দেশের নারীদের অধিকার ও সুযোগ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন আরও বেগবান করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে একশনএইড বাংলাদেশ।

গত রোববার (১০ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়-এর প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি), এমপি। সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৪’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এবছর ‘নারীর সম-অধিকার, সম সুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সমাজবিজ্ঞানী ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। সমাজের নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করে দেশ ও বহির্বিশ্বে অনুকরণীয় সাফল্য বয়ে এনেছেন এমন নারীদের গল্প ভিডিও আকারে প্রদর্শন করা হয় আজকের আয়োজনে।

একইসাথে যথাযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের নারীর উন্নয়নের যাত্রা তরুণ চিত্রশিল্পীদের তুলিতে আঁকা চিত্রকর্মগুলো গ্যালারিতে ঘুরে দেখেন প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি), এমপিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। 

দিবস উদ্‌যাপন আয়োজনে আর্ট ক্যাম্প, পুরস্কার প্রদানসহ ছিল প্যানেল ডিসকাশন। ‘নারী নেতৃত্ব উদ্‌যাপন: আমরা কি যথেষ্ট বিনিয়োগ করছি?’ শীর্ষক এই আলোচনায় বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

এসময় বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীদের সমানাধিকার ও সমসুযোগ শক্তিশালীকরণে দেশের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। 

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের পরিচালনায় এই প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন; একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটি (এএআইবিএস)- এর চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল-জায়াদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক. তাসলিমা ইয়াসমীন; বিশিষ্ট কবি ও পরিচালক শামীম আজাদ এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের ডার্মাটোলজি ডিপার্টমেন্ট ও লেজার সেন্টার-এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. জেসমিন মঞ্জুর। 

নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ।

নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাড়ানোসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা।

নারীর উন্নয়ন নিশ্চিতে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সবমিলে ৭১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। যা গত এই পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি মূল বাজেটের ১৫ শতাংশ।

নারীদের প্রশিক্ষণ, ‍সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশসহ ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক নারীর কাছে পৌঁছেছি আমরা। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। এজন্য সরকারসহ সবার অবদান অনস্বীকার্য। 

দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যহারে এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী লিঙ্গসমতা অর্জন করতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হতে পারে প্রায় ২০০ বছর।

যেখানে বিশ্বের সময় লাগতে পারে ১৩২ বছর। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে এই বৈষম্য দূর করতে হলে নারী উন্নয়নে বছরে বৈশ্বিকভাবে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।