https://powerinai.com/

রিপোর্ট

তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের ইপসার ভূমিকা

তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের ইপসার ভূমিকা তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের ইপসার ভূমিকা
 

তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের ইপসার ভূমিকা


বাংলা স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার চাই তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে এখন প্রতিবন্ধীরাও এর সাথে যুক্ত হচ্ছে৷ এরাও কমপিউটার প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে কমপিউটারের সবধরনের সুবিধা ব্যবহারে সচেষ্ট হয়েছে৷ প্রতিবন্ধীদের কমপিউটার প্রশিক্ষণের অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ইপসা YPSA তথা Young Power in Social Action ৷ এটি চট্টগ্রামের একটি অন্যতম এনজিও৷ দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগ্য উন্নয়নে ও পরিবর্তনে আইসিটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সংস্থাটি খুবই সচেতন৷ দেশে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছে ৷


এর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ বিভিন্নভাবে এই ভাগ্য বিড়ম্বিত জনগোষ্ঠির উন্নয়নের প্রচেষ্টায় একসময় ইপসা কর্তৃপক্ষ আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ প্রতিবন্ধীদের, বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আইসিটি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করার উদ্যোগ নেয় ইপসা৷ ওই সময় ইপসায় কর্মরত ছিলেন ভাস্কর ভট্টাচার্য নামে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করেছেন৷ তাছাড়া তিনি ডাসকিনলিডারশিপ প্রকরে অধীনে জাপানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য কমপিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ সেখানে তিনি ডেইজি তথা Daisy (Digital Accessible Information System) বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন৷ জাপান থেকে ফেরার পথে ব্যাংককে একই প্রকল্পের অধীনে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ওপর সপ্তাহব্যাপী কোর্সে অংশ নেন৷


২০০৫ সালে ইপসার অফিসেই গড়ে তোলা হয় ইপসা আইসিটি অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ফর দি ডিজাবল্ড এবং আইসিটি ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ভাস্কর ভট্টাচার্যকে৷ এ সেন্টারের মূল লক্ষ্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের আইসিটি ট্রেনিং দেয়া৷ লক্ষ করা গেছে এ ট্রেনিং নেয়ার পর প্রতিবন্ধীরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়৷


তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে ইপসার আয়োজিত সেমিনারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাস্কর ভট্টাচার্য (সর্ববামে) ল্যাপটপের মাধ্যমে প্রেজেনটেশন করছেন।


এ সেন্টারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ব্যবহার করছেন স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার৷ এই সফটওয়্যার কমপিউটার স্ক্রিনে দৃশ্যমান টেক্সট পড়ে শোনায়৷ এর ফলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা এখন দৈনিক পত্রিকার খবরাখবর শুনতে পাচ্ছেন৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা স্ক্রিন রিডিং না থাকায় তাদের শুধু ইংরেজি পত্রিকার মধ্যে সীমিত থাকতে হচ্ছে৷ ইংরেজির জন্য যে স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তার নাম JAWS তথা Job Access With Speech ৷ এই সফটওয়্যারটি জাপানি ভাষার জন্যও ব্যবহার করা যায়৷ এ ব্যাপারে যদি বাংলা সফটওয়্যার নির্মাতা বা গবেষকরা এগিয়ে আসেন এবং বাংলা স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার তৈরি হয়, তবে দেশের সব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীই বাংলা পত্রিকা ও বই পড়ার সুযোগ পাবেন৷


প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধীরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী৷ এরা ই-মেইল পাঠাতে ও রিসিভ করতে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন৷ তবে আমাদের দেশের ওয়েবসাইটগুলো তাদের জন্য ঢোকার উপযোগী না হওয়ায় তারা সেগুলো পড়তে পারছেন না৷ এখানে উল্লেখ্য, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা মাউস ব্যবহার করতে না পারায় ওয়েবসাইট ডিজাইন করার সময় বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া গ্রহণ করলে ওয়েবসাইটটি প্রতিবন্ধীদের উপযোগী হয়ে যাবে৷ বাংলাদেশে ইপসাই প্রথম প্রতিবন্ধীবান্ধব ওয়েবসাইট চালু করেছে৷


