের এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র হবে; সবসময় রূপান্তরে প্রাধান্য দেয়া, সামাজিক প্রভাবসহ আরও অনেক বিষয়।”
এছাড়া, সমীক্ষায় চ্যাম্পিয়নদের জন্য (কর্পোরেট খাতের ইকোসিস্টেম সংশ্লিষ্ট অংশীজন) অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের করণীয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়েছে; যেন জাতীয় প্রোগ্রাম ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে তারা পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
০ টি মন্তব্য