https://gocon.live/

প্রযুক্তি

সমন্বিত ডিজিটাল লাইব্রেরি কার্যক্রম

সমন্বিত ডিজিটাল লাইব্রেরি কার্যক্রম সমন্বিত ডিজিটাল লাইব্রেরি কার্যক্রম
 
সমন্বিত ডিজিটাল লাইব্রেরি কার্যক্রম

লাইব্রেরি বলতে প্রচলিত যে লাইব্রেরি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবাদে। গতানুগতিক হরফে ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি স্থান করে নিচ্ছে ডিজিটাল বই। যেমন : ই-টেক্সট, ডিজিটাল টকিং বুক্স, বড় হরফে ছাপানো বই এবং ব্রেইল। আর এর মধ্য দিয়ে গ্রন্থাগারগুলো হয়ে উঠছে সবার ব্যবহারোপযোগী। শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর, প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রতিবন্ধী সবাই এই লাইব্রেরির সুবিধা পাবে। গ্রামের কৃষক কিংবা দরিদ্র নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক সবার প্রয়োজন মেটাতে পারবে কল্পিত এই আগামী দিনের গ্রন্থাগার। ঘরে বসেই পড়তে পারবেন আপনার প্রিয় ম্যাগাজিন বা বই। থাইল্যান্ডের কারাগারে কয়েদিরা বসে তৈরি করছে শত শত ডিজিটাল টকিং বই। আর এই বইগুলো চলে যাচ্ছে থাইল্যান্ডে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে, ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার বই নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি টেলিফোনিক টকিং গ্রন্থাগার। একটি ফোন কলের মধ্য দিয়ে যেকোনো ব্যক্তি তার পছন্দের বইটি শুনতে পাচ্ছে ঘরে বসেই। ডিজিটাল বাংলাদেশে এমন একটি ডিজিটাল লাইব্রেরির অপেক্ষায় রইলাম।

সমন্বিত লাইব্রেরি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী নানাধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তার কিছু অংশ তুলে ধরেছি।

ডেইজি টেকনিক্যাল কনফারেন্স

গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো ডেইজি টেকনিক্যাল কনফারেন্স। ডেইজি ফোরাম অব ইন্ডিয়ার আয়োজনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪৫ ও ভারত থেকে ১৩০ ডেইজি ও তথ্য বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। যার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমি ‘সবার জন্য ডেইজি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করি। অনলাইন সংস্করণের জন্য ভিজিট করুন www.ypsa.org. এই কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নশীল বিশ্বে ডেইজির বাস্তবায়নের অগ্রগতির দিক মূল্যায়ন করা। সম্ভাব্য বাধা ও সম্ভাবনার দিক খতিয়ে দেখা। ওপেন সোর্স সলিউশন, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার উৎপাদন ব্যবহারের ওপর টেকনিক্যাল দিক খতিয়ে দেখা। ডেইজি এবং বিশ্বব্যাপী প্রকাশনার মানদন্ড ই-পপ এর মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে ডেইজি ই-পপ মানদন্ড তৈরি করা যাতে করে যেকোনো প্রকাশনা প্রকাশের পর উপরের উল্লিখিত এক্সেসিবল পদ্ধতিতে তৈরি করা যায়। এই কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করে ডেইজি ডেভেলপিং কান্ট্রি অ্যালায়েন্স। কনফারেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ভিজিট করুন www.daisyindia.org

রাইটস টু রিড ক্যাম্পেইন

ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ইউনিয়ন বিশ্বজুড়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়ার অধিকার নিয়ে একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে।

International Right to Read Campaign Homepage
http://www.worldblindunion.org/en/right-to-read.html

ইংল্যান্ডে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ পাঠ্যবই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়ার উপযোগী নয়। বিশ্বব্যাপী মাত্র ৫ শতাংশ দৃষ্টি ও পঠন প্রতিবন্ধীদের জন্য পড়ার উপযোগী করে বই প্রস্ত্তত করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশে ধারণা করা হয়, মাত্র ০.৫ শতাংশ প্রকাশনা সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী করে তৈরি হচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে সবার জন্য পড়ার উপযোগী বই তৈরি করে সবার পড়ার অধিকার নিশ্চিত করা। ভারতে এই ক্যাম্পেইন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, আশা করি খুব শিগগিরই বাংলাদেশে এই প্রচারাভিযান শুরু হবে।

Right to Read India
http://www.daisyindia.org/right_to_read.htm

টাইগার প্রজেক্ট

গত ২৩ অক্টোবর ভারতের দিল্লিতে World Intellectual Property Organization (WIPO’s)-এর পঞ্চম বৈঠকে অনুষ্ঠিত একটি নজিরবিহীন উদ্যোগ নেয়া হয়। যার মাধ্যমে WIPO’s Stakeholder, দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের মুদ্রণকল্পে সহজগম্য করার ঘোষণা দেয়া হয়। যা ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দৃষ্টি, পঠনপ্রতিবন্ধী, প্রকাশক, কমিউনিটি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রকাশক এবং কপি রাইট ওনার উভয়ের স্বার্থরক্ষার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট চাহিদা নিরূপণ করা হয়।

