ইন্সটাগ্রাম প্রদত্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১.৭০৪ বিলিয়ন ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছেন। সময়ের সাথে সাথে ফটো শেয়ারিং অ্যাপ থেকে বিজনেস প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে ইনস্টাগ্রাম। অনেক ব্যবসা ও পাবলিক ফিগার ইনস্টাগ্রাম থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে অর্থ আয় করছেন।
এসব তথ্য শুনে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারেঃ ইন্সটাগ্রাম থেকে কিভাবে আয় করা যায়? আপনি কি ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করতে পারবেন? ইন্সটাগ্রাম থেকে আসলেই কি আয় করা সম্ভব?
ইন্সটাগ্রাম এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে আসলে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি আয়ের ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর। ইনস্টাগ্রাম সম্পর্কে কিছু তথ্য জানি চলুন।
- প্রতি মাসে ইন্সটাগ্রাম এর অ্যাকটিভ ইউজার সংখ্যা ১ বিলিয়ন
- ৫০০ মিলিয়নের অধিক ব্যবহারকারী প্রতিদিন অন্তত একটি স্টোরি পোস্ট করে থাকেন
- যুক্তরাষ্ট্রের ৭১ শতাংশ ব্যবসা ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং এর অংশ হিসেবে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে
- মোট অ্যাকটিভ ইউজার সংখ্যার অর্ধেক কমপক্ষে একটি বিজনেস অ্যাকাউন্টকে ফলো করে
- প্রতি মাসে ২ মিলিয়ন এডভার্টাইজার তাদের বিজ্ঞাপন ইন্সটাগ্রামে দেখিয়ে থাকেন
- প্রতি বছর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশ বাড়ছে
- বেশিরভাগ ব্র্যান্ড ফেসবুক থেকে ইন্সটাগ্রামে ৪ গুণ এনগেজমেন্ট পেয়ে থাকে
- ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারী ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারের সময় কোনো প্রোডাক্ট ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে
- ৭১ শতাংশের অধিক ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম, যা তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি ব্র্যান্ডের জন্য ইন্সটাগ্রামকে আদর্শ প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে।
উল্লিখিত পরিসংখ্যান দেখে এটি নিশ্চিতভাবে বলা আয় যে, কেউ চাইলে ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় করতে পারে। ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় করার উপায়সমুহ জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় শুরুর আগে প্রয়োজনীয় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করার আগে
ইন্সটাগ্রাম যেহেতু একটি অ্যাপ, তাই এটি ব্যবহার করে আয়ের উদ্দেশ্যে তৈরী একাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় করার আগেঃ
- পারসোনাল ও বিজনেস অ্যাকাউন্টের মধ্যে পার্থক্য জানুন ও কোনটি আপনার অধিক কাজে দিবে তা ঠিক করুন
- আপনার প্রোডাক্ট ক্যাটালগ ইন্সটাগ্রাম শপ এ যুক্ত করার মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট কেনার পথ ক্রেতাদের জন্য সহজ করে দিন
- শপিফাই এর মত থার্ড পার্টি ইন্টিগ্রেশন টুল এর ব্যবহার করে ইন্সটাগ্রাম ই-কমার্স সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করুন
- ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করার আগে পোস্টের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে জেনে নিন
- ইন্সটাগ্রাম যেহেতু ছবিভিত্তিক একটি সোশ্যাল মিডিয়া, তাই ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ইন্সটাগ্রাম এর বিল্ট-ইন এডিটর এর ব্যবহার আয়ত্ত করুন
- স্টোরি ফিচারটি ইন্সটাগ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় ফিচার, এর যথাযথ ব্যবহার শিখুন
- ট্রেন্ডের সাথে মিল রেখে চলতে ভাইরাল নিউজের উপর ভিত্তি করে পোস্ট তৈরী করুন
- নিয়মিত যথাযথ ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ এর সহিত পোস্ট করুন।
ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় করার উপায়
আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হন, সেক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম থেকে আয়ের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধা পাবেন। এবার জানি চলুন ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় করার কার্যকর ৫টি উপায়।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করে ইনস্টাগ্রাম থেকে আয়
ইন্সটাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং’কে আয়ের সবচেয়ে সেরা মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। আপনার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি যদি ইনফ্লুয়েন্সার স্ট্যাটাস অর্জনে সক্ষম হোন, সেক্ষেত্রে যেকোনো পণ্য বা ব্র্যান্ডকে সহজেই প্রোমোট করতে পারবেন।
