চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও অর্থনৈতিক মুক্তি
কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একাধিক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২২ সালে। দ্রুতগতিতে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প ও ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই ১০ মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের ১০ মেগা প্রকল্প হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ। এসব প্রকল্পের কাজ এ বছর শেষ হবে এবং উদ্বোধন করা হবে। আরো একধাপ এগুবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচির মাধ্যমে শহরের সকল সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলসভাবে কাজ করছে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক এ মেগা কর্মসূচির অধীনে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলো লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এছাড়া হাওর, উপক‚লীয় এলাকা, পাহাড়ি এলাকা, চর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল, বিল এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে একটি করে বাকি সাতটি গ্রামকে মডেল গ্রাম করা হচ্ছে। যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট। পরবর্তীতে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক যাত্রার পর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলল। তবে যাত্রী নিয়ে চলবে চলতি বছরের বিজয় দিবস থেকে। ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ৩০ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭০ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার এক মহান নির্মাতা হিসেবে। এ জন্যই বিদেশিরা বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করে থাকেন ‘ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্য নেশন’ হিসেবে। এই দেশের মানুষের স্বপ্নের স্বাধীনতা তিনি উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের আজ নানা ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন! বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে বিশ্বব্যাপী আমাদের যে অবাধ বিচরণ, পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের আজ যে দৃপ্ত পদচারণা তার সবই বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি একটি স্বাধীন দেশ না পেতাম তাহলে আজো পকিস্তানের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতো, নিষ্পেষিত হতে হতো। স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলেই আমরা স্বাধীনভাবে সব কিছু চিন্তা করতে পারি। সমাজ ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমাদের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা বঙ্গবন্ধুর কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। বলা বাহুল্য, এ সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার কল্যাণে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু যে সম্ভাবনার অসীম সেই দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তাই নয়, একই সাথে হতাশাক্লিষ্ট জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ভয়কে জয় করার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রেও দীক্ষিত করেছেন পুরো জাতিকে।
জাতির পিতা জানতেন বাঙালির উন্নতির জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি নাগরিকদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক, সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারের ওপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। বিক্ষুব্ধ উত্তাল সময় পাড়ি দিতে দিতে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও জেল-জুলুম সহ্য করতে করতে সঞ্চারিত যে অভিজ্ঞতা, তার উত্তাপে দাঁড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মাণ করেছেন আমাদের সুন্দর এই মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। কারও কাছে আমরা মাথা নত করব না, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না।’ আমাদের যতটুকু সম্পদ যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বারবার বলেছেন, সেই সম্পদটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা বিশ্বসভায় আমাদের নিজেদের আপন মহিমায় গৌরবান্বিত হব, নিজেদের গড়ে তুলব এবং সারা বিশ্বের কাছে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এটাই হবে এ দেশের মানুষের জন্য সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবেই এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলা আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হবে।
ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিক সেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। ‘এক দেশ এক রেট’ কর্মসূচির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে ৫ হাজার ইউনিয়ন। ৫জি চালু হয়েছে তবে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করবে আরো কিছুদিন পর। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারব। তাহলেই সম্ভব হবে অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে সারা বিশ্ব। সবকিছু যেন হাতের মুঠোয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে পদার্পণ করেছি আমরা। বদলে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা সবকিছুই। সামাজিকতা, অফিস কাঠামো, কৃষি, জীবনযাপন থেকে শুরু করে সবই। কমপিউটার সিস্টেমে কমান্ড দিয়েই মানুষ সবকিছু করছে। আমাদের পুরাতন বিশ্ব ব্যবস্থায় বা ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় শ্রমবাজারের চিন্তা করা হতো তার পরিবর্তন হবে। পরে কয়েকশ মানুষের কাজ হয়তো একটি রোবট করে ফেলবে। কোভিডকালে দীর্ঘ সময়ের মিটিং বা সভার আয়োজন তা আজ আর হচ্ছে না। আমরা জুমে বা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমাদের আলোচনা করে ফেলছি। সময়, শারীরিক উপস্থিতি, বিশাল আয়োজন এসবের প্রয়োজন নেই।
একটি প্রযুক্তি বিপ্লবের সাথে আমরা সময় অতিবাহিত করছি। পরিবর্তন সবসময় অবশ্যম্ভাবী, এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমরা শুরু করেছি। সবকিছুতেই আসছে আমূল পরিবর্তন। ঘরে বসেই বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত করছি আমরা। অনলাইনে অ্যামাজন, আলীবাবা বা রকমারিতে যে পরিমাণ অর্ডার করা হয় তা দেখে আমরা আন্দাজ করতে পারছি ভবিষ্যতে কী হবে। ঘরে বসে অনলাইন বাজারে আমরা পেয়ে যাচ্ছি সব। যে কোনো সেবাও আমরা ক্রয় করতে চাইলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সব পেয়ে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম হয়তো কিছুটা মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে বা নানা রকম প্রতিবন্ধকতায় পড়ছি কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আজকের চিকিৎসা বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রযুক্তির যে ছোঁয়া সবখানে লেগেছে তাতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথেই আমরা দিনাতিপাত করছি।
মানবদেহে জটিল ও ছোট ছোট স্থানে অপারেশগুলো রোবট কত নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করছে। টেলিমেডিসিনের যুগে আমরা। রোবট পরিচালিত হচ্ছে মানুষকে দিয়েই। শ্রমঘন যে ব্যবস্থাপনা তা হয়তো আর থাকবে না তবে এই বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, নানা ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন একদিনে বিশ্বে ২০ হাজার ৭০০ কোটির বেশি ই-মেইল পাঠানো হয়, গুগলে ৪২০ কোটি বিভিন্ন বিষয় বা কনটেন্ট সার্চ করা হয়। ২০০৮ সাল বা ১৪ বছর আগেও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলো ছিল অকল্পনীয়।
কোয়ান্টাম কমপিউটিং পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্নগ্রহে বসতি গড়তে মানুষকে আর মাথা ঘামাতে হবে না; মানুষকে নিরাপদ রাখতে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শক্তিশালী কোয়ান্টাম কমপিউটিং। একবিংশ শতাব্দীতে সবকিছুই বিক্রিযোগ্য। আমরা জানি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজের কোনো ট্যাক্সি নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুকের নিজস্ব কোনো কনটেন্ট নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শপগুলোর একটি আলীবাবার কোনো গুদাম নেই এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রভাইডার এয়ারবিএনবির নিজেদের কোনো রিয়েল এস্টেট নেই। বিশ্বের সবচেয়ে খুদে ইউটিউবার ৫ বছরের রায়ান প্রতি মাসে কেবল তার খেলনাগুলো দিয়ে মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে।
শারীরিক শ্রমের দিন কমছে দ্রুতগতিতে। ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির কারণে সহজ ও দ্রুত সারা বিশ্বের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সামনে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস, যা কিনা সম্পূর্ণরূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগাম ফসল হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষের পরিধেয় বস্ত্র ও ১০ শতাংশ মানুষের চশমার সাথে ইন্টারনেট সংযুক্ত থাকবে। মানুষের শরীরে স্থাপনযোগ্য মোবাইল ফোন ও ৯০ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। আমেরিকায় ১০ শতাংশ গাড়ি হবে চালকবিহীন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় হবে ৩০ শতাংশ করপোরেট অডিট। এমনকি কোম্পানির বোর্ড পরিচালক হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। আমেরিকায় এসে যাবে রোবট ফার্মাসিস্ট। এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, সমাজ, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ওপর যে বিশাল প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন প্রযুক্তিবোদ্ধারা।
