স্মার্ট হোম : প্রযুক্তির বিস্ময়কর অবদান
বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কমপিউটার উদ্ভাবন হবার কয়েক দশকের মধ্যে আধুনিক জীবনযাপনে আগ্রহী মানুষ দ্রুত এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ ডেস্কটপ কমপিউটার বা পিসি মানুষের হাতের নাগালে আসার সাথে সাথে কমপিউটার ব্যবহারের পরিধি প্রায় হাজারগুণ বেড়ে যায়৷ চলমান বিশ্বে গবেষণা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক গতি অর্জনের প্রতিশ্রুতি পালনের পাশাপাশি পিসি অবদান রাখতে শুরু করেছে হোম নেটওয়ার্কিংয়ের মতো ক্ষেত্রে, যা আপাতদৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রথমদিকে হোম নেটওয়ার্কিং খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না৷ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন হোম নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হতে লাগল, তখন এর জনপ্রিয়তা বেড়ে গেল অনেকখানি৷ হোম নেটওয়ার্কিং পেল নতুন মাত্রা৷ আর বর্তমান বিশ্বে হোম নেটওয়ার্কিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণটি হলো স্মার্ট হোম৷ স্মার্ট হোম নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লিখেছেন সিফাত উর রহিম৷
স্মার্ট হোম কি?
স্মার্টহোম-এর ধারণা মোটেই নতুন কিছু নয়৷ ১৯৮০ সালের দিকে আমেরিকায় এটি পরিচিতি লাভ করে ইন্টেলিজেন্টবিল্ডিং নামে ৷ খুব সহজভাবে বলতে গেলে, স্মার্ট হোম এমন একটি প্রোগ্রাম উপযোগী হোম অটোমেশন সিস্টেম, যা একটি বাড়ির তিনটি মূল অংশ- হিটিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম এবং সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেম সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করবে৷ সেই সাথে পুরো হোম অটোমেশন সিস্টেমটি হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়৷ হোম অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোম নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে একটি বাড়ির নিরাপত্তা, বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোম এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি প্রতিটি সিস্টেম আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং একই সাথে এগুলোর সমন্বয় সাধন করাই স্মার্ট হোমের লক্ষ্য৷
একটি স্মার্ট হোমে ঠিক কী কী ডিভাইস থাকা দরকার, তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট মানদ- নেই৷ তবে কমপক্ষে অবশ্যই হিটিং সিস্টেম, লাইটিং এবং সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকতে হবে৷ আর তাহলেই একে স্মার্ট হোম বলা যাবে৷ এছাড়া অতিরিক্ত কোনো ডিভাইস যুক্ত করা না করার বিষয়টি ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে৷ স্মার্ট হোমের অনেক বৈশিষ্ট্য চলতি সময়ের সায়েন্স ফিকশন মুভিগুলোতে চোখে পড়ে৷ একটি আধুনিক বাড়ির সাথে স্মার্ট হোমের পার্থক্য হলো, এখানে বিভিন্ন সিস্টেম ও ডিভাইসের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করার একটি পথ তৈরি করে দেয়া থাকে৷ একটি আধুনিক বাড়িতে নানারকম সিস্টেম থাকে৷ যেমন- ফায়ার সিস্টেম, সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম, সিকিউরিটি সিস্টেম ইত্যাদি৷ এছাড়া থাকে বিভিন্ন ডিভাইস : টেলিভিশন, মিউজিক সিস্টেম, লাইট, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ সরঞ্জাম ইত্যাদি৷ কিন্তু এসব সিস্টেম ও ডিভাইসগুলো একটি অপরটি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন৷ স্মার্ট হোমে এসব ডিভাইস এবং সিস্টেম একে অপরের সাথে তথ্য দেয়া-নেয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার জন্য সিগন্যাল পাঠাতে পারে, যাকে কমান্ড বলা হয়ে থাকে৷
বিগত দশকে বাইরের দেশগুলোতে একটি বাড়ির বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের জন্য কমপিউটারের ব্যবহার ক্রমাগতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ ওয়াশিং মেশিন, হিটিং সিস্টেম, মাইক্রোওয়েভ সরঞ্জাম ইত্যাদি যখন পিসির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটি বাড়ি কন্ট্রোল করার এবং এর নিরাপত্তা রক্ষার নতুন ও কার্যকর উপায় মানুষ খুঁজে পেয়েছে৷ স্মার্ট হোম তৈরি করতে গিয়ে আসলে কয়েকটি কমপিউটারকে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে৷ এরপর তাদের মাঝে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করার মাধ্যমে এক জায়গা থেকে তাদেরকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে৷ আর এরই ফলে ম্যানুয়ালি একটি সুইচ অন করা বা কোনো নব ঘুরিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে৷ ঘরের বিভিন্ন উপাদান দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ অথবা এগুলো দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে৷
এই কমপিউটারগুলো নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ক্যাবল দিয়ে যুক্ত থাকে বা একে অপরের সাথে ডাটা আদান-প্রদানের জন্য ওয়্যারলেস সিগন্যাল ব্যবহার করে থাকে৷ কমপিউটার নিয়ন্ত্রিত হবার ফলে স্মার্ট হোমের বিভিন্ন ধরনের অপারেশন খুব সহজ হয়ে পড়েছে৷
যেমন-স্মার্ট হোম সিকিউরিটি অ্যালার্ম প্যানেল নামে মাইক্রোপ্রসেসর যুক্ত ডিভাইস রয়েছে৷ একে টেলিফোনের মাধ্যমে বাইরে থেকে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য কমান্ড দেয়া যায় এবং একই সাথে একে আনসারিং মেশিন হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ তবে এতে যোগাযোগ করে কমান্ড দেবার জন্য নির্দিষ্ট একটি পিন নম্বর দিতে হয়, যা সিকিউরিটি নম্বর নামে পরিচিত৷ এতে স্মার্ট হোমের ব্যবহারকারী ছাড়া আর কেউ কমান্ড দিতে পারে না৷ এটি ব্যবহার করে নিচের কাজগুলো করা যায় :
