https://powerinai.com/

প্রযুক্তির খবর

আপনার ডেস্কটপে গোটা বিশ্ব

আপনার ডেস্কটপে গোটা বিশ্ব আপনার ডেস্কটপে গোটা বিশ্ব
 

আপনার ডেস্কটপে গোটা বিশ্ব


নিয়াল স্টিফেনসনের সায়েন্স ফিকশন স্নো-ক্রাশ-এ৷ ১৯৯২ সালে৷ এতে কমপিউটার প্রোগ্রাম গুগল আর্থ-এর বর্ণনা করা হছে দক্ষ ও সুনিপুণভাবে৷ এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে কমপিউটার ব্যবহারকারীরা বিশ্বের মানচিত্রের বিস্তারিত আলোকচিত্র দেখতে পারে৷ জানতে পারে অন্যান্য তথ্যও৷ যেমন : সড়ক-সীমান্ত থেকে শুরু করে কফি হাউসের অবস্থান পর্যন্ত চোখের সামনে ভেসে উঠবে৷ এ দৃশ্যকে দুমড়ানো-মুচড়ানো, ঘোরানো-ফিরানো, ডানে-বাঁ য়ে সরানো, দৃশ্য দূরে নেয়া-কাছে টানা যাবে অনায়াসে ও অব্যাহতভাবে৷ প্রথমবার ব্যবহার করেই একজন ব্যবহারকারী বিস্ময়কর উল্লাস প্রকাশ করবেন৷ কারণ, উপলব্ধি করতে পারবেন সফটওয়্যার কতটুকু করতে পারে৷ যখন ভূগোলক ঘুরপাক খেয়ে দৃশ্যান্তর ঘটায়, এক স্থান থেকে আরেক স্থানের দৃশ্যে নিয়ে যায়, তখন মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়৷


গুগলস ভার্চু্যয়াল গ্লোব-এ সংযুক্ত করা হয়েছে এলিভেশন ডাটা অর্থাত্ ভূমির উচ্চতাজ্ঞাপক উপাত্ত৷ এতে দৃশ্যমান ভূমিপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য যেমন পাহাড়, উপত্যকা ইত্যাদি তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, অন্যান্য ডাটা তখন এর ওপর ওভারলেইড করা হয়েছে৷ বিশেষত ওভারলেইড করা হয় স্যাটেলাইট ইমেজারির প্যাচওয়ার্ক ও অ্যারিয়েল ফটোগ্রাফিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রোভাইডারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে তা ব্যবহার করা হয়৷ এ প্রোগ্রামে গোটা পৃথিবীর মানচিত্রই দেখানো হয়৷ সমগ্র পৃথিবীর স্থলভূমির এক-তৃতীয়াংশ এতো বিস্তারিতভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অঙ্কিত হয়েছে যে একটি গাছ, একটি গাড়ি ও ৩০০ কোটি মানুষের বাড়িঘর পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়৷ এমনটি এই কিছুদিন আগেও কল্পনা করা যেতো না, কিন্তু অতি সম্প্রতি তা বাস্তবে ঘটে গেলো এবং তা সম্ভব করে তোলা হলো৷ এর জন্য সাধুবাদ জানাতে হয় হাই রেজ্যুলেশন কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট ইমেজিং, ব্রডব্যান্ড লিঙ্কস এবং সস্তা শক্তিশালী কমপিউটারকে৷


আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান Keyhole ২০০১ সালে প্রথম রিলিজ করে প্রথম বাণিজ্যিক geobrowser ৷ গুগল ২০০৪ সালে Keyhole কিনে নেয় এবং গুগল আর্থ চালু করে ২০০৫ সালে৷ এর মৌলিক, ফ্রি ভার্সন ডাউনলোড করা হয়েছে ২৫ কোটিরও বেশিবার- জানিয়েছেন ণিহদমফণ-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মাইকেল জোনস৷ তিনি এখন গুগল আর্থ-এর প্রধান প্রযুক্তিবিদ৷


