https://www.brandellaltd.com/

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যথেষ্ট ব্যবহার

বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যথেষ্ট ব্যবহার বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যথেষ্ট ব্যবহার
 

পারস্পরিক যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরাখবর জানার জন্য চিঠি, সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা বহুকাল থেকে চলে আসছিল। পরিবারের একে অন্যেও খোঁজখবর চিঠির মাধ্যমে আমরা জানতে পারতাম। এই মাধ্যমে আমাদের ভাবের আদান-প্রদান হতো। মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি।


এক সময় দৈনিক পত্রিকা কিংবা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে মানুষ কবিতা, গল্প লিখতো। অনেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত কখন তার লেখাটি প্রকাশিত হবে। পাঠকরাও অপেক্ষা করত পছন্দের লেখকের লেখা পড়ার জন্য। একটি চিঠি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না অপেক্ষা। চিঠির ভাষা, লয়, মাধুর্য আমাদের মুগ্ধ ও উদ্বেলিত করত। আমরা আকুল হয়ে অপেক্ষা করতাম কখন প্রিয়জনের চিঠি আসবে। চিঠির বিষয়ে খবর নিতাম। তেমনিভাবে সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডিও চালু করতাম দেশ ও দেশের বাইরের খবরাখবর জানার জন্য।


বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টেলিভিশনের সামনে থাকতাম বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। নাটক, সিনেমা, গানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান পরিবারের সবার সাথে একসঙ্গে বসে উপভোগ করতাম। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হতো। সকালবেলা পত্রিকা না পড়লে যেন সারা দিন ভালো কাটত না। কালের বিবর্তনে যোগাযোগের সনাতন কোনো মাধ্যমের প্রতি আমাদের আজ মুখ ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে।


আমরা এখন আর চিঠি লিখি না বললেই চলে। রেডিও আমরা কজনই বা শুনি। সংবাদপত্র আমাদের সামনে টিকে আছে। অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে আমরা যখন যাবতীয় সংবাদ পাই, তখন কাগজে প্রকাশিত পত্রিকার প্রতি আমাদের আকর্ষণও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাসে খাতা-কলম নিয়ে আসতে চায় না। মোবাইলে লিখে কিংবা ক্লাস লেকচার রেকর্ড করে পড়াশোনায় অভ্যস্ত হতে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা আমাদের হাতে লেখার অভ্যাসকে একেবারেই কমিয়ে দিচ্ছে।


আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের তথ্যের আদান-প্রদানকে সহজ করছে এ ব্যাপারে  কোনো সন্দেহ নেই। মুহূর্তের মধ্যে আমরা যে কারো সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ সম্পাদন জীবনকে করছে সহজ ও সাবলীল। আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সঠিক ও যুগসই ব্যবহার আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অযাচিত ব্যবহার ও বিকৃতি আমাদের অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যমগুলো যখন একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত না হয়, তখন এর অপব্যবহার রূপান্তরিত হয়। রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মতো মাধ্যমকে রাষ্ট্র এবং এর কর্ণধাররা ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব, আইপি টিভি ও অন্য মাধ্যমগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। মোটাদাগে বললে এখন যোগাযোগ মাধ্যম, যাকে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলি, তা একেবারেই উন্মুক্ত। আমরা যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে সময় পার করি। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি। নিজে নিজে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দিই। যা ভালো লাগে তাই আমরা করতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি আমাদের রবীন্দ্র, নজরুল কিংবা শরৎচন্দ্রের গল্প ও উপন্যাস পড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গান শোনা থেকে আমাদের বাদ দিয়েছে। ফলে একটি সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল প্রজন্ম গড়ে উঠছে না। নতুন প্রজন্ম একটি ভোগবাদী প্রজন্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার উপযোগী করে তৈরি করাই বড় বিষয়। একটি উদার ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হয়ে আমরা নিজেদের গড়ে তুলছি না।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বড় দিক বিকৃতি। বিকৃত তথ্য উপস্থাপন, অন্যের মতামতে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কারণে-অকারণে নাক গলানো আমাদের দারুণভাবে পেয়ে বসছে। তথ্য ও ছবি বিকৃতি এবং বিকৃত ভিডিও প্রকাশ আমাদের কারো কারো ক্ষেত্রে মানসম্মানের হানি হয়ে দেখা দিচ্ছে। যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনেকটা হাতের মুঠোয় এবং নাগালের মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যে কোনো একটি খবর ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক খবরে সত্যের লেশমাত্র থাকে না; কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণে কারো কারো ক্ষতির কারণ হয়। আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব অনেক বেশি। তাদের সামনে যখন কোনো বিকৃত তথ্য ও ছবি প্রকাশ পায়, তখন তারা বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল পথে চলতে বাধ্য হয়। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষণীয় দিককে উপেক্ষা কওে ফেসবুকে চ্যাটিং ও ইউটিউবে ভিডিও দেখতেবেশি ব্যস্ত থাকে। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহার থেকে তারা দূরে থাকছে।


এখনকার সময়ে বড়-ছোট সবাই আমরা সময় অতিবাহিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। নিজেদের ছবি এবং অন্যদের সঙ্গে নিজেদের ছবি দিয়ে আমরা বড়ত্বকে প্রমাণ করতে চাই। কারো মতামতের ওপর নিজের মতামত লিখে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই কিংবা তাকে হেয় করতে চাই। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যদি গঠনমূলক ও সৃজনশীল হতাম, তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও অনেক কিছু শেখার ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখার যে একেবারে কিছু নেই তা বলছি না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একে অন্যকে হেয় করা কিংবা অপমান করার ক্ষেত্রেও মাধ্যমগুলো ব্যবহার হচ্ছে। মাধ্যমগুলো হতে পারে একটি বড় শিক্ষণ মাধ্যম, যদি আমরা এগুলোকে নিজে এবং অন্যকে শেখানোর কাজে ব্যবহার করি। এর সঠিক ব্যবহার পারে একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, একটি সৃষ্টিশীল পরিবার ও একটি উন্নত সমাজ উপহার দিতে। আসুন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিকৃতি ও ভুল উপস্থাপনা থেকে দূরে রাখি। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সুন্দরভাবে চলতে দিই। নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রকের বাহক হিসেবে কাজ করি এবং এর যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করি। সরাসরি কারো কোনো পোস্ট বা কনটেন্ট অপসারণের সুযোগ কোনো দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, আইন বা নিয়ম লঙ্ঘন করলে নির্দিষ্ট পোস্ট বা বিষয় অপসারণের জন্যে সরকারি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে পারে।


তবে বিটিআরসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিংবা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির কনটেন্ট, পোস্ট বা তথ্য সরিয়ে ফেলার জন্যে তাদের সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কাছে আবেদন জানাতে হয়।


সাধারণত সরকারি সংস্থাগুলো কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি, যেমন আইনি কারণে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো উদ্বেগ তৈরি হলে কিংবা স্থানীয় আইন ও নীতিমালা অনুসারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বা ডেটা অপসারণের জন্যে অনুরোধ করতে পারে।                                                                                                                                                                                                                             