ইপসার এই সেন্টারে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ডিজিটাল এক্সেসিবল ইনফরমেশন সিস্টেম যাতে ডেইজি ইনস্টল করা হয়েছে৷ ডেইজি হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও নিরক্ষর মানুষদের জন্য ডিজিটাল টকিং বুক তৈরির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্ট্যান্ডার্ড৷ সুইজারল্যান্ডে স্থাপিত ডেইজি কনসোর্টিয়াম কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার মাধ্যমে তার বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান ডিজিটাল ডিভাইড কমানো এবং প্রিন্ট ডিজ্যাবলডদের তথ্যভাণ্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷ ২০০৩ সাল থেকে ৫ বছরের জন্য জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় চালু হয়েছে ডেইজি ফর অল কার্যক্রম৷


এই কার্যক্ররে লক্ষ্য হলো সব প্রকাশিত তথ্যভাণ্ডারকে অর্থাত্ (বই ও অন্যান্য প্রকাশনাকে) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও নিরক্ষর মানুষের কাছে ডিজিটাল প্রকাশনার মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া৷ বাংলাদেশে ইপসাকে ডেইজির ফোকাল পয়েন্ট সংস্থা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ ইপসার প্রোগ্রাম অফিসার ভাস্কর ভট্টাচার্যকে ফোকাল পার্সন হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে ইপসা ডেইজি ফর অল শীর্ষক জাতীয় ওয়ার্কশরে এবং ডিজিটাল টকিং বুক প্রোডাক্টশনের বিষয়ে প্রথম ফোকাল পয়েন্ট ট্রেনিংয়ের আয়োজন করেছিল৷ জাপান থেকে ৪ জন্য প্রশিক্ষক এসে এই কোর্স পরিচালনা করেন৷ ইপসা ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেইজি কার্যক্রম শুরু করেছে৷


ডেইজি স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমে যেকোনো ডিজিটাল টকিং বই সহজভাবে হেডিং, চ্যাপ্টার ও পেজ অনুসারে পড়া যায়৷ সাধারণত এই টকিং বইগুলো মানুষের কণ্ঠস্বর দিয়েই করা হয়৷ একটা সিডিতে ৫০ ঘণ্টা পর্যন্ত রেকর্ড করা সম্ভব, যা ৫০টা ক্যাসেটের সমতুল্য৷ নিরক্ষর মানুষদের জন্য ও টকিং বুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ ইপসা ইতোমধ্যে ডেইজি ফরমেটে প্রাথমিক চিকিত্সা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য, ছোটগল্প, কৃষি, এইচআইভি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিবন্ধিতা, শিশু ও নারীনীতি, আইন, ইংলিশ গ্রামার ইত্যাদি বিষয়ে ১০০টি ডিজিটাল টকিং বুক তৈরি করেছে৷ ইউএনডিপির সহযোগিতায় আইন বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টকিং বুক করার কাজ চলছে৷ এর ফলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা আইন বিষয়ে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন৷ এছাড়া ইপসা এসএসসি ও এইচএসসির সব টেক্স বুক ডিজিটাল টকিং বুকে রূপান্তরের একটা ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে৷ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা নিজেদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে৷


২০০৬ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসের থিম ছিল তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকার উন্নয়ন ইপসা কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সেমিনারের আয়োজন করে৷ সেমিনারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাস্কর ভট্টাচার্য কমপিউটার ব্যবহার করে প্রেজেন্টেশন দেখান, তখন সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা চমত্কৃত হন এবং উপলব্ধি করেন, প্রতিবন্ধীরাও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম৷ তাদেরকে অবশ্যই তথ্যপ্রযুক্তির ট্রেনিং ও ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে৷


প্রতিবন্ধীদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য ইপসার সুসজ্জিত কমপিউটার ল্যাব আছে৷ প্রতি ব্যাচে ২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারেন৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে আইসিটি ট্রেনিং দেয়া হয়েছে৷ ইপসা কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছেন৷ সংস্থা থেকে আরো কয়েকজন প্রতিবন্ধীকে জাপানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হচ্ছে৷ এরা এক বছর পর দেশে আসলে আরো অধিক সংখ্যায় প্রতিবন্ধীদের আইসিটি ট্রেনিং দেয়া সম্ভব হবে৷ ইপসার এই কার্যক্রম সফল হলে দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীরাও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবেন৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।