https://gocon.live/

প্রযুক্তি

ডিজিটাল প্রযুুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা

ডিজিটাল প্রযুুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা ডিজিটাল প্রযুুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা
 

ডিজিটাল প্রযুুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা


সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান যে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। আগামী পঞ্চাশ বছরে বাংলা ভাষা কেবল জনসংখ্যার হিসাবেই নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহারের দিক থেকেও বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সহজতর করতে ইতোমধ্যে সরকার ১৫৯ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি টুলস উন্নয়নসহ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ করছে।


তিনি বলেন, বাংলা পৃথিবীর অন্য দশটা ভাষার মতো সাধারণ ভাষা নয়। বাংলা ভাষার শক্তি অনেক সুদৃঢ়। বিশ্বের কোনো ভাষারই এমন কোনো উচ্চারণ নেই যা বাংলা হরফ দিয়ে লেখা যায় না। এমনকি চীনা ভাষায় হাজার হাজার বর্ণ থাকার পরও লেখা যায় না। বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের আগে ডিজিটাল যন্ত্রে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা লেখার কোনো উপায়ই ছিল না। এই সফটওয়্যারে সীসার টাইপের ৪৫৪ বর্ণকে মাত্র ২৬টি বোতামে নিয়ে আসা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের মধ্যে দেশের প্রায় সকল পত্রিকা এবং বইসহ বিভিন্ন প্রকাশনা বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু হয়, এরই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়।


বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করতে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন


এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকেও আধুনিক প্রযুক্তির ভাষা হতে হবে। নইলে বাংলাদেশ বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাবে। বাংলা ভাষাকে এগোতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারিই পারে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে যাওয়ার সেই উদ্দীপনা দিতে। ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষাবিদদের পাশাপাশি রাষ্ট্র এবং প্রযুক্তিবিদদেরও সক্রিয় হতে হবে। মায়ের ভাষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রযুক্তিমনস্ক সরকার ক্ষমতায়। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও চর্চা এবং ভাষাকে টেকসই করায় বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে উৎসারিত সরকারি কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।


ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যার ও টুলসের ব্যবহার শুরু হলে তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাংলা ভাষাকে বৈশ্বিকরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ডিজিটাল ডিভাইসে আরও ভালোভাবে এবং সহজে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও অনুবাদ সহজ হবে।


যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগে এগিয়ে আছে, তারা সবাই প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার ব্যবহার করছে। চীন আমাদের সামনে বড় উদাহরণ হতে পারে। চীনা ভাষার অক্ষরগুলো অত্যন্ত জটিল, কিন্তু তারা থেমে থাকেনি। প্রযুক্তিতে মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ায় বর্তমানে চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বহু আগেই ৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে আমাদের দেশে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার চর্চা হলেও এ মুহূর্তে বাংলায় ভালো কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের ১৭ কোটির বেশি মোবাইল ফোন, ১৩ কোটিরও বেশি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ কোটির বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে মাতৃভাষায় ভালো ভালো কনটেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হবে। আর তা করা হলে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্ঞানার্জন এবং তথ্য ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে না, মাতৃভাষাকে বাঙালির মাঝে চিরঞ্জীব করতে সহায়তা করবে।


ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান নিয়ে অংশীজনের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সংলাপ ও নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচনায় বেরিয়ে আসছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যাটার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম এর ভ‚মিকা রয়েছে। এই কনসোর্টিয়াম  আমাদের ভাষায় এমন জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য না করে তারা আমাদের বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর অনুসারী করে রেখেছে। এতে আমাদের প্রচন্ডরকম ক্ষতি হয়েছে এবং বাঙালিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এ জন্যই এখনো আমাদের নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হয়। অথচ বাংলা বর্ণে কোনো নোক্তা নেই। ইউনিকোড যদি বাংলাকে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলত, তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন ফেস করতে হচ্ছে তা করতে হতো না।


আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে দেয়াল আছে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে নীতি নির্ধারকবৃন্দ উল্লেখ করেন। দেরি করে হলেও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে ২০১০ সালে। তারপরও ইউনিকোড কনভার্শনে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়; এই অপরাধ ইউনিকোডের। তাই এখনো আমরা ইউনিকোডের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাই তাদের মেধা-মনন দিয়ে এই যুদ্ধ জয় করবে বলে সংশ্লিষ্ট ও বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।