* যদি কখনো বাসায় ফিরতে দেরি হয়৷ তবে সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে রুমের পর্দা টেনে দেবার জন্য সিকিউরিটি অ্যালার্ম প্যানেলটিকে নির্দেশ দেয়া যেতে পারে৷
* বাসায় ফিরে আসার আগেই কমান্ড দিয়ে সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম অন করে রাখা যেতে পারে৷ এতে বাসা গরম থাকে৷
* কোনো অতিথি যদি আপনার অনুপস্থিতিতে বাসায় চলে আসে, তবে সিকিউরিটি অ্যালার্ম প্যানেল আপনাকে মোবাইলে ফোন করে তা জানিয়ে দেবে৷ আপনি তাদের সাথে কথা বলে আসার সময় জানিয়ে দিতে পারবেন, যাতে পরবর্তী সময়ে এরা আপনাকে বাসায় পেতে পারে৷
* কেউ কোনো পণ্য ডেলিভারি দিতে আসলে তাদেরকে সেটি ওখানেই রেখে যেতে হবে, বা পরে আবার আসতে হবে৷ সিকিউরিটি অ্যালার্ম প্যানেলের কারণে এরা বাসার ভেতরে ঢুকতে পারবে না৷
সমন্বিত নিরাপত্তা
সিকিউরিটি অ্যালার্ম প্যানেলের মাধ্যমে স্মার্ট হোমের ভেতরের ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে বাসার ভেতরে প্রতিটি রুমের নিরাপত্তা আলাদা আলাদাভাবে মনিটর করার সুযোগ রয়েছে৷
* বাসা ছেড়ে বের হবার সময় মাত্র একটি সুইচ চেপেই সিকিউরিটি অ্যালার্ম, গাড়ির অ্যালার্ম অন করা যাবে৷ বাসার সব লাইট অফ এবং ঘরের খোলা দরজা-জানালা বন্ধ করা যাবে৷ বাড়ি ফিরে আসার সময়ও এই একটি সিগন্যালই সবকিছুকে আগের অবস্থাতে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট৷
* কয়েকদিনের জন্য আপনি যদি বাড়ির বাইরে থাকেন, তবে ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সিস্টেম বা সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজে থেকেই দিনের বেলায় প্রতিটি ঘরের লাইট বন্ধ রাখবে৷ রাতে তা অন করে দেবে৷ পর্দা টেনে দেবে, যাতে বাড়িটি জনমানবশূন্য মনে না হয়৷
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
* যদি ঘরে কোথাও গ্যাস লিক হয়, তবে ডিটেক্টর তা জেনে মেইন সোর্স থেকে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ করে দেবে এবং অ্যালার্ম বাজাবে৷ একই সাথে ঘরের লাইটগুলো বন্ধ করে দেবে, যাতে স্পার্ক তৈরি হবার কোনো সুযোগ সৃষ্টি না হয়৷
* ঘরে আগুন লেগে গেলে স্মোক এবং হিট ডিটেক্টর তা জেনে নিয়ে কয়েকটি কাজ একসাথে করতে পারে৷ যেমন-সিকিউরিটি প্যানেল থেকে ফায়ার ব্রিগেডে ফোন করতে পারে বা ঘরের সবগুলো লাইট ফ্ল্যাশ করার সাথে সাথে তীক্ষ্ণ সাইরেন বাজাতে পারে৷ যদি ঘরে কেউ থাকে, তবে সবগুলো দরজা খুলে দিয়ে তাকে দ্রুত বের হতে সহায়তা করতে পারে৷
হারানো জিনিস খুঁজে বের করা
ঘরের অনেক জিনিস ঘনঘন হারিয়ে যায়৷ যেমন- চাবি, মানিব্যাগ, গ্লাস, রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি৷ স্মার্ট হোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, খুব সহজে এগুলো খুঁজে বেরা করা৷ এজন্য এতে ব্যবহার করা হয় ট্র্যাকিং অ্যান্ড সেন্সিং টেকনোলজি৷ এ টেকনোলজির মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিটি জিনিসের সাথে একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যুক্ত করে কম ফ্রিকোয়েন্সির বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে স্মার্ট হোমের মূল সিস্টেমের প্রতিটি জিনিস আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়৷ তাই কোনো হারিয়ে যাওয়া জিনিস এই বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করেই খুঁজে পাওয়া যায়৷ তবে সবক্ষেত্রে তা সম্ভব নাও হতে পারে৷ যেমন-কেউ চাবি নিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলে কিংবা প্রতিটি জিনিসের সাথে যুক্ত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটির ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেলে এ পদ্ধতি কাজ করবে না৷
ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
স্মার্ট হোমের রয়েছে ঘরের তাপমাত্রা নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করার স্বাধীনতা৷ বাইরের বিরূপ আবহাওয়াকে একেবারেই পাত্তা না দিয়ে প্রতিটি রুমের তাপমাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন করা যায়৷ যেমন-রাতের বেলা থেকে ভোর পর্যন্ত ঘুমানোর সময় তাপমাত্রার যে প্রাকৃতিক পরিবর্তনটুকু হয়ে থাকে, সেই একই পরিবর্তন কৃত্রিমভাবে ঘরের ভেতর নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে দিনের যেকোনো সময়ে৷ শুধু আপনাকে উল্লেখ করে দিতে হবে আপনি কখন ঘুমাতে ও কখন ঘুম থেকে উঠতে চাইছেন৷ এবং কি হারে তাপমাত্রার পরিবর্তন আপনার পছন্দ৷ এই হিসেবগুলো নিখুঁত হলে দিন-রাতের পার্থক্যের সীমাবদ্ধতা স্মার্ট হোমের মাধ্যমে অনেকটাই ঘোচানো যায়৷
জীবনযাত্রাকে সহজ করে
স্মার্ট হোম মানুষের জীবনযাত্রাকে একেবারে সহজ এবং ঝামেলাহীন করে তুলবে৷ এছাড়া স্মার্ট হোম শারীরিকভাবে অক্ষম একজন মানুষকে স্বাভাবিক মানুষের মতোই পুরো স্বাধীনতা দিতে পারে, তবে তা ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ হুইল চেয়ারে বসা একজন মানুষ শুধু রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করেই বিভিন্ন কমান্ড দেবার মাধ্যমে ঘরের প্রায় সব কাজ করিয়ে নিতে পারে৷ এছাড়া কারো যদি রাতে ওঠার অভ্যাস থাকে, তবে সে জেগে ওঠার সাথে সাথেই মোশন ডিটেক্টর দিয়ে তা ডিটেক্ট করে স্মার্ট হোম নিজে থেকেই ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেবে, যাতে অন্ধকারে হোঁচট না খেতে হয়৷
