বর্তমান সরকারের দিনবদলের যে অঙ্গীকার রয়েছে, সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যথাযথ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে মধ্যস্তরের কারিগরি শিক্ষাকে গতিশীল করা জরুরি। রোবট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রযুক্তির সাহায্যে ঘটবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। তখন মানুষের প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ দখল কওে নেবে প্রযুক্তি। মুখোমুখি দাঁড়াতে সক্ষম হবে রোবট ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির। এক রিমোট কন্ট্রোলেই ঘুরবে দৈনন্দিন কার্যকলাপের চাকা। বেকার হয়ে পড়বে প্রযুক্তি জ্ঞানহীন অদক্ষ জনশক্তি। কাজেই আগামীর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বৈশ্বিক সমাজের সঙ্গে মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তুলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা গেলে তা নিঃসন্দেহে আগামীতে বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
মানুষের মেধা ও অতীত শিল্প অভিজ্ঞতা বিরামহীন উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে। প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বৈপ্লবিক পরিবর্তনকেই বলা হচ্ছে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’। সহজ কথায় ‘ডিজিটাল রেভল্যুশন’ বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি হাতে কলমে সেটাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।
এটি একটি মানসিক দক্ষতা ও ডিজিটাল সিস্টেমকে প্রাধান্য দিয়ে একটি শিল্প বিপ্লব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারনাটি প্রথম এপ্রিল ২০১৩ সালে জার্মানিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই সুবিধাকে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৫৮.৫% অর্থনীতিতে ক্রিয়াশীল এবং তাদের মাত্র ৫.৩% বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষিত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে আমাদের মাত্র ০.৩% কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন করে আরো অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই জায়গাটি কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রচুর প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ।
এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের প্রয়োজন গুণগত ও মানসম্মত তথ্য প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেউ চাইলেই নিজে তার দক্ষতা বাড়াতে পারে না, দরকার যথোপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।
একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখানে সব কিছু বিক্রয়যোগ্য। ইতিমধ্যে আমরা সকলে জানি উবার এর নিজস্ব কোনো গাড়ি নেই, ফেসবুক এর নিজস্ব কোনো কন্টেন্ট নেই,আলি বাবার কোনো গুদাম নেই। সব কিছুই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের চাহদিাকে হাতের নাগালে পৌঁছানো।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পৃথিবীকে আক্ষরিক অর্থেই গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হবে অভাবনীয় উন্নত প্রযুক্তরি নর্ভিরতা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হবে হাতের মুঠোয়, সহজেই কেনা বেচা করা যাবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ পৃথিবীর সব উন্নত প্রযুক্তিগুলোকে গ্রহনের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির সহায়ক শক্তি হিসাবে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ জরুরি হলেও তা অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে আছে। শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের কথা বারবার উচ্চারিত হলেও কার্যত সরকারি উদ্যোগ সেভাবে পর্যাপ্ত নয় বলে পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞমহলের। এমনকি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক কম। অথচ এ কথা সবাই স্বীকার করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ এরই মধ্যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং সেসব দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যত বেশি, সে দেশের মাথাপিছু আয়ও তত অধিক। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে অধিক সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি থাকায় সেখানকার মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। বাংলাদেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি জড়িত। সেবামূলক জরুরি কাজেও তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি বিদেশে কর্মরত দক্ষ জনশক্তির একটি অংশ প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণকারী জনগোষ্ঠী। তারা মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চাকরি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে। প্রযুক্তিবিদদের পেশাগত জ্ঞান, কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কাজের মান ও গতিশীলতা। এমনকি তাদের সক্রিয় ভূমিকা গড়ে তোলে দেশের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুমান করে, ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের কারণে কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ ফের স্কিলিংয়ের প্রয়োজন হবে। এই সময়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতার এক-তৃতীয়াংশ প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে গঠিত হবে, যা আজকের কাজের জন্য এখনো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত নয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দ্বারা অর্জিত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়া ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সের মধ্যে তার কর্মীবাহিনীর ৯৫ শতাংশকে আনুষ্ঠানিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান করেছে। জার্মানিতে এ হার ৭৫ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫২ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এখনো ২০ শতাংশে কমে রয়ে গেছে, যদিও সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর ভর্তির হার ৩০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি অবহেলার কারণে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রমশ ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে বেকারত্বের হার। