ভুয়া ছবি সৃষ্টি করতে এতকাল অনেক সময়, অর্থ ও দক্ষতার প্রয়োজন হতো। আর এখন এআই নিমেষের মধ্যে আপত্তিকর ছবি সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে।
এই প্রযুক্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি না করে নৈতিকতার বেড়া লাগানো বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। বিনামূল্যের এক এআই সফ্টওয়্যার মানুষের শরীরের বিবর্তনের এক হিসেব সৃষ্টি করেছে।
একাধিক মডেলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়ে সেই সফ্টওয়্যার চোখ বা নাকের বর্ণনা দিতে পারে। এ ভাবে মানুষের শরীরের গঠন স্পষ্ট হয়ে যায়।
ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী সফটওয়্যারে সৃষ্টি করা ছবি বা ভিডিও ক্লিপের রূপ দেওয়া সম্ভব। আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোনো সীমা নেই।
গণিতজ্ঞ ও এআই বিশেষজ্ঞ হিসেবেব ক্রিস্টিয়ান বেনেফেল্ড মনে করেন, ‘কোনো এআই-এর অবশ্যই নৈতিকতাবোধ থাকে না।
ঠিক সে কারণেই যে কোনো জিনিস একে অপরের সঙ্গে একত্রিত করা যায়।’ ফলে এআই ব্যবহার করে যৌন উদ্দিপক ও যৌনতাপূর্ণ ছবি সৃষ্টি করা সম্ভব।
ট্রেনিং মডিউলগুলির উপর চোখ বোলালেই এমন ছবির চাহিদা টের পাওয়া যায়। চ্যাট-জিপিটি-র উদ্ভাবক ওপেন এআই-এর মতো পরিষেবা সংস্থা ছবি সৃষ্টির ক্ষেত্রে ক্লাউড ব্যবহার করে।
এর অর্থ, ছবি সৃষ্টির লক্ষ্যে কমপিউটেশনের কাজ কোনো নিয়ন্ত্রিত সার্ভারে ঘটে। সিস্টেম বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে আপত্তিকর ছবি সৃষ্টির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
কিন্তু বিনামূল্যের এআই সফ্টওয়্যার ব্যক্তিগত কমপিউটারে চলে। সেখানে কন্টেন্ট সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ নেই। অর্থাৎ ক্লাউড সলিউশন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।
জার্মান এথিক্স কাউন্সিলের সদস্য ইয়ুডিট সিমোন বলেন, ‘অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু প্রমপ্ট ও নির্দিষ্ট কিছু এনকোয়্যারি আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব।
যেমন চ্যাট জিপিটির টেক্সটের ক্ষেত্রে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না অথবা এটা খুব বিতর্কিত বিষয়।
ছবি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এমন কিছু বিষয়ের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে এমন বাধা সৃষ্টি করে নীতিগতভাবে অপব্যবহার বন্ধ করা যাবে বলে আমি মনে করি না।
এমন প্রচেষ্টা হয়তো কম রাখা যাবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন প্রমপ্ট বা এনকোয়্যারির ভাষায় রদবদলের মাধ্যমে বিতর্কিত কনটেন্ট ঠিকই সৃষ্টি করা যাবে।’
এআই ট্রেনিং মডেলগুলির মধ্যে প্রকৃত মানুষের মডেলের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। যেমন ক্রিস্টিয়ান বালে নামের এক অভিনেতা।
তার মডেলও ডাউনলোড করে নিজের ইচ্ছেমতো তাতে রদবদল করা যায়। এআই-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা ছবি দেখতে প্রায় খাঁটি লাগে।
আইনের চোখে বিষয়টি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। প্রো. আলেনা বুয়িক্স জানান, ‘বর্তমানেই বেশ কিছু আইন চালু আছে, যেমন ‘অকুপেশনল সেফটি’, যা প্রাসঙ্গিক।
অথবা বর্ণবাদ এড়াতে সাহায্য করে, এমন আইন এখনই প্রয়োগ করা সম্ভব। তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক বিধিও তাই। তবে বিকাশের এমন দ্রুত গতির পেছনে ধাওয়া করা বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ চাপানোর সময় আগেই পেরিয়ে গেছে। ইমেজ জেনারেটরগুলি মুক্ত ওপেন সোর্সের ভিত্তির উপর গড়ে তোলা হয়েছে।
ফলে সেগুলির বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। সেই টুলের যে কোনো ধরনের ব্যবহারও সম্ভব। এমন বিকাশ গ্রহণযোগ্য সামাজিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। হস্তক্ষেপের সুযোগও সীমিত।
এর ফলে ইন্টারনেট প্রকৃত ব্যক্তির ভুয়া ছবিতে ভরে যাচ্ছে। যেমন ব্যাটেল ট্যাংকের সামনে শান্তির দূত হিসেবে পায়রা নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন।
ক্রিস্টিয়ানে বেনেফেল্ডের সিস্টেম এমন ছবি সৃষ্টি করতে ৩০ সেকেন্ডও সময় নেয় না। গণিতজ্ঞ ও এআই বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান বেনেফেল্ড বলেন, ‘আজকাল মানুষের পক্ষে এআই জেনারেটেড ছবির সঙ্গে খাঁটি ছবির পার্থক্য বোঝা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এআই ছবির মান অত্যন্ত ভালো। আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে খুব ভালো করে সবকিছু খতিয়ে দেখতে হবে।
এআই জেনারেটেড ছবি চেনার লক্ষ্যে ওয়াটারমার্ক বাধ্যতামূলক হোক, সেটাই আমি চাই। সে ক্ষেত্রে যে কোনো মানুষ বুঝতে পারবেন, যে ছবিটি স্বাভাবিক উৎস থেকে আসেনি।’
নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে। এর নান্দনিক দিকও রয়েছে।
যেমন ফ্রান্সের এক শিল্পী এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ফ্যাশন জগতের একশো বছরের টাইম ট্রাভেল সৃষ্টি করেছেন। এক এআই সফ্টওয়্যারের কল্যাণে সেটা সম্ভব হয়েছে।
০ টি মন্তব্য