৯ম বারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে ও বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩ জমকালো পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফলভাবে শেষ হলো। ৬ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই হ্যাকাথন চলে একটানা ৩৬ ঘন্টা। শনিবার, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর অডিটোরিয়ামে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩ এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউবি-এর উপাচার্য প্রফেসর তানভীর হাসান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এর আহ্বায়ক তানভীর হোসেন খান বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এ এবার দেশের ৯টি শহর থেকে ২ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। সেখান থেকে বাছাইকৃত ২১০টি প্রকল্পের মধ্যে হাইব্রিড মডেলে শীর্ষ ৫০টি প্রকল্প নিয়ে আইইউবি-তে সরাসরি এবং বাকি ১৬০টি প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় দুইদিনব্যাপী হ্যাকাথন।
আমরা বিগত তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি এবং আমি বিশ্বাস করি এই গৌরবের ধারা অব্যহত থাকবে। বাংলাদেশের ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার বলেন, “এটা অসাধারণ যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আপনাদের নিজেদেরকে নিয়ে আপনাদের গর্ব করা উচিৎ।
আমি পরের বছর আবারো আপনাদের মধ্য থেকে চতুর্থ বারের মতো বিজয়ী দল দেখতে চাই। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে আপনাদের এই বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আইইউবি-এর উপাচার্য প্রফেসর তানভীর হাসান বলেন, এই ইভেন্টটি শুধুমাত্র আমাদের দেশের তরুণদের জন্যই নয় বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উৎকর্ষ সাধনের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সর্বদা মানুষের অগ্রগতির অগ্রভাগে রয়েছে। আমরা যে বিশ্বে বাস করি সেটিকে আকার দিয়েছে এবং মানবতার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে।
আমরা বর্তমানে একটি নতুন শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, শিল্প এবং সমাজকে নতুন আকার দিচ্ছে। এটি সর্বোপরি আমাদের তরুণদের আগামী দিনের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ হওয়ার জন্য উত্সাহিত করবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩ হল একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম যা শুধুমাত্র উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে না বরং আমাদের তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি শেখার আগ্রহ জাগায়।
এটি সৃজনশীল এবং স্বাধীন চিন্তা শক্তি প্রয়োগের উপযুক্ত স্থান। বেসিস টানা ৯ম বারের মতো এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় আমি তাদের প্রশংসা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই ধারাবাহিকতা আমাদের তরুণদেরকে উজ্জীবিত করবে এবং চতুর্থবার বিশ্বজয় করবে বলে আমি আশা করি।
সমাপনী বক্তব্যে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর মতো উদ্যোগগুলি আমাদের শিক্ষাগত প্রচেষ্টাকে পরিপূরক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে যা পাঠ্যপুস্তক এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে। তরুণ মনকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবংবিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের বাস্তবধর্মী সমাধান করে আগামী দিনের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবক হওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে।
এটি আমাদের তরুণদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে, উত্তর খুঁজতে এবং মহাবিশ্বের বিস্ময়কে জানতে উত্সাহিত করবে৷ স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা নতুন দিগন্তের দরজা খুলে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি এবং উদ্ভাবন উভয় ক্ষেত্রেই সক্ষমতার জানান দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান ও আরিফুল হাসান অপু। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করেছে।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ১ কোটি শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ২ লাখ শিক্ষার্থীর সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন ফুটিয়ে তুলে ধরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক’। ২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’।
২০২২ সালে "টিম ডায়মন্ডস" - "সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক" বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। উক্ত সাফল্যসমূহ বাংলাদেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা, প্রতিভা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩ এ বিজয়ী হয়েছেন: ঢাকা- উইনার: টিম রুবাস্ট, রানার্স-আপ: টিম অ্যাস্ট্রোটাইটান্স, ২য় রানার্স-আপ: টিম এক্লিপ্সো, চট্টগ্রাম- উইনার: টিম আলফা, রানার্স-আপ:টিম তুখোড়, ২য় রানার্স-আপ: টিম প্লেক্সাস, রাজশাহী- উইনার: টিম ভয়েজার্স, রানার্স-আপ: টিম এরর ৪০৪, ২য় রানার্স-আপ: টিম মার্স মার্ভেল, কুমিল্লা- উইনার: টিম হাইব্রিড, রানার্স-আপ: টিম এজফ্লাই, ২য় রানার্স-আপ: টিম মুনর্যাকার্স, সিলেট- উইনার: টিম এক্লিপ্সিয়া, রানার্স-আপ: টিম প্রস্ফুট, ২য় রানার্স-আপ: টিম অ্যাস্ট্রোগ্লাইড, খুলনা- উইনার: টিম স্টর্ম ট্রুপার্স, রানার্স-আপ: টিম মহাকর্ষ, ২য় রানার্স-আপ: টিম অনির্বাণ, বরিশাল- উইনার: দ্য টাইটানস, রানার্স-আপ: ইয়োট্টাবাইট, ২য় রানার্স-আপ: টিম স্পেস আলকেমিস্টস, রংপুর- উইনার: টিম রিকার্শন, রানার্স-আপ: দ্য স্পেস স্কোয়াড, ২য় রানার্স-আপ: টিম গ্যালাক্টিক গ্ল্যাডিয়েটরস, ময়মনসিংহ- উইনার: টিম ইনসেপশন লাস্ট হোপ, রানার্স-আপ: টিম সোলারসেন্টিনেল, ২য় রানার্স-আপ: টিম লুনার এ্যালাইস।
০ টি মন্তব্য