ইন্টারনেট অব থিংস, গুগল হোম, অ্যামাজন আলেক্সার কথা শুনেছি যা আপনার ঘরের বাতি, সাউন্ড সিস্টেম, দরজাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার স্মার্ট ফ্রিজ নিজেই ভেতরে কী আছে তা জেনে আপনাকে জানাবে বা নিজেই সরাসরি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিনে ফেলতে পারবে। ক্লাউড কমপিউটিং মানে আপনার কমপিউটারের হার্ডডিস্কের ওপর আর চাপ থাকছে না। যে কোনো স্টোরেজ, সফটওয়্যার ও যাবতীয় অপারেটিং সিস্টেমের কাজ চলে যাচ্ছে হার্ডডিস্কের বাইরে। শুধু ইন্টারনেট থাকলেই ক্লাউড সার্ভারে কানেক্ট হয়েই সব সুবিধা নেওয়া যাবে। কমপিউটিংয়ের সফটওয়্যারগুলো আপনার আপডেট করার প্রয়োজন হবে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হতে থাকবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স কমপিউটার সায়েন্সের উৎকৃষ্টতম উদাহরণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স যে চারটি কাজ মূলত করে তা হলো কথা শুনে চিনতে পারা, নতুন জিনিস শেখা, পরিকল্পনা করা এবং সমস্যার সমাধান করা। আগামীতে মানুষেরই আয়ের পরিমাণ ও জীবনমান বাড়বে। সবকিছু সহজ থেকে সহজতর হবে এবং মানুষ তার জীবনকে বেশি মাত্রায় উপভোগ করবে। এছাড়া পণ্যসেবা উৎপাদন ও বিনিময় প্রক্রিয়াতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য পাঠানোর খরচ অনেক কমে আসবে।
বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক ভালো করেছে। আগামীর প্রযুক্তির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতেও শুরু করেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রে সমানভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও ই-গভর্ন্যান্স, সার্ভিস ডেলিভারি, পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইমপ্লিমেনটেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিকেন্দ্রীকরণ, নগর উন্নয়ন এবং এসডিজি বাস্তবায়ন নীতি ও কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হয়েছে এবং বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েও গেছে।
বাংলাদেশ এখন সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযুক্ত। সারাদেশ কানেক্টিভিটির আওতায় এসেছে। আকাশে স্যাটেলাইট উড়িয়েছে। দ্বিতীয়টির প্রস্তুতি চলছে। ৩৯ অত্যাধুনিক হাইটেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে আগামীর বিশ্বকে বাংলাদেশ জানান দিয়েছেÑ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশও। আমাদের হাইটেক পার্কগুলো হচ্ছে আগামীর সিলিকন ভ্যালি। প্রযুক্তিনির্ভর এসব হাইটেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলায় সব ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের প্রধান সেবাসমূহ বিশেষ করে ভ‚মি নামজারি, জন্মনিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে আবেদন ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। ১০০টি বিশেষায়িত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে টেকসই করতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও উচ্চতর প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত যেমন ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি, অ্যাডভান্স টেকনোলজি, ইনস্ট্রাকশনাল টেকনোলজি, ই-কমার্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাদান, গবেষণা ও জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম অনেক মেধাবী। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমাদের পরিকল্পিত প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ করা। তাই পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের প্রায় ৮ কোটি ১৫-৩৫ বছরের যুবকই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিশাল সম্পদ। বাংলাদেশের মতো এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এবং ডিজিটাল বিপ্লবের ফল একসাথে কাজে লাগানোর সুযোগ খুব কম দেশেরই রয়েছে। ২০২৫ সালের পরে দেশে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব মোকাবিলা করতে আমাদের তরুণরাই সক্ষম হবে। দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠছে আমাদের নতুন প্রজন্ম।
সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন থেকেই উদ্যোগী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা সামনে আসছে। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। সেটার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। এজন্য প্রশিক্ষণটা সাথে সাথে দরকার। কারণ আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে আমরা তার সাথে তাল মিলিয়েই চলব।’
