https://www.brandellaltd.com/

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও স্মার্ট বাংলাদেশ

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও স্মার্ট বাংলাদেশ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও স্মার্ট বাংলাদেশ
 

একবিংশ শতাব্দীর এ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে দাঁড়াতে চাইলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন তথা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জ্ঞানের ভিত্তিতেই  কেবল এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে একটি উৎপাদনশীল জনশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি তার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা; যিনি রাষ্ট্র পরিচালনা, নেতৃত্বের দক্ষতা, মানবিকতায় শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই প্রতিষ্ঠিত। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের নাম; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ। বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব সুবিধা আজ আমাদের হাতের নাগালে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে আমাদের এ অবস্থানে পৌঁছানোর পথ খুব সহজ ছিল না। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন রূপকল্প ২০২১ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, ঘোষণা দেন রূপকল্প ২০২১-এর, সে সময় তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের দেশের অবস্থান ছিল রপছনের সারিতে। ওই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার এ প্রস্তাবনা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ মূলত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। ডিজিটাল প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ তার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।


সারা বিশ্ব এ মুহূর্তে একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাকে আমরা বলছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের জীবনমানকে আরও সহজতর করা। এর ফলে আমাদের জীবনযাত্রা এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ও পদ্ধতিগুলো মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সবকিছুই ইন্টারনেট ও ইন্টারনেটকেন্দ্রিক স্মার্ট ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়া শুধুমাত্র প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নয়, আমাদের জীবনধারণের সব ক্ষেত্রকেই পরিবর্তন করে দিচ্ছে। 


চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আর একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা হলো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্পের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের, যার মূল স্তম্ভ হবে চারটি- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ। 


চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লকচেইন, ন্যানোটেকনোলজি, থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মতো আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, অর্থনীতি, গভন্যর্ান্সসহ বিভিন্ন খাত অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ রূপকল্পের কর্মপরিকল্পনায় স্থান পাচ্ছে তারুণ্যের মেধা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং উদ্ভাবনী জাতি গঠন। চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।


স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা সর্বত্র প্রযুক্তিনির্ভর। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম সিদ্ধান্ত হলো- ডিজিটাল ইনক্লুশন ফর ভালনারেবল এক্সেপশন (ডাইভ)-এর আওতায় আত্মকর্মসংস্থান ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ; ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’-এর আওতায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করা; স্মার্ট সরকার গড়ে তুলতে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপন। রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগে আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রমনির্ভর আমাদের যে অর্থনীতি, তাতে প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তার বিকল্প উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে শ্রমনির্ভর কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে এবং বাড়তে থাকবে। এই প্রযুক্তির বিশ্বব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য, মধ্যম থেকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধা ও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি কতটা কাক্সিক্ষত হয়ে উঠেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও কর্মঠ জনশক্তি। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। বিশ্বব্যাংকের মতে, জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির চারটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। তা হলো- প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়, ল্যাবরেটরিজ, ইনকিউবেটরস ইত্যাদি), উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম, মানসম্মত শিক্ষা এবং পর্যাপ্ত ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো। এই চারটি স্তম্ভ ব্যাপক পরিসরে দক্ষ জনবল তৈরিতে, উদ্যোক্তাদের পণ্য ও সেবার মানোন্নয়নে কাঠামোগত সুবিধা দেবে। পরিবর্তিত এই অর্থনীতিতে দেশের শ্রমবাজারে সমন্বয় ও পুনর্বিন্যাস ঘটবে। সেই পরিবর্তিত শ্রমবাজারে টিকে থাকতে হলে দেশের জনগণকেও হতে হবে ‘স্মার্ট’ ও দক্ষ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচলিত ধারার শিক্ষায় নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জ্ঞানকর্মী বানাতে হলে প্রথমে প্রচলিত শিক্ষার ধারাকে বদলাতে হবে। আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা ও কায়িক শ্রম কমিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষ তথা জ্ঞানকর্মীতে রূপান্তর করতে হবে। এই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে জ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্প নেই। আগামী বছরগুলোয় সারা বিশ্বে কোন ধরনের কাজের চাহিদা বাড়তে পারে, কোন ধরনের কাজের চাহিদা কমতে পারে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত ও শিক্ষাগত রূপান্তরও করতে হবে। 


আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওকলার জুলাই ২০২৩-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৩টি  দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। আর ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন আমাদের প্রয়োজন উচ্চগতিসম্পন্ন, সাশ্রয়ী এবং নিরবচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ, যা দেশজুড়ে বিস্তৃৃত থাকবে। সেই সঙ্গে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আইসিটি জরিপ ২০২২-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। জিএসএমএ, লন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা ৮৬ শতাংশ পুরুষের মোবাইল ফোন আছে, যেখানে নারী মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬১ শতাংশ; অর্থাৎ ২৯ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য এখানে বিদ্যমান রয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আরও প্রকট; যা প্রায় ৫১.৫ শতাংশ। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে এ লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের নারী সমাজকে পেছনে রেখে কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।   


স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিভাগগুলোয় আধুনিক ল্যাবরেটরি গঠনে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে, পর্যাপ্ত আইসিটি অবকাঠামো সৃষ্টি এবং নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট কানেকটিভিটি স্থাপন করতে হবে এবং গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দক্ষ শিক্ষক ও গবেষক নিয়োগ এবং গবেষণায় অর্থায়ন ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা ও উদ্ভাবনকে প্রাধান্য দিতে হবে। ইন্ডাস্টি্র, সরকার এবং একাডেমিয়ার মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করে দেশের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মৌলিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। 


ইতোমধ্যে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করেছেন। সামনে লক্ষ্য- স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১। দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব বলে আমরা আশাবাদী।


স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন ও বাস্তবতা


একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ বিষয়ে এক অগ্রসর ভাবনার মানুষ। বর্তমানে আমাদের জীবনে বিপ্লব সৃষ্টিকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, ন্যানো প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কমপিউটিং এবং থ্রিডি প্রিন্টিংসহ আজকের দিনের উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর অভূতপূর্ব, বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে তিনি ভালোভাবে জানেন। তিনি জানেন একটি দেশকে কীভাবে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকে থাকার জন্য স্মার্ট হতে হয়। নতুন প্রযুক্তির এই যুগে শুধু প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি দেশই টিকে থাকার সুযোগ পায়।


‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কিংবা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এখন আর কেবল চটকদার শব্দ নয়। নয় কোনো অধরা স্বপ্ন। এটি এখন স্বপ্নের ডানায় ভর করে আসা এক স্পর্শযোগ্য, নিরেট বাস্তবতা। আর এই স্বপ্নজাত বাস্তবতার রচয়িতা একজন মানুষ, যিনি যেমন স্বপ্ন বুনতে জানেন তেমনি জানেন তা ফলাতে। শেখ হাসিনার জীবনে তার প্রমাণ মেলে। পৃথিবীতে বাংলাদেশের পরিচয় হবে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরন্তর বিনিয়োগ করে চলেছেন তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও সৃজনশীলতা। উইকিলিকসের এক সাম্প্রতিক জরিপে তাঁকে বিশ্বের সবচাইতে দীর্ঘমেয়াদি নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ব নারী জাগরণের আইকন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিজনেজ ম্যাগাজিন  ফোরবস বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী নারীর তালিকায় শেখ হাসিনাকে রেখেছে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব বস্তুত তীক্ষè বুদ্ধি, সুগভীর জ্ঞান, চৌকস নেতৃত্ব আর সর্বজনীন মানবিক বোধের যোগফল। একজন সত্যিকারের দূরদর্শী নেত্রী হিসেবে তিনি যে রাজনৈতিক উদ্ভাবনের একটি উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশের অন্য কোনো রাজনীতিবিদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তাঁর এই সফট স্কিলই একদিন বাস্তবতা দেবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নসৌধের, যেমন দিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের।


