ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে ইকমার্স (Ecommerce) ওয়েবসাইট তৈরির প্রবণতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আমাদের দেশে যদিও অনলাইনে কেনাকাটার প্রচলন তেমনভাবে শুরু হয়নি, তবে অদূর ভবিষ্যতে যে সবাই এতে অভ্যস্থ হয়ে পড়বেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। ইউরোপ, আমেরিকায় ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা কতটুকু তা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে একটু লক্ষ করলেই উপলব্ধি করা যায়। প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে নিজের একটি পূর্ণাঙ্গ ইকমার্স সাইট তৈরি করা প্রকৃতপক্ষেই অত্যন্ত কঠিন কাজ। এর সাথে নানা সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত। আশার কথা, ওপেন সোর্সের কল্যাণে অত্যন্ত উন্নতমানের ইকমার্স সাইট বিনামূল্যে পাওয়া যায়, যা দিয়ে কোনো প্রোগ্রামিং ছাড়াই একটি ইকমার্স সাইট দাঁড় করানো মাত্র কয়েক ঘণ্টার কাজ। তবে বলা বাহুল্য, সাইটের টেম্পলেট পরিবর্তন করতে এবং এতে বিশেষ কোনো ফিচার যোগ করতে প্রোগ্রামিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তারপরও সবধরনের ফিচারযুক্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ইকমার্স সাইট তৈরি করতে কয়েক মাসের পরিবর্তে মাত্র কয়েক দিনেই ক্লায়েন্টকে তৈরি করে দেয়া যায়। ম্যাজেন্টো (Maagento) সেরকমই একটি ইকমার্স সাইট তৈরির স্ক্রিপ্ট। এটি PHP এবং MySQL দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ইদানীং বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বেশিরভাগ ইকমার্স সাইট তৈরি হচ্ছে ম্যাজেন্টোনির্ভর (www.magentocommerce.com)। বলা যায় ম্যাজেন্টো হচ্ছে সবচেয়ে বড় ওপেন সোর্স ইকমার্স প্লাটফরম। এর অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
প্রোডাক্ট ব্রাউজিং :
একটি আধুনিক ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট ব্রাউজিং করার জন্য যেসব ফিচার থাকে তার প্রায় সবই রয়েছে এই সাইটে। পণ্যের ছবিকে জুম করে বড় আকারে দেখা যায়। আবার প্রতিটি পণ্যের জন্য একাধিক ছবি যুক্ত করার ব্যবস্থাও রয়েছে। আরো আছে প্রোডাক্ট রিভিউ, সংশ্লিষ্ট প্রোডাক্ট, পণ্যের তথ্য ইমেইল করে বন্ধুকে জানানোর সুবিধা ইত্যাদি।
ক্যাটালগ ব্যবস্থাপনা :
এতে রয়েছে পণ্যের ক্যাটালগ ব্যবস্থপনার শক্তিশালী ব্যবস্থা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একসাথে সম্পূর্ণ ক্যাটালগকে এক্সপোর্ট/ইম্পোর্ট করা, অ্যাডমিন প্যানেল থেকে অনেকগুলো পণ্য একসাথে আপডেট করা, ডাউনলোড করা যায় এমন পণ্য যুক্ত করা ইত্যাদি। রয়েছে মিডিয়া ম্যানেজার যা দিয়ে পণ্যের ছবির আকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন এবং তাতে জলছাপ দেয়া যায়।
সাইট ব্যবস্থাপনা :
একটি অনলাইন স্টোর (Store) দক্ষভাবে পরিচালনা করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা ম্যাজেন্টোতে রয়েছে। একই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্যানেল থেকে একাধিক স্টোরকে পরিচালনা করা যায়। ম্যাজেন্টোর নতুন ভার্সন প্রকাশ হওয়া মাত্র তা একটা ক্লিকের মাধ্যমেই আপগ্রেড করা যায়। এতে একটি CMS বা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যুক্ত রয়েছে যা দিয়ে তথ্যবহুল পৃষ্ঠা অনায়াসেই তৈরি করা যায়। সাইটের ডিজাইনকে টেম্পলেটের সহায়তায় শতভাগ পরিবর্তন করা যায়।
অ্যানালাইটিকস এবং রিপোর্ট :
সাইটের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য এর সাথে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট দেখার ব্যবস্থা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেলস রিপোর্ট, ট্যাক্স রিপোর্ট, সর্বাধিক বিক্রি হওয়া পণ্যের রিপোর্ট, স্টক রিপোর্ট, কুপন রিপোর্ট ইত্যাদি। ম্যাজেন্টোর সাথে গুগল অ্যানালাইটিকস যুক্ত আছে, ফলে সাইটে আসা ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যায়।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন :
ম্যাজেন্টোকে শতভাগ সার্চ ইঞ্জিন অনুকূল করে তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইট ম্যাপ তৈরি, প্রতিটি পণ্যের জন্য Meta-information যুক্ত করা ইত্যাদি নানা সুবিধা।
পেমেন্ট :
ম্যাজেন্টোর সাথে পেপাল, অ্যামাজন পেমেন্ট, গুগল চেকআউট, অথরাইজ.নেট-এর মতো প্রায় সব বড় পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড, চেক এবং মানি অর্ডারেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
শিপিং :
শিপিং বা পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবার জন্য প্রায় সব আন্তর্জাতিক পদ্ধতি এতে যুক্ত রয়েছে। যেগুলো দিয়ে রিয়েলটাইমে শিপিংয়ের মূল্য জানা যায়। এদের মধ্যে রয়েছে UPS, UPS XML, FedEx, USPS, DHL ইত্যাদি। রয়েছে অর্ডার ট্র্যাকিং, একই অর্ডারে একাধিক শিপিং যুক্ত করা, প্রতি অর্ডারে ফ্ল্যাট শিপিং রেট, ফ্রি শিপিং, পণ্যের ওজন বা পণ্যের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা রেটের ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিধা।
মোবাইল কমার্স :
ম্যাজেন্টো দিয়ে খুব সহজেই এম-কমার্স বা মোবাইল কমার্স চালু করা যায়। অর্থাৎ মোবাইল ফোনে ওয়েবসাইটটিতে ব্রাউজ করলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল ফোনকে চিনতে পারে এবং সে অনুযায়ী সাইটের লেআউটকে মোবাইলের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
ম্যাজেন্টোর ফ্রি বা কমিউনিটি ভার্সনের পাশাপাশি প্রফেশনাল ও এন্টারপ্রাইজ নামের আরো দুটি সংস্করণ রয়েছে যেগুলোর জন্য বছরে যথাক্রমে ২,৯৯৫ ও ১২,৯৯০ ডলার ফি দিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে ফ্রি ভার্সনের কল্যাণেই এটি এতটা জনপ্রিয় হয়েছে। ম্যাজেন্টো শেখার জন্য সাইটে প্রচুর পরিমাণে টিউটরিয়াল, ভিডিও এবং সাহায্যকারী আর্টিক্যাল পাওয়া যায়, যা থেকে একজন নতুন ব্যবহারকারী সহজেই এতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবে। Lenovo, 3M, Sumsung-এর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করছে দেখে এর জনপ্রিয়তা, দীর্ঘস্থায়িত্ব সহজেই অনুমান করা যায়।
০ টি মন্তব্য