টেলিভিশন দেখার সময় রিমোট কন্ট্রোলের একটি সুইচ চেপেই ঘরের পর্দা টেনে দিয়ে এবং ঘরের লাইটের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিয়ে টিভি দেখার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যায়৷
স্মার্ট হোম যেভাবে কাজ করে
একটি সাধারণ লাইট সুইচ যেভাবে কাজ করে তা খুবই সহজ৷
শুধু সুইচ অন করলে বিদ্যুত্ প্রবাহ ঘটে এবং লাইট জ্বলে আর সুইচ অফ করলে তড়িত্ প্রবাহ বন্ধ হয় এবং লাইট অফ হয়৷ কিন্তু স্মার্টহোমে এই ব্যাপারটি কিছুটা ভিন্নভাবে ঘটে৷ এখানে সুইচের মাধ্যমে বিদ্যুত্ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে একটি সিগন্যাল পাঠানো হয় কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে৷ একে বাস সিস্টেমও বলা হয়ে থাকে৷
কন্ট্রোলার সার্কিট নামের একটি সার্কিট এক বা একাধিক লাইটের সাথে যুক্ত থাকে৷ সুইচের কাছ থেকে বাস সিস্টেমের মাধ্যমে সিগন্যাল পাবার সাথে সাথে তা সাড়া দেয়, ফলে লাইট অন হয়৷
কিন্তু কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে শুধু একটি লাইট যুক্ত থাকে না, বরং একাধিক লাইটসহ অন্য আরো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসও যুক্ত থাকে৷ ফলে সুইচ অন করে একাধিক ডিভাইস একই সাথে অন করা সম্ভব৷
স্মার্ট হোমের পুরো বাস সিস্টেমে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এত সহজ নয়, বেশ জটিল৷ স্মার্ট হোমের মূল নেটওয়ার্কটিকে কয়েকটি সিস্টেমে ভাগ করা হয়৷ সেখানে প্রতিটি সিস্টেম একটি সিগন্যালকে ব্যাখ্যা করার জন্য নিজেদের মধ্যে রিসোর্স এবং ইনফরমেশন শেয়ার করে থাকে৷
তথ্য প্রবাহে ব্যবহারের প্রযুক্তি
স্মার্ট হোম প্রযুক্তির একটি বড় অংশ নির্ভর করে বাসার প্রতিটি জায়গায় তথ্য এবং সিগন্যাল পরিচালনা করার ওপর৷ আর এজন্য কয়েকটি প্রযুক্তি রয়েছে যেমন-
ডেডিকেটেড ওয়্যারিং বাস : এখানে ইনফরমেশন ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য ওয়্যারিং বাস ব্যবহার করা হয়৷ আর এটি তৈরি করা হয় আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার (ইউটিপি) ক্যাবল দিয়ে৷ স্মার্ট হোমে ক্যাটাগরি ফাইভ (Cat 5) নেটওয়ার্কিং ক্যাবল দিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়, যা আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে৷ এতে সিগন্যাল পাঠানোর জন্য চার জোড়া তার ব্যবহার করা হয়৷
পাওয়ার লাইন কমিউনিকেশন : একটি সাধারণ ঘরে যে পাওয়ার লাইন আছে, তা ব্যবহার করে এক্ষেত্রে দুশ চল্লিশ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবারে পাশাপাশি সিগন্যালও পাঠানো হয়ে থাকে৷ হোম নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে একে একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়৷ কারণ এর ফলে একটি ঘরে নতুন করে খুব একটা নেটওয়ার্কিং ক্যাবল বসাতে হয় না৷ কিন্তু এর সমস্যা হলো, এর ব্যান্ডউইডথ বেশ কম৷ কোনো ডিভাইস অন বা অফ করার জন্য ব্যবহৃত সিগন্যাল পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে প্রবাহিত হলেও ভিডিও ট্রান্সমিশনের মতো জটিল সিগন্যাল এর মাধ্যমে পাঠানো যায় না৷
ইনফ্রারেড কমিউনিকেশন : ইনফ্রারেড ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার এখন অনেক ঘরেই ব্যবহার হচ্ছে৷ বিভিন্ন অডিও ভিজ্যুয়াল ইকুইপমেন্টে রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবহার এর একটি উদাহরণ৷ স্মার্ট হোমে ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে যোগাযোগ তৈরি করা এবং কমান্ড দেয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হলো ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারের মধ্যে যোগাযোগের পথ হতে হবে বাধাহীন এবং সরলরৈখিক৷
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কমিউনিকেশন : স্মার্ট হোমের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হলো রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করা৷ পিসি টু পিসি কমিউনিকেশনের জন্য যেসব নতুন নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হচ্ছে সেগুলোই স্মার্ট হোমে ব্যবহার হচ্ছে৷ এর একটি উদাহরণ হলো IEEE 802.11b স্ট্যান্ডার্ড, যা ওয়্যারলেস কমপিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ব্যবহার হচ্ছে৷ এছাড়াও আছে ব্লুটুথ, যা স্বল্প পরিসরে পিসি বিভিন্ন পেরিফেরাল, মোবাইল টেলিফোন ও অন্যান্য ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার হয়৷
স্মার্ট হোমের বিভিন্ন প্রটোকল
স্মার্টহোমে তথ্য ও সিগন্যাল স্থানান্তরের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার কারণে স্মার্ট হোম অপারেট করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের কমিউনিকেশন প্রটোকলের উদ্ভব হয়েছে৷ নিচে সেরকমই কয়েকটি প্রটোকলের কথা উল্লেখ করা হলো :
লোন ওয়ার্কস : এই প্রটোকলের উদ্ভাবক আমেরিকান ইচেলন কর্পোরেশন৷ লোন ওয়ার্কস প্রটোকল তৈরি করা হয়েছিল কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের নেটওয়ার্কিং করা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য৷ তথ্যপ্রবাহের যেকোনো মাধ্যমেই এটি দিয়ে কাজ করা যায়৷ তবে সাধারণত ডেডিকেটেড বাস বা পাওয়ারলাইন সিস্টেমে এ প্রটোকল ইনস্টল করা হয়ে থাকে৷ বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি এই প্রটোকলের উপযোগী করে তাদের পণ্য তৈরি করেছে৷
কোনেক্স : বিচ্ছিন্ন কিছু ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের সমন্বয়ে এ প্রটোকলের উদ্ভব৷ আর সেগুলো হলো ইউরোপিয়ান ইনস্টলেশন বাস অ্যাসোসিয়েশন (EIBA), বাটিবাস ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল (BCI) এবং ইউরোপিয়ান হোম সিস্টেম অ্যাসোসিয়েশন (EHSA)৷ প্রায় সব ধরনের মাধ্যমেই কোনেক্স সিস্টেম ব্যবহার করা যায়৷
