প্রযুক্তির ফসল ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে
আমাদের মধ্যে যারা বয়সে অপেক্ষাকৃত প্রবীণ তারা তো বটেই, এমনকি আমাদের তরুণ প্রজন্মও দেখছে ও উপলব্ধি করছে, কী করে তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইসিটি আমাদের পৃথিবীটাকে বদলে দিচ্ছে। কিভাবে বিনির্মাণ করছে নতুন কাঠামো ও ধরনের মানবসমাজ। আইসিটি’র প্রভাব মানবসমাজের সর্বত্র। এমন একটি ক্ষেত্রও আজ চিহ্নিত করা কঠিন, যেখানে আইসিটি’র ছোঁয়া লাগেনি, আইসিটি’র প্রভাবে সেখানে পরিবর্তন আসেনি। মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আজ বাসত্মবতার তাগিদে নিজেদের বেশি থেকে বেশিমাত্রায় প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়িয়ে তুলছে। অতএব এটাই স্বাভাবিক, আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোন্নয়নেও আইসিটি’র একটি সম্ভাবনাময় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে, আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আইসিটি প্রয়োগ করতে পারিনি। এর পেছনে নানা কারণ নানা মাত্রায় বিরাজ করলেও দু’টি কারণকে মুখ্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। প্রথমত, আইসিটি’র প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান নেই। দ্বিতীয়ত, এক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবও বিদ্যমান। এই দুই বাধাকে অতিক্রম করতে পারলে আমরা হয়তো দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে আইসিটি’র ব্যবহার আরো ব্যাপক করে তুলতে পারতাম। সেই সাথে এ শিল্পখাতকে উন্নয়নের নতুন মাত্রায় নিয়ে পৌঁছাতে পারতাম। যে দু’টি বাধার কথা এখানে বলা হলো, তা কাটিয়ে উঠতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে যথাসচেতনতা দরকার। যদিও তুলনামূলকভাবে এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাটি হওয়া উচিত বড় মাপের। এই তাগিদটুকু মাথায় রেখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোন্নয়নে আইসিটি’র ভূমিকা প্রশ্নে একটি দিকনির্দেশনা তুলে ধরে আমরা তৈরি করতে চেষ্টা করেছি এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে যথাসচেতনতা প্রদর্শন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে আইসিটি’র ব্যবহার আরো জোরালো করে তোলার সড়কটুকু মসৃণতর করে তুলবেন।
শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আইসিটি’র ব্যবহার বাড়ালেই যে চলবে না, সেটুকু বুঝার জন্য আজকের দিনে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আজকের সময়ই আমাদের বলে দিচ্ছে, এগিয়ে যেতে হলে, সমৃদ্ধির দুয়ারে পৌঁছতে হলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় এমনকি বৈশ্বিক জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে দ্রুতলয়ে আইসিটি’র প্রয়োগ বাড়াতে হবে। সুখের কথা, আমরাও সময়ের সাথে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। তবে স্বীকার করা দরকার, দ্রুতলয়ে নয়, বরং ধীরলয়ে চলছে আমাদের এই এগিয়ে চলা। তবুও সামনে যে এগিয়ে যাচ্ছি কিংবা এগিয়ে যেতে শুরু করেছি, তাতেই কম কি সে। একদিন এই ধীরলয়ের বৃত্ত পেরিয়ে আমরা দ্রুতলয়ের বৃত্তে পা রাখব, সে আশা করতেই পারি। কারণ, আইসিটি প্রয়োগের ব্যাপকতা পাবার নানা সংবাদই এখন আমাদের কাছে আসছে। এই তো আমরা সম্প্রতি জানলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের অনার্স কোর্সে ছাত্রভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এখন একজন ভর্তিচ্ছু ছাত্র সুদূর গ্রামে বসেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তির আবেদনের কাজটি ঝামেলাহীনভাবে সেরে নিতে পারবে। আশা করা যায়, আগামী সময়ে যেকোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এভাবেই সবার ঘরে ঘরে পৌঁছবে প্রযুক্তির ফসল।
সম্প্রতি এমনি আরেকটি সুখবরও আমরা জানতে পেরেছি। দেশের তিনটি ব্যাংক মোবাইল ফোনে ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ব্যাংক শুধু বিদেশ থেকে প্রবাসীদের আয় বা রেমিটেন্স গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করবে। এ দু’টি ব্যাংক হলো ইস্টার্ন ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক। অপরদিকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংক দেশের ভেতরে স্থানীয়ভাবে প্রবাসীদের আয় হ্রাসকৃতসহ সব ধরনের লেনদেন মোবাইলের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারবে।
০ টি মন্তব্য