TIGAR–The trusted intermediary global accessible resource project– এই নামে একটি প্লাটফর্ম ২০১০ সালের ১ নভেম্বর গৃহীত হয়। যাতে যেকোনো সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর সহজে এক্সেসিবল ফরমেটে প্রকাশ করতে পারে, যা এক্সেসিবল ফরমেটে তৈরি করা হবে, সফট কপি একে অপরের সাথে শেয়ার করা হবে এবং একটি বিশেষায়িত গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিবছর প্রকাশিত প্রায় ১০ লাখ প্রকাশনা। সারাবিশ্বে ৩৪০ মিলিয়ন দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধী (প্রিন্ট ডিজ্যাবল্ড ) প্রকাশনা সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী করে তৈরি করা হয়।

বিশ্বব্যপী বিশেষায়িত কিছু সংস্থা যেমন- লাইব্রেরি ফর দ্য ব্লাইন্ড, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য গ্রন্থাগার, ডেইজি ফরমেট, ব্রেইল, অডিও এবং বিশেষায়িত ডিজিটাল ফরমেটে ব্যাপকভাবে বই প্রস্ত্তত করবে। বিশ্বব্যাপী প্রকাশকেরা এসব সংখ্যা বা কপি উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের কাছে দেবে, যা তারা সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী পদ্ধতিতে তৈরি করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের কোনো জনপ্রিয় লেখকের বই মুদ্রণ হওয়ার পর প্রকাশক তা ব্রেইল প্রেস অথবা অডিও ডেইজি প্রস্ত্ততকারী সংগঠনের কাছে দেবে, যাতে করে সবার জন্য ব্যবহারোপযোগী করে প্রস্ত্তত করতে পারে।

টাইগার প্রজেক্ট হচ্ছে- World Intellectual Property Organization (WIPO), International Publishers Association (IPA), World Blind Union (WBU), আন্তর্জাতিক প্রকাশক সমিতি, প্রকাশনা সমিতি এবং দৃষ্টি ও ক্ষীণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একটি যৌথ উদ্যোগ, তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে যাতে করে দৃষ্টি ও পঠনপ্রতিবন্ধীদের মাঝে এক্সেসিবল প্রকাশনা পৌঁছে দেয়া যায়। এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়ত দেবে WIPO.

আশা করা যাচ্ছে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে পঠনসামগ্রীর যে বৈষম্য ছিল তা কিছুটা হলেও কমবে। কপিরাইটসংক্রান্ত জটিলতা দূর হবে। যেকোনো প্রকাশনা প্রকাশের পর পর ডেইজি, অডিও, ব্রেইল, ই-টেক্সট, বড় হরফে সবখানে পাওয়া যাবে। এই মর্মে WIPO, IPA, WBU, একমত হয়ে এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এই প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক্সেসিবল পদ্ধতিতে পঠনসামগ্রীর উৎপাদনে দক্ষতা বাড়বে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রকাশক সমিতি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন এই প্রজেক্টে অংশ নেয়ার জন্য।

উপসংহার

উপরোল্লিখিত প্রতিটি কার্যক্রমের এ্কটি উদ্দেশ্য হলো- সবার জন্য বই, সবার জন্য গ্রন্থাগার, সবার পড়ার অধিকার সংরক্ষণ। প্রতিটি বই প্রকাশিত হবে একটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে, যা সোর্স ফাইল থেকে উপরে উল্লিখিত বিভিন্ন মাধ্যমে বই প্রকাশিত হবে। আর সে বই কিংবা গ্রন্থাগার ব্যবহার করার সুযোগ পাবে সবাই। দীর্ঘদিন ধরে সবার জন্য ডেইজি নিয়ে কাজ করছি, কিছুটা সাফল্যও এসেছে। বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রজেক্টে (www.infokosh.bangladesh.gov.bd) এই ডেইজি কনটেন্টগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। ডেইজি (ডিজিটাল এক্সেসিবল ইনফরমেশন সিস্টেম) কমপিউটারভিত্তিক বহুমাত্রিক (মাল্টিমিডিয়া) মাধ্যমের জন্য একটি উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক মানদ । www.daisy.org বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রন্থাগার ডিজিটালাইজড হবে, ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে বই পাওয়া নিশ্চিত হবে, গ্রন্থাগারের কার্যক্রম মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আর এ জন্য দরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেয়া উদ্যোগগুলোর সাথে বাংলাদেশের অংশ নেয়া।







১ টি মন্তব্য

  • Md.Firoj Miah

    Md.Firoj Miah

    ২০২২-০৯-১৯ ১৩:৫৭:০৩

    ধন্যবাদ সুন্দর আর্টিকেলের জন্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।