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা


এক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ব্যক্তির ডেটা মুছে ফেলার ক্ষমতা কোনো দেশের ক্ষেত্রে সীমিত। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সাধারণত ডেটা পরিচালনা ও বিষয়বস্তু অপসারণের জন্য তাদের নিজস্ব নীতিমালা এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সেগুলোও আবার দেশ ও অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া একটি দেশের সরকার কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কতটুকু ডেটা মুছে ফেলার জন্যে আবেদন করতে পারবে তা-ও নির্ভর করে দেশটির আইন, প্ল্যাটফর্মের পরিষেবার শর্তাবলী এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সাধারণত কিছু অপসারণের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব অপসারণের নীতি এবং প্রক্রিয়া অনুসারে নির্দিষ্ট দেশের আইনি বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করার পর সরকারি অনুরোধ অনুযায়ী সহযোগিতা করতে পারে।


বিভিন্ন দেশের আইন যা বলছে


তবে কোনো কোনো দেশের সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী অবৈধ, ক্ষতিকারক বা দেশটির পরিষেবার শর্তাবলী লঙ্ঘন করে এমন কিছু অপসারণের আইন করেছে। এক্ষেত্রে জার্মানির নেটজডিজি আইন উল্লেখযোগ্য, যেখানে 'স্পষ্টভাবে বেআইনি' কিছু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করার বিধান রয়েছে। এই আইনের অধীনে ২০১৯ সালে ফেসবুককে ২ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়।


অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন-এর অধীনে এরকম বিধানও রয়েছে, যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো যদি তাদের সাইট থেকে এক ঘন্টার মধ্যে 'উগ্রবাদ সংক্রান্ত' কোনো কনটেন্ট মুছে না ফেলে, তাহলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে।


ভারতেও সম্প্রতি এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। টুইটারকে (বর্তমানে এক্স) কিছু ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ও তথ্য মুছে দিতে বলা সত্ত্বেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি, যার ফলে তাদের মোটা অংকের জরিমানা করে মোদি সরকার। এর কারণ হিসেবে ভারতীয় আইন অমান্যের কথা বলা হয়েছে। 


তবে, এই আইনগুলো কোনো দেশের সরকারকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরাসরি অন্য কারও ডেটা সরানোর ক্ষমতা দেয় না। যখন কনটেন্টগুলো বেআইনি বা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুও শ্রেণীভুক্ত হয় তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই কাজটি করে থাকে।


তাই সরকার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অন্য কারও ডেটা সরাসরি অপসারণ করতে সক্ষম হবে না; তবে যদি সেটি করার কোনো আইনগত ভিত্তি এবং বৈধ কারণ থাকে তাহলে তারা সেটি আবেদনের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে একটি বোঝাপড়ায় আসতে পারে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভেদে কনটেন্ট অপসারণের উপায়


একেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়বস্তু অপসারণের জন্য সরকারি অনুরোধে সাড়া দেওয়ার একেক উপায় আছে। ফেসবুকের ক্ষেত্রে তাদের একটি 'কনটেন্ট রিকোয়েস্ট সিস্টেম' নামে পোর্টাল রয়েছে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সরাসরি এমন কনটেন্ট সম্পর্কে অভিযোগ জমা দিতে পারেন। স্থানীয় আইন বা ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করলে ফেসবুক সেই অনুরোধগুলো পর্যালোচনা করে। তারপর তারা তাদের নিজস্ব নীতি এবং দেশটির আইনি প্রক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ বা অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া।


টুইটারও কোনো কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু অপসারণের জন্য সরকারি অনুরোধগুলো পর্যালোচনা করে। সেখান থেকে তারা তাদের নিজস্ব নিয়ম এবং স্থানীয় আইনের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া। সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি কোনো বৈধ এবং যুক্তিসঙ্গত আবেদন করে সেক্ষেত্রে টুইটার সেই কনটেন্টগুলো আটকে দিতে পারে।


গুগলও কোনো কনটেন্ট অপসারণের জন্য সরকারি অনুরোধগুলোকে মূল্যায়ন করে এবং তার নিজস্ব নীতি ও স্থানীয় আইনগুলোর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে, কিছু নির্দিষ্ট দেশে স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে এমন বিষয়বস্তুতে গুগল অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে।


সাইবার হামলার ঝুঁকি ও মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি


সাইবার অপরাধীরা সব সময় দুর্বল পরিকাঠামোগুলোকে হামলার নিশানা বানানোর সুযোগ খোঁজে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, সরকারি-বেসরকারি খাতের অনেক পরিষেবা এখন পর্যন্ত অরক্ষিত। সেগুলো যেকোনো মুহূর্তে সাইবার অপরাধীদের হামলার সহজ নিশানা হতে পারে। 


বাংলাদেশের সাইবার জগতের ওপর হামলার হুমকি দিয়েছিল হ্যাকারদের একটি দল। তারা সম্ভাব্য হামলার তারিখ হিসেবে ১৫ আগস্টের কথা উল্লে করে। হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভসার্ট) থেকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। এ সতর্কবার্তায় বলা হয়, গত ৩১ জুলাই এক হ্যাকার দল জানায়, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাইবার জগতে সাইবার আক্রমণের ঝড় আসবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিজিডি ই-গভসার্ট সম্ভাব্য সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষিত থাকতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা এবং সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্ভাব্য সাইবার হামলার বিষয়ে সতর্ক করে। পাশাপাশি নিজেদের অবকাঠামো রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই হ্যাকার গোষ্ঠী নিজেদের 'হ্যাকটিভিস্ট' দাবি করে এবং তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে হামলার লক্ষ্য বানিয়েছে। বিজিডি ই-গভ সার্ট জানিয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় একই মতাদর্শে প্রভাবিত বেশ কয়েকটি হ্যাকার দলকে চিহ্নিত করা হয়। যারা অবিরাম বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়মিত সাইবার-আক্রমণ পরিচালনা করে আসছে। সাইবার হামলা এড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে সার্ট। সেগুলো হলো, ২৪ ঘণ্টা বিশেষ করে অফিসসূচির বাইরের সময়ে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে নজরদারি রাখা এবং কেউ তথ্য সরিয়ে নিচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা। ইনকামিং এইচটিটিপি ও এইচটিটিপিএস ট্রাফিক বিশ্লেষণের জন্য ফায়ারওয়াল স্থাপন এবং ক্ষতিকারক অনুরোধ এবং ট্রাফিক প্যাটার্ন ফিল্টার করা। ডিএনএস, এনটিপি এবং নেটওয়ার্ক মিডলবক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সুরক্ষিত রাখা। ব্যবহারকারীদের ইনপুট যাচাই করা। ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা। এসএসএল ও টিএলএস এনক্রিপশনসহ ওয়েবসাইটে এইচটিটিপিএস প্রয়োগ করা। হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা এবং সন্দেহজনক কোনো কিছু নজরে এলে বিজিডি ই-গভ সার্টকে জানানো।


