https://gocon.live/

তথ্যপ্রযুক্তি

আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও এর ভবিষ্যৎ

আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও এর ভবিষ্যৎ আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও এর ভবিষ্যৎ
 

আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ও এর ভবিষ্যৎ


বিষয়টির গভীরে যাবার আগে পাঠক-পাঠিকাদের জন্য একটি গৌরচন্দ্রিকা দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি৷ এই অংশটি পাঠ করলে এটি বুঝা যাবে, তথ্যপ্রযুক্তির মানবসম্পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যাগুলো বিচিত্রমুখী, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ভিন্ন৷ অতি সাধারণ বা প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা এর সমাধান করতে পারবো না৷ বরং অতি নিবিষ্টভাবে এ খাতের সমস্যাগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে এবং তারপরই শুধু এর সমাধান হতে পারে৷


কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা উচিত৷ এ অভিজ্ঞতা থেকে এটি স্পষ্টতই উপলব্ধি করা যাবে, সঙ্কটটি কোথায় এবং এর সমাধানও কোথায়৷ আকস্মিকভাবে আমার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত দুজন তরুণ সফটওয়্যার প্রকৌশলী নতুন একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে নতুন কাজে যোগ দিলো৷ ওদের যাওয়াটায় কোনো ক্রটি নেই৷ কারণ, আমার সাথে ওদের কাজ করার যে শর্ত ছিল, তার চাইতে বহুগুণ নতুন সুবিধা পেলো ওরা৷ আমি যাচাইবাছাই করে দেখলাম, ওরা যা পাচ্ছে তা আমার পক্ষে কোনোভাবেই, দেয়া সম্ভব নয়৷ ফলে আমি ওরা চলে যাবার বাসনাটিতে সম্মতি দিলাম৷ কিন্তু এর ফলে নিজে একটি চরম দুর্দশায় পড়ে গেলাম৷ কারণ, ওরা দুজনে আমার দুটি সফটওয়্যার প্রকল্পে কাজ করছিল অনেক দিন যাবত৷ সেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করা আমার জন্য সত্যি সত্যি কঠিন হয়ে পড়লো৷ কিছুদিন পড়ে আরো একটি বিপদ আঁচ করলাম৷ ওরা আমার প্রকল্পের সোর্স কোড চুরি করে নিয়ে গেছে এবং তাদের নতুন প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্পে সেই সোর্স কোড ব্যবহার করেছে৷ বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য মানবসম্পদ সংক্রান্ত এই সঙ্কটটিকে এখন আমাদেরকে চরমভাবে মোকাবেলা করতে হচ্ছে৷


আমি শুধুমাত্র বিজয় নামের একটি সফটওয়্যারের কাজ করছি অনেক দিন থেকে৷ বলা যায় দুই দশক ধরে আমি শুধু সেই সফটওয়্যারটিকেই সামনে রাখার চেষ্টা করেছি৷ সেজন্য অবশ্য আমার বেশি লোকের প্রয়োজন হতো না৷ ১৯৮৯ থেকে ৯২ পর্যন্ত ম্যাক সংস্করণের জন্য এবং ১৯৯৩ পর্যন্ত পিসি সংস্করণের জন্য একজন প্রোগ্রামার আমার অফিসে বসে কাজ করতো৷ এরপর সেই প্রোগ্রামার চলে যান৷ এরপর আমি আর নতুন কাউকে স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য নিযুক্ত করিনি৷ আমার অফিসে একটি অপ্রোগ্রামার টিম কাজ করতো৷ এর বাইরে একজন প্রোগ্রামার নিজের বাড়িতে কাজ করেই এই সফটওয়্যারের প্রোগ্রামিংয়ের কাজ সম্পন্ন করতে পারতেন৷ দশ বছর ধরে এ ব্যবস্থা অত্যন্ত চমত্কারভাবে কার্যকর ছিল৷ বিজয় নিয়ে এখনও আমি সেভাবেই কাজ করছি৷ কিন্তু বরাবরই আমি সফটওয়্যারের অন্য শাখায় কাজ করার জন্য টুকিটাকি চেষ্টা করে চলছিলাম৷ দুই থেকে পাঁচ জনের একটি প্রোগ্রামার দল আমার অফিসে বসে নিয়মিত কাজ করতো৷ ওরা প্রধানত একেবারে আনকোরা নতুন ছিলো৷ এদের কারো কাছ থেকে তেমন কোনো ভালো সফটওয়্যার আমি পাইনি, পাবার প্রত্যাশাও ছিল না৷ কমপিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন করার পর ওরা আমার অফিসে বসতেন এবং বছর তিনেক লেগে যেতো নতুন সফটওয়্যারগুলোতে কাজ করা শিখতে৷ এতে অবশ্য আমার তেমন কোনো অসুবিধা হতো না৷ কারণ, আমার বন্ধুবান্ধবরা যখন অন্য সফটওয়্যার নিয়ে জীবনপাত করেছে, তখনও আমি সেদিকে আকৃষ্ট হইনি৷ ফলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমার সফটওয়্যার বলতে বিজয়কেই বুঝাতো৷ তবে কিছু কিছু চেষ্টা আমার ছিল যে, এক সময়ে হয়তো বাংলাদেশের সফটওয়্যার বাজারে আমাদের কিছু একটা করার থাকবে৷ তার জন্য টুকটাক প্রস্তুতি আমি নিচ্ছিলাম৷ এরই অংশ হিসেবে ২০০৩ থেকেই আমি একটি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছিলাম৷ সেটি ছিল লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার তৈরি করা৷ বছরের পর বছর ধরে অনেকে সেই প্রকল্পে কাজ করছিল৷ তাদের অনেক পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আমি সেই সফটওয়্যারটিকে প্রকাশও করেছি৷ একই সাথে আমি আরো একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারের কাজ করা শুরু করি৷ এখন দিনে দিনে আমার কাছে মনে হচ্ছে. সফটওয়্যারের বাজার বাড়ছে এবং লোকজন সফটওয়্যার কেনার জন্য আগ্রহী হয়েছে৷ সেজন্য সফটওয়্যার তৈরি করা যেতে পারে৷


