https://powerinai.com/

মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা

মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা
 
দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপশি আর্থিক ক্ষতি এবং প্রলোভনে প্রকট সাইবার অপরাধ।

তবে সামাজিক লোক-লজ্জার ট্যাবুতে তা থকাছে অন্তরালেই। তাই গণ-সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা ‍উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।  

গত শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানো ও এবং উদ্যোক্তকাদের জন্য প্রণোদনা দেয়া দরকার।

উৎকর্ষতা অর্জনে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হবে। আমদানি নির্ভরতার পরিবর্তে সাইবার সুরক্ষায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে (সিক্যাফ) অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিক্যাফ উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান।

গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।   

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ. হুসেইন, বিশ্বব্যাংক এর পরামর্শক ও প্রধান গবেষক, আইডিয়া ফাউন্ডেশন হুসেইন সামাদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ। 

সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপত্বি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী। অন্যান্যের মধ্যে সিক্যাফ সহ-সভাপতি এস এম ইমদাদুল হক এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল মুনয়েম সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত সিক্যাফ সাইবার অপরাধ প্রবণতা—২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধ।

এক বছরের ব্যবধানে এই হারটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের  ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পর পর দুই বছরের জরিপফল থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী সাইবার আক্রান্ত শিশুদের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৫ শতাংশ।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তদের প্রায়  ৫৯ শতাংশই নারী।

অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১.৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে।

আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে ‘পর্ণোগ্রাফি’ অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১.৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্ণোগ্রাফি। 

এছাড়াও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার, এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন।

এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ মন্তব্য করেননি আর ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ‍সুফল পাননি।

এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০.৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১.২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬.৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২.৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।     

স্ব-প্রণোদিত হয়ে ১৩২ জন ভুক্তভোগী অভিজ্ঞতা থেকে এই ফলাফল পেয়েছে সাইবার দেশের সাইবার জগতকে সুরক্ষিত রাখতে চায় দেশে এই খাতের স্বেচ্ছাসেবীদের অগ্রজ সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারেনস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ)।

সংগঠনটি এজন্য কয়েকটি সুপারিশও দিয়েছে অনুষ্ঠানে। উপস্থাপনায় মুশফিক বলেন, বিভিন্ন খাতে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও সুবিধা এনেছে।
এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার স্পষ্ট উন্নতি, যোগাযোগ ও সংযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অবদান।

কৃষি ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার মানব সভ্য তাকে আরো অনেক মানবিক করে তুলবে । যাইহোক, এই উন্নতির পাশাপাশি কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সাবধানে বিবেচনা করার দাবি করে।

এই উদ্বেগগুলির মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য গোপনীয়তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি, প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি।

উদীয়মান প্রযুক্তির সামাজিক সুবিধাগুলি সর্বাধিক করতে, একটি বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন নীতি ও বিধিমালা তৈরি করা।

এছাড়াও, পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে উৎসাহিত করা জরুরী। উদীয়মান প্রযুক্তির যুগে জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনা সর্বোপরি হওয়া উচিত।

এই লক্ষ্যে, দেশীয় শিক্ষাগত গবেষণা, শিল্প ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং স্থানীয় সফ্টওয়্যার ও সমাধানের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পদ্ধতি কেবল প্রযুক্তি অর্জনে বিদেশী মুদ্রার ব্যয়ের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে না, বরং দেশীয়ভাবে তৈরি প্রযুক্তিগত সফ্টওয়্যার ও বিভিন্ন সলিউশনস রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়ে জাতীয় উন্নতিতে অবদান রাখবে। 

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে।

স্মার্ট নাগরিক হতে পারিনি। বিটিআরসি থেকে আমরা প্রতিনিয়ত কার নামে কয়টি সিম নিবন্ধন আছে তা যাচাই করতে বার্তা দেই। কিন্তু নাগরিকরা তা করছেন না।

আইনের দুর্বলতায় আমাদের কাজ করতে কষ্ট হয়। পরিবর্তন দরকার। সুরক্ষার জন্য কোর ব্যাংকিংয়ে দেশের বাইরের সফটওয়্যার ব্যবহারের চেয়ে দেশের সফটওয়্যার তৈরি ও ব্যবহারে মানসিকতা থাকা দরকার।

সাইবার শুধু আইটি ইস্যু নয়। এটি সবার জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটি গাইড লাইন অনুযায়ী আমাদের অনেক কিছুতেই পশ্চিমের সঙ্গে মেলানো কঠিন। তাই এ নিয়েও আমাদের কাজ করা দরকার। 

এ সময় সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানোর ওপরে গুরুত্ব দিয়ে বিটিআরসির মহাপরিচালক জানান, সাইবার অপরাধের ৭০ শতাংশই ব্যক্তিপর্যায়ে হয় থাকে।

আসলে অনেকে লোভে পড়ে সাইবার অপরাধের শিকার হয়। এসব লোভনীয় অফার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নাজমুস সালেহিন বলেন, অনলাইন গ্যাম্বিলিংয়ের আড়ালে আছে মানিলন্ডারিং।

তবে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোর ব্যাংকিং খাতে সহসাই একটি বিপদ আসছে। তিনি আরো বলেন, সাইবার ক্রাইম করা খুব সহজ এবং অপরাধীকে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।

কারণ অপরাধে ব্যবহৃত ল্যাপটপ বা মোবাইল অপরাধীই ওই সময় ব্যবহার করছিলো এটি প্রমাণ করা বেশ জটিল। তাছাড়া, সাইবার আইনে অনলাইন জুয়ার মামলাগুলোর পেছনে মানি লন্ডারিং রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ৪টি ধারা ছাড়া সাইবার অপরাধ আইন ২০১৩ এর সব গুলো ধারাই হ্যাকিংয়ের আওতায় থাকলেও তা জামিনযোগ্য।

এতে আমরা অনেক অপরাধীকেই শস্তির অধীনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা দেরিতে নালিশ করায় আইনের সুরক্ষা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে।

আলামত জব্দের পর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে অবিকল আদালতে উপস্থাপন করা গেলে, এসব অপরাধের বিচার পাওয়া সম্ভব। 

তিনি আরো বলেন, দেশে শিশু পর্ণো বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা হচ্ছে। এটা শঙ্কাজনক। হুসইন সামাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে।

এখন এর দক্ষ ব্যবহার দরকার। কিন্তু দেশে ৭০ শতাংশই সাইবার আক্রমণ হচ্ছে মানবিক ভুলে। তাই সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

এছাড়াও  তথ্য প্রযুক্তি খাতের বাজেট থেকে সাইবার সিকিউরিটি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। এটি চলতে থাকলে সাইবার সিকিউরিটিতে কাঙ্খিত উন্নতি সম্ভব নয়।







০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।