https://www.brandellaltd.com/

লাই-ফাইপ্রযুক্তি

লাই-ফাইপ্রযুক্তি

লাই-ফাইপ্রযুক্তি লাই-ফাইপ্রযুক্তি
 

লাই-ফাইপ্রযুক্তি

আপনার বাসার প্র্রতিটা বাল্ব থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মি যদি আলো দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটের উৎস হয়, তাহলে কেমন হবে? লাই-ফাই বা Light-Fidelity সংক্ষেপে (Li-Fi) প্রযুক্তির বিষয়টা ঠিক এমন। একটি নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে যতটুকু আলোক রশ্মি গমন করবে ঠিক সেই জায়গার সবাই দ্রæতগতির নিরাপদ ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। 

লাই-ফাই প্রযুক্তি কী

লাই-ফাই প্রযুক্তি একটি যুগান্তকারী ওয়্যারলেস অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিং উদ্ভাবন, যে পদ্ধতিতে অসংখ্য পরিমাণ ডেটা লাইট এমেটিং ডায়োড বা এলইডির মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। ভিজ্যুয়াল লাইট বাল্ব বা আলোর যোগাযোগের দ্বারা সম্পাদিত এক কার্যপদ্ধতি, যেটা  দ্রæত, নিরাপদ এবং বর্তমানের ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) প্রযুক্তির চেয়ে শক্তির দিক থেকে এবং গতিতে ১০০ গুণ বেশি অগ্রগামী। লাই-ফাই বা Light-Fidelity বা আলোর প্রখরতার ওপর নির্ভরশীল। 

ওয়াই-ফাই সাধারণত ওয়্যারলেস কাভারেজের জন্য ব্যবহার হলেও লাই-ফাই প্রযুক্তি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য উচ্চ তীব্রতার ওয়্যারলেস ডেটা কাভারেজ মডেল, যেখানে কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হয়না সেখানে এটি ব্যবহার করা যায়। মূলত, লাই-ফাই প্রযুক্তি আলোক ব্যবস্থানির্ভর ওয়াই-ফাই কাঠামো, যেখানে মডেমের বদলে লাইট বাল্ব আলোক রশ্মি প্রেরণের দ্বারা ইন্টারনেট প্রদান করতে পারে। এটি ভিএলসি প্রযুক্তিকে নির্দেশিত করে, যা ওয়াই-ফাইয়ের চেয়েও উচ্চ গতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। এজন্য লাই-ফাই ভালো কার্যকারিতা, ব্যান্ডউইডথ এবং  দ্রæতগতির জন্য সমাদৃত।                

লাই-ফাই প্রযুক্তির শুরু এবং ক্রমবিকাশ   

যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জার্মান পদার্থবিদ হ্যারাল্ড হ্যাশ ও তার গবেষণা দল ২০০৬ সাল থেকে ভিএলসি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছিলেন এবং গমন-আগমন দুই উপায়ে আলোর মাধ্যমে ডেটা পাঠানো নিয়ে কাজে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যা লাই-ফাই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভ‚মিকা রাখে। প্রথমবারের মতো ‘গেøাবাল ট্রেড টক’তে আগস্ট ২০১১ সালের জুলাইয়ে হ্যারাল্ড হ্যাশ লাই-ফাই প্রযুক্তিকে জনসমুখে এইচডি ভিডিও এলইডি ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্রিমিং করে সবার কাছে পরিচিত করান। একক এলইডি বা লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে আলোক বিচ্ছুরণ প্রেরণ সেলুলারের থেকেও বেশি পরিমাণ ডেটা বা তথ্যপ্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ল্যাবের রেকর্ড অনুযায়ী সেই সময় ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত গতিতে ডেটা প্রেরণ করেছিলেন, যার মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ জিবি এর ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব হয়েছিল। অধ্যাপক হ্যাশ ‘পিউরভিএলসি’ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন, ২০১২ সালে যারা বানিজ্যিকভাবে সবার জন্যে লাই-ফাই প্রযুক্তি উন্মুক্ত করেন। পরবর্তীতে ‘পিউরলাইফাই’ নামে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নতুন নামকরণ করে এবং এলইডি সিস্টেম প্রযুক্তির প্রোডাক্ট উৎপাদন করে। যদিও চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’ প্রথম লাই-প্রযুক্তির ওপর ২০০৬ সালে প্যাটেন্ট করে।                