২০০৪ সালে আমেরিকা মহাকাশ সংস্থা নাসা রিলিজ করেছে আরেকটি জিওব্রাউজার৷ এর নাম ওয়ার্ল্ডউইন্ড৷ এর ২ কোটিরও বেশি কপি এখন ব্যবহার হছে৷ কিন্তু জিওব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে গুগলের প্রধান প্রতিপক্ষ হচ্ছে মাইক্রোসফট৷ মাইক্রোসফট এনসাইক্লোপিডিয়া Encarta এবং ডাটাবেজ ডেমোনস্ট্রেশন প্রজেক্ট TerraServer উভয়ের জিওব্রাউজারসদৃশ ফিচার ছিল সেই ১৯৯০-এর দশকেই৷ ২০০৫ সালের শেষ দিকে মাইক্রোসফট কিনে নেয় GeoTango, যার অবদান রয়েছে ওয়েবভিত্তিক জিওব্রাউজার Live Search Maps ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে৷ এট ডাটা ব্যবহার করে মাইক্রোসফটের পৃথিবীর ডিজিটাল মডেল Virtual Earth থেকে৷ Google Maps-এর মাধ্যমে গুগল একটি ওয়েবভিত্তিক জিওব্রাউজার ব্যবহারের সুযোগও দেয়৷


GeoTango -র প্রতিষ্ঠাতা এবং মাইক্রোসফটের Virtual Earth -এর পরিচালক ভিনসেন্ট টাও মাইক্রোসফটকে ভার্চ্যুয়াল আর্থ-এর পেছনে লাখ লাখ ডলার খরচ করতে দিয়েছেন৷ এর বেশিরভাগই খরচ করা হয়েছে imageryর অর্জরে পেছনে, যার পরিমাণ এখন ৯০০ সার্ভারে ১৪ পেটাবাইট৷ উল্লেখ্য, ১ পেটাবাইট সমান ১০ লাখ গিগাবাইট৷ কোম্পানি নগরসূহের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছে ত্রিমাত্রিক বিন্যাসিত তথা টেক্সারড আকারে৷ আর তা বিন্যাসিত হয় এলাকাভিত্তিক আলোকচিত্রের মাধ্যমে৷ প্রতি মাসে এতে যোগ হচ্ছে ১০টি নগরীর মানচিত্র৷ গুগল নির্ভর করছে এর Crowdsourcing -এর ওপর, তা করা হচ্ছে এর ব্যবহারকারীর তালিকাভুক্তি করে, যাতে এর ডিজিটাল প্লানেট আরো সমৃদ্ধ করার জন্য নির্মাণ করা যায় ইমেজ, ভবনের ত্রিমাত্রিক মডেল ও অন্যান্য ডাটা৷ আজ পর্যন্ত এর সাড়ে ৮ লাখ ব্যবহারকারী অবদান রেখেছে লাখ লাখ টীকা ও ছবিতে৷ একে-অন্যের অবদান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে এগুলোর ক্রটি দূর করে৷ উইকিপিডিয়া ব্যবহার করে একই ধরনের একটি ব্যবস্থা৷ এটিও গুগল আর্থের মাধ্যমে পাওয়া যায়৷ ব্যবহারকারীরা উইকিপিডিয়া লেখাগুলো পড়তে পারে geotags ব্যবহার করে গ্লোবের ওপর স্থাপন করে৷ geotags হচ্ছে স্থানসংক্রান্ত স্থানাঙ্ক, যা এনকোড করা আছে প্রতিটি এন্ট্রিতে৷ অন্যান্য সাইটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে শীর্ষস্থানীয় ফটো-শেয়ারিং সাইট Flickr ৷ গুগল-এর You Tube সাপোর্ট করে জিওট্যাগস৷