ইউনিকোডে বাংলা লিপি ঢ-ঢ়, ড-ড়, য-য়-তে সমস্যা থাকাতে বড় তথ্য (বিগ-ডাটা) বিশ্লেষণ, সার্চ ইঞ্জিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এবং ইন্টারনেট অব থিংসে বেশ সংকট দেখা দিচ্ছে। মুদ্রণ জগতে ইংলিশ লিপির সাথে বাংলা লিপির সাইজের ক্ষেত্রে তারতম্য। বিভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারে বাংলা লিপিতে চন্দ্রবিন্দুর ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট। বাংলা ডাটা মাইনিং এখনো ইন্ডাস্ট্রির সমতুল্য হয়নি। ল্যাংগুয়েজ মডেল করতে দেখা যাচ্ছে বাংলা করপাসে বেশ সমস্যা। বাংলা লিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন নীতি থাকা দরকার। স্পেল চেকার, অভিধান, ওসিআর ইত্যাদিসহ বাংলা লিপি ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলা লিপি নিয়ে এডহক ভিত্তিতে কাজ না করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কয়টি সমস্যা তা চিহ্নিত করে দ্রæত সমাধান করতে হবে। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে আরো সোচ্চার হতে হবে। 


বিশ্বে বাংলা ভাষা-ভাষী সংখ্যা ৩৫ কোটি। ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা। ভাষা কোনো অবস্থাতেই বন্দি জীবনযাপন করে না। আমরা চতুর্থ শিল্পবিল্পবের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছি। এই সময় যদি ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারে সংকট দূর করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা হারাবে।


সংস্কৃতি মানুষের আত্মার কাজ করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রæয়ারিকেন্দ্রিক আমাদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতিবলয় তৈরি হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন। ভাষা আন্দোলনে মুখ্য-চাওয়া ছিল মাতৃভাষা বাংলা টিকিয়ে রাখা। কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। না-হলে মাতৃভাষার আন্দোলনে বিজয় পাওয়ার পরেও আন্দোলন টিকে থাকত না। বলা যেতে পারে, স্বাধীনতা অর্জন করাটাও ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এ দেশের জনগণের ভাষা ছিল সব সময়ই বাংলা। কিন্তু একাত্তরের আগের শাসকদের ভাষা সব সময়ই ছিল অন্য। 


সাতচল্লিশের আগে প্রায় দুইশো বছর ছিল ইংরেজি। তার আগে কখনো সংস্কৃত, কখনো ফারসি বা ইউরোপীয় কোনো এক ভাষার লোকরা এ দেশের জনগণকে শাসন করেছে। আমরা যদি সাতচল্লিশ থেকে ভাষা-আন্দোলন করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হতাম, তাহলে এখনো হয়তো বিদেশি বা ভিন্ন ভাষার লোকরা শাসন করত। 


বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন একটি সম্মানজনক ও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের নাম উচ্চস্বরে ব্যবহৃত হচ্ছে, বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়নের মডেল। নতুন বিশ্বে, বাংলাদেশ নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে আবার দক্ষতার সাথে সফলভাবে সেগুলো মোকাবেলা করছে। এমডিজি বাস্তবায়ন ও এসডিজি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে এখনো রাখছে। জাতীয়তাবাদেও চেতনায় আমাদের সবসময় এগিয়ে যেতে হবে। বাঙালি অতীতে কখনো হারেনি, ভবিষ্যতেও হারবে না। দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতায় আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।


বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে দেশের মানুষকে নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছে, প্রাণ দিতে হয়েছে। আমরাই একমাত্র সাহসী জাতি যারা একটি প্রশিক্ষিত, সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে তাদের পরাজিত করেছি। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ সরকার ১৪ আগস্ট পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষকে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করতে থাকে। মাত্র ৮ শতাংশ উর্দুভাষী মানুষ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করে যেখানে ৫৬ শতাংশেরও বেশি বাংলাভাষী। বাংলার মানুষ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে।


রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার জাতীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এমন উদাহরণ বিশ্বে বিরল। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন ভাষা আন্দোলনকে বিশ্ব ইতিহাসেরও গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত করে। 


বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে নিজের ভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলায় বক্তৃতা করে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পরিচয় করানো নয়, বাঙালির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বার্তাও পৌঁছে দেন। 