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণসমাজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। অদক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বেশি সংখ্যক মধ্যস্তরের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারী প্রশিক্ষিত জনশক্তি প্রেরণ করা গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় অনেক বেড়ে যেতে পারে, দেশ মুক্তি পেতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া প্রায় ২২০টি বেসরকারি পলিটেকনিক রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো ভবন ছাড়াই ভাড়া করা ভবনে ক্লাস পরিচালনা করছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই কোনো উপযুক্ত ল্যাবরেটরি সুবিধা ও ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনার জন্য ওযার্কশপ নেই। ২০১৭ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি পলিটেকনিক ইসাস্টটিউটে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কঠোর তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কেননা ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়া শুধু কাগুজে সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের নেতিবাচক ফল গোটা দেশ ও জাতিকে ভোগ করতে হয়। ২০০১ সাল থেকে প্রকৌশল ডিপ্লোমা কোর্স ৩ বছর থেকে ৪ বছরে উন্নীত করা হলেও নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রণীত পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়নি। প্রকৌশল ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে শতকরা ৬০ ভাগ ব্যবহারিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের অভাবে ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে শিক্ষার্থীকে পর্যাপ্ত ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়াই প্রকৌশল ডিপ্লোমা সনদ নিয়ে বাস্তব জীবনে প্রবেশ করে কর্মক্ষেত্রে নানারূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বর্তমানে দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯০০ স্থায়ী শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত দাঁড়ায় ১:১৪৪। এ অনুপাত কিছুতেই কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকূলে নয়। দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত এবং পুরোনো যন্ত্রপাতি, মানহীন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার আশানুরূপ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি। ফলে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্রমশ হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড। দেশের উন্নয়নের ধারা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্নাতক প্রকৌশলীর পাশাপাশি মধ্যস্তরের কারিগরি শিক্ষার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং দক্ষ জনশক্তি বিশেষ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই তিন ধরনের পেশাজীবীর গ্রহণযোগ্য অনুপাত বিবেচনায় বাংলাদেশে স্নাতক প্রকৌশলীর অনুপাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রয়েছে অনেক কম। অথচ স্নাতক প্রকৌশলীদের কর্মপরিকল্পনাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও জনবল কাঠামো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ ১০টি কারিগরি শিক্ষা প্রকল্পে কাজ করে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি প্রযুক্তিগত বিষয়, এসএসসি ভোকেশনাল এবং সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও শ্রশিক্ষণের প্রসার ঘটানো। ২০১৪ সালে প্রথম ধাপে ১০০ উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত ৭০টি প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ‘বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পটিও ২০২১ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত করা যায়নি। ২০১৮ সালে ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহীত প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত ৩ বছরে শেষ হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ ১০টি কারিগরি শিক্ষা প্রকল্পে কাজ করলেও উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা নামে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গৃহীত প্রকল্প আড়াই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থান নির্বাচন করা হয়নি। দেশ-বিদেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউগুলোতে যুগোপযোগী নিত্যনতুন টেকনোলজি চালু করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছে। পলিটেকনিক গ্রাজুয়েটদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ লক্ষ্যে তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন। তাদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করার জোর তৎপরতা চালানো জরুরি। প্রতিটি জেলায় আধুনিক মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। সব সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকের সব শূন্যপদ পূরণ এবং নতুন পদ সৃষ্টি করে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দান করা বিশেষ জরুরি। ৪ বছর মেয়াদি প্রকৌশল ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম অনুসারে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক এবং ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য