এক্স-টেন : ১৯৭৭ সালে আমেরিকায় এই প্রটোকল তৈরি করা হয়৷ পাওয়ারলাইনের ওপর কাজ করার উপযোগী এ প্রটোকল লোন ওয়ার্কস এবং কোনেক্স-এর তুলনায় সাশ্রয়ী৷ তবে এক্স-টেন দিয়ে তৈরি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ২৫৬টি ডিভাইস যুক্ত করা যায়৷
এক্স-টেন প্রটোকলের খুব বড় একটি সুবিধা হচ্ছে, এটি বাড়িতে ব্যবহার করা ইলেকট্রিক্যাল তারের সাথে যুক্ত করেই কাজ করা যায়, নতুন করে ওয়্যারিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই৷ আমেরিকার বহু বাড়িতে হোম অটোমেশনের জন্য এক্স-টেন প্রটোকল ব্যবহার হয়৷ এই প্রটোকলে কয়েক ধরনের কন্ট্রোল সিগন্যাল পাঠানো হয়৷ যেমন-অন, অফ, লাইটের ক্ষেত্রে ব্রাইটনেস বাড়ানো ও কমানো ইত্যাদি৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি ডিভাইসের জন্য একটি অ্যাড্রেস ঠিক করা হয় এবং এভাবে মোট ২৫৬টি ডিভাইস ব্যবহার করা যায়৷ তবে যদি একই বাটন চাপ দিয়ে একাধিক ডিভাইস অন বা অফ করতে হয়, সেক্ষেত্রে সেই ডিভাইসগুলোকে একই অ্যাড্রেসে রাখতে হবে এবং এভাবে ২৫৬-এর বেশি ডিভাইস ব্যবহার করা সম্ভব হবে৷ হোম অটোমেশনের জন্য এক্স-টেন বেশ জনপ্রিয় একটি প্রটোকল৷ বাজারে এক্স-টেন প্রটোকল কম্প্যাটিবল বিভিন্ন ডিভাইস কিনতে পাওয়া যায়৷ হোম অটোমেশন প্রক্রিয়ার উদাহরণে একটি টেবিল ল্যাম্পকে এক্স-টেন প্রটোকলে কিভাবে যুক্ত করতে হয় তা নিচে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হয়-
প্রথমে চিত্রের ০১. চিহ্নিত অংশে টেবিল ল্যাম্পের প্লাগটি এক্স- টেনের বেস-এর সাথে যুক্ত করা হলো৷ তারপর চিত্রের ০২. চিহ্নিত অংশে বেসটি সকেটের সাথে যুক্ত করা হলো৷ চিত্রের ০৩. চিহ্নিত অংশে স্ক্রু ড্রাইভারের মাধ্যমে বেস এর হাউস কোড ডায়াল এবং ইউনিক কোড ডায়াল ঠিক করে টেবিল ল্যাম্পের জন্য একটি অ্যাড্রেস ঠিক করা হলো৷ চিত্রের (৪-৫)চিহ্নিত অংশে এক্স-টেনের ট্রান্সমিটারটি (বামিনি কন্ট্রোলার) দেয়ালের সকেটের সাথে যুক্ত করে সেখানে হাউস কোড সিলেক্ট করার পর ট্রান্সমিটারটিকে টেবিল ল্যাম্পের অ্যাড্রেস দেয়া হলো৷ এখন এই মিনি কন্ট্রোলারের রিমোট দিয়েই টেবিল ল্যাম্পটি অন, অফ বা লাইটের উজ্জ্বলতা বাড়ানো এবং কমানো যাবে৷ অবশেষে আরেকটি কাজ করতে হবে- টেবিল ল্যাম্পের জন্য ব্যবহার পূর্বের দেয়াল সুইচটি বদলে এক্স-টেন কম্প্যাটিবল দেয়াল সুইচ লাগাতে হবে৷
স্মার্ট হোম ও ডিজিটাল হোমের মধ্যে পার্থক্য
স্মার্ট হোম এবং ডিজিটাল হোম শব্দ দুটি শুনতে কাছাকাছি হলেও এদের মধ্যে তফাত্ অনেকটা কোনো প্রযুক্তির প্রজন্মগত পার্থক্যের মতো৷ হোম নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি আবিষ্কার হবার পর তৈরি করা হয় ডিজিটাল হোম, যার উদ্দেশ্য ছিল শুধু বিনোদন৷ আর এখন পর্যন্ত ডিজিটাল হোম কনসেপ্টে এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবার বা করার নেই৷
কিন্তু ডিজিটাল হোম তৈরির পরে বুঝা গেল যে হোম নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ আর তারপরই একটি সিস্টেম তৈরি করা হয়, যা একটি বাড়ির সব কাজ কন্ট্রোল করতে সক্ষম এবং তার নাম দেয়া হয় স্মার্ট হোম৷ আর এ কারণেই স্মার্ট হোমকে ডিজিটাল হোমের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে ধরা হয়৷
হোম এন্টারটেইনমেন্টের পাশাপাশি স্মার্ট হোমে যুক্ত করা হয়েছে সিকিউরিটি এবং কমিউনিকেশন সিস্টেম, যা ডিজিটাল হোমে নেই৷ পুরো বাড়ির কন্ট্রোল হাতের মুঠোয় আনতে গিয়ে এতে আরো যুক্ত করা হয়েছে অসংখ্য ছোটখাটো ফিচার আর এজন্য স্মার্ট হোম তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বেশি জটিলতা দেখা দেয়৷ একারণে স্মার্ট হোম যখন পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম তখন ডিজিটাল হোমকে তার একটি সাবসিস্টেম হিসেবে ধরা যায়৷ হোম নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্জন হলো স্মার্ট হোম৷
যদিও এখন বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল হোম তৈরি করা নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে, তারপরেও একথা সত্যি যে এখানে নতুন কিছু করার নেই বলে ডিজিটাল হোম এর কনসেপ্ট এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে৷ আর তার জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মার্ট হোম৷ একজন মানুষ তার বাড়িকে ঠিক যত উপায়ে কন্ট্রোল করার চিন্তা করতে পারেন ঠিক তত উপায়েই স্মার্ট হোমের সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ তৈরি করতে হয় অর্থাত্ স্মার্ট হোম সিস্টেমকে প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে একেকজনের চাহিদা একেকরকম হতে পারে৷ ডিজিটাল হোমের ক্ষেত্রে এরকম কোনো ব্যাপার ছিল না৷ যুগোপযোগী প্রযুক্তি হবার কারণে স্মার্ট হোম অনেকদিন ধরেই যে একটি চলমান ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হিসেবে অবস্থান করবে- একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷
পরবর্তী সময়ে এক্স টেনের সাথে কম্প্যাটিবল Insteon নামের আরেকটি প্রটোকল এসেছে যা আরো নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম৷ বাসার ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যারিংয়ের পাশাপাশি নিজস্ব রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে হোম অটোমেশনকে এটি আরো আধুনিক করে তুলেছে৷