বাংলাদেশ ক্রমাগত বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম চারটি রপ্তানি, আমদানি, বিনিয়োগ ও সাময়িক অভিবাসন। বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি। তাই দেশে বিনিয়োগ (বিদেশি) বৃদ্ধি ও জনশক্তি রপ্তানি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রধান উপায়। বিদেশি বিনিয়োগ দেশে বাড়বে তখনই, যখন দেশে থাকবে পর্যাপ্ত উপকরণ, যেমন খনি বা জমি, পুঁজি কিংবা জনশক্তি। অদক্ষ জনশক্তি বিদেশি বিনিয়োগ ততটা উৎসাহিত করে না। এক্ষেত্রে শুধু শ্রমনির্ভর খাতে বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশ কেবল একটি পণ্যই রফতানি করছে। অথচ যেসব দেশে শ্রমিকের দক্ষতা বেশি, সেসব দেশে বাড়ে বিদেশি বিনিয়োগ। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিদেশে শ্রমিক প্রয়োজন। তবে ক্রমাগত দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে দক্ষ শ্রমিক প্রায় ১০ গুণ বেশি আয় করেন। আর শ্রমিকের দক্ষতা নির্ভর করে শিক্ষার মানের ওপর। তাই শিক্ষার মান পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। গতানুগতিক চিন্তার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩১ সালে বাংলাদেশে এমন কেউ থাকবে না যাকে অত্যন্ত দরিদ্র বলা যাবে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচক উন্নয়নশীল দেশগুলোর যোগ্যতা নির্ধারণ করে। এই তিনটি সূচকে বাংলাদেশ প্রায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করেছে। কোভিড-১৯-এর মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২৫৫৪ অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে যা গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। নারীরা এখন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল স্তরে অবদান রাখছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রামাঞ্চলের নারীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও এগিয়ে চলেছেন পুরুষের সাথে সমানতালে। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আজকের তরুণরাই আগামীর কর্ণধার। তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কলা ও গণিত (স্টিম) শিক্ষা ব্যাপকভাবে চালু করা হচ্ছে। সমসাময়িক বিশ্বে ক্যারিয়ারভিত্তিক শিক্ষা অপরিহার্য। রাষ্ট্রকে অবশ্যই তরুণদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, আকাক্সক্ষা এবং মতামতের যথাযথ মূল্য দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্জনের জন্য চারটি মাইলফলক নির্ধারণ করেছেন। প্রথমটি ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প, দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান।
সকল নাগরিককে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত (এসডিজি-১ দারিদ্র্য অবসান এবং এসডিজি-২, জিরো হাঙ্গার অর্জন) একটি উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। বাংলাদেশের সম্পদ সীমিত, ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা বেশি। তা সত্তে¡ও বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ অর্থনীতি গত বছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছে। এর মানে এই দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের বছরের তুলনায় কম। এমনকি প্রতিবেশী ভারতের মতো উচ্চ-বৃদ্ধির দেশগুলোতেও জিডিপির আকার প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ এই ধারার অন্যতম ব্যতিক্রম ছিল। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু আগের বছরের তুলনায় আকারে সংকুচিত হয়নি। ২০১৯-২০ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্তে¡ও বাংলাদেশের অর্থনীতি পিছিয়ে যায়নি।
আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সংস্থার পূর্বাভাস ৭.৯ শতাংশ। রপ্তানি ও ভোগে ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে কিনা এবং দারিদ্র্য হ্রাস পাবে তা নির্ভর করবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের সাহায্য করে অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবেলার ওপর।
এটা মানতেই হবে যে, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বেরিয়ে গেলে বর্তমান শুল্ক এবং কোটামুক্ত সুবিধা শুধুমাত্র ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইইউ বাজারে পাওয়া যাবে। এ কারণে আগামী পাঁচ বছরের প্রস্তুতি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদরা এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই ট্রানজিটের জন্য পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করে শক্তিশালী ট্রানজিট কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন। আগামী দিনে অগ্রগতির জন্য স্থানীয় বাজার ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, দুর্নীতি হ্রাস, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৩২০ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে এটি ২১৩৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে জিডিপি ৩২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব অর্থনীতির গতিশীলতার ওপর তার সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটলুকে বলেছে যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এ বছরও ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন অর্থনৈতিক মুক্তি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
০ টি মন্তব্য