https://powerinai.com/

দশদিগন্ত

মহাকাশ স্টেশনে রোবট ডেকসট্রে

মহাকাশ স্টেশনে রোবট ডেকসট্রে মহাকাশ স্টেশনে রোবট ডেকসট্রে
 

মহাকাশ স্টেশনে রোবট ডেকসট্রে


পৃথিবীতে নিজের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে এখন মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রোবট৷ এমন দিন হয়তো আর দেরি নেই, যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে আর মহাকাশ পাড়ি দিতে হবে না৷ এ কাজটি করে দেবে কোনো না কোনো রোবট৷ মহাকাশে হাঁটাহাঁটির কাজটিও এরাই করবে৷ আবিষ্কার করবে এটা-সেটা, কত কী!


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তথা আইএসএস-এ এবার যে রোবটটি পাঠানো হয়েছে, তার নাম স্পেশাল পারপাস ডেকসট্রাস ম্যানিপুলেটর৷ সংক্ষেপে ডেকসট্রে৷ এর আকার বিশাল৷ কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির ড্যান রে একে আর-২ ডি-২ এবং সি-৩ পিও-এর মতো ভবিষ্যৎ রোবটের সাথে তুলনা করেছেন৷ তিনি বলেন, এমন একটি অত্যাধুনিক রোবটকে মহাকাশ স্টেশনে পাঠানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি৷ কারণ, মহাকাশের বৈরী পরিবেশে মানুষকে দিয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি করে যে কাজ করানো হচ্ছে, এখন থেকে এ রোবট দিয়ে তা করা সম্ভব হবে৷ সহজে বলা যায়, মহাকাশে গিয়ে মানুষ যে কাজটি করছে, এক সময় রোবট দিয়েই তা করা যাবে৷ ডেকসট্রের বাহু রয়েছে দুইটি৷ ওজন দেড় টন৷ ১১ মার্চ মহাকাশযান এনডেভরে করে এই রোবটকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চালান দেয়া হয়েছে৷ জোড়া লাগানো পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় নয়, ডেকসট্রেকে মহাকাশে যেতে হয়েছে যন্ত্রাংশ হিসেবে বাক্সবন্দী হয়ে৷ এনডেভরের ক্রুরা স্টেশনে গিয়ে রোবটটি পুনঃসংযোজন করছেন৷ তারপর একে স্থাপন করা হবে কক্ষপথে৷ এর একটা বাহু ‍আকঁড়ে থাকবে স্টেশনের দেয়াল৷ বাহুর দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩ মিটার৷


ড্যান রে এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ডেকসট্রে টুকিটাকি কাজে অত্যন্ত দক্ষ৷ যদিও এর আকার বিশাল৷ রোবটটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি খুবই নমনীয়ভাবে নিজেকে বাঁকাতে সক্ষম৷ মহাকাশ রোবটের মধ্যে এ ধরনের গুণ এটাই প্রথম৷ এই রোবট মহাকাশ স্টেশনের একটি অঙ্গ হিসেবে কাজ করবে৷ কখনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান, ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত এবং বাতিল হয়ে যাওয়া কোনো ইউনিট ফেলে দিয়ে খুচরো যন্ত্রাংশ সংযোগ করতে পারবে এ রোবট৷ ইলেকট্রনিক্স বক্স, কমপিউটার এবং ব্যাটারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে ডেকসট্রে সাথে সাথে সিগনাল দেবে এবং বিকল্প প্রতিস্থাপন করবে৷ মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের মতো গ্রাউন্ড স্টেশনের বিজ্ঞানীরাও নির্দেশনা দিয়ে রোবটটি পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন৷ এটি যাতে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ঘুরতে পারে তার জন্য এর বাহুতে রয়েছে ৭টি জয়েন্ট৷ এর একটি হাত যখন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকবে তখন অপর হাতটি ধরে রাখবে স্টেশন৷ ফলে এর মহাকাশে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না৷ এর একটি বাহু যাতে অপর বাহুকে আঘাত বা স্পর্শ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ রোবটটি ব্যাটারির মতো ক্ষুদ্র জিনিসপত্র বা যন্ত্রপাতি ইনস্টল এবং অপসারণ করতে পারবে৷


ডেকসট্রের দেহটি তৈরি হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম টাইটানিয়াম দিয়ে৷ একাধিক জয়েন্ট থাকায় এটি যেকোনো অবস্থান নিতে পারে৷ বাহুর শেষে রয়েছে হাত বা অরবিটাল রিপ্লেসমেন্ট ইউনিট টুল চেঞ্জআউট ম্যাকানিজম৷ প্রতিটি হাত তৈরি হয়েছে এমনভাবে যাতে সেই হাতটিতে মুঠো করে কোনো কিছু ধরা যায়৷ এর টুল কিটও রয়েছে এবং আরো রয়েছে আলো ও ভিডিও যন্ত্রপাতি৷