এই কয়েকটি পরিচিত প্রটোকল ছাড়া আরো বেশ কিছু প্রটোকল রয়েছে৷ বিভিন্ন উত্পাদক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পণ্য তৈরি করে শুধু সেগুলোর উপযোগী করে প্রটোকল তৈরি করছে, যা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়৷ এবং এ ব্যাপারে কোনো স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়নি৷
স্মার্ট হোম কন্ট্রোল করার বিভিন্ন অপশন
স্মার্ট হোমের ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ইউজার ইন্টারফেস৷ কারণ, কোনো সিস্টেমের বিভিন্ন অপারেশনের সহজবোধ্যতা অনেকাংশে নির্ভর করে এর ইউজার ইন্টারফেসের ডিজাইনের ওপর৷ তবে স্মার্ট হোমে শুধু একটি অপারেশন সম্পন্ন করার জন্য একাধিক ইন্টারফেস থাকে, যাতে ব্যবহারকারীর অবস্থানগত সুবিধা অনুযায়ী কাজ করা যায়৷ এখানে স্মার্ট হোম নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু সাধারণ ইন্টারফেসের কথা উল্লেখ করা হলো :
ফিজিক্যাল সুইচ : একটি বাড়িকে যখন স্মার্ট হোমে রূপান্তরিত করা হয়, তখন বিদ্যুতের লাইনের সাথে যুক্ত সুইচগুলোকে অব্যবহৃত ফেলে না রেখে স্মার্ট হোমের সিস্টেমের সাথে যোগ করে দেয়া হয়৷ তবে এজন্য সুইচের সাথে যুক্ত বিদ্যুত্ লাইনে অতিরিক্ত তার যুক্ত করা হতে পারে, যা বাস সিস্টেমের অংশ হিসেবে সিগন্যাল পাঠাতে সক্ষম হবে৷
ইনফ্রারেড রিমোট কন্ট্রোল : আগেই বলা হয়েছে, ইনফ্রারেড রে-এর সাহায্যে কমিউনিকেশন মিডিয়াম তৈরির মাধ্যমে পুরো বাসার আংশিক অথবা সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়৷ এছাড়া স্মার্ট হোমে কোনো সিগন্যাল পাঠানোর কাজেও ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ তবে এজন্য ইনফ্রারেড সিগন্যাল রিসিভারকে মূল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকতে হবে৷ এতে করে টিভি বা ডেকসেটের রিমোটের মতোই রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে স্মার্ট হোমে কোনো ডিভাইসে সিগন্যাল পাঠানো যাবে৷
কমপিউটার : স্মার্ট হোমের ইন্টারফেস হিসেবে কমপিউটারের গুরুত্ব অনেক বেশি৷ কেননা, স্মার্ট হোম নিয়ন্ত্রণের জন্য কমপিউটারের বড় স্ক্রিনে সবগুলো অপশনের সাথে সাথে পুরো বাসার ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন করা যায়৷ ফলে ব্যবহারকারীদের কাছে স্মার্ট হোমের পরিচালনা সহজবোধ্য হয়৷
ইন্টারনেট : স্মার্ট হোমে একটি ওয়েব সার্ভার বসিয়ে পুরো বাসার ইউজার ইন্টারফেসকে একটি ওয়েব পেজে ছবির মতো করে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব৷ কোনো ওয়েব ব্রাউজার থেকে সেই ওয়েব পেজে ঢুকে ইন্টারফেসে বিভিন্ন কমান্ড দেয়া সম্ভব৷ ফলে বাড়ির বাইরে যেকোনো জায়গা থেকে স্মার্ট হোম কন্ট্রোল করার একটি অভাবনীয় সুযোগ খুব সহজে তৈরি করা যাবে৷ তবে এক্ষেত্রে ইউজার ইন্টারফেসে বা ওয়েব পেজে প্রবেশ করার সময় কঠোর নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে৷ তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং গেস্ট অ্যাকাউন্ট খুলে রাখা উচিত৷
ভয়েস টেকনোলজির ব্যবহার : দ্রুত অগ্রসরমান আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে স্পীচ রিকগনিশন টেকনোলজির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং সেই সাথে বেড়েছে ব্যবহারিক দিক দিয়ে এর আবেদন৷ ফলে শুধু মুখে উচ্চারণ করেই স্মার্ট হোমের কোনো কমান্ড দেয়া সম্ভব হবে৷ তবে এর জন্য ব্যবহারকারীর মুখের কাছাকাছি মাইক্রোফোন থাকা জরুরি, যা আপাতদৃষ্টিতে একটি ঝামেলা বলে মনে হতে পারে৷ তবে বড় একটি সম্ভাবনা রয়েছে এজন্য কয়েকটি সেন্ট্রাল লোকেশনে কিছু শক্তিশালী মাইক্রোফোন স্থাপন করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে৷
স্মার্ট হোমের কিছু কন্ট্রোলার
বাসায় ব্যবহারের প্রতিটি ডিভাইসের সাথে ম্যানুয়াল সুইচ এমনিতেই থাকে, তবে স্মার্ট হোম তৈরি করার সময় এগুলোর সাথে রিমোট কন্ট্রোল যুক্ত করে দিতে হয়৷
ইনফ্রারেড কন্ট্রোলার : হাতের মুঠোয় ভরে পুরো বাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এমন অনেক ডিভাইস বের হয়েছে৷ এই কন্ট্রোলারগুলোর ভেতরে প্রয়োজনমত প্রোগ্রাম সেট করে দেয়া যায়, যাতে সেগুলো কয়টি ডিভাইসকে একসাথে না আলাদা আলাদা অপারেট করবে, তা ডিফাইন করে দেয়া থাকে৷ প্রোগ্রাম সেট করে এই কন্ট্রোলারগুলোর মাধ্যমে টিভি, অডিও সিস্টেমসহ নানা ধরনের ডিভাইস অপারেট করা যায়৷ আর এই কন্ট্রোলারটির জন্য একটি রুমে বা পুরো বাড়িতেই সেন্সর বসানো যেতে পারে৷ যারা এই পুরো সিস্টেমটি ডিজাইন এবং ইনস্টল করেন তাদেরকে বলা হয় সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর৷ এরাই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, কোন ধরনের কন্ট্রোলার স্মার্ট হোমে সেটআপ করতে হবে৷
টেলিফোনের মাধ্যমে কন্ট্রোল : টেলিফোনের মাধ্যমেও স্মার্ট হোমের বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ যখন বাইরে থেকে স্মার্ট হোমে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করা হবে, তখন একটি সিকিউরিটি পিন নম্বর চাপার পরপর আগে থেকে প্রোগ্রাম করা ভয়েস থেকে একটি মেনু টেলিফোনে শোনা যাবে এবং তাতে উল্লেখ করা থাকবে, কোন ডিভাইসটি অন বা অফ করার জন্য কোন নম্বরটি চাপতে হবে৷ এভাবে নির্দিষ্ট নম্বরে চেপে সেই নির্দিষ্ট ডিভাইসটি কন্ট্রোল করা যাবে এবং এর বর্তমান অবস্থা জানা যাবে৷