আলোচনার শীর্ষে রয়েছে জয় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছেন সিলিকন ভ্যালির স্পিরিট- উচ্চ প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, উদ্যোগ, পুঁজি ও সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন তা সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন।


‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর ধারণাটি চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেমন স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা, একটি স্মার্ট সরকার নিশ্চিত করা, একটি স্মার্ট অর্থনীতি চালানো এবং একটি স্মার্ট সমাজ তৈরি করা। একজন স্মার্ট নাগরিক মানে আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক এবং উন্নত মানবসম্পদ। স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ শতভাগ ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। ৫০ মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এবং ১৬৫ মিলিয়ন মোবাইল গ্রাহক বাংলাদেশকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পঞ্চম বৃহত্তম এবং বিশ্বের নবম বৃহত্তম মোবাইল বাজারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার অপটিক সাবমেরিন ক্যাবল ব্যান্ডউইথ এবং সবচেয়ে উন্নত ইন্টারনেট ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে ‘ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এটা ভাবতেই শিহরণ জাগে যে, বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ১২ টেরাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারব এবং নিজেদের স্মার্ট নাগরিকে পরিণত করতে পারব।


এ ছাড়া আমরা ই-গভর্নেন্সে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, যা ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। নাগরিকদের ৬০০টিরও বেশি ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানের জন্য সারা দেশে প্রায় ৬০০০টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ডিজিটাল বিভাজনের সমস্যাটি যথাযথভাবে সমাধান করা হচ্ছে। সরকারি সেবা প্রদান, তথ্য বিনিময়, লেনদেন, পূর্বে বিদ্যমান সেবা এবং তথ্য পোর্টালগুলোর একীকরণের জন্য যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে ই-গভর্নেন্সের অনুশীলনকে আরও উন্নত করা যেতে পারে। এটি পুরো প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে সুবিধাজনক, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তুলবে এবং এর ফলে একটি স্মার্ট সরকার গঠনে সহায়তা হবে।


একটি দক্ষ ও ডিজিটাল-প্রস্তুত কর্মীবাহিনী এবং প্রযুক্তি-সমর্থিত কৃষি-শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করে একটি স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য সরকার বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিবছর পাঁচ লাখেরও বেশি স্নাতক তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় পঁচাত্তর হাজার তথ্য প্রযুক্তি-সক্ষম পরিষেবা (আইটিইএস)প্রাপ্ত পেশাদার জনশক্তি হিসেবে প্রশিক্ষিত। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন কর্মীর পুল রয়েছে বাংলাদেশে। প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং সেক্টর থেকেপ্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। এক হাজার পাঁচশত কোটি টাকা বিনিয়োগে সারা দেশে নির্মিত ৩৯টি হাই-টেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ৯টিতে ১৬৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সবেতন কর্মসংস্থানে এবং ৩২ হাজার দক্ষ কর্মী জনশক্তির পুলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া আইসিটি খাতে ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ হাজার নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। দ্রুত বর্ধনশীল আইসিটি শিল্প মানুষকে আর্থিক, টেলিযোগাযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে।


এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের স্মার্ট অর্থনীতি বিনির্মাণে অনেক অবদান রেখে চলেছেন। তার নেতৃত্বে আমাদের আইসিটি শিল্প একটি বর্ধিষ্ণু শিল্পে পরিণত হচ্ছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে একটি বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, সরকারি পরিষেবাগুলোয় ডিজিটাল সুবিধা প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং এবং আইসিটি রপ্তানি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২০টিরও বেশি কোম্পানি ৩৫টি দেশে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইসিটি পণ্য রপ্তানি করছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ এটি ৫ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও ৩০০টি স্কুল, ১ লাখ ৯০ হাজার ওয়াই-ফাই সংযোগ, এবং ২৫০০টি ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শতভাগ অনলাইন পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি বড় মাপের আইসিটিনির্ভর কর্মসংস্থানের (৩ কোটি) জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। আইসিটি শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে।