আপনি জেনে না থাকলে বলি, ইনফ্লুয়েন্সার হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিয়মিত পোস্ট করে সম্মান ও ফলোয়ার অর্জন করেছেন। ইনফ্লুয়েন্সারদের ভালো ফলোয়িং থাকায় তারা তাদের অডিয়েন্সকে কোনো প্রোডাক্ট কিনতে বা সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করতে পারে।
ইনফ্লুয়েন্সারদের এই অলৌকিক শক্তির পেছনে মূল কার্যকরী শক্তি হলো সময়ের সাথে সাথে অডিয়েন্সের সাথে তৈরী হওয়া সুসম্পর্ক ও অডিয়েন্সের মনে জমা উক্ত ইনফ্লুয়েন্সার এর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব।
নিজেদের ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রচারে স্পন্সরড পোস্টের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যোগাযোগ করে ব্র্যান্ডসমুহ। তবে ব্র্যান্ডের কাছ থেকে স্পন্সরড পোস্টের প্রস্তাব পেতে প্রথমেই ইন্সটাগ্রাম এর ফলোয়ার বাড়াতে হয় ও যথাযথ এনগেজমেন্ট থাকতে হয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ইনস্টাগ্রাম থেকে আয়
ইন্সটাগ্রামে অন্যদের প্রোডাক্ট প্রোমোট বা সেল করে বিক্রিত হওয়া প্রোডাক্ট এর অর্থের শেয়ার থেকে আয় করা সম্ভব। আয়ের এই উপায়টিকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
ইনফ্লুয়েন্সার ও অ্যাফিলিয়েট এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইনফ্লুয়েন্সার শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের অনুরোধে স্পন্সরড পোস্ট করে থাকে। অন্যদিকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট এর সেল বা লিড জেনারেট করতে কাজ করে।
অর্থাৎ ইনফ্লুয়েন্সার এর কাজ হচ্ছে তার অডিয়েন্সকে কোনো প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানানো। অন্যদিকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে একজন অ্যাফিলিয়েট সরাসরি প্রোডাক্ট বিক্রির দিকে অডিয়েন্সকে প্রভাবিত করেন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট
আপনি নিজে যদি একজন ইনফ্লুয়েন্সার হতে না চান কিন্তু আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কোনো ব্র্যান্ড, পাবলিক ফিগার বা ইনফ্লুয়েন্সার এর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেও আয় করতে পারেন।
স্পন্সরশিপ রিকুয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এড রান করা, ফেক ফলোয়ার আইডেন্টিফাই করার মত বিভিন্ন কাজে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এসব কাজে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাহায্য করতে পারেন ও তার বিনিময়ে অর্থ চার্জ করতে পারেন। ফাইভার ও আপওয়ার্ক এ এই ধরণের প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
আপনি যদি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু না হয়েও ইনস্টাগ্রাম মার্কেটং স্কিলস প্র্যাকটিস করতে চান, সেক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন।
ফটোগ্রাফি করে ইন্সটাগ্রাম থেকে আয়
ইন্সটাগ্রাম এর মূল প্রাণ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিতে পোস্ট করা ফটো ও ভিডিওসমুহ। আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে ইন্সটাগ্রাম আপনার আয়ের মাধ্যম হতে পারে।
অনেক ইন্সটাগ্রাম ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্টের প্রফেশনাল ছবি ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করার জন্য ফটোগ্রাফার এর খোঁজ করে থাকে। এছাড়াও আপনি চাইলে কোনো ব্র্যান্ডের সাথে আপনার প্রপোজাল নিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।
এছাড়াও ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রায় সময় ফটোশুট এর প্রয়োজন হয়। ইনফ্লুয়েন্সারদের ফটোশুট করেও ভালো অর্থ আয় সম্ভব। এভাবে আয়ের পাশাপাশি আপনার ফটোগ্রাফি পোর্টফোলিও তৈরী করতে পারলে ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে বেশি সময় লাগবেনা।
নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইন্সটাগ্রাম থেকে ইনকাম
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি প্রচুর মানুষ ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেই কোনো প্রোডাক্ট খুঁজে পায়। আবার এর মধ্যে বিশাল একটি অংশ উক্ত প্রোডাক্ট কিনেও থাকে। তাই ইন্সটাগ্রামে নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করা শুরু করতে পারেন।
ইনস্টাগ্রাম শপ ফিচার ব্যবহার করে আপনার ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আপনার প্রোডাক্টসমূহ প্রদর্শন করতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো পোস্টে আপনার প্রোডাক্ট থাকলে তা ট্যাগ করার সুবিধা রয়েছে। এই ট্যাগে ক্লিক করলে ব্যবহারকারীরা সরাসরি আপনার প্রোডাক্ট কিনতে পারবে।
তবে নিজের প্রোডাক্ট ইন্সটাগ্রামে বিক্রির ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কোনো ফিজিক্যাল প্লেসে আপনার প্রোডাক্টসমূহ স্টোর করতে হবে। এরপর প্রোডাক্টসমূহের আকর্ষণীয় ছবি ইন্সটাগ্রামে আপলোড করুন প্রোডাক্ট ট্যাগ করে। এভাবে আপনার ফলোয়ারগণ আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবে।
০ টি মন্তব্য