https://powerinai.com/

দশদিগন্ত

অণু পরমাণু চালিত ডিভাইস আসছে

অণু পরমাণু চালিত ডিভাইস আসছে অণু পরমাণু চালিত ডিভাইস আসছে
 

অণু পরমাণু চালিত ডিভাইস আসছে


ন্যানো টেকনোলজিতে চাঞ্চল্যকর অগ্রগতি হয়েছে৷ আর এই অগ্রগতির পথ ধরেই অদূর ভবিষ্যতে আমাদের হাতে আসছে এমন সব ডিভাইস, যা পরিচালিত হবে অণু বা পরমাণু দিয়ে৷ সেক্ষেত্রে এসব ডিভাইস বা পণ্যের ডাটা বা উপাত্তের ধারণক্ষমতা হবে অবিশ্বাস্য পরিমাপের৷ বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান আইবিএম ঘোষণা করেছে এরা ন্যানো টেকনোলজি অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দুটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে৷ এই সাফল্যকে যদি বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়, তাহলেই বিপ্লব ঘটে যাবে ইলেকট্রনিক পণ্য জগতে৷


আইবিএমের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের গবেষণালব্ধ আবিষ্কার এখনই পণ্যে প্রয়োগের জন্য যথেষ্ট নয়৷ এ নিয়ে আরো ব্যাপকভিত্তিক কাজ করতে হবে৷ চূড়ান্ত সাফল্য এলে তৈরি করা যাবে অতি ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রযুক্তিপণ্য৷ বিনির্মাণ করা যাবে সূক্ষ্ম কাঠামো, অতি ক্ষুদ্র অ্যাটমিক স্কেল কম্পোনেন্ট৷ এই সব কম্পোনেন্ট ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে কমপিউটার চিপ, স্টোরেজ ডিভাইস, সেন্সর এবং এমন সব পণ্যে, যা কেউ কখনো চিন্তাই করেনি৷ আইবিএমের বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ এ সাফল্যের কথা জানিয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্স-এ৷


বিজ্ঞানীরা জানান, তারা একটি বিশেষ পরমাণুতে ম্যাগনেটিক অ্যানিসোট্রফি কী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, তা পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ পরমাণুর তথ্য সংরক্ষণক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য এ ধরনের পরীক্ষা জরুরি ছিল৷ এর আগে কেউ একটি একক পরমাণুর ম্যাগনেটিক অ্যানিসোট্রফি পরিমাপে সক্ষম হয়নি৷ তাই বর্তমান পরীক্ষাকে একটি মৌলিক বিষয় বলে বর্ণনা করা হচ্ছে৷ বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করা গেলে এক সময় একটি সুনির্দিষ্ট পরমাণু বা ক্ষুদ্র পরমাণু গুচ্ছযুক্ত কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে৷ আর এই কাঠামোতে সংরক্ষণ করা যাবে ম্যাগনেটিক ইনফরমেশন বা চৌম্বকতথ্য৷ সেক্ষেত্রে আইপড আকৃতির একটি ডিভাইসে সংরক্ষণ করা যবে ৩০ হাজার চলচ্চিত্রে বা ইউটিউবে, যা কিছু আছে তার সবই৷ অর্থাৎ লাখ লাখ ভিডিও, যা ১ হাজার ট্রিলিয়ন বিটেরও বেশি৷ এককথায় বলা যায়, এ আবিষ্কারের যথাযথ বাস্তবায়ন পুরোপুরি পাল্টে দেবে ইলেকট্রনিক পণ্যের আকার এবং সেসবের পরিচালনা পদ্ধতি৷ প্রচলিত ব্যবস্থার কমপিউটিং আর থাকবে না৷ অর্থাৎ ন্যানো প্রযুক্তির এই বিষময়কর আবিষ্কার পণ্যের আকৃতিতে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি পাল্টে দেবে এগুলোর পরিচালনা পদ্ধতিও৷


আইবিএমের গবেষকরা সিঙ্গেল মলিক্যুল সুইচ নিয়েও কাজ করেছেন৷ মলিক্যুল বা অণুর বহিরাবরণ বা বহির্কাঠামোতে বিঘ্ন না ঘটিয়েই এটি ক্রমাগত কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ মলিক্যুলার স্কেলে কমপিউটিং উপাদান তৈরির ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার একটি তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি৷ এর ফলে ভবিষ্যতে এমন পণ্য উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে, যা আজকের কমপিউটার চিপ এবং মেমরি ডিভাইসের চেয়ে ক্ষুদ্র, দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং কম বিদ্যুৎ খরচ করবে৷


একটি একক অণুতে সুইচিং ছাড়াও গবেষণা একটি অণুর ভেতরকার পরমাণুতেও এই প্রক্রিয়া চালিয়েছেন৷ এতে দেখা গেছে একটি অণুর ভেতরকার পরমাণু তার সংলগ্ন অন্য অণুতে থাকা পরমাণুর সাথে সংযোগস্থাপনে সক্ষম এবং এসময় অণুর কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না৷


লার্জ ম্যাগনেটিক অ্যানিসোট্রফি অব এ সিঙ্গেল অ্যাটমিক স্পিন অ্যামবেডেড ইন এ সারফেস মলিক্যুলার নেটওয়ার্ক শীর্ষক গবেষণাপত্রে সুনির্দিষ্ট আয়রন অ্যাটম ম্যানিপুলেট করতে গবেষকরা আইবিএমের বিশেষ স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ (এসটিএম) ব্যবহার করেছেন এবং এদেরকে স্থাপন করেছেন বিশেষভাবে তৈরি কপার পৃষ্ঠে৷ এরপর এরা সুনির্দিষ্ট আয়রন অ্যাটমে ম্যাগনেটিক অ্যানিসোট্রফির শক্তি এবং আচরণ নিরূপণ করেন৷