কিন্তু যে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এত আন্দোলন, এত আত্মত্যাগ সেই ভাষা আজ কতটা টেকসই? শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাকে ইংরেজির চেয়ে কঠিন মনে করে। ইংরেজি ভাষার আগ্রাসনের কারণে অনেক দেশের ভাষা-ই এখন অস্তিত্ব সংকটে।


১৯৫২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৭০ বছর হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক বড় বাধার মুখোমুখি হয়েছে, আমরা তা অতিক্রম করেছি এবং আমরা এখনও সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছি এবং যতদিন আমরা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি মনে রাখব ততদিন আমরা ততদিনই অদম্য থাকব। যতদিন আমরা আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মনে রাখব ততদিন বাংলাদেশকে কেউ আটকাতে পারবে না।


আদালতের ইংরেজি রায় অনুবাদ হচ্ছে বাংলায়


দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় দেন। বাংলায় আবেদন দাখিল করেন কোনো কোনো আইনজীবী। শুনানিতে এখন বাংলার ব্যবহার খুব বেশি। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাই কোর্ট) বিভাগের বিচারপতিদের দেওয়া ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। গত বছর  ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে এই এক বছরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল প্রায় ১০০টি ইংরেজি রায় বাংলায় রূপান্তর করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত ‘আমার ভাষা’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। উচ্চ আদালতের ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলছেন আইনজীবীরা। তবে উদ্যোগটি পুরোপুরি সফল করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তারা। ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ সদস্যের টিম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল কাজ করলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ রায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থের কাজেও ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।


যেভাবে কাজ করছে সফটওয়্যারটি : ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারটিতে ইংরেজি রায়ের অনুলিপি প্রথমে আপলোড করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট অপশনে গিয়ে রায় রূপান্তর করা হয়। ২০ পৃষ্ঠার একটি রায় রূপান্তরে সর্বোচ্চ ৪ মিনিট সময় লাগে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল মূল রায়ের সাথে অনুবাদ করা রায়টি মিলিয়ে দেখেন। অনুবাদের খসড়া পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকেও। তিনি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পরই অনূদিত রায় আপলোড করা হয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ‘বাংলায় অনূদিত রায়’ সিগম্যান্টে আপিল বিভাগে ৬টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে ১০টি রায় রয়েছে। 


ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ‘সুভাষ’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইংরেজিতে প্রদত্ত রায় বাংলাসহ ৯টি ভাষায় অনুবাদ করেছে। বাংলাদেশের অনুরোধে ভারতের পক্ষ থেকে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারটি উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করা হয়।


রায় অনুবাদের কার্যক্রমটি প্রশংসনীয় বলেছেন আইনজীবীরা। তবে এ উদ্যোগটি পুরোপুরি সফল করতে হলে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন তারা। উচ্চ আদালতের বিচারপতি, আইনজীবী, বেঞ্চ সহকারী যারা আছেন, তারা দীর্ঘদিন একটি কাঠামোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় কাজ করে আসছেন। তাই চাইলেই খুব দ্রুত উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার পুরোপুরি চালু করা সম্ভব নয়। দেশের একটি বড় অংশের মানুষই ইংরেজি বুঝতে পারেন না। তাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে রায় অনুবাদের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে এটা লোকদেখানো হলে হবে না, সাধারণ মানুষ যেন আসলেই উপকৃত হয় সেভাবেই কাজ করতে হবে। রায় প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদেরও অনুবাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।


জাতিসংঘে বাংলা যুক্ত করতে বড় বাধা বিপুল খরচ


জাতিসংঘে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে এখনই সংযুক্ত করতে যাচ্ছে না বাংলাদেশ। দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে যুক্ত করতে প্রায় ৬০ কোটি ডলার খরচ হবে, যা টাকার অঙ্কে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিপুল খরচ এখনই করতে চাইছে না বাংলাদেশ। তবে ভবিষ্যতে খরচ বহন করতে পারলে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে যুক্ত করা হবে।


এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘যে অনুভ‚তি থেকে বিষয়টি একজন বাঙালি হিসেবে আমারও একই প্রত্যাশা করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর আগে যে ভাষা সংযুক্ত হয়েছে, সেখানে কিন্তু ভাষা সংযুক্ত হলে যাবতীয় খরচ সেই রাষ্ট্রকে দিতে হয়। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে যুক্ত করতে হলে বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। এ খরচ যুক্তিপূর্ণ হবে কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। একদিন আমরা এ খরচ বহন করতে পারব। সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে।’