ভার্চু্যয়াল গ্লোবগুলোকে নিয়ে আসা হচ্ছে অপ্রত্যাশিত মাত্রায় ব্যবহারের আওতায়৷ গুগল আর্থ ব্যবহার করা হয়েছিল ২০০৫ সালে নিউ অরিলিনসের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যাটরিনা ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সময়ে ত্রাণ তত্পরতা সমন্বয়ের বেলায়৷ বুয়েনস আয়ার্সের ট্যাক্স ইন্সপেক্টররা এটি ব্যবহার করছে লোকজন তাদের সম্পত্তির সঠিক আকার তুলে ধরছে কি না, তা দেখার জন্য৷


আমেরিকান দাতব্য প্রতিষ্ঠান আমাজান কনজারভেশন টিম আমজারে ২৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীর জন্য সৃষ্টি করেছিলেন হ্যান্ড-হেল্ড গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ইউনিট এবং কমপিউটারচালিত গুগল আর্থ, যাতে করে এরা তাদের আইনী সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে লগার ও মাইনারদের হুমকি মোকাবেলায়৷


গুগল আর্থ অ্যান্ড ম্যাপস ডিভিশনের প্রধান জন হ্যাঙ্কি বলেন, এটি রূপ নিচ্ছে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মানচিত্রে৷ এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের মানচিত্র৷ এটি আগের যেকোনো মানচিত্রের চেয়ে অধিকতর বিস্তারিত৷


ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব


গোটা পৃথিবী গ্রহটাকে দেখার জন্য জিওব্রাউজার হচ্ছে বিস্ময়কর কার্যকর উপায়৷ কিন্তু এই বৃহত্তর প্রচেষ্টার এটি একটি দিক মাত্র৷ geoweb গড়ে তোলার কাজটি এখনো রয়ে গেছে ‍আাঁতুরঘরেই৷ যেমনি ১৯৯০-এর মধ্যদশকে ছিল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব৷ এ ওয়েব মানুষের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে৷ সাধারণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষ অপর প্রান্তের মানুষের সাথে সহজেই যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারছে৷ এর নানা ধরনের ফিচার এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে৷


এখন সবচেয়ে উত্তপ্ত বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে mash-ups-এ অন্যান্য ডাটার উত্সের সাথে ভার্চু্যয়াল ম্যাপের কম্বিনেশন নিয়ে৷ এর প্রথম দিকের উদাহরণগুলোর একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে সৃষ্ট housengmaps.com- এর সাথে গুগল ম্যাপস-এর


Craigslest.com থেকে সানফ্রান্সিসকো অ্যাপার্টমেন্টের লিস্টিংয়ের কম্বিনেশন৷ তখন থেকে mash-up হয়ে উঠেছে কমন প্লেস৷ গুগল বলেছে, এর ম্যাপগুলোর ৪০ লাখের বেশি ব্যবহার হচ্ছে৷ গত এপ্রিলে এ কোম্পানি গুগল ম্যাপস-এ কিছু ফিচার সংযোজন করেছে mash-up ক্রিয়েট করার কাজটি সহজ করে তোলার জন্য৷ মাইক্রোসফট একই ধরনের একটি টুলের ওপর এখন কাজ করে যাচ্ছে৷ অন্য একটি সাইট spatial.com ব্লগারদের জন্য mash-up দিচ্ছে ফ্রি টুলস৷ এতে বিস্তার ঘটছে নতুন ধরনের সেলফ-অ্যাবসরপশন অটোবায়োগ্রাফির৷


যারা প্রোপার্টি ব্যবসায় নিয়োজিত তাদের কাছে geoweb -এর একটা সহজবোধ্য আকর্ষণ রয়েছে৷ zillow.com মাইক্রোসফটের ভার্চু্যয়াল আর্থ-এর সাথে অন্যান্য ডাটা এক সাথে মিশিয়ে দেয় আমেরিকায় বাড়ির একটি মানচিত্র তৈরি করার জন্য৷ কিন্তু প্রোপার্টির বিষয়টি একটি সূচনা মাত্র৷