ওরা দুইজনের সাথে আরো দু-তিনজন মিলে আমি হাঁটি হাঁটি পা পা সফটওয়্যার জগরে বাড়তি অংশে পা রাখছিলাম৷ ওরা দুটি প্রকল্পেই নেতৃত্ব দিতো৷ প্রায় তিন বছর একনাগাড়ে কাজ করার পর ওরা দক্ষ হয়৷ কিন্তু দক্ষতা অর্জনের পরই তারা বিদায় নেয়৷ ফলে ওরা চলে যাবার সাথে সাথেই আমার ঘাড়ে বিপদ নেমে এলো৷ বরং বলা যায় ওদের জন্য আমার বিজয় লাইব্রেরি সফটওয়্যারের পরবর্তী সংস্করণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল৷ এমনকি আমার কাস্টমাররা যে সাধারণ সাপোর্ট পাবে তা সম্ভব হচ্ছিলো না৷ আমি নিজে নানা কাজে এতো ব্যস্ত থাকি যে, আমার পক্ষে কাস্টমারদেরকে সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হয় না৷ তাই খুঁজছিলাম কেমন করে অতি দ্রুত অন্তত তিনজন প্রোগ্রামারের একটি দল গড়ে তুলতে পারি৷ তেমন একটি সময়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা একঝাক তরুণ-তরুণী আমার সাথে দেখা করলো৷ আমি তাদের বিভাগীয় প্রধানকে আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম৷ তিনিই তাদেরকে আমার কাছে পাঠান৷ তাদেরকে আমি শুধু অনুরোধ করলাম, ওদের প্রথম কাজটি হবে আমার বিদ্যমান সফটওয়্যারটিকে কাস্টমারের কাছে ইনস্টল করতে হবে এবং দেখাতে হবে যে এটি দিয়ে কিভাবে কাজ করতে হয়৷ এরপর দিনে দিনে ওরা যেন এই তৈরি করা সফটওয়্যারটির দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরি করতে পারে৷ ওদেরকে বলা হলো, এটি ডট নেট সি শার্প দিয়ে তৈরি করা৷ ওরা সফটওয়্যারটি দেখলো এবং কাজ করতে রাজি হলো৷ কাজ শুরুও করলো৷ কিন্তু দুই তিন দিন পর একে একে নয় জনই নানা অজুহাত দিয়ে সরে দাঁড়ালো৷ এদের একজনের কাছে আমি জানতে চাইলাম, তারা কেনো কাজ করতে রাজি হলো এবং পরে চলে গেল৷ যে জবাবটি আমি পেলাম সেটি অনুধাবনযোগ্য৷ ওরা প্রথমে ভেবেছিলো আমার জন্য কাজ করাটি মোটেই কঠিন হবে না৷ পরে এরা সফটওয়্যারের সোর্স কোড দেখে টের পেলো যে যা এরা ভেবেছিলো তা এরা করতে পারবে না৷ কারণ, সোর্স কোড এরা বুঝতেই পারছিল না৷ ওরা ডট নেট তেমন ভালো শিখেনি৷ সি শার্প তাদের একেবারে কম জানা৷ কার্যত কোনোটাই এমনভাবে শিখেনি যা দিয়ে কাজ করা যায়৷ ফলে প্রকৃত কাজে প্রবেশ করার জন্য তাদেরকে এমন কাউকে পেতে হবে, যিনি তাদেরকে শেখার সুযোগটা দেবেন৷ আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা এমন মানসিক অবস্থাতে নেই যে এরা তাদেরই একটি পাঠ্য বিষয় আয়ত্ত করে সেটিকে সামনে নিয়ে যেতে পারে৷ এর আগে আমি কাজ না জানা ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে কাজ করেছি৷ কিন্তু তাদের কাজ করার একটি মানসিক শক্তি ছিলো৷ ওরা সময় নিয়েছে, কিন্তু শিখতে পেরেছে৷ আমি দেখেছি, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে তারা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে৷ কিন্তু এই দলটির সেই মানসিক শক্তিও নেই৷ ওরা কোনো কাজই করতে পারবে বলে সাহস করে না৷ আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার বড় সঙ্কটটা এখানেই৷ এ বিষয়ে আমি একটি প্রখ্যাত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি প্রখ্যাত একজন শিক্ষকের সাথে কথা বলেছিলাম৷ তিনি অনেক লম্বা দুই পিরিয়ডের একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন আমাকে৷ আমি দুই পিরিয়ড থেকে দুটি বাক্য এখানে তুলে ধরছি৷. ক. বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকিছুই শেখানো হয়৷ কোনো বিষয়ে অতি দক্ষতা প্রদান করা হয় না৷ ২. চাকরি পাবার বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষা দেয়া হয় না৷ জ্ঞানার্জনের প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষার পাঠক্রম ও পাঠদান নিশ্চিত করা হয়৷