উন্নতমানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষাদান সম্ভব নয়। তেজগাঁওয়ের টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে সম্প্রসারিত করে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি বছরে দেশে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার নতুন প্রযুক্তিগত চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। যদিও প্রায় ২০ হাজার নতুন কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল স্নাতক বছরে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নির্ধারিত নিয়োগের মান পূরণ করতে ব্যর্থ বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। এডিবির প্রতিবেদন মতে, কারিগরি দক্ষতা, ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো মধ্যস্তরের দক্ষতার জন্য দেশীয় প্রতিভা খুঁজে না পাওয়ার কারণে উৎপাদন শিল্প প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে উচ্চ মজুরিতে প্রযুক্তি দক্ষ লোক নিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে। পুরোনো ও তত্ত্বকেন্দ্রিক শিখন পদ্ধতি, সীমিত ল্যাব সুবিধা এবং সীমিত ইন্টার্নের সুযোগ কাক্সিক্ষত দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সক্ষম নয়।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের শিল্পকারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণকে ফলপ্রসূ করার লক্ষে কারখানা মালিককের উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং সেলের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা অত্যাবশ্যক। মধ্যস্তরের প্রকৌশলীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও কাজের সঠিক মূল্যায়নসহ দেশের উন্নয়নের ধারায় তাদের অধিকতর সম্পৃক্ত করা হলে তা পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামকে পুনরায় তিন বছরে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা হবে আত্মঘাতী। চতুর্থ শিল্পি বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন জরুরি।
ভবিষ্যতে সুপার কম্পিউটিং চালকবিহীন গাড়ি কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট, নিউরো প্রযুক্তির ব্রেন, জেনেটিক প্রযুক্তি দেখতে পাবো। প্রযুক্তির এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য আমাদেরকে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে।
বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল প্রথম শিল্প বিল্পব, দ্বিতীয় শিল্প বিল্পব শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে, তৃতীয় শিল্প বিল্পব শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে আর একবিংশ শতাব্দীতে এসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংস, বায়ো টেকনোলজির সঙ্গে অটোমেশন প্রযুক্তির মিলনে শুরু হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিল্পব। এই শিল্প বিল্পব মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বা শ্রমজীবীদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াতে প্রয়োজন হয় গুণগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের। এ প্রশিক্ষনের প্রথম ধাপ শুরু হয় শিক্ষা গ্রহণের প্রথম থেকে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মীতে রূপান্তর হয় এবং উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে কর্মী সম্পদে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষম জনশক্তির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য গুনগত মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন এবং আরো প্রয়োজন সরকারী প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা।
বর্তমান পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পণ্য উৎপাদন, অপারেশন থিয়েটার এর কাজ ও আইনি সেবা পর্যন্ত দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতির কতটুকু দেখতে হবে। পৃথিবীর বড় বড় জায়ান্টরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্যের বা সেবায় উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়েছে ও পণ্যের গুণগত মান উন্নত করেছে। এতে করে তাদের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বহুগুণে বেড়েছে প্রবৃদ্ধি।
আমাদের কারিগরি শিক্ষা ও বিশ্ব প্রস্তুতিতে দেখা যায়, জার্মানিতে ১৯৬৯ সালে, সিঙ্গাপুরে ১৯৬০ সালে ও বাংলাদেশে ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলি দ্রুত উন্নতি করলেও আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে কারিগরি শিক্ষার হার ও গুণগত মানের দিক দিয়ে অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী আমাদেও দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ হাজার ৬৭৫ টি। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়াশোনা করছে।
কারিগরি শিক্ষার হারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছ। আমাদের মাত্র ১৪% শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছে যেখানে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার হার জার্মানিতে ৭৩ শতাংশ, জাপান ৬৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৬৫ শতাংশ, অষ্ট্রেলিয়া ৬০ শতাংশ, চীন ৫৫ শতাংশ,দক্ষিণ কোরিয়া ৫০ শতাংশ, মালেশিয়া ৪৬ শতাংশ। অবশ্য আমাদের বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে একটি দীর্ঘ ময়োদী লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে যা ২০২০ সালে ২০% , ২০৩০ সালে ৩০% এবং ২০৫০ সাল নাগাদ কারিগরি শিক্ষার হার ৫০% এ উন্নীত করার এই লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বাংলাদশে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