এসব উদাহরণ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় জিওওয়েব- ডাটার বিকাশমান আর্কিটেকচারের৷ যেমন- যানজট ও ভূকম্পন সম্পর্কিত তথ্য আলাদা আলাদাভাবে হোস্ট করা হয় ইমেজ ও জিওব্রাউজারের মডেল থেকে৷ এই জিওব্রাউজার মডেল একত্রে সংযোজন করে তথ্য প্রদর্শন করে নতুন নতুন উপায়ে৷ Geo Commons.com হোস্ট করে ডাটা, অপরাধের হার থেকে শুরু করে ক্ষতিকর টিউমার মেলানোমার পরিসংখ্যান পর্যন্ত তথ্য৷ এগুলো একত্রিত করে তৈরি করা যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরের বিষয়ের কালার-কোডেড heat map ৷


heywhatsthat.com -এর ভিজিটররা যে কোনো উঁচু স্থান থেকে দৃশ্যের একটা ডায়াগ্রাম বা চিত্র তৈরি করে নিতে পারে দৃশ্যমান পাহাড়চূড়ার নামগুলো দেখার জন্য৷ এখানে নিওজিওগ্রাফাররা পরিচিত mash-up enthusiasts হিসেবে৷ এদের উত্তরণ ঘটেছে একটি ভূখণ্ডগত জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম জিআইএস-এ৷ বিভিন্ন দেশে সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানি একটি ক্যান্সি সফটওয়্যার টুল ব্যবহার করে স্থান সংক্রান্ত বা spatial data বিশ্লেষণের কাজে৷ তুলনামূলকভাবে জিওব্রাউজারগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের হলেও এগুলোর ব্যবহার খুবই সহজ৷ জিআইএস কাজ করে জটিল অবকাঠামো নিয়ে৷ সেজন্য এর ডাটা নিখুঁত মানের৷ জিআইএস বাজারে প্রভাবশালী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইএসআরআই-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডেঞ্জারমন্ড বলেন, জিওওয়েবের প্রতি আগ্রহের কারণে তাদের ব্যবসায় এ বছর ২০ শতাংশ বাড়ানো গেছে৷ ইন্টিগ্রেটিং সিভিক জিওডাটা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান Galdos Systems -এর Ron Lake বলেন, জিওব্রাউজার মানুষকে এ ধরনের ডাটার সহজ ও উন্নততর প্রবেশ-সুযোগ দিয়েছে৷


যখন জিআইএস-এর নিখুঁত মানের ডাটা ও অ্যানালাইটিক্যাল ইনসাইট একসাথে গিয়ে মিশে জিওওয়েবের ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও নেটওয়ার্কিং সৌকর্যের সাথে, তখন উদ্ভব ঘটে চমকপ্রদ কার্যক্ষমতার৷ গত বছর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওয়াটারস্টোন জিওডাটা সংযোজন করেছিল বিমানবাহিনীর ১৩টি বিমান ঘাঁটির জন্য এবং এগুলো আসলে রাখা হয় নাসার World Wind জিওব্রাউজারের একটি পরিশুদ্ধ সংস্করণে বা মডিফাইড ভার্সনে৷ এর মাধ্যমে বিমানবাহিনীর প্রতিটি ঘাঁটির ত্রিমাত্রিক বহুমুখী মডেল অনুসরণ করে বিভিন্ন স্তরের ডাটা সংগ্রহের কাজটিকে সম্ভব করে তোলা হয়৷ একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক নির্মাণস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও দেখে চিহ্নিত করতে পারেন কন্ট্রাক্টর ও তাদের গাড়ি৷ একজন প্ল্যানার বের করতে পারেন একটি প্রস্তাবিত ভবনের রানওয়ে ভিজিবিলিটির ওপর প্রভাব৷ এবং একজন পরিবেশ বিষয়ক প্রকৌশলী ভূগর্ভস্থ দূষিত পানি দেখার সময় তিনি এ এলাকার এতদসংশ্লিষ্ট ৪৫ বছরের দলিলপত্র দেখার সুযোগও পাবেন এই সাইটের মাধ্যমে৷ লেগে যেতে পারবেন এসব দলিলপত্র নিয়ে গভীর গবেষণায়৷ ওয়াটারস্টোনের কর্মকর্তা কার্লা জনসন বলেছেন, এ প্রকল্পের ব্যয় ১০ লাখ ডলারেরও কম৷ এবং বিমানবাহিনী এর সাহায্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি বছর সাশ্রয় করতে পারে ৫০ লাখ ডলার৷


