https://www.brandellaltd.com/

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ার আহ্বান
 

একটি জাতির সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে শিক্ষার যথাযথ বিকাশ জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, বিশ্বের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে দেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক যত নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে- তারা কীভাবে শিক্ষা দেয়, কী কারিকুলাম শেখায়, কীভাবে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে, আমরা তা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই। সেই সঙ্গে হাতে কলমে শিক্ষা, যাতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর এই পরিকল্পনা যুগোপযোগী এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। কেননা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে এবং সময়ে সঙ্গে সঙ্গে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা জরুরি। আর সেই বিষয়টি আলোকপাত করে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন তখন তার যথার্থ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অপরিহার্য।

এছাড়া, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি সারা পৃথিবীতে কতটা অগ্রসর হয়েছে এবং এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি জ্ঞান অপরিহার্য। এক্ষেত্রে এটাও বলার দরকার, সরকার প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে তুলতে চায় উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমরা কখনো পিছিয়ে থাকব না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। এজন্য আমরা চাই, এই ছোট বয়স থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা কমপিউটার শিখবে, প্রযুক্তি শিখবে। সেজন্য আমাদের শিক্ষা কারিকুলামগুলোর পরিবর্তন আনা দরকার। প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি তৈরিতে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। 

আমাদের ভবিষ্যৎ কাজ হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্মার্ট দক্ষ জনগোষ্ঠী। আর এ কাজে বহুমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ছেলেমেয়েদের। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দেড় দশক পর গত ২৭ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১২ দিন আগে বাংলাদেশ আওয়ামী স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে নির্বাচনী ইশতেহার দেয়। একটি আধুনিক যুগোপযোগী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কৌশলের ভিত্তিতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকারসংবলিত ইশতেহারের মূল উপজীব্য স্মার্ট বাংলাদেশ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ইশতেহার-২০২৪’-এর ঘোষণার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার ছাপ রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণের ঘোষণার মতোই দলটির আধুনিকমনা চরিত্র ও সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আকাক্সক্ষা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ খুব দ্রুতই একটি জনপ্রিয় স্লোগানে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল। আর ১৩ বছরে সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দর্শনে পরিণত করতে পেরেছে। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে মানুষের যাপিত জীবনের যত অনুষঙ্গ আছে তার প্রায় সব কিছুই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর।

প্রশ্ন জাগতে পারে, ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো নির্বাচনী ইশতেহারের চমক হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা কেন দেওয়া হলো না? এক বছর আগে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ঘোষণার নেপথ্যের কারণ কী? নেপথ্যে রয়েছে বাস্তবমুখী ও কৌশলগত কারণ। প্রথমত, জনগণ বিশেষ করে তরুণদের মনে স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণাটি আগেভাগেই গ্রোথিত করা। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের আগেই স্মার্ট বাংলাদেশও জনপ্রিয়  স্লোগানে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়িত উদ্যোগগুলোর সম্প্রসারণের পাশাপাশি চলমান উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও বিষয়গুলোকে করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। ইশতেহারে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণ অংশে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১ এবং ২০৪১-এর সময়রেখার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ রূপকল্প শীর্ষক মাস্টারপ্ল্যানের খসড়ায় আলোচ্য সময়রেখা অনুসারে স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভ- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন- স্মার্ট নাগরিকের ক্ষেত্রে ২০২৫ সালে নাগরিকদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ শতাংশ। আর ২০৩১ সালের মধ্যে তা হবে ৭৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৯০ শতাংশের বেশি। ২০২৫ সালে নাগরিকদের জন্য স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬০ শতাংশ, ২০৩১ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ শতভাগ। একইভাবে বাকি তিনটি স্তম্ভ- স্মার্ট ইকোনমি, গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটির ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে সামনে রাখা হয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর দুটি প্রধান অভীষ্ট অর্জন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। দুটি প্রধান অভীষ্টের প্রথমটি হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে বর্তমান মূল্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং যা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। আগের তিনটি শিল্প বিপ্লবের চেয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকসসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। সরকার এসব প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আইসিটি খাতের অবদান ২০ শতাংশের বেশি নিশ্চিত করতে চায়।

আওয়ামী লীগের স্মার্ট বাংলাদেশ ইশতেহার-২০২৪-এ পাঁচটি স্তম্ভে নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ করে পাঁচটি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক মুক্তির দর্শন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ, ২০২১ সালের অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন-মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২০৪১ সালের সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন- অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ, ২০৭১ সালে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখর- স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি এবং ২১০০ সালের নিরাপদ ব-দ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক দর্শনের বাস্তবায়ন করেছেন। আর ২০৪১ সাল নাগাদ সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শনের লক্ষ্য অর্জনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার আকারে আসায় মানুষের মনে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আনন্দময় জীবন লাভে নব আশার সঞ্চার করেছে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।