দেশে যখন বেড়ে গেছে সাইবার হামলার ঝুঁকি
সবকিছুরই রয়েছে ভালো-মন্দ। তথ্যপ্রযুক্তি এ থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়। প্রযুক্তির কল্যাণ পরিব্যাপক। সেই সাথে রয়েছে এর নানা নেতিবাচক দিক। সাইবার হামলা তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির একটি নেতিবাচক দিক। সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে শতভাগ মুক্ত এমন দেশ একটিও নেই। বরং বেশি উন্নত দেশগুলোতে সাইবার হামলার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ছোট-বড় সব দেশই কোনো না কোনো মাত্রায় সাইবার হামলার ঝুঁকির মুখে।
সময়ের সাথে গোটা বিশ্বে সাইবার হামলার সংখ্যা বাড়ছে। এর সরল অর্থ গোটা বিশ্বে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। তথ্য-পরিসংখ্যান তেমনটিই বলে। বাংলাদেশও সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। দেশের ২১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশী-বিদেশী একাধিক সংস্থার রিপোর্টে এই হামলার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গত মধ্য-মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, দেশে গত এক বছরে সাইবার হামলা ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
কমনওয়েলথ টেলিকম অর্গানাইজেশনের (সিটিও) মহাসচিব শোলা টেলরও স্বীকার করেছেন, সাইবার হামলার পরিমাণ বাড়ছে। তিনি একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন, সাইবার হামলা রোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন এবং অপরাধ মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়ে তোলা। হামলাকারীরা যেনো সফল হতে না পারে, সে জন্য সুদৃঢ় প্রযুক্তিগত প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলাটা জরুরি। একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কিছুদিন আগে ঢাকায় এলে তখন তিনি এই মন্তব্য করেন। আমরা মনে করি, তার এই পরামর্শ যথার্থ। সাইবার হামলা মোকাবেলায় নিজস্ব প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। সাইবার হামলা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সে দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। কারণ, চারদিক থেকেই সাইবার হামলার কথাই উচ্চারিত হচ্ছে। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত একটি দেশী পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশকে লক্ষ করে বেশি হামলা হচ্ছে পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে। ২০১৬ সালে পাকিস্তানি হ্যাকারদের হামলার পরিমাণ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে বছরের শেষ দিকে বিটিসিএলের ডোমেইন সার্ভারে একাধিক হামলা চালায় পাকিস্তানি হ্যাকারেরা। সূত্রমতে, গত ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট লক্ষ করে শতাধিক হামলা চালানো হয়। তবে দৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কারণে প্রতিটি হামলাই ছিল অসফল। এখনও হ্যাকারদের টার্গেট বাংলাদেশের আর্থিক খাত। কৌশলগত হামলার পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ ব্যাংক লক্ষ করেই হামলা হচ্ছে বেশি। বর্তমানে দেশের তিনটি অপারেটরের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়িড স্মার্টফোন লক্ষ করে হামলার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মোবাইল নেটওয়ার্কে হামলা হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণেও বাংলাদেশের সাইবার হামলার ঝুঁকির কথা উচ্চারিত হচ্ছে। বছরের শুরুতে বিশ্বখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিসকোর সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সার্বিকভাবে অঞ্চলভেদে এশিয়া ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোতে সাইবার হামলা বাড়ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বিগত বছরের তুলনায় সাইবার হামলা ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। স্মার্টফোন হামলার ঝুঁকি ও বৈচিত্র্য আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের স্টোরেজে স্থায়ী ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানোর ঘটনা ঘটেছে বেশি।
সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত, স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়িড প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কারণ হচ্ছে গ্রাহকদের অসচেতনতা। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করেন না। আবার যেসব স্মার্টফোনে ইনবিল্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেগুলোর দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই ব্যবহার করেন না। ফলে স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন ও অনলাইন ব্যাংকিং এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। স্পষ্টতই এ ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টি জোরালোভাবে প্রচার চালানোর তাগিদটা এসে যায়। কারণ, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এখনও এ ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন।
সার্বিকভাবেই সাইবার হামলার ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, সাইবার হামলার বিরুদ্ধে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যূহ গড়ে তোলার গুরু দায়িত্বটা কিন্তু পড়ে সরকারের ওপর।
০ টি মন্তব্য