জনসংখ্যা ও ব্যবহারের দিক থেকে বাংলা ভাষার অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। বিশ্বে তিনটি দেশের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বাংলা। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত ও সিরেয়া লিওন।


বর্তমানে জাতিসংঘে মোট ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে ইংরেজি, চীনা, রুশ, স্প্যানিশ, ফরাসি ও আরবি। ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও চীনা ভাষা ১৯৪৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। অন্যদিকে রুশ ও স্প্যানিশ ভাষা নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে স্থান পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২২ জানুয়ারি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। চীনাদের ভাষা নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় ১৯৭৪ সাল থেকে। সর্বশেষে আরবি ভাষা জাতিসংঘের ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষার তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৩ সালে। আর এটি নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয় ২১ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে।


ডিজিটাল বাংলা ভাষার প্রকল্প 


তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সরকারের আইসিটি বিভাগ। ১৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য ১৬টি সফটওয়্যার, টুলস বা উপাদান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় আইসিটি বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।


কথা ছিল, তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শেষ হবে ২০১৯ সালে। কিন্তু দুই দফা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এ প্রকল্প এখন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২০২৪ সালে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধযুগ পেরোতে চললেও ১৬টি টুলের মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে মাত্র একটি। প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বাংলা ভাষাভিত্তিক এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে।


আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃস্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে অভিযোজন করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয় আইসিটি বিভাগ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে ১৬টি টুল উন্নয়নের কথা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলা করপাস, বাংলা থেকে পৃথিবীর প্রধান ১০টি ভাষায় স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক, বাংলা ওসিআর (টাইপ করা ও হাতের লেখা স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ও কম্পোজ), কথা থেকে লেখা ও লেখা থেকে কথায় রূপান্তর সফটওয়্যার, জাতীয় কিবোর্ড (বাংলা), বাংলা ফন্ট রূপান্তর ইঞ্জিন, বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধক, স্টিক্রন রিডার (লিখিত টেক্সট স্বয়ংক্রিয় পড়ে শোনানোর সফটওয়্যার), অনুভ‚তি বিশ্লেষণ সফটওয়্যার এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য কিবোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মুখে উচ্চারিত বাংলা ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পোজ করা যাবে, লিখিত টেক্সট কমপিউটার ডিভাইস পড়ে শোনাবে, মুদ্রিত বই দলিল দ্রুত সফটকপিতে রূপান্তর হবে, বাংলা ভাষায় সঠিক যান্ত্রিক অনুবাদ পাওয়া যাবে এবং এ ভাষার বিশাল মৌখিক ও লিখিত অনুবাদ (করপাস) গড়ে উঠবে। এ কার্যক্রমে উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স সমর্থিত ৯টিরও বেশি সফটওয়্যার, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সমর্থিত সাতটিরও বেশি অ্যাপস ডেভেলপ করার কথা রয়েছে। টুলগুলো ডেভেলপের মাধ্যমে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি পেতে চেষ্টা চালাবে সরকার।


এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত অবমুক্ত হয়েছে মাত্র একটি টুল। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষায় উচ্চারিত রূপকে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে লেখার জন্য ‘বাংলা টু আইপিএ অটোমেটিক কনভার্টার’ শীর্ষক এ টুল উন্মোচন করা হয়। অনুভূতি বিশ্নেষণে সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস সফটওয়্যারের ডেমো (পরীক্ষামূলক সংস্করণ) উন্মোচন করা হবে। মার্চে উন্মোচন করা হবে বাংলা ওসিআর এবং জুনে বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধকের ডেমো।


এদিকে প্রকল্প নেওয়ার পর বাংলা ভার্চুয়াল সহকারী টুলটি উপযোগিতা হারিয়েছে। এর পরিবর্তে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহৃত বাংলা সাইটগুলো আন্তর্জাতিক ভাষায় রূপান্তর টুল উন্নয়ন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যেই যদি কোনো টুল তার উপযোগিতা হারায়, তবে তা চূড়ান্ত অদূরদর্শিতা। গুগলের অনুবাদক সফটওয়্যারের (গুগল ট্রান্সলেটর) মতো টুলগুলো ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখন গুগল ট্রান্সলেটরে বিভিন্ন ভাষা থেকেই বাংলা ভাষায় মোটামুটি ভালো মানের অনুবাদ মিলছে। সামনে যে আরও টুল তার উপযোগিতা হারাবে না, তার গ্যারান্টি  নেই বলছেন পর্যবেক্ষকরা।


