ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সাথে যৌথভাবে ছোট স্যাটেলাইট তৈরি করবে বাংলাদেশ। গত সোমবার সচিবালয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দেশের অর্ধকোটি মানুষ অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করে পলক বলেছেন, ‘অনলাইন জুয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আমাদের বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েরা যুক্ত হয়েছে।
এমনকি অনেক বয়স্ক, রিটায়ার্ড পারসনরাও এর মধ্যে আসছেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, ৫০ লাখ মানুষ কিভাবে যেন এই অবৈধ জুয়ার সাইটগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
আমরা মোট দুই হাজার ৬০০টি জুয়ার সাইট ব্লক করেছি। এখন আমরা মোবাইল অ্যাপগুলো প্রতিনিয়ত ব্লক করছি। এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস, চলতে থাকবে।
‘জুয়ার বন্ধ সাইট আবার অন্যভাবে খোলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেটা নিয়ে আমরা যৌথভাবে বসেছিলাম।
আমরা ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম, ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার, কম্পিউটার কাউন্সিল, বিটিআরসি এবং সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি- সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম।
যার যতটুকু সক্ষমতা আছে, পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে একটা ড্রাইভ দিচ্ছি।আরও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা কন্টিনিউয়াসলি এটা আমরা ব্লক করতে থাকবো।
মিডিয়াসহ বিভিন্ন সোর্সে আমরা যেটা পাচ্ছি, সেটা ব্লক করার চেষ্টা করছি। বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় ১০টি এয়ারবাস কেনার প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন করতে তাগাদা দেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত।
এ ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ছাড়াও আরও ৪ থেকে ৬টি স্যাটেলাইট তৈরি করবে বাংলাদেশ।
এয়ারবাসের উড়োজাহাজ বিক্রির বিনিময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের মাধ্যমে এসব স্যাটেলাইট বানাতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে ফ্রান্স।
এ নিয়ে পলক বলেন, ’’স্যাটেলাইট কোম্পানি এয়ার বাসের পক্ষ থেকে আমাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা তৈরি করার জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেটাও বিবেচনায় নিচ্ছি।
বাংলাদেশে আমরা যাতে যৌথভাবে স্যাটেলাইট অ্যাসেম্বল করতে পারি, স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারি, এটিও একটি উদ্দেশ্য।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সফর সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুটি বিষয় ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো ভিশন পার্টনারশিপ ডকুমেন্টস ফর ডিজিটাল পার্টনারশিপ।
যেটা ভারতের আছে ‘বিকশিত ভারত-২০৪৭’। তাদের উন্নত, উচ্চ আয়ের দেশ হওয়া। আর প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০৪১, স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ হওয়া।
এর জন্য কীভাবে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমরা দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবো, সেজন্য একটা ভিশন ডিজিটাল পার্টনারশিপ ডকুমেন্টস, একটা নতুন ধরনের বড় পরিধির ভিশন সাইন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের যে ইসরো আছে- স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন, যেটা বেশ ভালো করছে এবং চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদেও অবতরণ করেছে।
তাদের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে একটা স্মল স্যাটেলাইট তৈরি করবো। যেখানে ওরা প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো অনুদান দেবে। আর আমাদের প্রায় ৫০ জন ছেলে মেয়েকে এখানে (স্যাটেলাইট তৈরি) ব্যবহার করবো যারা ইসরো ভিজিট করবে, তাদের বিজনেস উইংয়ের সঙ্গে কাজ করবে, গবেষণার কাজ করবে এবং ওদের কিছু স্যাটেলাইটের কনস্ট্রাকশন ডিজাইন আমরা যৌথভাবে করবো।
ওটা হবে আর্থ অবজারভেটরি জিও স্পেশাল স্যাটেলাইট। যার ৫-৬ বছরের মেয়াদ থাকবে।’ এছাড়াও প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি ফ্রান্সের এয়ারবাস, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্কুল ফরটি টু, ফ্রান্সের ট্রেড মিনিস্টার এবং দেশটির বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষীক বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ভবিষ্যৎমুখী তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি গড়তে ফ্রান্সের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
এ জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ফ্রান্স সফর করেছে। ফ্রান্সের সঙ্গে আমরা নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে যাচ্ছি।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. রাশিদা ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাইবার নিরাপত্তা, স্টার্টআপ এক্সচেঞ্জ, মহাকাশ প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞান স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
০ টি মন্তব্য