প্রযুক্তির খাতিরে আজকাল যোগাযোগ সহজ হয়েছে। বিশ্বের একপাশে বসে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অন্য পাশে আপনার প্রিয়জনের সাথে সহজেই কথা বলতে পারেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনও খুবই উদাসীন।
অনেকে না জেনে কিছু ভুল করে, আবার কিছু মানুষ জেনেশুনেই করে। অনেকে মনে করেন যে তারা কম্পিউটারের পর্দার আড়ালে যা খুশি বলতে পারেন। হ্যাঁ, আপনি বলতে পারেন তার মানে এই নয় যে আপনার কথায় অন্যকে আঘাত করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ভদ্রতা মেনে চলা উচিত। কারণ কম্পিউটার স্ক্রিনের অন্য দিকে আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার কথা আপনি ভুলে যাবেন না।
যে কথা আপনি সামনাসামনি বলতে পারবেন না সেই কথা অনলাইনেও বলা উচিত নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু সাইবার বুলিং নয় আরও বেশ কিছু কাজ আছে যা অন্যদের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। তাই আজকে এমন নয় কাজ নিয়ে কথা বলব যা আপনার কখনোই অনলাইনে করা উচিত নয়।
আপনার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করবেন না
আমাদের অনেকেরই অনলাইন ব্যক্তিত্ব এবং অফলাইন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। অনলাইনে তাদের ব্যবহার দেখে মানুষ যেমন আকৃষ্ট হয় তেমনি অফলাইনে তাদের ব্যবহার দেখে হয়তো আশাহত হয়। যারা এই ধরনের দ্বৈত জীবনযাপন করে তাদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা থাকে এবং তারা সামাজিক অবক্ষয়েরও ঝুঁকিতে থাকে। তাই অনলাইনে বা অফলাইনে আপনার প্রকৃত ব্যক্তিত্বকে মানুষের সামনে তুলে ধরুন।
অযথা কাউকে ট্যাগ করবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ছবি পোস্ট করার আগে, ফটো আপলোড করার সময় আপনি যাদের সাথে একটি ছবি তুলেছেন তাদের ট্যাগ করতে পারেন কিনা জিজ্ঞাসা করুন। কারণ অনেকেই এই ট্যাগ করার বিষয়টি পছন্দ করেন না। কারণ ট্যাগ করার ফলে অনেক নোটিফিকেশন আসে যার কারণে অনেকেই বিরক্ত হয়।
কাউকে অপমান করবেন না
কখনো কারো ছবি বা পোস্ট দেখে অপমানজনক কিছু বলবেন না। আপনার তাকে পছন্দ না হলে তাদের এড়িয়ে যান। ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করতে তাদের অনলাইনে আক্রমণ করবেন না। এগুলি সাইবার বুলিং এর বিভাগে পড়ে এবং আপনাকে আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে৷ এছাড়াও, আপনার পরিবার এবং অফিস সহকর্মীদের মধ্যে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ব্যক্তিগত এবং পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট রাখুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা অনেক চাকরিতে বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুরা আপনাকে নিয়ে মজা করতে পারে বা আপনাকে একটি মেম দিয়ে ট্যাগ করতে পারে, যা আপনি কখনই চান না যে আপনার অফিস ম্যানেজার বা ক্লায়েন্ট দেখুক। তাই আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট রাখুন।
অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানাবেন না
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানো উচিত নয়। ব্যক্তি জীবনে যাদের আপনি বন্ধু হিসেবে চাচ্ছেন না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন তাদের বন্ধু বানাবেন? এই সময়ে অপরিচিত কাউকে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার মাধ্যমে আপানার নিরাপত্তার ব্যঘাত ঘটতে পারে। এছাড়া আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাই অপরিচিত কাউকে কখনোই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু বানাবেন না।
রাগ প্রকাশ করবেন না
মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়। আপনি আপনার জীবনের সুখী মুহূর্তগুলি অন্যদের সাথে ভাগ করতে চান। কিন্তু রাগ প্রায়ই এমন কিছু প্রকাশ করে যা অন্যদের কাছে যেমন অপ্রীতিকর তেমনি নিজের কাছে বিব্রতকর। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনই রাগ প্রকাশ করবেন না। লোকেরা আপনাকে অনলাইনে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু পর্দার আড়ালে আপনাকে নিয়ে মজা করে।
অন্যের অনুমতি ছাড়া ছবি ব্যবহার করবেন না
কেউ আপনার সাথে ছবি তুলতে রাজি হয়েছে তার মানে এই নয় যে আপনি তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করবেন। আবার কারও টাইমলাইন থেকে ছবি নিয়ে সেটা নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া একধরণের অপরাধ। তাই কারও ছবি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়ে ছবি আপলোড করবেন।
গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন
প্রযুক্তির কল্যাণে খুব সহজেই খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায়। আর সেক্ষেত্রে সাহায্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শেয়ার অপশনগুলো।কিন্তু বিভিন্ন খবর শেয়ার করার আগে জেনে নিন সেগুলো সঠিক কিনা। কারণ এসব ভুল খবর ছাড়ানোর ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। ভুল খবর বা গুজব ছাড়ানোর ফলে অনেক সময় নানা অপ্রীতিকর সমস্যার সৃষ্টি হয়।
নিজের ব্যক্তিগত সকল খবর পোস্ট করা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমারেখা মেনে চলা উচিত। আপনি যদি সর্বদা নিজের ব্যক্তিগত সকল ঘটনা ও ছবি আপলোড করতে থাকেন তাহলে সেটা অনেক সময় মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন হয়ে যায় যে, কেউ এগুলো জানতে চাচ্ছে না আর আপনি জোর করে তাদের শোনাচ্ছেন। তাই নিজের ব্যক্তিগত সকল ঘটনা সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে আপলোড করা এড়িয়ে চলুন।
সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষ আজকাল অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর এর প্রধান কারণ সামাজিক নেটওয়ার্কের অসচেতন ব্যবহার। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সূত্র: রিডার ডাইজেস্ট
০ টি মন্তব্য