https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম: কেন জরুরি সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণ

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম: কেন জরুরি সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম: কেন জরুরি সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণ
 

বাংলাদেশে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টিকটক এবং এক্স (পূর্বের টুইটার)-এর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম যোগাযোগ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, ব্যবসা ও সাংস্কৃতিক প্রকাশের অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এগুলো এক ধরনের ডিজিটাল “টাউন স্কোয়ার” যেখানে মানুষ বিতর্ক করে, সংগঠিত হয় এবং তথ্য শেয়ার করে। 

তবে একই সঙ্গে এসব প্ল্যাটফর্ম নানান গভর্ন্যান্স চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে: নির্বাচনী সময়ে ভুয়া তথ্যের প্রসার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাবাচক বক্তব্য, অনলাইনে নারী ও তরুণীদের হয়রানি, এবং ডেটা প্রাইভেসি সম্পর্কিত উদ্বেগ।

এই প্ল্যাটফর্মগুলোর পেছনে থাকা বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো সাধারণত বাংলাদেশের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে বসে নীতি ও অ্যালগরিদম তৈরি করে। এর ফলে নাগরিকদের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনস (CSOs) এই ফাঁক পূরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শাসন কাঠামো অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং ডিজিটাল ক্ষেত্র নিরাপদ, উন্মুক্ত ও অধিকার-সম্মত থাকে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের “ডিজিটালের অবস্থা”

DataReportal-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিস্থিতি:

১৮৫ মিলিয়ন মোবাইল সংযোগ সক্রিয় ছিল, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১০৬% সমান। তবে সব সংযোগ ইন্টারনেট ব্যবহার করে না, কেউ কেউ কেবল ভয়েস বা এসএমএস সেবা ব্যবহার করে।

৭৭.৭ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে, যা মোট জনসংখ্যার ৪৪.৫%।

৬০ মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী পরিচিতি ছিল, যা জনসংখ্যার ৩৪.৩%।

এগুলো আমাদের ডিজিটাল প্রবণতা বুঝতে একটি প্রাথমিক চিত্র দেয়, তবে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া প্রবণতা

বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া জগতে প্রবেশ করুন—যেখানে ৪৫ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী যোগাযোগ, বিনোদন, ব্যবসা ও পেশাগত উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে।

ফেসবুক: ৬০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী (Meta-র হিসাব অনুযায়ী)

টিকটক: দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬.৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী (১৮+)

ইনস্টাগ্রাম: ৭.৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী

লিংকডইন: ৯.৯ মিলিয়ন সদস্য

এক্স (টুইটার): ১.৭৪ মিলিয়ন ব্যবহারকারী

সস্তা স্মার্টফোন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সাক্ষরতার বিস্তার সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও জনপ্রিয় করেছে। টিকটকের ক্রিয়েটিভ স্টোরিটেলিং, ইনস্টাগ্রামের ব্র্যান্ডিং, লিংকডইনের পেশাগত নেটওয়ার্কিং এবং ফেসবুকের কমিউনিটি ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ডিজিটালি ক্ষমতায়িত সমাজের দিকে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া গভর্ন্যান্স বোঝা

সোশ্যাল মিডিয়া গভর্ন্যান্স বলতে বোঝানো হয় সেই নিয়ম, নীতি ও প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মগুলো পরিচালিত হয় এবং ব্যবহারকারী, সরকার ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাংলাদেশে এ প্রক্রিয়াটি তিনটি শক্তির দ্বারা গঠিত:

বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোম্পানি: সাধারণত তারা স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দেয় না।

স্থানীয় অংশীজন: নাগরিক, সাংবাদিক, সিএসও এবং গণমাধ্যম সরাসরি প্রভাবিত হয়।

বাংলাদেশের সিএসওগুলোর ভূমিকা

বাংলাদেশের সিএসওগুলো চারটি মূল ক্ষেত্রে কাজ করছে:

অধিকারভিত্তিক নীতির পক্ষে সোচ্চার হওয়া – আইন যাতে নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভারসাম্য বজায় রাখে তা নিশ্চিত করা।

ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি – ভুয়া খবর শনাক্তকরণ, অনলাইন নিরাপত্তা, হয়রানি মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি। কমিউনিটি রেডিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা – ভুয়া তথ্য, ঘৃণাবাচক বক্তব্য ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার রিপোর্ট তৈরি করে চাপ সৃষ্টি করা যাতে প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলা কনটেন্ট মডারেশন বাড়ায়।

বহুপক্ষীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা – BIGF, WSIS, IGF প্রভৃতি ফোরামে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের যুব, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরা।

চ্যালেঞ্জ

প্ল্যাটফর্ম কোম্পানিগুলোর সীমিত সম্পৃক্ততা

নীতি-নিয়ন্ত্রক চাপ

অর্থ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব

দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে অক্ষমতা

সম্ভাবনা

স্থানীয়-আন্তর্জাতিক সংযোগ জোরদার করা

দক্ষিণ এশিয়ার সিএসওগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি

ডিজিটাল পাবলিক গুডস (DPGs) প্রচার করা

যুব ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো

উপসংহার

বাংলাদেশ যখন দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে, তখন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় অংশে পরিণত হচ্ছে। তাই এসব প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করা জরুরি।

সিএসওগুলো অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়া, জনগণকে সচেতন করা, প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় ইস্যু বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করছে। যথাযথ সহায়তা, স্বীকৃতি ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করলে সিএসওগুলো বাংলাদেশের ডিজিটাল সমাজকে গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ করতে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।                                                                                                                                                          

এ. এইচ. এম. বজলুর রহমান | ডিজিটাল গণতন্ত্র উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাষ্ট্রদূত, নীতি গবেষণা ফেলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গণমাধ্যম, তথ্যের অখণ্ডতা ও সমাজ গঠনের ভবিষ্যৎ রূপায়ণে নিয়োজিত! [email protected]








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।