লাই-ফাই প্রযুক্তি ভিজিবল লাইট স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, অধ্যাপক হ্যাশ-এর তথ্যে একটি স্পেকট্রাম রেডিও ব্যান্ডউইডথের থেকে ধারণক্ষমতা ১০ হাজার গুণ বেশি। ওয়াই-ফাইতে যখন বিশাল পরিমাণ ডেটা প্রেরণ হয়, তখন সেটা ধীর হয়, সেখানে লাই-ফাই প্রযুক্তি  দ্রæত এবং নিয়মিতভাবে বিপুল সংখ্যক ডেটা লাইট এমিটিং ডায়োডের মাধ্যমে পাঠাতে পারে, যা ডেটার জগতে লাই-ফাইকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। লাই-ফাই পদ্ধতিতে এলইডি’র ড্রাইভার সার্কিট সংকেতাকারে ডেটা প্রেরণ করে লেড বা লাইট এমিটিং ডায়োড চালু করে। মানুষের অলক্ষ্যে এটি ঘটে এবং ল্যাপটপ বা ফোনের একটি অপটিক্যাল সেন্সর সংকেত আকারে ডেটা গ্রহণ করে। লাই-ফাই নেটওয়ার্ক দেয়াল ভেদ করে যেতে পারেনা, অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রণ এজন্য নিরাপদ এবং স্থায়িত্ব।

২০১১ সালে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার প্রযুক্তিজগতের নেতারা লাই-ফাই, অপটিক্যাল ওয়্যারলেস এবং ফাইবার অপটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রত্যাশায় ‘লাই-ফাই কনসোর্টিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে আমেরিকার লাসভেগাসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো’তে সিসকো স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন থেকে কীভাবে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে ডেটা আদান-প্রদান করা যায় তা সবার সামনে প্রদর্শন করা হয়। ২০১৩ সালের আগস্টে লাই-ফাই পদ্ধতিতে ১.৬ জিবিটসের বেশি ডেটা প্রদর্শন করা সক্ষম হলো। একই বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রেস রিলিজে প্রকাশ করা হলো যে, লাই-ফাই অথবা ভিএলসি পদ্ধতিতে লাইন অব সাইট অবস্থা যোগাযোগে প্রয়োজন নেই। অক্টোবরে চীনা প্রস্তুতকারীরা এবং প্রধান বিজ্ঞানী চিন্যান লাই-ফাইয়ের যন্ত্র উন্নয়নে কাজ করেন। গবেষকরা বলেন, ১৫০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডেটার গতি মাইক্রোচিপের কল্যাণে করা সম্ভব। আর এটার ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ, মাইক্রোচিপ ডিজাইন এবং উৎপাদনে বাণিজ্যিকভাবে লাই-ফাই প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতাতে তারা আস্থা রাখে।        

রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘স্টিন্স কমান’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিম ক্যাস্টার উন্নয়নের ঘোষণা দেয়, ১.২৫ জিবিটস ডেটা প্রেরণের সক্ষমতা নিয়ে লাই-ফাই লোকাল নেটওয়ার্ক। অধ্যাপক হ্যাশ ২০১৭ সালের মার্চে তার গবেষণা দলসহ তাদের মাইক্রো লেড নিয়ে উচ্চক্ষমতা ব্যান্ডউইডথের লাই-ফাই ঠিক করেন। ১১.৯৫ জিবিটস গতির রেকর্ড করে তাদের উৎপাদিত বেগুনি মাইক্রো এলইডি। বিশ্ব যোগাযোগ সেবাতে এর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ২০২০ সালে ২৬.৩ বিলিয়ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস করে।

‘পিউরলাইফাই’ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে লাই-ফাই প্রযুক্তির জন্য বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি উন্নীতকরণে গুরুত্ব প্রদান করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্মার্টফোন এবং নেটওয়ার্ক নির্ভর ডিভাইসগুলোতে এই যন্ত্রপাতি একীভ‚ত করে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১ জিবিটস লাই-ফাই সিস্টেম ব্যবহারে ল্যাপটপ বাজারে প্রদর্শন করে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ‘প্যানাসনিক’ কোম্পানির ‘লাই-ফাই’ প্রযুক্তির ৬০টি প্যাটেন্ট রয়েছে, ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্যামসাং’র অধীনে ২৫টি প্যাটেন্ট ছিল, বর্তমানে ৩০টি প্যাটার্ন তাদের রয়েছে।  

