https://gocon.live/

দশদিগন্ত

মানবদেহ নিজেই হবে বহুমুখী যন্ত্র

মানবদেহ নিজেই হবে বহুমুখী যন্ত্র মানবদেহ নিজেই হবে বহুমুখী যন্ত্র
 

মানবদেহ নিজেই হবে বহুমুখী যন্ত্র


আপনি যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন সেটি কেবল কথা বলা বা এসএমএস পাঠানোর জন্য নয়, বরং আপনাকে দিচ্ছে পিডিএ, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং মিউজিক প্লেয়ারের সেবাও৷ খুব শিগগিরই সেবার মান ও সংখ্যা বাড়তে থাকবে৷ ফলে মোবাইল ফোনটি পরিণত হবে একটি বহুমুখী কার্যসম্পাদনকারী যন্ত্রে৷ শিগগিরই মোবাইল ফোন হবে আপনার ওয়ালেট, ক্রেডিট কার্ড, গাড়ির চাবি, বাড়ির দরজার চাবি কিংবা নানামুখী কাজের জন্য ব্যক্তিগত রিমোট কন্ট্রোল৷ অর্থাৎ মোবাইল ফোনই হবে আপনার পরিচয়৷


কিন্তু দূর ভবিষ্যতে এই মোবাইল ফোনই আপনার কাছে কোনো গুরুত্ব পাবে না৷ পরিণত হবে বাচ্চাদের খেলনায়৷ কোনো কোম্পানি এই ফোন তৈরি করবে না৷ কারণ, এর আর প্রয়োজন হবে না৷ সে সময় মানুষ নিজেই হবে একেকটি মোবাইল ফোন৷ তার মাথার খুলিতে বা চামড়ার নিচে বসানো থাকবে বিশেষভাবে তৈরি করা চিপ৷


এখন যেসব মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি হচ্ছে সেগুলো সিলিকনভিত্তিক৷ আর এ প্রসেসর প্রস্তুতকারকরা ইতোমধ্যেই সম্পৃক্তি সীমায় পৌঁছে গেছেন৷ অর্থাৎ তারা এমন স্তরে পৌঁছেছেন, যে স্তরে একটি পদার্থ অন্য পদার্থের সাথে আরো যোগ করলে দুটি পদার্থ সম্পূর্ণরূপে মিশ্রিত হবে না৷ কিংবা বলা যায়, যে স্তরে আরো গ্রহণ বা শোষণ করা সম্ভবপর নয়৷ উদাহরণ হিসেবে ইন্টেলের কথা বলা যায়৷ তারা অঙ্গীকার করেছিল ৪ গিগাহার্টজের পেন্টিয়াম ৪ সরবরাহ করার৷ কিন্তু এরা ৩.৮ গিগাহার্টজ পর্যন্ত উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে৷ এরপর আর ট্রানজিস্টর বসানোর জায়গা পাওয়া যায়নি৷ ফলে তাদের পক্ষে ৪ গিগাহার্টজ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়নি৷ অতি উত্তাপজনিত জটিলতার কারণেই এটি হয়েছে৷ এরপর এরা সিদ্ধান্ত নেয় একটি একক ছাঁচে দুইটি কোর বসানোর৷ তখন থেকেই ডুয়াল কোর প্রসেসর শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে একক ছাঁচে আরো কোর সংযুক্ত করা সম্ভব হবে না৷ তখন সিলিকনভিত্তিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি পৌঁছে যাবে চরমসীমায়৷


সে পর্যায়ে প্রয়োজন হবে নতুন প্রযুক্তির৷ গবেষকরা সে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন৷ সিলিকন সার্কিটের পরিবর্তে তারা প্রসেসরে ডাটা ট্রান্সমিটের জন্য লেজার ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন৷ কোয়াণ্টাম কমপিউটিংয়ের পর্যায়ে পৌঁছার স্বার্থে গবেষকরা বাইনারি ইনফরমেশন স্টোরের জন্য একটি ইলেক্ট্রন (সাব অ্যাটোমিক পার্টিক্যাল) ব্যবহার করছেন৷ এরা বলছেন, কোয়ান্টাম কমপিউটিং পর্যায়ে পৌঁছতে পারলে ক্ষুদ্রস্থানে বিশাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷


বায়োলজিক্যাল কমপিউটিং নিয়েও গবেষণা চলছে৷ জাপানের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই একটি ব্যাকটেরিয়ায় ১০০ বিট তথ্য সফলতার সাথে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন৷ এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়, প্রযুক্তিবিদরা আরো কার্যক্ষম প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে চলেছেন৷


সাইবারনেটিক্স বা সাইবর্গ গবেষণাও এগিয়ে গেছে বহুদূর৷ এটি এখন কেবল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই নয়, বাস্তবেও মিলছে৷ বিশ্বের প্রথম বাস্তব সাইবর্গ হচ্ছেন প্রফেসর কেভিন ওয়ারউইক৷ তার বাহুতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে একটি চিপ৷ এর মাধ্যমে তিনি একটি রোবটিক বাহু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ ভবিষ্যতে প্রতিটি মানুষই হয়ে যেতে পারেন একজন সাইবর্গ বা যন্ত্রমানব৷ আজকের দিনে কোটি কোটি কমপিউটার যেমন ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, ওয়ার্ল্ডওয়াইড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষও হবে তেমনি৷ তারা নিজেরাই হবে একেকটি কমপিউটার৷


