যেখানে দেশের একজন সাধারণ মানুষ আয়কর দেয়, সেখানে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ বড় টেক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে রাজস্ব আদায় না করা ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছে উচ্চ আদালত। একই সাথে গুগল-ফেসবুক থেকে বকেয়া শুল্ক আদায়েও রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের এ সংক্রান্ত রায়ে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানির পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সব ধরনের রাজস্ব বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য পাওনা। এই পাওনা তারা পরিশোধ করবে এটা দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে।
গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ ইন্টারনেটভিত্তিক অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি ও প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের রাজস্ব আদায়ের নির্দেশনা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত বছর নভেম্বরে বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চের দেওয়া ওই রায়ের ১৪৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল। তার সাথে একমত পোষণ করেছেন বিচারক রাজিক আল জলিল।
সেখানে বলা হয়, ‘মূল্য সংযাজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ৪ ধারা অনুযায়ী ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্ল্যাটফর্মের ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী এসব কোম্পানি আয়কর রিটার্ন দিতেও বাধ্য।’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বেসরকারি মোবাইল অপারেটর ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও খবর থেকে উদ্ধৃত করে রায়ে বলা হয়, ‘এটা কাচের মতো স্পষ্ট যেÑ ইন্টারনেটভিত্তিক এসব প্ল্যাটফর্ম মূসক, টার্নওভার কর, সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৫ ধারা অনুযায়ী মূল্য সংযোজন কর ও আয়করসহ কোনো ধরনের রাজস্ব সরকারকে দিচ্ছে না। এটি বেআইনি। যেখানে আমাদের দেশের একজন সাধারণ মানুষও আয়কর দেয়, সেখানে এ ধরনের বৃহৎ টেক জায়ান্টদের থেকে আয়কর রাজস্ব আদায় না করা দুঃখজনক।’
বাংলাদেশে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ক্ষুদ্র থেকে বড়Ñ সব ধরনের উদ্যোক্তা বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ঝুঁকছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে। ইন্টারনেটভিত্তিক ই-কমার্স প্লাটফর্ম ক্রমেই দেশে একটি বড় বাণিজ্য খাত হয়ে উঠছে।
তবে চটকদার, লোভনীয় বিজ্ঞাপনে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগও উঠেছে কিছু কিছু ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে। যে কারণে আইন-নীতিমালা করে সম্ভাবনাময় এ খাতটিকে শৃঙ্খলায় আনার কথা ভাবছে সরকার।
ফলে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো কোনো রকম কর বা ফি না দিয়েই বাংলাদেশ থেকে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে যাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া আর ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের লেনদেন থেকে সরকার যে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, সে বিষয়টি আদালতে গড়ায় তিন বছর আগে।
২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ১২ এপ্রিল রুলসহ আদেশ দেয়।
ওই আদেশে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু, ই-কমার্সের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্ল্যাটফর্ম থেকে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেন থকে উৎসে কর, শুল্কসহ সব ধরনের রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১১ নভেম্বর বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়।
০ টি মন্তব্য