লাই-ফাই এবং ওয়াই-ফাইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী

ওয়াই-ফাই যেখানে Wireless Fidelity-এর ওপর ভিত্তি করে রাউটার ও রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে, সেখানে লাই-ফাই Light Fidelity-এর ওপর ভিত্তি করে এলইডি লাইট বাল্ব এবং আলোক রশ্মির সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে। ওয়াই-ফাই ১৯৯১ সালে আবিষ্কার হলেও লাই-ফাই জনসম্মুখে ২০১১ সালে পরিচিত পায়। ওয়াই-ফাই WLAN 802.11/B/G/N/AC/D  ভিত্তির ডিভাইস ও পাশাপাশি ১৫০ এমবিপিএস থেকে ২ জিবিপিএস গতিতে তরঙ্গ প্রেরণ করে এবং তরঙ্গ ২.৪ গিগাহার্টজ, ৪.৯ গিগাহার্টজ, ৫ গিগাহার্টজ। অপরদিকে, লাই-ফাই IrDA সম্বলিত থাকে ডিভাইসে ও ডেটা প্রেরণের গতি ১ জিবিপিএস আর রেডিও তরঙ্গ থেকে ১০ হাজার গুণ বেশি। ওয়াই-ফাই ৩২ মিটার পর্যন্ত আর লাই-ফাই ১০ মিটার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।     

লাই-ফাই প্রযুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ 

ওয়্যারলেস ডেটা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠছে। ওয়াই-ফাই এখন সর্বত্র, কিন্তু সব সময়ের জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারিনা। রেডিও তরঙ্গ যে প্রযুক্তি ওয়াই-ফাইতে ব্যবহার করি তা ডিজিটাল বিপ্লবে যথেষ্ট নয়। ২০১৬ সালে মোবাইল ডেটা ট্র্যাফিক ৬৩ ভাগ বেড়ে যায় এবং সে বছর ৪২৯ মিলিয়ন মোবাইল ডিভাইস কানেকশন নেয়া হয়, সে হিসেবে ২০২১ সালে ১১.৬ বিলিয়ন মোবাইল কানেক্টেড ডিভাইস ছাড়িয়ে যাবে। 

ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ডেটার চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে বিশ্বে প্রয়োজন মেটাতে পারবেনা। অপরদিকে, লাই-ফাই প্রযুক্তি ১০০০ গুণ বেশি স্পেকট্রাম রেডিও তরঙ্গের তুলনায় ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজনে অনেক ডেটা দ্রæত গ্রহণ করে। অধ্যাপক হ্যাশ’র মতে, ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি’র দিকে খেয়াল করলে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যাপকহারে কাজ চালাতে পারেনা যখন একটি জায়গায় অনেক ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেক্ষেত্রে লাই-ফাই  দ্রæত ডেটা প্রেরণে সমাধান করে। 

লাই-ফাই প্রযুক্তি কিছু সেক্টরে কাজের অগ্রগতিতে বেশ অত্যাবশ্যকীয়, যেমনÑ হাসপাতালে অপারেটিং রুমে অনেক সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি থাকে এবং এজন্য অপটিক্যাল ফাইবার সেটআপ করা বেশ কষ্টকর, এতে লাই-ফাই ডিভাইস ব্যবহার সমাধান দিতে পারে। হাসপাতালে নিয়মিত তথ্য অথবা ডেটা সংরক্ষণ, পর্যবেক্ষণ এবং দরকারি তথ্য প্রেরণের দরকার পরে এজন্য রেডিও ওয়েব ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বিষয় থাকে, তাই ভিএলসি পদ্ধতি অথবা লাই-প্রযুক্তি ব্যবহার উত্তম। 

এরোপ্লেনে কয়েকশ যাত্রীর জন্য উচ্চমানের সংকেত ব্যবহার করা সহজ নয়, কিন্তু লাই-ফাই’র মাধ্যমে আলোক তরঙ্গ ব্যবহার করে দ্রæত ভালো পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব।      

