ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল সংযুক্তি শিল্প-বাণিজ্য ও শিক্ষাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় রূপান্তর করে বাংলাদেশ জনগণের প্রচলিত জীবনধারা বদলে দিয়েছে, বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত্তির ঊপর ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। তিনি ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি স্মার্ট মানব সম্পদ তৈরিতে উদ্ভাবনী রিসার্চ এণ্ড ডেভেলপমেন্ট খাতে জেডটিই ও হুয়াইওসহ বিশ্বের খ্যাতিমান প্রযুক্তি জায়ান্টদের প্রতি বাংলাদেশে অবদান রাখার সুযোগ কাজে লাগাতে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বাংলাদেশে কাঙ্খিত মানের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর এই সংক্রান্ত ইতোপূর্বে প্রদত্ত নির্দেশনার বিষয়গুলো টেলিকম প্রযুক্তি ও সেবাদানকারী সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে দেন।
বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০২৩ এ বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের স্টল পরিদর্শনকালে প্রযুক্তি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ও জেডটিই এবং মোবাইল অপারেটর টেলিনর, ও ভিওন গ্রুপ কর্মকর্তাদের সাথে সাইড লাইনে পৃথক পৃথক বৈঠকে সচিব এ আহবান জানান।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বাংলাদেশের টেলিকম খাতের সার্বিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সংযোগ খাত বিনিয়োগের একটি থ্রাস্ট সেক্টর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়-এর দিকনির্দেশায় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এর নিরন্তর প্রচেষ্টায় যুগান্তকারি অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময় বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে ফাইভজিসহ শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি এবং শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর করতে কাজ করছে সরকার উল্লেখ করে সচিব বলেন, উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ মোবাইল ও টেলিযোগাযোগ সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কাজ করছে।
‘দরিদ্রতামুক্ত বিশ্বের জন্য মানুষকে ক্ষমতায়িত করতে আগামী দিনের প্রযুক্তি উন্মোচিত হোক আজ’- স্লোগান নিয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) স্পেনের বার্সেলোনায় জমকালো উদ্বোধন হয়েছে এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের। স্পেনের রাজা ফিলিপ প্রায় দেড় লাখ মানুষের সামনে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রেডো সানচেজও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের দেড় লাখ প্রযুক্তিপ্রেমী মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অংশ গ্রহণ করেন।রাজা ফিলিপ সবাইকে স্বাগত জানান।
তিনি আগামী দিনের জন্য প্রযুক্তির মানবিক ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গেই এগিয়ে যেতে হবে আরও বহুদূর। উদ্ভাবক এবং সেবাদাতাদের মনে রাখতে হবে, সেই প্রযুক্তি যেন মানুষের সভ্যতাকে মানবিকতা থেকে সরিয়ে হৃদয়হীন যান্ত্রিক না করে তোলে।
স্পেনের প্রেসিডেন্টও একই আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন প্রযুক্তির ব্যবহারে মানবকল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগঠন জিএসএমএর চেয়ারম্যান হোসে মারিয়া আলভারেজ প্যালেট লোপেজসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জিএসএমএ চেয়ারম্যান বলেন, এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের চরিত্র আগের চেয়ে একটু আলাদা, যার প্রতিফলন মূল প্রতিপাদ্যেই আছে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
প্রায় ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী কেন্দ্র দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকলেও সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ রয়েছে বিশ্বের বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নগুলোর দিকে। স্যামসাং, জেডটিই, হুয়াওয়ে, অরেঞ্জ, টি মোবাইল, ইনটেল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, এরিকসনের প্যাভিলিয়নগুলোতে বেশ ভিড়। নতুন ধরনের ডিভাইস, নতুন ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, এমনকি আগামীতে কী ধরনের প্রযুক্তি আসছে, সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলোতে। একেকটি প্যাভিলিয়ন যেন প্রযুক্তির একেকটি পৃথক পৃথিবী। জেডটিইর প্যাভিলিয়নে বড় আকারের স্মার্ট সিটির প্রদর্শনী সবাইকে মুগ্ধ করেছে। স্যামসাংয়ের প্রদর্শনী কেন্দ্রে কীভাবে তৈরি হয়েছে সর্বশেষ মডেলের স্মার্টফোন এস টোয়েন্টি-৩, তার পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ইনটেল দেখিয়েছে আগামী প্রজন্মের কম্পিউটারের সম্ভাব্য প্রসেসর। অরেঞ্জ দেখিয়েছে অদূর ভবিষ্যতের স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের আবেগ কীভাবে মিশে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জাদুস্পর্শে।
এবারের আয়োজনের আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, আগামী দিনে যে স্মার্ট প্রযুক্তির দুনিয়া গড়ে তোলা হবে, তার একটি রূপরেখা ‘ভেলোসিটি’র সংযোজন। ভেলোসিটি হচ্ছে বিশ্বের প্রযুক্তি উদ্ভাবক এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সমন্বিত উদ্যোগ। যার উদ্যোক্তারা এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের মূল আয়োজকের ভূমিকায় রয়েছেন। ভেলোসিটি উদ্যোগের মূল বক্তব্য হচ্ছে, চলতি বছরের শেষেই প্রায় ১০০ কোটি মানুষ যুক্ত হবে ফাইভজিতে। আগামী বছর থেকে দেশে দেশে দ্রুত দৃশ্যমান হবে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার। কোনো দেশই যেন সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে পিছিয়ে না থাকে, সেটাই নিশ্চিত হবে ভেলোসিটি উদ্যোগের মধ্য দিয়ে। দেশে দেশে ভাষা, ঐতিহ্য, জাতিগত ভেদাভেদ থাকলেও স্মার্ট মানুষের চিন্তা, অনুভূতির ভেতরে যেন ঐকতান থাকে, স্মার্ট সিটিগুলোর চেহারায় যেন একই বিন্যাসের প্রতিফলন ঘটে, সেটাই নিশ্চিত হবে ভেলোসিটি উদ্যোগের মাধ্যমে।
বৈঠককালে জেডটিই কর্পোরেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মি: মেই, হুয়াওয়ে এর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্য বিষয়ক প্রেসিডেন্ট ক্যাথরিন গুয়েনসহ টেলিনর এবং ভিওন গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তাগ্ণ উপস্থিত ছিলেন।
বিটিআরসি কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, বিটিআরসির ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবু তালেব এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
০ টি মন্তব্য