শিশুদের অংশগহণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তিনদিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এ মেলা উদ্বোধন করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এখন ডিজিটাল কানেকটিভিটি পৌঁছে গেছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় ৭১ ভাগ মানুষের কাছে এখন ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে গেছে। মোবাইল এনালগ থেকে স্মার্ট করা হয়েছে।
সারাদেশে বিস্তৃ নেটওয়ার্কের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, ২০২১ সালে ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ আর আগামী ২১০০ এ ডেল্টা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যেই সরকারের এই প্রযুক্তি এবং কানেকটিভিটির মহাসড়কে পা রাখলো। আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণেই এই ডিজিটাল সংযোগের বিকল্প নেই।
স্মার্ট বাংলাদেশের ‘স্মার্ট’ রূপকল্প তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আমাদের সামনে উপস্থিত শিশু, যাদের বয়স এখন ১৫-১৬, তারা মানবিক ও উন্নত সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এখানে স্মার্টনেস অর্থ হবে টিকে থকার জন্য সফট স্কিল অর্জন, প্রবলেম সলভিং দক্ষতা। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিকরা কাজে হবেন সৎ, মানবিক, পরমত সহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক ও সৃজনশীল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালি জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে আগামির প্রজন্মের ওপর। কারণ সবধরণের আধুনিক প্রযুক্তিলভ্য জ্ঞান তাদের কাছে আছে। ১৯৯২ সালে সাবমেরিন ক্যাবল গ্রহণ না করা আমরা প্রযুক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য পজিটিভ দিক হলো আমাদের তরুণের সংখ্যা বেশি। ইউরোপ আমেরিকার সমস্যা হলো তাদের ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট নেই। শিক্ষার আমুল পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির সাথে সমন্বয়ের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো সুবিধা হলো আউটসোসিংয়ে আমাদের তরুণরা খুব ভালো করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এসব আধুনিক প্রযুক্তি রোবটিক্স উন্নত সেবা ব্যবস্থা অ্যাপ নির্মাণসহ অসংখ্য কাজে ডিজিটাল সংযোগ দেশকে অনেকদুরে এগিয়ে নেবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহকেন্দ্রের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১১টি দেশের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিস সবধরণের যোগাযোগ হয়ে উঠেছে আরো সহজ মাত্র একটি স্মার্টফোন ও সংযোগের মাধ্যমে।এখন হাতের মুঠোয় এন্ডয়েড মোবাইলের মাধ্যমে সব বিল পেমেন্ট করা যায়। করোনার সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা খাত এমনকি অফিসও খুব সহজে চলেছে। ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন শপিং হয় ৬ লাখ মাসে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ তরুণদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছে।প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রযুক্তিগত সবধরণের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
আইইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, পেপারলেস সিমলেস এবং ক্যাশলেস কানেকটিভিটি হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। বাংলাদেশের এনালগ প্রযুক্তি থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে; এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গ্রামে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে আমরা প্রস্তুত। এখন সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রত্যাশা করছি ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মেলার স্টল ঘুরে দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ৫জিসহ সর্বাধুনিক সব ফিচার ও উদ্ভাবন দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলার মূল আয়োজক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বাস্তবায়ন সহযোগী ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। তাদের সাথে থাকছে মোবাইল অপারেটর সংগঠন অ্যামটব। অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং। মেলার টাইটেনিয়াম স্পন্সর হুয়াওয়ে। ডায়মন্ড স্পন্সর জেডটিই করপোরেশন।
মেলায় মুজিব কর্নারে হলোগ্রাফির পাশাপাশি ভিআর হেডসেটে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ঘুরে আসতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ৫জি সুবিধার নানা খুঁটিনাটি তুলে ধর হবে গ্রাহকদের কাছে। ২০টি প্যাভিলিয়ন, ৩২টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৭টি স্টলে আইপিভি সিক্স সহ উচ্চ গতির ইন্টারনেটে বাংলাদেশের ডিজিটাল অভ্যূদয় তুলে ধরবে এক্সিবিটররা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন ও স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে তিন দিনের মেলায় থাকছে মোট ৮টি সেমিনার। ৪টি সেমিনার নিয়ে প্রথম বারের মতো মোবাইল কংগ্রেস করবে চার মোবাইল অপারেটর। মেলা প্রাঙ্গনেই থাকছে ইনোভেশন জোন। সেখানে আইওটি, রোবটিক এবং সম্ভাব্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন তুলে ধরবেন আগামীর দামাল উদ্ভাবকেরা।
১৪টি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ পদক। রচনা, চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, সেরা স্টল এবং সেরা উদ্ভাবকেরা পাবেন ডিজিটিাল বাংলাদেশ মেলা পুরস্কার।
০ টি মন্তব্য