শিক্ষক মহোদয়ের ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেই বলতে চাই, এই বক্তব্য ছাত্রজীবনে ভালোই লাগার কথা৷ কিন্তু ছাত্রত্ব শেষ হবার পর অনুভব করা যায়, শুধু জ্ঞানার্জন এবং সব বিষয়ের সাধারণ জ্ঞান পেটে ভাত দেবার মতো অবস্থা সৃষ্টি করে না৷ সম্ভবত এর জন্যই কমপিউটার বিজ্ঞান ছেড়ে বিবিএ-এমবিএ পড়ার জন্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ বাড়ছে৷ এক সময়ে আমরা মনে করেছিলাম, দেশে খুব শীগ্রই অন্তত হাজার দশেক সিএসই গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে৷ কিন্তু এখন দেখছি সেই সংখ্যা প্রতিদিন কমছে৷ এক ধরনের হতাশা আমি চারপাশে দেখতে পাই৷


কর্মমুখিতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা-প্রশিক্ষণের পাঠক্রম ও পাঠ :


সাধারণভাবে আমাদের কমপিউটার প্রশিক্ষণ নামের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে৷ এখন কেউ পারতপক্ষে কোন কমপিউটার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কমপিউটার শিখতে চায় না৷ অথচ গত শতকের শেষ দশকে দেশের যে কোনো তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন ছিলো তথ্যপ্রযুক্তির সাথে মিতালী করার৷ এরা তখন স্বপ্ন দেখতো প্রোগ্রামার- গ্রাফিক্স ডিজাইনার-গেম ডেভেলপার হবে কিংবা মেডিক্যাল-লিগ্যাল ট্রান্সক্রিপ্টার বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হবে৷ এজন্য ওরা যে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান করেছে তাই নয়, বরং যেখানে কমপিউটারে শেখানোর ধোঁয়া দেখতে পেয়েছে সেখানেই উপস্থিত হয়েছে৷ এরা স্বপ্ন দেখতো আমেরিকা-জার্মানি-জাপান যাবে৷ সেই সুযোগে দেশে ভারত থেকে গন্ডায় গন্ডায় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এসেছে৷ লাখ লাখ টাকা সাইনিং মানি নিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান৷ আমাদের দেশের রথী-মহারথীরা সেইসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হয়েছে৷ মন্ত্রীরা ফিতা কেটেছে৷ অন্যদিকে বগুড়ায় নট্রামস প্রতিষ্ঠান, দেশজুড়ে কমপিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাজার বসিয়ে সেগুলোর নামে সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে৷ কিন্তু তারা না শিখেছে কমপিউটার না পেয়েছে চাকরি৷ সেজন্যই তরুণ-তরুণীদের কমপিউটার শেখার সেই স্বপ্ন ধূসর হতে সময় লাগেনি৷ এখন নট্রামসের সেই রমরমা দিন নেই আবার কাকপক্ষীও ভারতীয় এ্যাপটেক-এনআইআইটিতে যায় না৷ দেশের সর্বত্র বিরাজমান এসব প্রতিষ্ঠানের দরজায় এখন তালা পড়েছে৷ অনেকে তাদের অফিস গুটিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছে৷ অতএব অনানুষ্ঠানিকভাবে কমপিউটার শেখার কাজটি বরং গোড়াতেই হোঁচট খেয়েছে৷ প্রশ্ন হতে পারে এদের মূল দুর্বলতাটি কোথায় ছিলো?