ডাটা বা উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য অ্যানিসোট্রফি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ কারণ, ম্যাগনেট বা চুম্বক কোনো বিশেষ আচরণ করবে, নাকি করবে না তা নির্ধারণ করে এই অ্যানিসোট্রফি৷


ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে আইবিএম আলমাদেন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপক জিয়ান লুকা বোনা বলেছেন, আজকের দিনে আইটি শিল্পের সামনে একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্ষুদ্র ডিভাইসে উপাত্ত সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়ানো৷ অর্থাৎ পণ্যের আকার হবে যতোটা সম্ভব ছোট৷ কিন্তু এর তথ্য ধারণক্ষমতা হবে অনেক বেশি৷ তিনি বলেন, তারা সেই কাজটিই করে যাচ্ছেন৷ অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র ডিভাইস তারা গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে চান৷ আর পরমাণুতে উপাত্ত সংরক্ষণে দিন আসতে আর বেশি বাকি নেই৷ এ কাজে আইবিএম বহুদূর এগিয়েছে৷ বলা যায় বিজ্ঞানীরা পরমাণু পর্যায়ে ডাটা ধারণের পথে এখন আরো একধাপ এগিয়েছেন৷ অ্যাটমে সুনির্দিষ্ট চৌম্বক কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝতে পারা নিঃসন্দেহে একটি তাত্পর্যপূর্ণ অগ্রগতি৷


কারেন্ট ইনডিউস হাইড্রোজেন টাওটোমেরাইজেশন অ্যান্ড কন্ডাকট্যান্স সুইচিং অব ন্যাফথালোসিয়ানাইন মলিক্যুলাস শীর্ষক গবেষণাপত্রে আইবিএমের গবেষকরা একটি অণুর সুইচিং ক্ষমতা ব্যাখ্যা করেছেন৷ এ কাজে তারা একটি ন্যাফথালোসিয়ানাইন অরগানিক মলিক্যুলের মধ্যে দুটি হাইড্রোজেন অ্যাটম ব্যবহার করেছেন৷ আইবিএম এবং অন্য গবেষকরা ইতোপূর্বে সিঙ্গেল মলিক্যুলে সুইচিং করেছেন৷ কিন্তু তখন দেখা গেছে, সুইচিংয়ের সময় মলিক্যুল বা অণু তাদের আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলে৷ ফলে কমপিউটার চিপ বা মেমরি উপাদানে এটির ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ গবেষণার মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণের কাজ চলছে৷


গবেষকরা বলছেন, এই মলিক্যুলার সুইচ একদিন কমপিউটার চিপকে সুপার কমপিউটারের মতো দ্রুতগতিসম্পন্ন করে তুলবে, কিন্তু কমপিউটারের আকার হবে ক্ষুদ্র৷ এমন কমপিউটার চিপ তৈরি হবে, যা দেখতে হবে ধূলিকণার মতো৷ কিংবা বসানো যাবে সুইয়ের মাথায়৷


প্রচলিত সিলিকনভিত্তিক সিএমওএস চিপ এখন তার সামর্থ্যের শেষ সীমায় রয়েছে৷ তাই আইটি শিল্প খুঁজে ফিরছে কমপিউটারের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর অন্য কোনো উপায়৷ যে উপায় হবে নতুন এবং কমপিউটার হবে দ্রুতগতিসম্পন্ন ও অধিক তথ্য ধারণে সক্ষম ৷ এজন্য প্রথমেই ভাবা হচ্ছে মডিউলার মলিক্যুলার লজিক নিয়ে৷ যদিও এর বাস্তবতা রয়েছে এখনো বহু বছর দূরে৷ গবেষকরা তাই একটি সার্কিটে অণু বসানোর উপায় নিয়ে কাজ শুরু করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷ এটি করার পর বুঝা যাবে একটি মলিক্যুলার চিপে এদের আচরণ বা নেটওয়ার্ক কেমন হয়৷


কোনো ইলেকট্রনিক উপাদানে মলিক্যুল বা অণু ব্যবহারের এই ধারণা এখনো রয়েছে শৈশবে৷ এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে হাতেগোনা৷ এতে দেখা গেছে বেশিরভাগ অণু জটিল, ত্রি-মাত্রিক কাঠামোর এবং সুইচিংয়ের সময় নিজেদের আকার পরিবর্তন করে ফেলে৷ কমপিউটারে ব্যবহারের জন্য এদের বিল্ডিং ব্লক তৈরি করা সহজসাধ্য নয় এবং এদের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা মারাত্মক কঠিন৷ তাই সহসাই এমন পণ্য পাওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে৷


তারপরও গবেষণা যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে এটা প্রায় নিশ্চিত যে, যতো বছর পরই হোক না কেনো আমরা এ ধরনের অসাধারণ কিছু ডিভাইস পাবো, যাতে ব্যবহার হবে সিলিকনের পরিবর্তে পরমাণু বা অণু৷ সবার হাতে থাকবে অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সব প্রযুক্তি পণ্য, যা বয়ে আনবে মানুষের কল্যাণ৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।