গুগল আর্থ ফুটাবে হাসি


অন্যান্য যেকোনো প্রযুক্তির মতো জিওওয়েবেরও ভালো ও মন্দ ব্যবহার উভয়ই আছে৷ যখন জিওব্রাউজার প্রথম উপগ্রহ চিত্রাদিতে সহজ প্রবেশের সূচনা করলো, তখন অনেক পর্যবেক্ষক আশঙ্কিত হলেন সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করতে এসব ছবি ব্যবহার হতে পারে৷ এমনটি হওয়ার আগে এ সুযোগ ছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যবহারের৷ ইরাকে প্রতিরোধ যোদ্ধারা বসরা শহরের একটি ব্রিটিশ ঘাঁটিতে হামলা করার পরিকল্পনা করে এর মাধ্যমে পাওয়া উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে৷ এ চিত্রে সুনির্দিষ্ট ভবনগুলো ও গাড়িগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল৷ গত জানুয়ারিতে তা প্রকাশ হয়ে পড়ে৷


এই গ্রীষ্মে স্টেট অব নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলির একজন সদস্য গুগল বলেন, একটি বিমানবন্দরে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে এর ইমেজ বা চিত্রসমূহ অস্পষ্ট ও অন্ধকারময় করে দিতে৷ এই সদস্য বলেছেন, এ ব্যাপারে গুগলের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছে কিছু দেশের সরকার৷ এ সরকারের মধ্যে ভারত সরকার ও ইউরোপের কয়েকটি সরকারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷ তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান টানা হয়েছে গুগল আর্থের ইমেজারির কোনো পরিবর্তন না এনে৷ যদিও নিরাপত্তার কারণে কিছু ভবন ও স্থান দুর্বোধ্য করে দেয়া হয়, গুগল বলেছে এ কাজটি করে সেইসব প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে এসব ইমেজারির লাইসেন্স নেয়া হয়৷ মাইক্রোসফট বলেছে, তারা ছবি অস্পষ্ট করে সংশ্লিষ্ট সরকার ও বৈধ সংস্থার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে৷ গুগল নিরাপত্তার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছে৷ এবং গুগল উল্লেখ করেছে, আমেরিকান সরকারি কর্মকর্তাদের অভিমত হচ্ছে, উপগ্রহচিত্র সহজে পাওয়ার যোগ্য করে তোলায় এর যা উপকার, তার চেয়ে ঝুঁকি ব্যাপক৷ অবশ্য, কিছু আইনগত অধিকার অবশ্য এই আলোকচিত্র সাগ্রহে গ্রহণ করেছে৷ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ হাই রেজ্যুলেশনের কিছু ইমেজ দান করে দিয়েছে গুগলের কাছে৷ কারণ, তাদের প্রত্যাশা ভার্চু্যয়াল ভিজিটররাই হবে তাদের সত্যিকারের সম্ভাবনাময় পর্যটক৷