স্মার্ট বাংলাদেশের চতুর্থ স্তম্ভ হলো একটি স্মার্ট সোসাইটি গঠন, যার অর্থ তথ্য-সমাজ থেকে জ্ঞান-সমাজে রূপান্তর। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি তথ্য সমাজের মৌলিক গুণাবলি অর্জন করেছি। এখন সময় এসেছে জীবনব্যাপী শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব উন্নয়নের জন্য জ্ঞান তৈরি এবং প্রয়োগের নিমিত্তে তথ্য শনাক্তকরণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, রূপান্তর, প্রচার এবং ব্যবহার করার স্থায়ী দক্ষতা অর্জনের। সে জন্য দরকার একটি শক্তিশালী সামাজিক দর্শন, যেখানে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংহতি এবং নাগরিক অংশীদারত্বের সুসমন্বয় থাকে। এগুলোই একটি স্মার্ট সমাজের বৈশিষ্ট্য এবং বাংলাদেশ সেদিকেই এগোচ্ছে।


২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৪টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প যেমন ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল কৃষি ইত্যাদি নিশ্চিত করেছে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশের অপরিহার্য উপাদান হবে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট ট্রেড, স্মার্ট পরিবহন এবং স্মার্ট ব্যবস্থাপনা নীতি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল সমাপ্তির মাধ্যমে প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পথ দেখাবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের মাঠে একটি বড় উল্লম্ফন। আমরা যদি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং আমাদেও ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে একটি বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি ও অপ্রতিরোধ্য দেশ গড়তে চাই, তাহলে শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- উন্নয়ন রেসিপি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।


আমাদের করণীয় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে


রাষ্টে্রর জনগণ সচেতন হলে আকস্মিক বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা অনেকাংশে কম হয় মানুষ তার ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার করে জীবনকে অনেকটা সহজ করে তুলেছে। আমাদের কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ, গবেষণা-সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির জয়জয়কার। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রার পরিচালক মানুষই। মানুষ যদি এসবে অভ্যস্ত না হয়, এসবকে ইতিবাচক অর্থে, কল্যাণের পথে ব্যবহার না-করে তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ফল নেতির দিকেই টানবে


রাষ্টে্রর জনগণ সচেতন হলে আকস্মিক বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা অনেকাংশে কম হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দেশের অনেক বিষয়েই সচেতন নন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা অদৃষ্টবাদী, হুজুগে বিশ্বাসী। এছাড়াও স্মার্ট শিক্ষার আলো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো পৌঁছেনি। ফলে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত কিছু মানুষ সমাজ-রাজনীতি বিষয়ে সচেতন হলেও অধিকাংশ মানুষ তা নন। তাই তাদের সহজেই বিপথে পরিচালিত করা যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা দেখেছি শুরু থেকেই স্বার্থান্বেষী শ্রেণি ও  মৌলবাদী গোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে নানা ধরনের স্বার্থ হাসিল করছে।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সাধারণ মানুষকে স্নেহ-ভালোবাসায় সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার মতোই বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন, বাংলার মানুষের মুক্তি ও উন্নয়ন কামনা করেন। তবে শেখ হাসিনার পক্ষে একা বাংলার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের সচেতন করে তোলা কঠিন। তাই আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী, যারা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি, সমর্থন করি তাদেরই পবিত্র দায়িত্ব এখন দেশে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের উচিত এখন শেখ হাসিনার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা।   


উন্নয়ন ও সুফলের ডানা মেলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের 


সাশ্রয়ী, টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। যেখানে অর্থের আধিপত্যের পরিবর্তে জ্ঞান, মেধা ও পরিশ্রমের জয়গান প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন শোষণ ও বৈষম্যের জায়গা দখল করবে সাম্য ও স্বাধীনতা। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সফল হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এখন স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার হচ্ছে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্পিকার ও ইন্টারনেট। এভাবেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে শিক্ষার প্রসার। শিক্ষা ছাড়াও সর্বক্ষেত্রে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের এখন যে উন্নতি হয়েছে এক দশক আগেও তা কল্পনা করা যেত না। দেশের সর্বস্তরে মানুষ প্রতিনিয়ত অভ্যস্ত হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারে। করোনা মহামারির ধাক্কা ও বৈশ্বিক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা উন্নয়ন বা ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। বিশেষত পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, আইসিটি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে।