দরজা : প্রতিটি দরজার সাথে মোটোরাইজড ডোর ওপেনার ফিট করা থাকবে এবং দরজার কাছাকাছি কোনো ম্যানুয়াল সুইচ অথবা রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট দিয়ে দরজা খোলা বা বন্ধ করা যাবে কিংবা দরজা একবার খোলার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থাও করে রাখা যেতে পারে৷ যদি কোনো দরজা বন্ধ হবার সময় যদি পথে কোনো বাধা পায়, তবে এটি অ্যালার্ম বাজাবে এবং এরপর আবার খুলে যাবে৷ আবার বন্ধ হবার চেষ্টা করবে৷ এভাবে যদি কয়েকবার চেষ্টার পরও দরজা বন্ধ হতে না পারে, তবে সেটি খোলাই থাকবে এবং মোটোরাইজড ডোর ওপেনারের সাথে যুক্ত ব্যাটারিতে পাওয়ার সেভ করে রাখবে যাতে পরে যেকোনো সময় (ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে, যখন ম্যানুয়াল সুইচ কাজ করবে না) রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করে দরজা বন্ধ করা যায়৷ আসলে পাওয়ার ফেইলিওরের কথা মাথায় রেখে সবসময়ই ব্যাটারিতে পাওয়ার ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়৷ এক্সটার্নাল এবং ইন্টার্নাল সুইং দরজাগুলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার৷
জানালা : দরজার মতোই জানালাগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় মোটোরাইজড উইন্ডো কন্ট্রোলার৷ এর সাহায্যে একটি জানালা আংশিক বা সম্পূর্ণ খোলা রাখা সম্ভব৷
এখানেও বিদ্যুত্ বিভ্রাটের কথা বিবেচনা করে ব্যাটারি ব্যাকআপ রাখা হয়৷ এছাড়া মেকানিক্যাল ফেইলিওরের কথা মাথায় রেখে সেফটি পিন রাখা হয়, যাতে যেকোনো সময় জানালাকে ম্যানুয়ালি বন্ধ করে রাখা যায়৷ হুবহু একই সিস্টেমে যুক্ত থাকা জানালার পর্দা এদিক- ওদিক করাও অত্যন্ত সহজ৷
দেয়ালের কাবার্ড এবং রান্নাঘরের বেসিন : স্মার্ট হোমের দেয়ালের সাথে যুক্ত কাবার্ড এবং রান্নাঘর ও অন্যান্য স্থানের বেসিন একটি লিফটিং মেকানিজমের সাথে যুক্ত থাকে৷ এর ফলে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য এটি সুইচ চেপে লিফট কন্ট্রোল করে উপযুক্ত অবস্থানে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়৷ তবে এই মেকানিজম যারা হুইল চেয়ারে ব্যবহার করেন, তাদের জন্য সুবিধাজনক৷ দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করেও এই কাজ করা যায়, তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি পূর্ব-নির্ধারিত অবস্থানেই একে স্থির করা যাবে৷ চলার পথে কোনো বাধা পেলে তা আগে উল্লিখিত দরজার মেকানিজমের মতো কাজ করে৷ আর এখানেও লিফটিং মেকানিজমের সাথে ব্যাটারি যুক্ত থাকে, ফলে পাওয়ার ব্যাকআপ নেয়া যায়৷
এছাড়া কিচেন, বাথরুম, শাওয়ার, টয়লেট ইত্যাদির প্রতিটি কলকে একটি কন্ট্রোল প্যানেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ এতে কোথায় এবং কতটুকু পানি ভরতে হবে, কতক্ষণ পরে পানি বন্ধ করতে হবে, পানি ওভারফ্লো যাতে না হয় এবং অল্প পানিতে যাতে কাজ করা যায়, সেসব অপশন দেয়া থাকে৷ এছাড়া কন্ট্রোল প্যানেল থেকে যা কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার সবকিছুই ম্যানুয়ালি এবং রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
লাইটিং : সুইচ, কন্ট্রোল প্যানেল কিংবা রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে স্মার্ট হোমের প্রতিটি লাইট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷ তবে ম্যানুয়াল সুইচ দিয়ে লাইট জ্বালানো সম্ভব হলেও এর উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করার অপশনটি রয়েছে রিমোট কন্ট্রোলারের কাছেই৷ স্মার্ট হোমের বিভিন্ন সিস্টেম লাইটিং সিস্টেমকে যেভাবে ব্যবহার করে তার কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেয়া হলো :
* বাসায় কলিংবেল বা টেলিফোন বাজলে ঘরের কয়েকটি লাইট ফ্ল্যাশ করবে যাতে সহজেই সবাই তা টের পায়৷
* ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে বাসা থেকে বের হবার সবকটি দরজার দিকে যাবার করিডোরের ওপরের লাইটগুলো জ্বলে উঠবে, যাতে তা অনুসরণ করে সবাই তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারে৷
* স্মার্ট হোম থেকে বাড়ির মালিক বের হয়ে যাবার সময় মুভমেন্ট ডিটেক্টর তা ডিটেক্ট করবে৷ বাসার সবগুলো লাইট অফ করে দেবে৷ আবার বাইরে থেকে কেউ যখন ঘরে ঢুকতে আসবে, তখন লাইটগুলো অন করে দেয়া হবে৷
হিটিং সিস্টেম : প্রতিটি রুমেই টেম্পারেচার সেন্সর থাকে, যা মেইন কন্ট্রোলারের দেয়া নির্দিষ্ট তাপমাত্রা রক্ষা করে৷ সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম এবং ওয়াটার বয়লার কতক্ষণ কাজ করবে, তা মেইন কন্ট্রোলারে প্রোগ্রাম করে দেয়া থাকে৷ কিন্তু তারপরও রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করে যেকোনো সময় এগুলোর একটি বা দুটিইে অফ করে দেয়া যাবে৷ এতে করে মেইন কন্ট্রোলারের প্রোগ্রামের কাজ আপাতত কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকবে৷ এরপর পরবর্তী যে সময়ে মেইন কন্ট্রোলার, সেন্ট্রাল সিস্টেমকে অন বা অফ করার কথা ছিল, সেই নির্ধারিত সময়েই সেন্ট্রাল সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ আবার মেইন কন্ট্রোলারের কাছে চলে আসবে এবং আগের মতোই আবার চলতে থাকবে, যতক্ষণ না আবার কেউ মেইন কন্ট্রোলারের রুটিনে ব্যাঘাত ঘটায়৷
ডিটেকশন ডিভাইস
সাধারণত স্মার্ট হোমের বাইরে একটি ডিটেক্টর থাকে৷ এটি বায়ুর গতি এবং লাইট লেভেল পরিমাপ করে থাকে৷ এছাড়া প্রতিটি রুমের ভেতরে মাল্টিফাংশন ডিটেক্টর থাকে, যা দেখতে অনেকটা স্মোক ডিটেক্টরের মতো৷ এটি ধোঁয়া, রুমের তাপমাত্রা, লাইট লেভেল, মুভমেন্ট ইত্যাদি পরিমাপ করে৷ এছাড়া এতে লাগানো থাকে ইনফ্রারেড রিসিভার, ইমার্জেন্সি লাইট, সাইরেন এবং মাইক্রোফোন৷ এর কাছাকাছি একটি ক্যামেরা লাগানো থাকে, যা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে৷ এদের কাজ হলো রুমের কোথাও কোনো পরিবর্তন হলে তা লক্ষ্য করা এবং রিমোট কন্ট্রোল থেকে সিগন্যাল রিসিভ করা৷