যেসব সরকার একে অপরের কাছ থেকে স্পাই স্যাটেলাইট গোপন রাখতে চাইতো, জিওব্রাউজার সূচিত হওয়ার ফলে তাদের বেলায় অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি৷ সাধারণ মানুষ এখন গুগল আর্থের মাধ্যমে চীনের পারমাণবিক সাবমেরিনের চিত্র পাবেন৷ কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই আরো বিস্তারিত উপগ্রহ চিত্রে প্রবেশ করে আসছিল৷ আর বাস্তবতা হচ্ছে, সাবমেরিন এখন অন্যান্য সব উপায়েই দেখা যায়৷ সেজন্য চীন এখন আর এগুলোর অস্তিত্ব গোপন রাখতে চাইছে না৷ এমনকি সশস্ত্রবাহিনীও এখন জিওব্রাউজারকে উপকারী টুল হিসেবে পেয়েছে৷ আমেরিকান সেনাবাহিনী এখন World Wind এবং গুগল আর্থের এন্টারপ্রাইজ সংস্করণের বড় ব্যবহারকারী৷ কিছু কিছু সরকারের উদ্বেগের কারণও আছে৷ উদাহরণস্বরূপ সুদান সরকার নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকার দেবে আমেরিকার হলোকাস্ট মিউজিয়াম যেনো দারফুরের ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামগুলোর চিত্র গুগল আর্থের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার না করে৷


গুগলের নতুন Street View ফিচার চালু হয়েছে গত মে মাসে৷ এর মাধ্যমে গুগল ম্যাপস ব্যবহারকারীরা আেরিকান কতগুলো শহরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সড়কের ইমেজ ধরে চলতে পারে৷ এটি বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ের রাস্তাগুলোর ওপর নজরদারির সুযোগ এনে দেয়৷


অবশ্য, ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ সব ফিচারই একসময় জিওওয়েবে নতুন মাত্রা পাবে৷ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেগুলো কাজে লাগাতে লাইন দেবে৷ এগুলোকে জনপ্রিয় করে তুলবে৷ কারণ, তখন টেলিপ্রেজেন্ট মেশিনগুলো পাল্টে যাবে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে রোমিং করে৷ ভূতুড়ে ব্যক্তিগত জগত চাপা পড়বে বাস্তবতার নিচে৷


রোড টু ওয়েব ৩.০


এ সমরে বাধা হচ্ছে রেজ্যুলেশন৷ গুগল সম্প্রতি টেগিং প্রটোকল কেএমএল পেশ করেছে, যাতে বর্ণিত আছে কী করে বস্তুগুলো গুগল আর্থে রাখা হয়৷ Open Geospatial Consortium তথা OGC- এর কাছে গুগল তা পেশ করেছে৷ এর ফলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এতে সহায়তা দেবে৷ স্থান সংক্রান্ত স্পেটিয়েল ইনফরমেশন মডেলসমূহ এনকোড করার জন্য ওজিসির ডেভেলপ করা প্রটোকল জিএমএল এবছর আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে৷ গতিশীল জিওডাটা স্ট্যান্ডার্ডসমূহ, ভবনসমূহের ত্রিমাত্রিক মডেলে শেয়ারিং ও স্পন্সর নেটওয়ার্কগুলো থেকে নেয়া জিওডাটা আগামী বছরে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এসব নিশ্চিত করবে আন্তঃপরিচালনা বা ইন্টারঅপারেবিলিটি এবং তা অন্যান্য ধরনের জিওডাটার মতোই কাজ করবে- বলেছেন ওজিসির প্রধান প্রযুক্তিবিদ কার্ল রিড৷


একই সাথে স্যাটেলাইট পজিশনিং টেকনোলজি মোবাইল ফোনে ও গাড়িতে সংযোজন খুলে দিতে পারে ফ্লাডগেট বা স্রোতধারা৷ যখন এটি চালু হবে তখন মোবাইল ব্যবহারকারীরা কোনো লোকেশন বা স্থান সম্পর্কে নোট নিতে পারবেন, যা পরে অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন৷ এর ফলে এক্সট্রাসেন্সরি ইনফরমেশন অ্যাওয়্যারনেসের অবসান ঘটতে পারে৷








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।