ওয়াই-ফাই এবং অন্যান্য রেডিও ওয়েভ তরঙ্গ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট’র মতো জায়গায় ব্যবহার চিন্তার বিষয়, নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে  দ্রæত এবং ইন্টারকানেক্টেড ডেটা সিস্টেম বা পদ্ধতি ডিমান্ড, তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে থাকা আবশ্যক। লাই-ফাই নিরাপদ, অবিচল সংযোগ এরকম জায়গায় অব্যাহত রাখে। তাই সঠিক পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং অর্থনৈতিকভাবে বিশাল সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাস্তবায়ন কাজ সহজ করে।  

পানির নিচে রেডিও তরঙ্গ খুব স্বল্প হয়, এ ধরনের যন্ত্র ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু আলোকরশ্মি পানির নিচে ২০০ মিটার পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে যায়। এজন্য লাই-ফাই মাধ্যম পানির নিচে যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে ভালো।   

 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় কিংবা লেখাপড়া রিসোর্স পেতে ক্লাসরুমে অনেক শিক্ষার্থী একে অন্যের ডিভাইসের সাথে লাই-ফাই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে তথ্য আদান-প্রদান দ্রæত করতে পারে।   

প্রযুক্তিগতভাবে লাই-ফাই কাঠামো

ভিএলসি সিস্টেমে লাই-ফাই প্রযুক্তির ট্রান্সমিটার (প্রেরণকারী) এবং রিসিভার(গ্রহণকারী) নামে দুটি অংশ আছে। আর এই অংশগুলোর কাঠামোতে ফিজিক্যাল, ম্যাক(মিডিয়া এক্সেস কন্ট্রোল) এবং অ্যাপ্লিকেশন নামে ৩টি লেয়ার বা স্তর বিদ্যমান। 

ট্রান্সমিটার 

ভিএলসি ট্রান্সমিটার আলোর মূল উৎস, লাইট এমিটিং ডায়োডের উদ্ভাবন এই কাজ সহজ করেছে, যা ইলেকট্রিক ফিলামেন্ট বা গ্যাস ব্যবহার করেনা। এলইডি যথেষ্ট উজ্জ্বল, নির্ভরযোগ্য আলোক শক্তির কারণে আলো যতদূর পর্যন্ত গমন করে তরঙ্গ ততদূর পর্যন্ত যায়। এলইডি লাইট বাল্ব সাদা হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ, উচ্চক্ষমতা ব্যান্ডউইডথ এবং অনেক ডেটা প্রেরণ করা, যদিও নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন।    

রিসিভার

ভিএলসির রিসিভার অপটিক্যাল ফিল্টার, অপটিক্যাল কনসেন্টেটর এবং অ্যামপ্লিফিকেশন সার্কিট নিয়ে গঠিত। ট্রান্সমিটার থেকে আলো আসে ডেটা প্রেরণ করে, এই আলোকরশ্মি বিকিরণের কারণে অনেক শক্তিশালী হয়না কারণ এলইডি অনেক জায়গাজুড়ে আলো দেয়। আর এই আলোক রশ্মি অপটিক্যাল কনসেন্টটর দ্বারা ধারণ করে সংকেত প্রেরণ করে। এরপরে সংকেত ফটোডায়োডের মাধ্যমে গ্রহণ করে ফটো বিদ্যুতে পরিণত করে। সিলিকন ফটোডায়োড, পিনডায়োড ভিএলসি সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয়। সূর্যের আলো কিংবা অন্য আলোক উৎসের কারণে ভিএলসি সিস্টেমে বাধার কারণ হতে পারে, এজন্য অপটিক্যাল ফিল্টার সংকেত পেতে বাধা না পেতে হয় তার জন্যে ব্যবহার করা হয়। 