১৩টি টুলস ডেভেলপমেন্টে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছে আইসিটি বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রিভ সিস্টেমস ও ই-জেনারেশন এককভাবে তিনটি করে, রিভ সিস্টেমস অপূর্ব টেকনোলজিসের সাথে যৌথভাবে একটি, গিগাটেক, টিম ইঞ্জিন ও বেক্সিমকো কমপিউটার যৌথভাবে দুটি, সেমস জেনওয়েবটু, ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ ও টিটিটি লিমিটেড একটি করে টুল উন্নয়নের কাজ পেয়েছে। গিগাটেক ও বেক্সিমকোর সাথে একটি টুল উন্নয়নে ড্রিম ডোর এবং অন্যটি উন্নয়নে সিসটেক কাজ করছে। সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম, বাংলা চ্যাটবট ও জাতীয় কিবোর্ডের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় থাকায় এখনও টেন্ডারেই যেতে পারেনি প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা।


মানসম্মত টুল উপহার দিতে প্রকল্পটির সাথে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলা একাডেমি, বেসিস প্রতিনিধিসহ বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। মূলত দেশে বাংলা ভাষা ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। 


আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানি তেমন নেই, যারা এসব টুল উন্নয়নে কাজ করতে পারে। তবে আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে টুলগুলো উন্নয়ন ও গবেষণার (আরএনডি) কাজ করেছি। ২০২৪ সালের আগেই টুলগুলো উন্মোচন করতে চাই।


ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আইসিটি বিভাগে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এ প্রকল্পকেই আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। তবে দেশে যেসব সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে, তাদের বাংলা ভাষা নিয়ে কাজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এ কারণেই সম্ভবত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সময় লাগছে।’


বাংলা ভাষার অগ্রগতি


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী ও নানা অংশ সংযোজন-বিয়োজন করা হলেও তৃতীয় অনুচ্ছেদে কোনো আঁচড় লাগেনি। ওই অনুচ্ছেদে তিন শব্দে উল্লিখিত বাক্য ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ প্রথম থেকেই বিদ্যমান। এ নিয়ে কারো কোনো বিরোধিতা নেই। এ বিষয়ে কোনো সংশোধনীর প্রস্তাবনা নেই। বাংলা ভাষার প্রকাশ্য কোনো শত্রুও নেই। 


বাংলাদেশে প্রযুক্তির ভাষা ইংরেজি, প্রযুক্তি শিক্ষার ভাষাও ইংরেজি। দেশের প্রযুক্তিবিদ, ব্যবস্থাপকরাও কার্যক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহার করেন। অধিকাংশ এখনো ইংরেজিনিষ্ঠ। ইংরেজিই তাদের শিক্ষা, আভিজাত্য ও যোগ্যতার মানদন্ড। ইংরেজিতেই অনেকের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষিত হয় বলে ইংরেজি ব্যবহারেই তারা বেশি উৎসাহ বোধ করেন। 


১৯৮৭ সালে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ এবং ২০১২ ও ২০১৪ সালে সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন, বেতার-দূরদর্শনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণরোধে হাইকোর্টের রুল জারির কার্যকর ফলাফলের তেমন কোনো দৃষ্টান্তও স্থাপিত হয়নি।


জাপানিরা জনসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের ভাষার ব্যবহার আবশ্যিক করেছে। চীনের ভাষার মধ্যে কোনো বিদেশি ভাষার শব্দ-বাক্য মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না বলে সে দেশের সরকার আইন করেছে। আমাদেরও বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা ও বিস্তারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 


ইংরেজি ভাষার যেমন একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যবহারবিধি আছে, বাংলা ভাষায় সেই ব্যবহারবিধি ভেঙে গেছে। যার যেমন খুশি বাংলা লিখছেন। লন্ডনে আশির দশকে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল স্কুলে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছিলেন। এই মঞ্জুরি এখন তারা বাতিল করে দিয়েছেন। কারণ বাংলায় শিক্ষালাভের জন্য কোনো ছাত্র পাওয়া যায় না। এই ছাত্র না পাওয়ার একটা বড় কারণ বাংলা ব্যাবহারিক ভাষা নয়। 