ডোর এন্ট্রি সিস্টেম : স্মার্ট হোমের প্রবেশ করার প্রধান দরজার সাথে ডোর এন্ট্রি সিস্টেম লাগানো থাকে৷ যখন দরজার বেল বাজানো হয় তখন নিচের কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে :
* যদি সিকিউরিটি সিস্টেম চালু না করা থাকে, তবে ডোর এন্ট্রি সিস্টেম টিভিতে সিগন্যাল পাঠিয়ে দরজার বাইরের ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে আগত ব্যক্তিকে ভিডিও করে দেখাতে থাকবে৷ তখন বাসার ভেতরের কেউ ইচ্ছে করলে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে দরজা খুলে দিতে পারে৷
* ঘরের কোনো একটি টেলিফোন বেজে উঠবে ভেতর থেকে দরজার বাইরের অপেক্ষমাণ ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারবে৷ ফোন থেকেই এটি নির্দিষ্ট নম্বর চেপে দরজা খুলে দিতে পারবেন৷
*যদি সিকিউরিটি অ্যালার্ম অন করা থাকে, তবে সেটি কোনো নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করবে (যা হতে পারে কারো মোবাইল নম্বর) সেখান থেকে মেইন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির সাথে কথা বলা সম্ভব হবে এবং আগের মতোই সে ফোনের কোনো নির্দিষ্ট নম্বর চেপে দরজা খুলে দেয়া যাবে৷
* উপরোল্লিখিত ঘটনার একটিতেও যদি কেউ সাড়া না দেয়, তবে আসা ব্যক্তি ডোর এন্ট্রি সিস্টেমে মেসেজ দিয়ে যেতে পারবেন৷
সিস্টেম অ্যালার্ম : সিকিউরিটি সিস্টেমের সিংহভাগ স্মার্ট হোমের ভেতরের একটি কন্ট্রোল প্যানেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ এটি আনসারিং মেশিন হিসেবেও কাজ করে৷ ভেতর থেকে সুইচ চেপে বা রিমোট ব্যবহার করেই এটি কন্ট্রোল করা গেলেও বাইরে থেকে যখন এতে ফোন করা হয়, তখন প্রথমে সিকিউরিটি পিন নম্বর চাপার পর একটি ভয়েস ব্যবহার করে কোন কী (Key) চাপলে কী হবে তা মেনুর মতো করে বলে দেয়া হয়, যা একটি ব্লক ডায়াগ্রামের মতো করে চিত্রে দেখানো হয়েছে৷
ডিজাইনে লক্ষণীয় কিছু বিষয়
একটি স্মার্ট হোম ডেভেলপ করার সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়৷ ওই স্থানের মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি কি রকম এবং তারা কোন্ কোন্ ডিভাইস মূলত ব্যবহার করে এবং কী ধরনের প্রযুক্তি তাদেরকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিতে সক্ষম৷ বাসায় আগে থেকে যেসব বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, তা স্মার্ট হোম প্রযুক্তির সাথে সমন্বিত করা ভালো৷ যেমন-সিকিউরিটি অ্যালার্মের জন্য যে ডিটেক্টর ব্যবহার হয়, তা ব্যবহার করে একটি ঘরে কেউ উপস্থিত আছে কিনা তাও জানা সম্ভব৷
এছাড়া একটি স্মার্ট হোম যখন ডিজাইন করা হবে বা একটি বাড়িকে যখন স্মার্ট হোমে রূপান্তরিত করা হবে, তখন বাড়ির গঠন কী ধরনের তা জানা যেমন জরুরি, তেমনি ব্যবহারকারীদের স্পেসিফকেশন কী তা খুব ভালোভাবে জানা প্রয়োজন৷ এই স্পেসিফকেশনকে মূলত তিনটি লেভেল বা স্তরে ভাগ করা হয়ে থাকে৷ যেমন-
০১. স্মার্ট হোমের মূল স্ট্রাকচার এবং প্রটোকল : স্মার্ট হোমের নেটওয়ার্কের প্রটোকল কি হবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার৷ এখানে যে তিনটি প্রটোকলের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের একটি হতে পারে, আবার অন্য কোনো সুবিধাজনক প্রটোকলও বেছে নেয়া যেতে পারে৷
০২. কনটেক্সট স্পেসিফিক রিকোয়ারমেন্ট : স্মার্ট হোম তৈরি করতে ঠিক কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে ওই বাড়ির ডিজাইন এবং স্ট্রাকচারের ওপর৷ এর আগে স্মার্ট হোমের ডাটা ও সিগন্যাল পাঠানোর জন্য কী ধরনের কমিউনিকেশন মিডিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে, তা আলোচিত হয়েছে৷ তারপর ঠিক করতে হবে নেটওয়ার্ক তার দিয়ে করা হবে, না তারহীন হবে৷ অবশ্যই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরির খরচ বেশি, যদিও এতে তারের ঝামেলা এড়ানো যায়৷ যেমন- বাড়ি যদি আকারে ছোট হয়, তবে বিদ্যুতের তার দিয়েই কম খরচে নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলা যায়৷ কিন্তু যদি বহুতল ভবন হয়, তবে এখানে জটিলতা বাড়বে বলে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরির কথা চিন্তা করা যেতে পারে৷
০৩. ইউজার স্পেসিফিক ফাংশন : স্মার্ট হোমের মূল অবকাঠামো এবং নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি ঠিক হয়ে যাবার পর দেখা হয়, স্মার্ট হোমের ব্যবহারকারীদের কোনো বিশেষ চাহিদা আছে কি না, কিংবা এরা কোনো বিশেষ সুবিধা চাইছে কি না৷ যদি চায় তবে সেটি স্মার্ট হোমের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয় এবং তারা যেখানে সেটি ব্যবহার করতে চান, সেভাবে প্রোগ্রাম করে দেয়া হয়৷
স্মার্ট হোম সিস্টেমের নিজস্ব নিরাপত্তা
স্মার্ট হোমে কোনো ডিভাইস বা নেটওয়ার্কের আংশিক অকেজো হলে : স্মার্টহোমের ডিভাইসগুলো ডিস্ট্রিবিউটেড কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করে বলে যদি কোনো ডিভাইস বা নেটওয়ার্ক আংশিক নষ্ট হয়, তাহলেও বাকি ডিভাইসগুলো বা নেটওয়ার্ক আগের মতোই কাজ করবে৷
দীর্ঘ সময়ের জন্য পাওয়ার ফেইলিওরের ঘটনা ঘটলে : স্মার্ট হোম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে যেকোন অবস্থাতেই সেটি এবং তার বাসিন্দারা নিরাপদ থাকে৷ দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত্ না থাকার ক্ষেত্রে স্মার্ট হোমের সবগুলো ডিভাইস প্রথমে তাদের নিজস্ব ব্যাটারি ব্যাকআপ ব্যবহার করবে৷ তারপর যখন সেটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন সব ডিভাইস সেফ মোডে চলে যাবে৷ অর্থাত্ তখন একে পুরোপুরি সাধারণ ঘরের মতোই মনে হবে৷ কারণ দরজা, জানালা, পর্দা ইত্যাদি সবকিছু সাধারণ ঘরের মতোই হাত দিয়ে টেনে খোলা এবং বন্ধ করতে হবে৷ পাওয়ার লাইন ঠিক না হওয়া পর্যন্ত স্মার্ট হোমের কোনো বৈশিষ্ট্য এটি প্রদর্শন করবে না৷