ফিজিক্যাল লেয়ার 

ভিএলসি ডিভাইস এবং মাধ্যমের মধ্যে ডেটা প্রেরণে ফিজিক্যাল স্তর ব্যবহারে সম্পর্ক তৈরি করে। ফিজিক্যাল স্তরে ডেটা প্রদান করা হয় আলোক উৎসে পৌঁছানোর আগে, এরপরে সেই আলোক উৎস অপটিক্যাল চ্যানেলের মাধ্যমে সংকেতাকারে ফোটন নির্গমন করে। এই সংকেতগুলোই পরবর্তীতে ফটোডায়োড ডিভাইস দ্বারা গ্রহণ করে, যা আউটপুট ডেটা হিসেবে গমন করে। এতে ক্ষুদ্র ইউনিট বা প্যাকেটের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণে সম্পন্ন করে এবং ডেটা প্রেরণে পরিমাণের ওপর নির্ভর কয়েকটি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেমনÑ১২-২৬৭ কেবিপিএস এর ডেটা গমনের হার, এটি বাসার বাহিরে কার্যক্রমে ব্যবহার হয় এবং এটি ফিজিক্যাল লেয়ার ১। আর ঘরের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী ফিজিক্যাল লেয়ার ২ এর ডেটা প্রেরণের হার ১.২৫-৯৬ এমবিপিএস। অপরদিকে, আলোক উৎস ও ডিটেকটরে ফিজিক্যাল লেয়ার ৩ থাকে, যেখানে উচ্চগতির ডেটা হার ১২-৯৬ এমবিপিএস। 

ম্যাক (মিডিয়া অ্যাক্সেস কন্ট্রোল) লেয়ার 

ম্যাক বা মিডিয়া অ্যাক্সেস কন্ট্রোল স্তর ডেটা প্যাকেট নেটওয়ার্ক থেকে গ্রহণ এবং প্রেরণে ভ‚মিকা রাখে। প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, প্রত্যেক নোডকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য নোডের সাথে যোগাযোগের পথ করে দেয়া। মোট কথা, ম্যাক স্তর ডেটার প্যাকেটকে গন্তব্যে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় এবং ভিএলসি সিস্টেমে এই স্তর মোবাইল সাপোর্ট, ভিজিবিলিটি সাপোর্ট, নিরাপত্তা, নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভরযোগ্য অবস্থা প্রদান করে।   

অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার 

অ্যাপ্লিকেশন স্তরটি ভিপিএন(ভিএলসি পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) বা লাই-ফাই ডিভাইস দ্বারা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনায় খেয়াল রাখে। ডিএমই বা ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট এনটিটি লাই-ফাই বা ভিপিএন কাঠামো সাপোর্ট করে।       

লাই-ফাই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে 

ডাউনলিংক ট্রান্সমিটারে লাইট বাল্ব ব্যবহার করে লাই-ফাই কাজ হয়। লাইট বাল্ব প্রতিনিয়ত দ্রæত বিচ্ছুরিত হতে থাকে, একারণে বিমান কিংবা হাসপাতালে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার না করে লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তি কার্যক্রম খুব সাধারণ, যদি লাইট এমেটিং ডায়োড চালু থাকে ডিজিটালভাবে এক (১) নির্দেশিত হবে এবং অফ থাকলে শূন্য (০) নির্দেশিত হয়। এলইডি খুব দ্রæত চালু ও অফ হয়, এ জন্য ডেটা  দ্রæত প্রেরণের সুযোগ তৈরি হয়। এলইডি এবং কন্ট্রোলার দরকার যা ডেটাকে এলইডির আলোর বিচ্ছুরণ সংকেতাকারে প্রেরণ করবে। বাল্বে যত এলইডি থাকবে, তত ডেটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ওয়াই-ফাইয়ের মতো রাউটার ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণের বদলে এলইডি লাইট বাল্ব ভিজিবল লাইট স্পেকট্রামের মাধ্যমে ডেটা পাঠায়। কারণ বাসাবাড়ির এলইডি বাল্ব থেকে আলোক তরঙ্গের মাধ্যমে লাই-ফাই প্রযুক্তি কাজ করে। ভিজিবল লাইট বা আলো যত বেশি প্রশস্ত হবে তত বেশি ব্যান্ডউইডথ হবে। লাই-ফাই সুবিধাসংবলিত ডিভাইস ব্যাপক পরিমাণ ডেটা গ্রহণ কিংবা প্রেরণ  দ্রæতগতিতে ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে পাঠাতে পারবে। 