আমরা ভাষা দিবস নিয়ে উৎসব করি। ভাষা সংস্কারে মন দিইনি। বাংলা ভাষার আগে টার্কিশ, পতুর্গিজ, ইংলিশ ভাষা থেকে দেদার শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলা ভাষার গ্রহণী শক্তি এই নবপ্রযুক্তির যুগেও অব্যাহত আছে। দরকার মুনীর চৌধুরী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠপুস্তকে তার ব্যবহার এবং জনজীবনেও তার ব্যবহার নিশ্চিত করা। 


মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি? জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেস্কো বলছে ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।


নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।


গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।


প্রযুক্তিতে পিছিয়ে, উচ্চশিক্ষায় অবহেলিত বাংলা ভাষা


রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে, আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার চলছে। অন্যদিকে ইংরেজি-ফরাসি-হিন্দির দৌরাত্ম্যে হুমকির মুখে বাংলা। নেই প্রমিত বাংলার চর্চা। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে এক জগাখিচুড়ি ভাষার চর্চা চলছে যত্রতত্র। এজন্য ৫০ বছরেও ভাষানীতি না হওয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।


গবেষকদের মতে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বিজয়, বিশ্ববাঙালি সত্যজিৎ রায়ের অস্কার পুরস্কার, বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের বোসন কণা, আচার্য জগদীশ বসুর গাছের প্রাণ আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে বাঙালিকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এসব প্রাপ্তির ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বড় অর্জন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাঙালিরা সারা বিশ্বে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর ধারাবাহিকতায় একাত্তরে বিজয় অর্জন, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।


তবে ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর আর বিজয়ের ৫০ বছর পরও ভাষানীতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ গবেষকরা। তাদের মতে, ভাষানীতির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রমিত বাংলা। স্বপ্নই রয়ে গেছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর স্বপ্ন। হুমকির মুখে ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর ভাষা। 


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিকবার তাগিদ সত্তে¡ও উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দেয়ার বিষয়টি চলছে সীমিত পরিসরে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রায় সব কার্যক্রম চলে ইংরেজিতে। বাংলায় প্রেসক্রিপশন লেখা হয় না। বাংলায় কোনো বাণিজ্যিক ও ক‚টনৈতিক চিঠি লেখা হয় না। গবেষকদের মতে, বাংলাকে ব্যবহারিক ভাষা করে তুলতে না পারলে এই ভাষা শুধু সাহিত্যের ভাষা হয়ে থাকবে। ইংরেজি, ফরাসি ইত্যাদি ভাষার মতো বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাচর্চার ভাষা করে তুলতে হবে। বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষাদানের জন্য গবেষণার পাশাপাশি আন্দোলনও দরকার। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান মাতৃভাষায়। কিছু প্রতিশব্দ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি রাখা হয়েছে। অনেক প্রতিশব্দ বাংলায় নেই। 


শিক্ষার সব দরজা খোলা থাকবে কিন্তু চর্চাটা হতে হবে মাতৃভাষায়। বিজ্ঞান ও কারিগরি চর্চার নতুন নতুন শব্দ আহরণ করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থ রচনার উপযোগী করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে লেখক-সাহিত্যিকদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে।


প্রযুক্তিতে পিছিয়ে বাংলা ভাষা : গবেষকদের মতে, প্রযুক্তির যুগে বাংলাকেও আধুনিক প্রযুক্তির ভাষা হতে হবে। বাংলা ভাষা এদিক দিয়ে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। ফলে বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাচ্ছে রক্তে কেনা এই ভাষা। সময়ের অতি প্রয়োজনীয় কিছু টুলস, যেমন স্বয়ংক্রিয় চ্যাটবট, ভার্চুয়াল সহকারী, স্বয়ংক্রিয় পাঠক, স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক, কথা থেকে লেখা, লেখা থেকে কথা এগুলো এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার জন্য ভালো মানের পাওয়া যায় না। ফলে আমাদের নিজেদের কাছেই এই ভাষার ব্যবহার এবং গুরুত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং সাথে ৩৫ কোটি মানুষের এ ভাষা সর্বজনীন হচ্ছে না। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরো বাড়বে সবার আশা।