সিস্টেম পরিবর্তন করতে হলে : কারো যদি মনে হয়, সে স্মার্ট হোমে যেসব কমান্ড ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো সুবিধাজনক নয় এবং এগুলো পরিবর্তন করতে হবে, তখন স্মার্ট হোমটিকে নতুন করে প্রোগ্রাম করা ছাড়া উপায় নেই৷ এক্ষেত্রে ইনস্টলেশন কোম্পানির সাহায্য প্রয়োজন হবে৷
অনগ্রসরতার কারণ
স্মার্ট হোম এমনই একটি প্রযুক্তি, যা বাজারে আসামাত্র সবার লুফে নেবার কথা এবং যেসব কোম্পানি স্মার্ট হোম ইনস্টল করে দিচ্ছে, তাদের সবসময়ই কাজের অর্ডার পাবার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না৷ এজন্য নিচের ৫টি কারণকে মূলত দায়ী করা হয় :
০১. ব্যবহারকারী ঠিক কী ধরনের সিস্টেম চাইছেন, তা স্মার্ট হোম ডিজাইনার এবং ইকুইপমেন্ট সরবরাহকারীদের ঠিকমতো বুঝতে না পারা৷
০২. অনেকে সহজে বুঝে উঠতে পারেন না, এত খরচ করে স্মার্ট হোম তৈরি করে তারা আসলে কত বেশি লাভবান হবেন৷ এছাড়া স্মার্ট হোম অপারেশনকে বেশি জটিল মনে করা, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া এসব দুশ্চিন্তা অনেক ব্যবহারকারীকে স্মার্টহোম সম্পর্কে অনাগ্রহী করে তোলে৷
০৩. দুঃখজনক হলেও সত্য স্মার্ট হোম তৈরির ক্ষেত্রে কোনো স্ট্যান্ডার্ড এখনো তৈরি হয়নি৷ ফলে অনেক কোম্পানি এ সিস্টেম ইনস্টল এবং ইন্টিগ্রেড করতে সাহস পাচ্ছে না৷ সে কারণেই এরা বাজারে নামছে না৷
০৪. স্মার্ট হোমের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দাম এখনো কিছুটা বেশি৷ তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে স্মার্ট হোমের খরচ বহন করা সম্ভব হয় না৷
০৫. স্মার্ট হোমে ব্যবহারের কিছু কিছু প্রযুক্তি এখনো সম্পূর্ণরূপে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করেনি৷ যেমন-ভয়েস রিকগনিশন টেকনিক৷
কিন্তু নতুন যেকোনো প্রযুক্তির জন্য এ সমস্যাগুলো প্রাথমিক এবং সাময়িক৷ মানুষ একবার এই প্রযুক্তিকে ঠিকমতো চিনতে পারলে, আর এই সমস্যা থাকবে না৷ তখন নিশ্চয়ই অনেক কোম্পানি এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে৷
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট হোম
স্মার্ট হোম প্রযুক্তি আমাদের দেশের জন্য ধারণ করে আছে অপার সম্ভাবনা৷ এটা সত্যি যে উন্নত দেশের সব বাড়িঘর এখনো স্মার্ট হোমে রূপান্তরিত হয়নি৷ কিন্তু স্মার্ট হোমে মূলে রয়েছে হোম অটোমেশন প্রযুক্তি৷ তাই স্মার্ট হোম নিয়ে আশাবাদী হবার কারণ হচ্ছে হোম অটোমেশন প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র পর্যায়ের সাফল্য৷ ব্যবসায়িকভাবে উদ্যোগ না নিলেও প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত উদ্যেগে অনেকেই ছোটখাটো প্রকল্প তৈরির জন্য এ ধরনের কাজ করেছেন৷ প্রতিবছরই বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন িস্টটিউটে একাধিক প্রজেক্টে ছাত্ররা পিসির সাহয্যে পুরোপুরি নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে হোম অটোমেশনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করছেন৷ পিসির পরিবর্তে মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করে এসব প্রকল্পকে ব্যবহারিক পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব৷ এছাড়াও সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যেগে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই কেউ কেউ রিমোট বা মোবাইলের সাহায্যে ঘরের লাইট ও ফ্যান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন৷ একটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা অনেক বড় একটা সাফল্য, যেখানে উন্নত দেশের প্রযুক্তি আমাদের অর্থ দিয়ে কিনে নিতে হচ্ছে না বরং দেশের ভেতর থেকেই আমরা একই মানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারছি৷ দেশের ভেতর থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির দিকে কাজ করার দায়িত্ব যদি আমাদের সরকার নিতে সক্ষম হয়, তবে এটা হবে উল্লেখযোগ্য একটি সাফল্য৷ যদি আমরা বাইরের দেশগুলোতে ব্যবহার হওয়া প্রযুক্তি (যেমন এক্স-টেন) থেকে দেশী কাঁচামাল ব্যবহার করে আরো সস্তায় একই মানের প্রযুক্তি তৈরি করে দিতে পারি, তবে এর ব্যবহার শুধু দেশের ভেতরে নয় দেশের বাইরেও সম্ভব, যা আমাদের এনে দিতে পারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা৷ তাই শুধু মানুষের আরামের জন্য নয় ব্যবসায়িক দিক থেকেও এর গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি৷ এই গুরুত্ব অনুধাবন করে বসে না থেকে আমাদের উচিত এর ব্যবসায়িক দিকটিকে গুরুত্ব দেয়া৷ মোবাইল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বাজার হিসেবে যে দেশটি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে সে দেশের মানুষ প্রযুক্তিবিমুখ হতে পারে না৷ তাই দেশের বাইরের এক্স-টেনের মতো প্রযুক্তির পণ্য আমদানি করে হোক বা নিজেদের তৈরি পণ্য দিয়েই হোক আমাদের দেশের মানুষকে যে এ ধরনের প্রযুক্তি খুব সহজেই আকৃষ্ট করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
শেষ কথা
অগ্রসরমান পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের নিদর্শনের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো স্মার্ট হোম৷ নিজেদের বাড়িতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে যে অভাবনীয় পরিবেশ তৈরি হতে পারে, সেটাই জানাতে এসেছে স্মার্ট হোম৷ স্মার্ট হোম তাই আধুনিক মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতীক৷
০ টি মন্তব্য