সাইবার হামলার ঝুঁকি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এটা মোকাবিলায় আমাদের যে প্রস্তুতি তাতে অনেক ঘাটতি আছে। এটা উত্তরণের চেষ্টা না করলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। যেসব গোষ্ঠী সাইবার হামলা চালায়, তারা যেসব জায়গায় সাইবার অবকাঠামো দুর্বল সেগুলোকে বেছে নেয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এটা চেক করে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকাকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। দেশের অর্ধেক ব্যাংকই সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের ব্যাংকে আইটি বিষয়ে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ জন্য টেকনোলজি উন্নতি করতে হবে। নিয়মিত সাইবার অডিট করাতে হবে। আর সব সময় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। শুধু ভালো সফটওয়্যার কিনলেই হবে না। এগুলো যথাযথ পরিচালনার জন্য দক্ষ কর্মীও তৈরির পরামর্শ দিয়েছে বিআইবিএম। ব্যাংকিং খাতে দফায় দফায় সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। ফলে আইটি সিকিউরিটিতে বরাদ্দ বেশি রাখছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আইসিটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালের পর থেকে তবে ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে আইসিটির ব্যবহার বাড়তে শুরু করে সেই অবস্থা থেকে আইসিটি এখন ব্যাংক খাতের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড এক মুহূর্তের জন্য পরিচালনার কথা ভাবা প্রায় অসম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উজ্জ্বল প্রকাশ আমাদের ব্যাংকিং খাত। এখানে যাবতীয় লেনদেন হিসাব-নিকাশ, অর্থ স্থানান্তরসহ সব কাজই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। মাত্র কিছু সময়ের জন্য যদি অনাকাক্সিক্ষত কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটে তাহলে একটি ব্যাংকের চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের যে ক্ষতি হয় সেটা কোনো না কোনোভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু একটি ব্যাংকের অনলাইন-ভিত্তিক কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই ব্যাংকের পক্ষে একদিনও টিকে থাকা সম্ভব নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণে দেশে প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমের লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে অনলাইন-ভিত্তিক লেনদেন। ফলে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, অন্যদিকে এই খাতের মুনাফা বৃদ্ধিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্ভুল লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়াতেও আইসিটির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।


প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আইসিটিতে বিনিয়োগ ব্যাংক খাতের জন্য অবশ্যই লাভজনক। বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতির দ্রুত বিকাশ এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা খুব সহজেই চোখে পড়ে। এখন বেশির ভাগ গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বাস্তব প্রয়োজনেই। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ব্যাংকের জটিল লাভক্ষতির হিসাবকরণ প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং নির্ভুল হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এখন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, আইটি কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা না করলে তা ব্যাংকের জন্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। 


বর্তমানে ১০০ শতাংশ ব্যাংকের কার্যক্রম অনলাইন নির্ভর হওয়া সত্ত্বেও আইটিতে কিছু কিছু ব্যাংক প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এই সমস্যা সমাধানে ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটি অংশ আইটি খাতে অবশ্যই বিনিয়োগ করা উচিত। দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ব্যাংকগুলো অহেতুক বিদেশি সফটওয়্যারের দিকে ঝুঁকছে। আইটি নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। 


প্রযুক্তিগত উন্নয়নের হাত ধরে ডিজিটাল ব্যবস্থা এখন অনিবার্য এক বাস্তবতা। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত পরিসরে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল রূপান্তর ঘটে চললেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সমানতালেই বেড়ে চলেছে। ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবরই চ্যালেঞ্জের। 


সরকারি, বেসরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে সাইবার হামলার প্রচেষ্টা যেভাবে অব্যাহত রয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের বড়সড় দুর্বলতা রয়ে গেছে। সার্টের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় সাইবার হামলার চেষ্টা থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক খাত, সামরিক সংস্থা, শিল্প খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য খাত, স্টার্টআপ ও জ্বালানি খাত- কেউই বাদ পড়েনি। সাইবার হামলা বা হামলার চেষ্টার ঘটনাগুলোর মধ্যে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ ঘটেছে দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে। অনুপ্রবেশের চেষ্টা ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সাইবার অপরাধীদের জন্য আর্থিক খাত সব সময়ই বড় লক্ষ্য। দেশের আর্থিক খাতেও বিভিন্ন সময় সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা চুরি করে তুরস্কের একটি অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ২০১৯ সালে দেশের বেসরকারি সাইবার অপরাধীরা  তিনটি ব্যাংকের ক্যাশ মেশিন থেকে ক্লোন করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩০ লাখ ডলার হ্যাক করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোর ব্যাংকিং পদ্ধতি এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের গেটওয়েতে অনুপ্রবেশ সম্ভব। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ অর্থ                                                                                                                               


জমা আছে, তা জানা যায়। কার্ড ব্যবহার করে ই-কমার্স লেনদেন যেমন বাড়ছে, তেমনি সাইবার অপরাধীদের কাছেও এগুলো লোভনীয় হয়ে উঠছে।


সাইবার অপরাধীরা সব সময় দুর্বল পরিকাঠামোগুলোকে হামলার নিশানা বানানোর সুযোগ খোঁজে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, সরকারি-বেসরকারি খাতের অনেক পরিষেবা এখন পর্যন্ত অরক্ষিত। সেগুলো যেকোনো মুহূর্তে সাইবার অপরাধীদের হামলার সহজ নিশানা হতে পারে। সার্টের প্রতিবেদন থেকে সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার কারণে যে ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে সংবেদনশীল তথ্য সাইবার দুর্বৃত্তদের হাতে গেলে তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। ফলে ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে সমানভাবেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্ষমতা অর্জনের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কোনো গড়িমসির সুযোগ নেই।


সাইবার ঝুঁকির নিরাপত্তায় কোন পথে বাংলাদেশ


ডিজিটাল বাংলাদেশ পেরিয়ে বর্তমানে স্মার্ট যুগে পদার্পণ করেছে দেশ। এ সময়ে এসে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা অথবা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করার খুব বেশি দরকার নেই। সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। কারণ ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে সাইবার হামলা হয়েছে এবং এর মূল্য দিতে হয়েছে দেশকে। বিশ্বায়নের এ যুগে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই; এ ব্যাপারে জনগণ থেকে শুরু করে সরকার সবাই ওয়াকিবহাল। সাইবার নিরাপত্তা কতটা জরুরি, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না, গুগলই আপনাকে বলে দেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার হামলা হয়েছিল আজ থেকে সাত-আট বছর আগে ইয়াহু কোম্পানিতে। এ হামলার পর কোম্পানিটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।


বিশ্বেও কোথাও না কোথাও প্রতিনিয়ত সাইবার হামলা চলছে। সাইবার নিরাপত্তায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি গত কয়েক বছরে এ খাতে অনেক ব্যয় বাড়িয়েছে এবং নিরাপত্তা খাতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তবে এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো সবে এ খাতে নজর দিয়েছে। এ খাতে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার কারণে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। এ টাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিল। দেশি-বিদেশি নানা উদ্যোগের পরও এ টাকা এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।