ভাষা নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ইথনোলগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ কথা বলেন এই ভাষায়। মাতৃভাষা হিসেবে ইংরেজির অবস্থান তৃতীয়। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্বভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে এর অবস্থান সপ্তম। বহুল ব্যবহৃত ভাষার তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ম্যান্দারিন (চীনা), হিন্দি, স্প্যানিশ ও ফরাসি।


ভাষার প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার বিশ্বায়নের যুগে ব্যাপক হুমকির মুখে বাংলা ভাষা। অথচ সংশ্লিষ্টরা শীতনিদ্রা যাপন করছেন। বিশ্বায়নের যুগে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। ইংরেজি ও চায়নিজ ভাষার কাছে মার খাচ্ছে। দলে দলে শিক্ষার্থী চীন যাচ্ছে। সেখানে ম্যান্দারিন শিখছে। চীনারা ভাষা নিয়ে বাণিজ্য করছে। তারা এগিয়ে যাচ্ছে। ভাষাকে অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে না পারলে ভাষা হুমকির মুখে পড়ে তার উদাহরণ বাংলা ভাষা। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তাদের অর্জনটা কী?


এদিকে বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, আন্দামান-নিকোবর, ধানবাদ, মানভ‚ম, সাঁওতাল পরগনা প্রভৃতি এলাকায়ও বাংলার প্রচলন রয়েছে। নেপাল, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি ইত্যাদি দেশে বিপুল পরিমাণ বাংলাভাষী প্রবাসী রয়েছেন। একসময় শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষায় গবেষণাকর্ম পরিচালিত হতো। বর্তমানে নিউইয়র্ক, ইথাকা, শিকাগো, মিনেসোটা, ফ্লোরিডা, মেরিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপান, চীন, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার গবেষণাকেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষার আলাদা চ্যানেল রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৬টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন ও বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। বাংলা ভাষায় যুক্তরাজ্য থেকে মোট ১২টি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। বেতার বাংলা নামে সেখানে একটি বাংলা বেতার স্টেশন রয়েছে। 


বিশ্ববাজার কিংবা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাংলা ভাষা মোটেই হুমকির মুখে নয়। বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং পারিবারিকভাবে বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে। 


বিশ্বায়নের সাথে বাংলা ভাষা হুমকির মুখে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বায়নের ফলে ভাষাকে জীবন্ত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বায়ান্নতে শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মানেই বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার দিবস। বিশ্বায়নের ফলেই এই গৌরব অর্জনের সুযোগ হয়েছে। এখন বিশ্বের বুক থেকে বাংলা ভাষাকে হারানোর আর সুযোগ নেই। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল আমাদের বাংলা একাডেমি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলা একাডেমি যেসব কাজ করে চলছে, তা হলো জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, লালন ও প্রসার; বাংলা ভাষার প্রামাণ্য অভিধান, পরিভাষা ও ব্যাকরণ রচনা, রেফারেন্স গ্রন্থ, গ্রন্থপঞ্জি এবং বিশ্বকোষ প্রণয়ন, প্রকাশন ও সহজলভ্যকরণ; বাংলা শব্দের প্রমিত বানান ও উচ্চারণ নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানো, বাংলা ভাষায় উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা ও গবেষণা, আন্তর্জাতিক পরিমÐল বাংলা সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বাংলা সাহিত্যকর্মের অনুবাদ, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী তথা সব পর্যায়ের গণকর্মচারীদের বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন, বাংলা বানানরীতি ও ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা, সাহিত্য পুরস্কার দেয়া, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন এবং ফেলো, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বহির্বিশ্বে প্রচার ও পরিচিতকরণের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি কাজ করছে।


বিজয়ের ৫০ বছরেও হয়নি ভাষানীতি। ফলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও উচ্চ আদালত, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোয় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষাকে গুরুত্বহীন করে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব পাচ্ছে ইংরেজি ও আরবি ভাষা। আবার বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিই প্রণীত হয়েছে সম্পূর্ণ ইংরেজি ভাষায়। একইভাবে ভাষানীতি না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা।


এখনো ভাষানীতি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমারে ভাষা কমিশন রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরও আমরা ভাষানীতি করতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। ভাষানীতি হলে ভাষার প্রতি সবাই যত্নশীল হবে, ভাষা নিয়ে গবেষণা বাড়বে।









০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।