পদ্মা সেতু ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ উল্লেখ করার মতো। যেমন- কর্ণফুলী টানেল, তৃতীয় পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি। এছাড়াও মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলেই সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এসব উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ও সুবিধা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনার পক্ষে বাংলার মানুষকে সদর্থকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। মানুষকে এটা বোঝাতে হবে যে, শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন। শেখ হাসিনাই স্মার্ট বাংলাদেশও গড়ে তুলবেন।

 

স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্মান্ধতা যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তাই দেশের মানুষকে স্মার্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করে, সমস্ত ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত করে কল্যাণের পথে আনতে হবে।


রাষ্ট্র একটি প্রক্রিয়া মাত্র। সেই প্রক্রিয়ার চালিকাশক্তি হলো দক্ষ জনবল। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্টে্রর নানা অঙ্গ-কাঠামো থাকে। প্রত্যেক অঙ্গ-কাঠামো বা সেক্টরে দক্ষ জনবল না থাকলে রাষ্টে্রর কার্যাবলি ব্যাহত হয়। তাই বাংলাদেশের প্রত্যেক সেক্টরে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ লোক থাকা দরকার। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন ও নির্বাচন। স্বাধীনতার পক্ষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষ লোককেই মনোনয়ন দিয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। তাই দলের সভাপতি হিসেবে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় নিযুক্ত করতে হবে। 


কেননা, জনগণ তার ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সৎ ও দক্ষ লোক মনোনয়ন না পেয়ে অসৎ ও অদক্ষ লোক মনোনয়ন পেলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তরায় হবে। আবার এমনও হতে পারে যে, জনগণের রায়ে সেই অসৎ বা অদক্ষ লোক নির্বাচিতই হলেন না, কিংবা কোনো কারণে নির্বাচিত হলেন- তাতেও কিন্তু দেশের কল্যাণ হবে না। দলের সভাপতি হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার যেমন এ বিষয়ে ভাবতে হবে, তেমনি বাংলাদেশের মানুষকেও ভাবতে হবে যে, কোনো অবস্থাতেই যেন স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচিত না হয়। কাজেই যথাযোগ্য মনোনয়নে যোগ্য লোক নির্বাচিত হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।


এ কথা সত্যি যে, বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির উন্নয়ন সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মানুষ তার ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার করে জীবনকে অনেকটা সহজ করে তুলেছে। আমাদের কৃষি, শিক্ষা, যোগাযোগ, গবেষণা-সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির জয়জয়কার। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রার পরিচালক মানুষই। মানুষ যদি এসবে অভ্যস্ত না হয়, এসবকে ইতিবাচক অর্থে, কল্যাণের পথে ব্যবহার না করে তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ফল নেতির দিকেই টানবে। কাজেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের নাগরিকের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাও জরুরি। মূল্যবোধ নাগরিককে সুনাগরিক করে, সুনাগরিক মানে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার মানুষ’, আর শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের ‘স্মার্ট সিটিজেন’। এ জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য-শিল্পের চর্চাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।


দেশ গড়ার কাজে বঙ্গবন্ধু অন্য দেশের সাহায্য নিতে কিংবা অন্য দেশকে বন্ধু ভাবতে কুণ্ঠিত হননি। তবে অন্য কোনো দেশ আমাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাক সেটা তিনি কোনোভাবেই চাইতেন না। 


মনে রাখতে হবে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথ ধরে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের নানামুখী সুফল ভোগও করছে। দেশে এবং বিদেশে এজন্য শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। কিন্তু তার এমন অবদানের কাে  সেই সম্মাননা যৎসামান্যই বটে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল যেমন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ভোগ করছে, তেমনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর সুফল ভোগ করতে হলে সর্বস্তরের মানুষকেই শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করতে হবে। 


হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।