টাকা বেহাত হয়ে গেছে, এরপরও আমাদের ঘুম ভাঙেনি। ‘তথ্য সুরক্ষায় চরম ব্যর্থতা’ রয়েছে। ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েবসাইটের ২৭ নম্বর (২৭ নম্বর হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের ওয়েবসাইট) থেকে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এসব মানুষ নানাভাবে ক্ষতির শিকার হলেন। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েবসাইট বিবেচনায় ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সেবা দেওয়া স্থগিত করে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এ দু’টি ওয়েসবাইট ঝুঁকিপূর্ণ-এ বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন ওই দুটি সাইটকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


এখন প্রশ্ন হতে পারে, এ তথ্য ফাঁস হওয়ায় কী এমন ক্ষতি হয়েছে? হয়তো সরকারেরই কোনো কোনো দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি এমন মন্তব্য করতে পারেন। কারণ, এটাই বাংলাদেশে হয়ে আসছে। তবে আশার দিক হলো, ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্বীকার করে নিয়েছেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে, তবে হ্যাক হয়নি। 


বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বলা হচ্ছে, তথ্যই শক্তি। অর্থাৎ যার হাতে যত বেশি তথ্য থাকবে, সে তত বেশি শক্তিশালী হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডেমোক্রেট শীর্ষনেতাদের ২০ হাজারের মতো ফাঁস হওয়া ই মেইল উইকিলিকসে আসে, যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা। প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইয়াহু সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১৪ সালে হ্যাকাররা তাদের প্রায় ৫০ কোটি গ্রাহকের তথ্য চুরি করেছে। বলা হচ্ছে, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাইবার আক্রমণ। বিবিসির খবরে বলা হয়, এনক্রিপ্টেড নয় এমন সিকিউরিটি প্রশ্ন ও উত্তরসহ চুরি গেছে ব্যবহারকারীর নাম ও ই-মেইল ঠিকানা। এ ঘটনার পর থেকে ইয়াহু আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।


বিবিসির সেপ্টেম্বর ২০২২-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছ, অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাইবার হামলায় দেশটির প্রায় এক কোটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশ প্রতিনিয়ত এ হামলার শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ সাইবার হামলার শিকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুই দফায় সতর্ক করেছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘বিজিডি ই-গভ সার্ট’। বিমানের মেইল সার্ভার রনসমওয়্যার ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হওয়ার ঠিক তিন দিন আগে সাইবার হামলার বিষয়ে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারায় বিপদে পড়েছে বিমান। ম্যালওয়্যার নির্মূল করতে না পারলে তথ্য চুরিসহ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিমানের। দেশে গত বছরের আগস্টেই প্রায় পাঁচ লাখ সাইবার হামলা হয়েছে।


যেখানে বড় দেশগুলো সাইবার নিরাপত্তায় প্রতিনিয়ত গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে, বরাদ্দ বাড়াচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে ঘটছে এর উলটোটা। এবারের বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ আগের অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ৭ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ কম। জাতীয় নির্বাচনের বছরে এমন একটি ঘটনা সরকারের ইমেজকে সংকটের মুখে ফেলবে। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে এখন আর হালকাভাবে দেখলে হবে না। বর্তমান সময়ে হয়তো সম্মুখযুদ্ধ অনেকটাই কমে এসেছে, কিন্তু বেড়েছে সাইবার হামলা। আর জনগণের তথ্য একটা দেশের সম্পদ। সেই তথ্য রক্ষায় এবং নিরাপত্তা জোরদারে সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। একটা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যদি শত শত কোটি টাকা খরচ করা যায় এবং হাজার হাজার সৈনিক নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করে যায়, তাহলে সরকারি ৫২ হাজার ওয়েবসাইটে রক্ষিত জনগণের কোটি কোটি তথ্য রক্ষায় কত জনবল এবং কত টাকা ব্যয় করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।


অন্যদিকে, আমাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সময়ে হ্যাকারদের দ্বারা অনেক ব্যাংকেরই তথ্য হ্যাক হয়, যা সচরাচর মিডিয়ায় আসে না। আগামীর বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা আগে থেকেই অনুধাবন করতে পেরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। তাই আমাদের উচিত হবে প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় টেকসই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সহায়তা করা। এজন্য প্রয়োজন প্রতিটি জেলায় আলাদা সাইবার সিকিউরিটি সেল তৈরি করা, নিয়মিত আইটি অডিট পরিচালনা করা, সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো, উচ্চশিক্ষায় আইটি এবং সাইবার সিকিউরিটিকে গুরুত্ব প্রদান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আইটি সম্পর্কে সচেতন করা।


মেটার ‘থ্রেডস’কে টুইটারের থ্রেট


মেটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে টুইটার। প্রতিযোগিতা ঠিক আছে,প্রতারণা নয় : ইলন মাস্ক, টুইটারের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী’ হবে থ্রেডস। সাম্প্রতিককালে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অ্যাপের মধ্যে চ্যাটজিপিটি ছিল সবার ওপরে। এবার সে তালিকায় এগিয়ে গেল সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট মেটার সদ্য আগত প্ল্যাটফরম থ্রেডস। জনপ্রিয়তায় এতটাই তুঙ্গে যে, প্রথম সাত ঘণ্টার মধ্যেই টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী এ অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য এক কোটি ব্যবহারকারী নাম লেখান। আর ১২ ঘণ্টায় সেই সংখ্যা দাঁড়ায় তিন কোটিতে। তবে এরই মধ্যে দ্রুতবর্ধনশীল প্রতিদ্বন্দ্বী এ অ্যাপের জন্যন  মেটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে টুইটার।

 

থ্রেডস দেখতে অনেকটাই টুইটারের মতো। ব্যবহার পদ্ধতিতেও অনেক মিল। এর নিউজ ফিড এবং রিপোস্ট করার পদ্ধতিও হুবহু এক। ইতোমধ্যেই মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন টুইটারের আইনজীবী অ্যালেক্স স্পিরো। থ্রেডস তৈরি করতে ‘পরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত এবং বেআইনিভাবে টুইটারের গোপনীয় ব্যবসায়িক কৌশল এবং অন্যান্য মেধাস্বত্ব’ ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।


আইনজীবী স্পিরো অভিযোগ করেছেন, টুইটারের কয়েক ডজন সাবেক কর্মীকে মেটা এ কাজে লাগিয়েছে, যাদের পক্ষে টুইটারের অতি গোপনীয় তথ্যগুলো জানার সুযোগ ছিল এবং শেষ পর্যন্ত ওই তথ্যই টুইটারের ‘নকল’ থ্রেডস তৈরিতে সাহায্য করেছে।


চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মেটাকে অবিলম্বে টুইটারের ‘ট্রেড সিক্রেট’ এবং অন্যান্য অতি গোপনীয় তথ্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তা না হলে টুইটার তার মেধাস্বত্ব রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেবে। অভিযোগের উত্তরে মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন এক পোস্টে বলেছেন, থ্রেডসের প্রকৌশলী দলে এমন কেউ নেই, যিনি আগে টুইটারে কাজ করেছেন।