আমি মনে করি, নট্রামসের প্রতিষ্ঠানগুলো ছিলো ভুয়া৷ এদের কোনো কারিকুলাম বা কোর্স ম্যাটেরিয়াল ছিল না৷ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বহিরঙ্গে যতটা নজর দিয়েছে, অন্তরঙ্গে তার কোনো ছাপ পড়েনি৷ ওরা শুধু অফিস আর রিসিপশনের চাকচিক্যে নজর দিয়েছে৷ কিন্তু শেখার মান বা বিষয়বস্তু অথবা প্রশিক্ষকের মান নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না৷ এমনকি তারা ভেবেই দেখেনি, বাংলাদেশে কোন ধরনের জনশক্তি প্রয়োজন এবং তারা সেইসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কি না৷


সরকারি-বেসরকারি নীতিনির্ধারকদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রতি যথাযথ নজর না দেয়াটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভ্রান্তি বলে আমি মনে করি৷ আমি দুই দশক ধরেই বলে আসছি, আমাদের নিজেদের শক্তি যতক্ষণ ভালো না হবে, ততক্ষণ আমরা শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবো না৷ আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে, আমরা যেনো নিজের বাড়িতে শক্তি আর সামর্থ্য নিয়ে দাঁড়াতে পারি৷ এজন্য একটি মজবুত অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করার প্রয়োজন ছিল৷ সেই প্রয়োজনকে আমাদের নীতিনির্ধারকরা আমলে নেননি৷ অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নেও সরকার নজর দেয়নি৷ বিগত এক দশকে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির অনুকূলে কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি৷ তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কোনো পণ্য বাজারজাত করেনি, যার ফলে তথ্যপ্রযুক্তির বাজার দেশের ভেতরে সম্প্রসারিত হতে পারে৷ এসব কারণে দেশের সফটওয়্যার ও সেবাখাতের সম্প্রসারণের যে বিপুল সম্ভাবনা ছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়৷ এর সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে এই ক্ষেত্রের কর্মসংস্থানে৷ আরো একটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল-সেটি প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করার ক্ষেত্রে৷ এ্যাপটেক বা এনআআইটি যাকে খুশি তাকেই কমপিউটারের যেকোনো কিছু শেখানোর জন্য ভর্তি করেছে৷ এদের কাকে দিয়ে কোন কাজটি করা সম্ভব হবে, সেটি বিবেচনা করে দেখা হয়নি৷ এই ভুলটি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও করেছে৷ এরা উপযুক্ত ছাত্রকে উপযুক্তভাবে যাচাই করে কমপিউটার শিক্ষা দিতে যায়নি৷ বরং যারাই টাকা নিয়ে তাদের দুয়ারে গেছে তাকেই ভর্তি করেছে৷ তবে সবচেয়ে বড় বিষয়টি ছিল যে, তারা কর্মমুখী শিক্ষার অনুকূলে তাদের পাঠক্রম তৈরি করেনি৷ তারা উপযুক্ত শিক্ষক না পেয়ে এমনকি ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ক্লাস নিয়েছে৷ এর প্রভাব যা পড়ার তাই পড়েছে৷ ছাত্রছাত্রীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে৷


মানুষ চাই, আরো মানুষ, বাস্তবতা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের জনশক্তির অভাব আছে৷ এই খাতে যারাই কাজ করছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তাদের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হচ্ছে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না৷ আমি এটি বলছি না, এখানে সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু সেইসব সার্টিফিকেটধারীরা কাজ করার উপযুক্ত নয়৷ এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে৷


ক. তথ্যপ্রযুক্তি পাঠক্রমকে এই শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী রিডিজাইন করতে হবে৷ পাইকারি হারে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্স না খুলে যেখানে শিক্ষক ও সুযোগসুবিধা রয়েছে শুধু সেখানেই এই কোর্স চালু থাকতে হবে৷ এইসব কোর্স পরিচালনার সময় ইন্ডাস্ট্রি সম্পৃক্ততা রাখার পাশাপাশি সমসাময়িককালে ব্যবহার্য প্রোগ্রামিং টুলসের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে৷


খ. প্রশিক্ষণের জন্য একটি সমন্বিত পাঠক্রম তৈরি করে একটি জাতীয় পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে৷


গ. প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সাথে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ বিসিসি বর্তমানে এই কাজটি যেভাবে করছে তা খুব কার্যকর হচ্ছে না৷ সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার বদলে কমপিউটার কাউন্সিল এদের জন্য প্রয়োগিক শিক্ষার ল্যাব স্থাপন করে প্রজেক্টভিত্তিক কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারে৷


ঘ. কমপিউটার শিক্ষাকে শিশুশ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ গোড়াতে তত্ত্বীয় ও পরে ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে এখনই এই কাজটি শুরু করা যায়৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।