শিল্প কলকারখানা ও অফিসে এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে আগামী ১০ বছর অনেক পেশা হারিয়ে যাবে এবং তৈরি হবে নতুন কর্মক্ষেত্র। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৮০ কোটি শ্রমকি বর্তমান চাকুরি হারাবে। স্বভাবত আমাদের মতো শ্রম নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো বিপদে পড়বে। আমাদের দক্ষতাবিহীন সনদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাড়াবে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের এই কথায় জানান দেয়। প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণ তরুণী বেকারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
বর্তমানে আমাদেরকে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষাকে বিস্তৃত করতে হবে। এখনকার প্রতিষ্ঠিত সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র হিসাবে পূর্ণগঠন করতে হবে। অন্যথায় দেশের শ্রমবাজার আয় বৈষম্য তৈরি হবে। মুষ্টিমেয় কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন লোক অনেক বেশি আয় করবে আর অন্য শ্রমজীবীরা জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় আয়ের ব্যবস্থা করতে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হবে।
সরকার দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। আর এখানে প্রচুর কারিগরি ভাবে দক্ষ শ্রমিকরে প্রয়োজন হচ্ছে। এই সঙ্গে রেমিটেন্স যোদ্ধাদেরকে বিদেশে পাঠানোর আগে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের রমেটিন্সে প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ। যা জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্কসহ সবাইকে এক হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি মনেপ্রাণে অনুধাবন র্পূবক কারগিরি শক্ষিার উন্নয়নরে জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ খাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদরেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখে পড়তে হবে।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল এবং আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার, লজিস্টিকস এবং ওয়্যারহাউজিং, অটোমটিভ এবং কিছু সেবাখাত এরই মধ্যে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এআই ব্যবহার করছে। এছাড়া কিছু নন-ট্র্যাডিশনাল খাত যেমন; ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, কনস্ট্রাকশন, প্লাস্টিক এবং প্যাকেজিং, এফএমসিজি, ডিফেন্স এবং সিকিউরিটি, ফার্নিচার শিল্প এরই মধ্যে এআই সহায়ক রোবট ব্যবহার করছে।
এসব খাত তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণমান বজায় রাখতে, নির্ভুলতা বা প্রিসিসন, রিপিটিটিভ উৎপাদনে সময় কমিয়ে আনার জন্য এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়তি বিনিয়োগ করছে। সর্বোপরি রফতানি সক্ষমতা এবং ক্রেতার নির্দেশনা মেনে চলতে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু বর্তমানে তাদের জন্য অনেকটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে।
উন্নততর প্রযুক্তি গ্রহণের লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন বিশেষভাবে জরুরি। ফাইভজি নেটওয়ার্কের গুরুত্বের বিষয়ে বলা হচ্ছে তবে ফাইভজি কাভারেজের আগে আমাদের ফোরজি নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার জন্য ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি সবচেয়ে জরুরি এবং আমাদের প্রয়োজন নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী কানেক্টিভিটি, যা ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে জরুরি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের হাই-টেক ও আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষমতা রয়েছে। রোবোটিকস খাতের বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনায় বাংলাদেশ রোবোটিকস অ্যাসেম্বলিং খাতে মনোনিবেশ করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং হাই-এন্ড প্রোগ্রামিং প্রযুক্তির বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, পড়াশোনার কাজে ৯৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২.৬ শতাংশের মনোযোগ হারিয়ে যায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী আসক্তি অনুভব করে। ৩০.৪ শতাংশ ঘুম না হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছে। আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ধৈর্যশক্তির হ্রাস ঘটার তথ্য এসেছে।
স্কুল ইন ক্লাউডে প্রথমে একটি স্কুলকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে এখানে ভালো ভালো শিক্ষকের লেকচার আপলোড করা যেতে পারে। এই লেকচারগুলো অন্য শিক্ষকরা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারেন অথবা তারা নতুন করে তৈরি করতে পারেন। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তাও এর মধ্যে থাকবে। এর ফলে খুব সহজে অনেক বেশি শিক্ষককে এই স্কুল ইন ক্লাউডের মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরাও জড়িত থাকবে। তারা লেকচারগুলো দেখবে, তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে, অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করবে। আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। মোটকথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আগামী প্রজন্ম স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। শিক্ষা বিভাগকে কম গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট নাগরিক তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। সে কারণে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে চাই স্মার্ট স্কুল।
স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউডনির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হবে না। শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, স্কুল ইন ক্লাউড, দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত, রিজিওয়াল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ছবি-ইনটারনেট
Feedback:[email protected]
০ টি মন্তব্য