 

থ্রেডস তৈরি করেছে মূলত মেটার অ্যাপ ইনস্টাগ্রামের কর্মীরা। তবে সম্পূর্ণ আলাদাভাবেই এটি কাজ করে। ইতোমধ্যে একশর বেশি দেশে থ্রেডস অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা এ অ্যাপটিকে টুইটারের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী’ হবে বলে বর্ণনা করেছেন। টুইটারের প্রধান ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতা ঠিক আছে, প্রতারণা নয়’।


১১ বছর পর টুইটারে জাকারবার্গ


টুইটারকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চ্যালেঞ্জ জানানো এ অ্যাপ নিয়ে মাস্ক আর জাকারবার্গের দ্বৈরথও প্রকাশ্যে এসেছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে টুইটারের বাইরে ছিলেন। থ্রেডস উন্মুক্ত করার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ১৯ মিনিটে একটি টুইট করেন তিনি। তবে কোনো টেক্সট নয়, একটি ছবি শেয়ার করেছেন জাকারবার্গ, তা-ও আবার স্পাইডারম্যানের সেই জনপ্রিয় মিম-একই পোশাকে দুই স্পাইডারম্যান একজন আরেকজনের দিকে এমনভাবে আঙুল তুলছেন, দেখে মনে হয় যেন আয়নায় প্রতিবিম্ব। অল্প সময়ের মধ্যে টুইটারে একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয় ‘থ্রেডস’ শব্দটি।


জবাবে মাস্ক লেখেন, ইনস্টাগ্রামে বেদনা লুকানোর মিথ্যা সুখে ডুবে থাকার চেয়ে টুইটারে অপরিচিতদের আক্রমণের শিকার হওয়া ভালো। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক গত বছরের অক্টোবরে টুইটার কিনে নেওয়ার পর থেকে জনপ্রিয় এ প্ল্যাটফরমটি বেশকিছু বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের কারণে যেসব টুইটার ব্যবহারকারী অসন্তুষ্ট, নতুন অ্যাপ থ্রেডস তাদের আকৃষ্ট করতে পারে। এ ছাড়া থ্রেডসের অনেক বৈশিষ্ট্য টুইটারের মতোই।  যেমন কোনো পোস্ট ৫০০ বর্ণেও বেশি হতে পারবে না বলে থ্রেডসে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। তবে থ্রেডস যে পরিমাণে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করবে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফরমগুলো তার সমালোচনা করেছে। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, থ্রেডস ডাউনলোড করলে এটি ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য, আর্থিক এবং ব্রাউজিং সংক্রান্ত তথ্যসহ অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে। 


থ্রেডস-এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে টুইটারের মতো থ্রেডস অ্যাপে অনেক কিছু থাকলেও কিছু ফিচার এখনো মিসিং রয়েছে। প্রথমদিকে থ্রেডস অ্যাপ ব্যবহার করেছেন-এমন অনেকেই অ্যাপটিতে ছবি আপলোড করতে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ইউজাররা এখানে জিআইএফ অ্যাড করতে পারবেন না, আবার কোনো ‘ক্লোজ ফ্রেন্ড’ ফিচারও  নেই এখানে। পাশাপাশি ডিরেক্ট মেসেজ এবং স্টোরি পোস্ট করার সুবিধাও দেওয়া হয়নি মেটার নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফরমে।


বিশ্বের এশশটির বেশি দেশে এখন থ্রেডস ব্যবহার করা যাবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনো এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। মূলত কীভাবে এ অ্যাপটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে এখনো দেওয়া হয়নি সেই অনুমতি।


মানবতা ও মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে এআই!


১৯৭০ সালের দিকে শুরু হয় নতুন শব্দের উন্মোচন। তারপর নব্বই দশকের কথা। কেবলই ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের শাখাগুলো পাখা মেলছে। গুগল, ইউআরএল এবং ফাইবার অপটিক ব্রড ব্যান্ডের সঙ্গে সবে পরিচিত হচ্ছিল। কালের ধারায় সেগুলোই  যেন আজ সব কিছু জড়িয়ে আছে জীবনের সঙ্গে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বিপ্লব কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। বুলেট বেগে চলা এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে বিজ্ঞানের এক নতুন সংযোজন এটি। সম্প্রতি বিবিসির প্রতিবেদনে এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদ্যোপান্ত নিয়ে উঠে আসলো নানা তথ্য। 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এমন এক বিশেষ প্রযুক্তি, যা মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির আদলে কাজ করতে সক্ষম। কম্পিউটার সিস্টেমে পরিচালিত অক্লান্ত এ প্রযুক্তি সার্ভিস দিতে সদা প্রস্তুত। নেতিবাচক দিকও উঠে আসছে আলোচনায়। 


বিশ্লেষকরা বলছেন, এআইয়ের অতি ব্যবহারে মানুষের মনুষ্যত্ব, মানবতা সব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এআই ব্যবহারের লাগাম টানতে ইতোমধ্যেই বিশেষ বৈঠক হয়েছে জাতিসংঘে। 


আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। প্রথমদিকে এ প্রযুক্তি ছিল খুবই সংকীর্ণ ও দুর্বল। বিশ্বেও সেরা দাবারুকে নিমিষে হারিয়ে দিতে পারে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেটির ডিম ভাজির সহজ রেসিপি বা একটা প্রবন্ধ লেখার ক্ষমতা কিছুদিন আগেও ছিল না; কিন্তু আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স একধাপ উন্নত যা মানুষের মতো চিন্তা ও চেতনাকে ধারণ করতে পারে। ওপেন এআই এবং ডিপমাইন্ডের মতো সংস্থাগুলো এজিআইকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের মতে, ‘এটি মহাশক্তির গুণক’ হয়ে উঠবে। তবে কেউ কেউ ভয় পান যে, আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া স্মার্ট সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। মানুষের মাঝে এমন নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রয়েছে; যা আমাদের সমাজকে একত্রে আবদ্ধ করে। এখন অনেকেরই চিন্তা সুপার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সঙ্গে একীভূত হবে কিনা। মানবজাতি খুব কমই পক্ষপাত শূন্য। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি নিরপেক্ষ না হয় তা ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। গোত্র, লিঙ্গ এবং লুকিয়ে থাকা কুসংস্কারে ঘটতে পারে বিপত্তি। পরবর্তীতে এ বুদ্ধিমত্তা যদি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখন সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্ববাবধানের ক্ষেত্রে কোনটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং কার সমস্যাগুলো আগে শোনা উচিত তা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা যেতে পারে। 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনায় কম্পিউটারের ভূমিকা ব্যাপক। ২০১২ সাল থেকে কম্পিউটের পরিমাণ প্রতি ৩.৪ মাসে দ্বিগুণ হয়েছে, যার অর্থ হলো- যখন ২০২০ সালে ওপেন এআইয়ের জিপিটি-৩ প্রশিক্ষিত হয়েছিল, তখন সবচেয়ে আধুনিক মেশিন লার্নিং সিস্টেমগুলোর থেকে ৬,০০০০০ গুণ বেশি কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজন ছিল। পরিবর্তনের এই দ্রুততায় কম্পিউটারগুলোকে উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনা করতে পারবে? নাকি এটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরেক উদ্ভাবন ডিফিউশন মডেল। এটি একটি নতুন জাতের মেশিন লার্নিং; যা উন্নতমানের ছবি তৈরি করে। আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতটা উন্নত নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকাংশ কাজগুলো প্রায়ই একটি ‘ব্যাক বক্সের’ মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তাই গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এর অভ্যন্তরীণ অংশগুলো নিয়ে আরও কাজ করা হচ্ছে। এ অংশগুলো উন্নত করার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরাসরি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। 


অতীতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলোর কাজ নির্দিষ্ট ছিল। তবে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম। যেমন- প্রবন্ধ লেখা, খসড়া কোড, অঙ্কন শিল্প বা সঙ্গীত রচনা করা। একটি ফাউন্ডেশন মডেলের একটি ডোমেনে শেখা তথ্য অন্য ফাউন্ডেশনে প্রয়োগ করার সৃজনশীল ক্ষমতা থাকে। যেমন-গাড়ি চালানো ডোমেনে শেখা তথ্য বাস চালাতে সক্ষম হওয়ার জন্য প্রস্তুত।


আমরা বর্তমানে এমন এক যুগে আছি যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অমরত্ব লাভেরও সুযোগ রয়েছে। বড় বড় অভিনেতা ও গায়করা ইতোমধ্যেই মৃত্যুর পর চলচ্চিত্রে বা কনসার্টে উপস্থিত হবেন বলে আশা করছেন। 


চ্যাটজিটিপি, বার্ড বা বিংয়ের মতো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলো অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দেয়; কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক তথ্য মিথ্যা আসতে পারে। এটি হ্যালুসিনেশন হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে হাইপ্রোফাইল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাট জিটিপির হ্যালুসিনেটেড মেড-আপ রেফারেন্স হিসেবে তথ্যের উৎস প্রদান করে।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক দিকগুলোর উঠে আসার কন্টেন্টের ওপর সীমাবদ্ধতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে একে বেআইনি বা অনৈতিক কিছু বলা হলে এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যদিও এই সুরক্ষার বিষয়টিকে সৃজনশীল ভাষা, অনুমানমূলক পরিস্থিতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে বাইপাস করা সম্ভব। একেই জেলব্রেক বলা হয়। 


জ্ঞানের গ্রাফগুলো শব্দার্থিক নেটওয়ার্ক নামেও পরিচিত। নেটওয়ার্ক হলো জ্ঞান সম্পর্কে চিন্তা করার একটি উপায়। এতে মেশিনগুলো বুঝতে পারে কিভাবে বিভিন্ন বিষয়ের ধারণাগুলো সম্পর্কিত। 


কোনো বৃহৎ ভাষার মডেলকে পরীক্ষার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নিজের সম্পর্কে বলতে বলা। এ সম্পর্কে ওপেন আই ও চ্যাটজিটিপিকে প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়- একটি বৃহৎ ভাষার মডেল হলো একটি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম; যা মানুষের মতো ভাষা বোঝার এবং তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি লাখ লাখ বা এমনকি বিলিয়ন প্যারামিটারসহ একটি গভীর নিউরাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার ব্যবহার করে। এটি জটিল নিদর্শন যা ব্যাকরণ এবং প্রচুর পরিমাণে পাঠ্য ডেটা থেকে শব্দার্থবিদ্যা শিখতে সক্ষম।


সবচেয়ে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে গবেষকদের বিশাল ডাটাসেট প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি আরও বেশি করে কন্টেন্ট তৈরি শুরু করে তবে সেই উপাদানটি প্রশিক্ষণের ডেটাতে ফিরে আসতে শুরু করবে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ইলিয়া শুমাইলভ একে ‘মডেল পতন’ বলে অভিহিত করেছেন। এটি একটি অধঃপতন প্রক্রিয়া; যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মডেলরা কাজ ভুলে যায়।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় প্রাথমিকভাবে মেশিনগুলোকে যুক্তি এবং নিয়ম ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। মেশিন লার্নিংয়ের আগমন সেই সব বদলে দিয়েছে। এখন সবচেয়ে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজেদের জন্য শেখে। এ ধারণার বিবর্তনের ফলে নিউরাল নেটওয়ার্ক হয়েছে। এটি এক ধরনের মেশিন লার্নিং; যা আন্তসংযুক্ত নোড ব্যবহার করে, যা মানুষের মস্তিষ্কে শিথিলভাবে তৈরি করা হয়। 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রাকৃতিক ভাষা শেখার ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ। তাদের থেকে ভালো ফলাফল লাভ করতে দ্রুত লেখার ক্ষমতা প্রয়োজন। এ প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং ভবিষ্যতে চাকরির দক্ষতার জন্য একটি নতুন সীমানা নির্ধারণ করে দেবে। 


২০২৩ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছাকাছি আসবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। মেশিন লার্নিংকে সুপারচার্জ করার জন্য কোয়ান্টাম প্রসেস ব্যবহার করা হয়। গুগল এআই গবেষকদের একটি দল ২০২১ সালে লিখেছিল- কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তৈরি শেখার মডেলগুলো নাটকীয়ভাবে আরও শক্তিশালী হতে পারে...সম্ভাব্যভাবে কম ডেটাতে দ্রুত গণনা সম্ভব হবে।


সুপার ইন্টেলিজেন্স হলো মেশিনের শব্দ; যা মানব মস্তিষ্কের নিজস্ব মানসিক ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে। যেহেতু আমরা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রজাতি এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করি, এটি আমাদের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট কিছু তৈরি করলে কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যায়। 


প্রশিক্ষণের ডেটা বিশ্লেষণ করার অর্থ ডেটাসেটে কী আছে, এটি পক্ষপাতদুষ্ট কিনা এবং এটি কতটা বড় তা দেখা। ওপেনএআই-এর জিপিটি-৩ তৈরি করতে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণের ডেটা ছিল উইকিপিডিয়া। চ্যাটজিটিপিকে কত বড় জিজ্ঞাসা করা হলে এটি প্রায় ৯ বিলিয়ন নথির কথা বলে। 


একজন ব্যক্তির কথা বলার মাত্র এক মিনিটের মধ্যে কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভয়েস  ক্লোন তৈরি করতে পারে। এ ক্লোনগুলো পুরোপুরি একই রকম শোনায়। এখানে বিবিসি ভয়েস ক্লোনিং সমাজে যে প্রভাব ফেলতে পারে তা তদন্ত করেছে। 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানবতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে? কিছু গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদরা বিশ্বাস করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পারমাণবিক অস্ত্র এবং জৈব প্রকৌশলী প্যাথোজেনের পাশাপাশি একটি অস্তিত্বগত ঝুঁকি হয়ে উঠেছে। তাই এর ক্রমাগত বিকাশকে নিয়ন্ত্রিত, কমানো বা এমনকি বন্ধ করা উচিত। 


কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি জিরো শর্ট উত্তর প্রদান করে তার মানে এটি এমন একটি বস্তু সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে, যা আগে কখনো দেয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি প্রাণীদের চিত্র শনাক্তকরণে ডিজাইন করা কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বিড়াল এবং কুকুরের চিত্রের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এটি ঘোড়া বা হাতির সঙ্গে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখাবে।


প্রযুক্তি কি সমাজে বিভক্তির দেয়াল টানছে?


আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের প্রতিটি সভ্যতা, সমাজ, রাজ্য এবং সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হয়েছে। প্রযুক্তির প্রভাবে পাল্টে গেছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, স্বতন্ত্র সমাজব্যবস্থা, যোগাযোগ ও রাজনৈতিক চর্চা। যে জাতির প্রযুক্তি যত উন্নত, সে জাতির বিশ্ব সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে প্রভাবও তত বেশি। যুগ যুগ ধরে মানবসমাজ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ে এসেছে। এর মধ্য দিয়েই মানবসমাজের নিরন্তর অভিযাত্রা; আর এর মোকাবিলার জন্য মানুষের হাতে ছিল নিজেদের একত্র হওয়া। একত্র মানবসমাজ সব সমস্যার অতিক্রম করতে সক্ষম। যে সমস্যায় সারা মানবজাতি আজ নিমজ্জিত; তাতে একত্র হওয়াই একমাত্র সমাধান। আজকের বিশ্ব বহু জাতি রাষ্ট্রে বিভক্ত-দেশগুলোও সীমানা দিয়ে পরিষ্কার বিভক্ত। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ সময় সারা পৃথিবীর মানুষ বড় বেশি কাছাকাছি। আর তাই, তাদের একত্র হওয়া খুবই সহজ একটা বিষয়। দরকার শুধু একত্র হওয়ার একাগ্র ইচ্ছা। বলা যায়, সত্তর এবং আশির দশকের মতো স্নায়ুযুদ্ধের যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। আবার বিভক্ত বিশ্ব দেখছে বিশ্ববাসী। আর এটি আবার নতুন করে উত্তেজনা এবং এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করছে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থান, চীনের এক ধরনের নির্লিপ্ততা, চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের উষ্ণতা পুরো বিশ্বকে যেন আবার বিভক্ত করছে, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। আর এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনীতি এক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য একদিকে। অন্যদিকে, রাশিয়া-চীনের মতো দুই প্রভাবশালী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন, অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক শক্তি। দুই মিলিয়ে আবার যেন শীতল যুদ্ধের সময় শুরু হয়ে গেল।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আগের মতো নেই। একসময় তাদের যে অর্থনৈতিক শক্তি ছিল, সামরিক দর্প ছিল তা চুরমার হয়ে গেছে আফগানিস্তানে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শক্তি বলতে মার্কিন সহায়তা ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। যুক্তরাজ্যও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এখন একটু খর্ব শক্তির অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার পরও বিশ্বের কতৃত্ববাদে এই পশ্চিমা দেশগুলো এগিয়ে। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ অনেক গুণ বাড়িয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছে, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের কাজ পেয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া বাংলাদেশের একাত্তরের পরীক্ষিত বন্ধু, তাই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ দ্বিধান্বিত নয়। কিন্তু চীনের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতার কারণে বাংলাদেশে দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। সামনে যখন বিশ্বে বিভক্তি আরো বাড়বে, শীতল যুদ্ধের অবয়ব যখন আরো গাঢ় হবে তখন বাংলাদেশের ওপরও চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই বাংলাদেশকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন পথে যাব, আমাদের গন্তব্য কোথায়। বিশ্ব এখন স্পষ্টত বিভক্ত। পূর্ব আর পশ্চিম। একদিকের নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। অন্যদিকে চীন। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য পূর্বদিকের অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ানসহ অনেক দেশ। আর চীন বলয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, উত্তর  কোরিয়া, মিয়ানমারসহ বেশ কিছু দেশ।


ক্রমাগত বিশ্বে কর্তৃত্বের লড়াই চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হলেও চীন এগোচ্ছে কৌশলে। অনেকটা নীরবে। তার প্রমাণ ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবকে মিলিয়ে দেওয়া। এ বছর মার্চ মাসে ওই দু’দেশের নতুন দোস্তির ঘোষণা দেওয়ার আগে কেউ এমনটা আঁচ করতে পারেননি। একে একে এশিয়া, তথা পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ঋণ দিয়ে, একের পর এক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চীন তার আধিপত্য বাড়াচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভিন্ন। তারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হওয়া সত্ত্বেও চীনের এই মাতব্বরি মেনে নিতে পারছে না। এ নিয়ে ভারতের পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। এশিয়ায়, তথা ভারতীয় উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে চীন। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কায় থাবা বিস্তার করেছে। হাম্বানটোটা বন্দর চীনের নিয়ন্ত্রণে। অনেকটাই চীন ও রাশিয়া নির্ভর হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। সম্ভবত এ কারণেই তাদের ঋণ দিতে একের পর এক শর্ত আরোপ করছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের দহরম-মহরম। তা ছাড়া অন্য অনেক দেশে চীন তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এমনকি বাংলাদেশেও বড় বিনিয়োগ করেছে চীন। তারা সামনে আরো বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছে। এসব বিষয় ভারতের ইমেজের জন্য ক্ষতিকর। ভারতীয় উপমহাদেশে চীনের এই আধিপত্য ভারতের জন্য সহনীয় নয়। তাই তাদের পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মেলাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বদলে গেছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্য চলে যাচ্ছে চীনের বলয়ে।


তথ্য নিরাপত্তার নিয়মিত মূল্যায়ন জরুরি


সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর নিরাপত্তা খুবই দুর্বল। এর মূল কারণ অসচেতনতা ও  অবহেলা। ওয়েবসাইটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়মিত মূল্যায়ন করা হয় না। কর্মীরাও সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন নন। এ-সংক্রান্ত নীতিমালাও নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর।


একটা ওয়েবসাইট তৈরির পর এর দুর্বলতাগুলো মূল্যায়ন করতে নানা পরীক্ষা করতে হয় নিয়মিত। আমাদের দেশে এই পরীক্ষা করা হয় না। ওয়েবসাইটগুলোও তৈরি করা হয় নামকাওয়াস্তে। খরচ বাঁচাতে দক্ষ প্রোগ্রামের প্রোগ্রামারের পরিবর্তে নতুনদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এতে সাইট অ্যাপ্লিকেশনটা দুর্বল হয়, যা সহজে হ্যাক হয়। সরকারি ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে একই সাইট বারবার কপি করে নতুন সাইট তৈরি করা হচ্ছে। অনেক ওয়েবসাইট করা হয় ওয়ার্ডপ্রেসে। ওপেন সোর্স টুলস ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এসব কারণে সাইটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয় বেশ নাজুক। এ ছাড়া একবার সাইট তৈরির পর নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করা হয় না। অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়মিত আপডেট করা হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইট বা তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা ব্যবস্থা সময়োপযোগীও করা হয় না। ব্যবহারকারীর ওপরও অনেক কিছু নির্ভর  করে। তারা অসচেতন হলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত কুকিজ, অ্যাপস চালু হয়ে নেটওয়ার্ক, সাইট ও সার্ভারের তথ্য বেহাত হতে পারে। কর্মীদের অবহেলা বা উদাসীনতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই সাইবার হামলার শিকার হয়।


বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে তেমন সচেতন নয়। তারা একটি দুর্ঘটনা ঘটলে নড়েচড়ে বসে। তার পর আবার সবাই চুপ হয়ে যায়। হ্যাক বা কারিগরি দুর্বলতা যেভাবেই তথ্য বেহাত হোক, ডাটা তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সংশ্লিষ্টদের। তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে গেলে সেটা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এসব তথ্য ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন, অবৈধ ব্যাংকিং, ডার্ক ওয়েবে ব্যবহার, সিম রেজিস্ট্রেশন, ভার্চুয়াল ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি, ভুয়া বুকিং, মানি লন্ডারিংয়ের মতো নানা ধরনের অপরাধে ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলতে পারে।


সাইবার নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মীকে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন সব ক্ষেত্রে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ই-অডিট করতে হবে। সাইবার সিকিউরিটির জন্য বিশেষ টিম থাকতে হবে। সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, তা হলো সাইবার পলিসি করা এবং সেই পলিসি সবাইকে মানতে বাধ্য করা।


ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক নির্মাণ, ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ভাবন, উৎপাদন ও রপ্তানি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের সহজ লভ্যতা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন। তবে এসবের মাঝেও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি জনাব সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়-এর দিকনির্দেশনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল সংযুক্তি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মহাসড়ক নির্মাণসহ বহুমুখী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিগত ১৫ বছরে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। 


ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার যেখানে ছিল ৭ দশমিক ৫ জিবিপিএস বর্তমানে তা প্রায় ৪১০০ জিবিপিএস অতিক্রম করেছে। 


স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ডাক সেবা প্রতিষ্ঠার জন্য করণীয় নির্ধারণে পরিচালিত সমীক্ষা প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। ডাকঘর ডিজিটাইজেশনের জন্য এটুআই এর ব্যবস্থাপনায় গৃহীত ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব (ডিএসডিএল) এর সুপারিশ মোতাবেক একটি সমীক্ষা প্রকল্পের অধীন বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের জন্য  অটোমেটেড মেইল প্রসেসিং নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এর ফলে ডিজিটাল সংযুক্তির ওপর নির্ভর করে আমরা সমগ্র দেশে একটি ডিজিটাল ডাক ব্যবস্থা গড়ে তুলব।


মহাকাশে বাংলাদেশের পদচারণার প্রথম সোপান ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক সূচনা এবং এক অবিশ্বাস্য অগ্রযাত্রা। এই অগ্রযাত্রা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার উজ্জ¦ল সোপান অতিক্রম করা। অবিস্মরণীয় এই অভিযাত্রা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশক। ১২ মে ২০১৮ তারিখ শনিবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।


এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ অভিষিক্ত হলো ৫৭তম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের মর্যাদায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে  টেলিযোগাযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। 


মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ এর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। 


চ্যাটজিপিটি চালাতে দৈনিক খরচ ৭ কোটি টাকা, দেউলিয়ার পথে ওপেনএআই


চ্যাটজিপিটির ওপর ভর থেকে ওপেনএআইয়ের লাভের মুখ দেখা প্রায় অসম্ভব। ভারতীয় সাময়িকী অ্যানালিটিক্স ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের শেষ দিকে সংস্থাটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুসারে, সংস্থাটির শুধু একটি সেবা চ্যাটজিপিটি চালাতেই দৈনিক প্রায় ৭ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার বেশি) খরচ হয়। অল্টম্যানের ওপেনএআই এই মুহূর্তে জলের মতো টাকা ঢালছে। জিপিটি ৩.৫ ও জিপিটি ৪কে বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় আনার চেষ্টা করলেও যথেষ্ট আয় করতে পারছে না সংস্থাটি। 


২০২২ সালের নভেম্বরে অবমুক্ত করার পর থেকে চ্যাটজিপিটি ইতিহাসের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রাথমিক ধাপে রেকর্ড ভাঙা ব্যবহারকারী পেলেও সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। সিমিলারওয়েবের দেওয়া তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ের শেষদিকে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারী উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। 


ওয়েবসাইটের ট্রাফিক ও পারফরমেন্স বিশ্লেষণকারী সংস্থা সিমিলারওয়েব জানায়, ২০২৩ সালের জুনের তুলনায় জুলাইয়ে ব্যবহারকারী ১২ শতাংশ কমেছে। এ সময় ১৭০ কোটি ব্যবহারকারী থেকে কমে এ সংখ্যা ১৫০ কোটিতে নেমেছে। 


সংস্থাটির অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা এপিআই আয় কমে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে বলে সাময়িকীটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আগে বিভিন্ন সংস্থা তাদের কর্মীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেছিল। এখন তারা ওপেনএআইয়ের এপিআই ব্যবহার করে নিজস্ব চ্যাটবট তৈরি করছে। এ চ্যাটবটগুলোতে আরও বৈচিত্র্যময় কাজ করা যায়। 


অ্যানালিটিক্স ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে এই সমস্যার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ অ্যাপের অনেকগুলো বিকল্প ওপেন সোর্স এলএলএম মডেল আছে যেগুলো বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। এগুলো লাইসেন্স ছাড়াই মডিফাই (পরিবর্তন) করা যায়। ফলে কোনো সংস্থা তাদের চাহিদা মতো পরিবর্তন করে নিতে পারে। যেমন, মাইক্রোসফটের সঙ্গে মিলে তৈরি মেটার লামা ২ এআই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বিপরীতে ওপেনএআইএর চ্যাটজিপিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে হলে পয়সা খরচ করতে হয়। এটি একক মালিকানাধীন এবং এতে সীমিত ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাহলে কেন মানুষ বিনা মূল্যে পরিবর্তনযোগ্য লামা ২ ব্যবহার না করে চ্যাটজিপিটি নেবে? 


এখনো লাভজনক হয়ে উঠতে পারেনি ওপেনএআই। চ্যাটজিপিটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মে মাসে এর লোকসান দাঁড়ায় ৫৪ কোটি ডলার। মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বলেই হয়তো এটি এখনো টিকে আছে। 


যদিও ওপেনএআই চলতি বছর ২০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সাল নাগাদ ১০০ কোটি ডলার বাৎসরিক আয়ের আশা করছে, তবে এর বাড়তে থাকা লোকসানের পরিমাণ সেই প্রত্যাশা পূরণ অসম্ভব করে তুলছে।


হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

ছবি-ইনটারনেট

Feedback:[email protected]








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।