কানাডিয়ান রোবটিক কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড, ডেটউইলার অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর রিচার্ড রেমবালা বলেছেন, ডেকসট্রের সবচেয়ে গুরুত্ব জিনিসটি হলো এর ফোর্স মোমেন্ট সেন্সর৷ প্রত্যেক হাতের কব্জিতে এই সেন্সর রয়েছে৷ এই সেন্সরই ডেকসট্রেকে স্পর্শের অনুভূতি দিয়েছে৷ তাই এটি যখন কোনো কিছু আকঁড়ে ধরবে তখন এমন অবস্থা হবে না, যাতে ধরা বস্তুটি ভেঙ্গে যায়৷ অর্থাৎ বস্তুকে হাতের মুঠোয় নেয়ার পর ডেকসট্রে বুঝতে পারবে যে ঠিক কতটা জোরে একে ধরা যাবে৷ কানাডিয়ান এই কোম্পানিটিই ডেকসট্রের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছে৷


মহাকাশের কক্ষপথে ২০০১ সালে স্থাপন করা হয় কানাডাআরএম ২৷ ২০০২ সালে এতে যুক্ত করা হয় একটি মোবাইল বেস সিস্টেম৷ অর্থাৎ একটি ট্রলি, যার মাধ্যমে কানাডাআরএম ২ স্টেশন থেকে রেল লাইনের মতো পথে কিছুটা দূরে যেতে পারে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন পড়ে আরো বড় আকারের ও দীর্ঘ্য বাহু সম্বলিত রোবটের৷ সেই চাহিদা পূরণেই তৈরি হয়েছে ডেকসট্রে৷ দুই বাহুর এই রোবটটি স্থাপন করা হবে একটি হোল্ডিং বে-তে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনার ভিত্তিতে কাজ করবে৷ এটি একটি স্থির অবস্থানে থেকে এবং দূরে ভ্রাম্যমাণ অবস্থাতেও কর্মসম্পাদনে সক্ষম৷


মহাকাশ স্টেশনের ভেতরে থেকে নভোচারীরা ডেকসট্রেকে নির্দেশনা দিয়ে পরিচালনা করবেন৷ অবশ্য পৃথিবীতে স্টেশনে বসেও রোবটিকে নির্দেশনা দিয়ে পরিচালনার সুযোগ রয়েছে৷ স্পেসওয়াক বা মহাশূন্য হেঁটে স্টেশনের প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজ আগে যা নভোচারীরা করতো এখন সেই কাজ করানো যাবে ডেকসট্রেকে দিয়ে৷ এছাড়াও মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন বহু কাজ করা যাবে রোবটটি দিয়ে৷ এখন স্পেসওয়াকের ক্ষেত্রে নভোচারীরা দুটি পছন্দের সুযোগ পাবেন৷ এক হলো আগের মতো নিজেরাই সে কাজটি করা, আর দুই হলো ডেকসট্রেকে দিয়ে কাজটি সেরে ফেলা৷ কোনটা করা হবে সে সিদ্ধান্ত যথাসময়েই নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ড্যান রে৷


তিনি বলেন, তারা আশা করছেন গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই নির্দেশনা দিয়ে মহাকাশ স্টেশনের বাইরের মেরামত কাজ ডেকসট্রেকে দিয়ে সম্পন্ন করা হবে৷ এর ফলে মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অধিক সময় দিতে পারবেন৷


বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ভবিষ্যৎ মহাকাশ অনুসন্ধানে রোবটপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ মহাকাশ স্টেশনে খাদ্য ও যন্ত্রপাতি সরবরাহে মানুষের পরিবর্তে পাঠানো যাবে রোবট৷ হাবল টেলিস্কোপ মেরামতেও রোবট রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা৷ ম্যাকডোনাল্ড, ডেটউইলার অ্যান্ড এসোসিয়েটস এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি হাবল টেলিস্কোপ মেরামতে ডেকসট্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখেছে৷ কিন্তু এখনই তা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা টেলিস্কোপ মেরামতের জন্য একটি মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে৷ রোবটের বিষয়টি তারা ভবিষ্যতে ভাববে৷


ড্যান রে বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে রোবটপ্রযুক্তি মহাকাশ গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷ নভোচারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করবে তারা৷ রোবট যাবে মঙ্গল গ্রহে, চাঁদে৷ চরম বৈরী পরিবেশেও আবিষ্কারের নেশায় যোগ করবে নতুন মাত্রা৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।