কারণ, তাদের মাথার খুলিতে কিংবা চামড়ার নিচে বসানো থাকবে বিশেষ ধরনের চিপ৷ সেই চিপই বলে দেবে তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য৷ সেই ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক সেটাও জানা যাবে৷ সবকিছু থাকবে মস্তিষ্কে, কোনো হার্ডকপি ডকুমেন্ট থাকবে না৷ ব্যক্তি একটি কমপিউটারের মতোই গাণিতিক কার্যক্রম সম্পাদন, ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ডাউনলোড এবং আপলোড করতে সক্ষম হবে৷ অভিজ্ঞতা বিনিময়ও তার জন্য কোনো ব্যাপার নয়৷ ভিডিও ফাইল সেভ করা যাবে মাথায়৷ প্রাকৃতিক যেকোনো ধরনের বিপদাপদ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে ওই চিপ৷ দৃষ্টি চলে যাবে বহুদূর, বায়োনিক ওম্যানের মতো শ্রবণশক্তি এতটাই বেড়ে যাবে যে বহুদূরের শব্দও কানে আসবে স্পষ্ট৷ শব্দ বেশি মনে হলে শারীরিকভাবে সুইচ চালু বা বন্ধ করার প্রয়োজন হবে না৷ কেবল মস্তিষ্কের সঙ্কেত দিয়েই সেটি করা যাবে৷ ব্যক্তি যখন তার গাড়ির দিকে যাবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে গাড়ির দরজা৷ চেয়ার থেকে না উঠেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সব ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম৷ ব্যক্তি যখন কারো সাথে করমর্দন করবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের পরিচয় বিনিময় হয়ে যাবে৷ মুখে কথা বলার প্রয়োজন ফুরাবে৷ আসবে মুখের চেয়েও বেশি কার্যকর বিকল্প৷ অনেক কথা বলে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে না৷ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এগুলো হয়ে যাবে৷ আসলে সে পর্র্যায়ে মানুষ নিজেই হয়ে যাবে যন্ত্র৷


যদি তাই হয়, তাহলে একথা বলা বাহুল্য, ভবিষ্যতে থাকবে না মোবাইল ফোনের অস্তিত্ব৷ আগামী দুই দশক আপনি মোবাইল ফোন দিয়ে যা করবেন, দূর ভবিষ্যতে আপনার শরীর নিজেই সে কাজটি করে দেবে৷


বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে যেসব সাইবর্গ দেখা যায় সেগুলো খুবই বিকট দর্শন৷ সারা শরীরে এদের থাকে নানা ধরনের তার৷ চোখের জায়গায় থাকে ক্যামেরা, কানের জায়গায় এরিয়াল, বাহুর জায়গায় যন্ত্রের কলকব্জা৷ কিন্তু কোয়ান্টাম এবং বায়োলজিক্যাল কমপিউটিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হলে মানবদেহেই ওই প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে৷ তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হবে ইলেক্ট্রন এবং বায়োলজিক্যাল সেল বা কোষ৷ ফলে মানবদেহে বিকট দর্শন যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে না৷ দেহই হয়ে উঠবে সাইবর্গ৷ শুধু প্রোগ্রামটি সেট করে দিতে হবে৷ মানবদেহে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কোয়ান্টাম এবং বায়োলজিক্যাল স্টোরেজ ও পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রিক্যাল ফিল্ড৷ তাই তাত্ত্বিকভাবে মানবদেহে প্রোগ্রাম সেট করা এবং ডাটা প্রসেস করা সম্ভব৷ আর এটি করতে পারলেই বিকট দর্শন যন্ত্রপাতিসদৃশ সাইবর্গের পরিবর্তে প্রতিটি মানবদেহকেই পরিণত করা যাবে সাইবর্গে৷


তখন সরকার প্রতিটি ব্যক্তির রেকর্ড খুব সহজেই সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে৷ অন্তঃসত্ত্বা মা জন্ম দিতে পারবে বায়োলজিক্যালি প্রি-প্রোগ্রাম শিশু৷ ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত মানুষের ওয়ার্ল্ডওয়াইড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলে যাবে সরকারের ডাটাবেজে৷


প্রথম পর্যায়ে দেহের ভেতরে মাইক্রোচিপ স্থাপনের মাধ্যমে মানবদেহকে সাইবর্গে পরিণত করার কথা ভাবা হলেও এর বিকল্প চিন্তাও চলছে৷ সেক্ষেত্রে দেহের ভেতরে চিপ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে না৷ কেবল সাধারণ বায়োলজিক্যাল প্রোগ্রামিংই যথেষ্ট হবে৷


পুরো বিষয়টিই অস্বাভাবিক এবং অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু দূর ভবিষ্যতে এটাই সত্যি হতে যাচ্ছে৷ গবেষকরা সে লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে চলেছেন৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।