 লাই-ফাই দেয়ালের ভেতর দিয়ে তরঙ্গ প্রেরণ করতে পারেনা, আলোক উৎস কাজের জায়গায় অ্যাকটিভ থাকতে হবে। যদি লাই-ফাই আপনার স্মার্ট ঘরে পরিচালিত করতে চান তাহলে এলইডি লাইট ঘরজুড়ে রাখতে হবে। ব্যাপকহারে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণকে ভিএলসি বা ভিজিবল লাইট কমিউনিকেশন হিসেবে নির্দেশিত করা হয়। ভিএলসি ৪০০ টিএইচজেড থেকে ৮০০ টিএইচজেড মধ্যে ডেটা প্রেরণ করে। ডেটার পরিমাণ ১০০ এমবিপিএসের চেয়ে বেশি করা সম্ভব উচ্চ গতি সম্পন্নের এলইডি ব্যবহার করে।    

লাই-ফাই প্রযুক্তির সুবিধা 

লাই-ফাই প্রযুক্তি ইনফ্রারেড লাইট, উজ্জ্বল আলোক রশ্মির ওপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমনÑ

দ্রুত ডেটা প্রেরণ 

লাই-ফাই উদ্ভাবনের পেছনে তথ্য বা ডেটা ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে  দ্রæত প্রেরণ করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে আলোক রশ্মির ব্যাপ্তি ও ডেটা প্রেরণের ধারণক্ষমতা রেডিও মাইক্রোওয়েভ পরিসরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লাই-ফাইয়ের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে লক্ষ্য করে নিশ্চিত করেছে, প্রতি সেকেন্ডে আলোক রশ্মি ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত গতিতে উভয়দিকে গমন করতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ডেটা প্রতি সেকেন্ডে ২০ মেগাবিটসে প্রেরণ করে এবং গতি দূরত্ব ও বাধার ওপর নির্ভর করে। ওয়াই-ফাইয়ের ৩০০ গিগাহার্টজ রেডিও স্পেকট্রামের তুলনায় লাই-প্রযুক্তির ভিজিবল লাইট স্পেকট্রাম ১০০০ গুণ বিশাল হয়। এজন্য লাই-ফাইয়ের মাধ্যমে ডেটা ১০০ গুণ  দ্রæত প্রেরণ করা সম্ভব হয়।    

নিরাপদ 

আলোক রশ্মি দেয়াল বা অন্য কোনো বাধার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারেনা, নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে এর গমন আবদ্ধ থাকে। ইনফ্রারেড আলো এবং উজ্জ্বল বিকিরণের সমতুল্য। লাই-ফাই যন্ত্র এবং ডেটা নির্দিষ্ট জায়গার ভেতর সংকেত প্রেরণ করে। এই কারণে ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে নিরাপত্তার ধাপ দিয়ে উত্তম। 

সাশ্রয়ী এবং কার্যকর 

লাই-ফাই অনেক বেশি শক্তি কার্যকরভাবে ধরে রাখতে পারে এবং এলইডি বাল্বের কারণে সাশ্রয়ী। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমনÑ রাউটার, মডেম, সিগন্যাল রিপিটর, ওয়েব অ্যামপ্লিফায়ার এবং অ্যান্টিনা ব্যতীত ঘর এবং অফিস-আদালতের খরচ সাশ্রয় করে। এই ডিভাইসগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হয়, কিন্তু লাই-ফাই প্রযুক্তিতে এলইডি লাইট কাঠামোতে থাকাতে অতিরিক্ত খরচ হয়না। পিউরলাইফাই কোম্পানির সোলার সেল ওয়্যারলেস ব্যাটারি চার্জ এবং স্বতঃস্ফূর্ত ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবস্থা করে।    

সহজলভ্যতা

প্রত্যেকটি লাইট উৎস আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগে যুক্ত করতে পারে। ভবিষ্যতে যখন লাই-ফাই প্রযুক্তি সর্বত্র আসবে, তখন রাস্তার লাইট, বাড়ির লাইট এবং যানবাহনের লাইট ওয়্যারলেসের মাধ্যমে যুক্ত হবে এবং আপনি যেখানেই থাকুন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।  

লাই-ফাইয়ের অসুবিধা 

যদিও লাই-ফাই দ্রুত, নিরাপদ সেবা প্রদান করে, তবুও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমনÑ

যোগাযোগ পরিসর সীমিত 

লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার নিরাপদ হলেও নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া লেড আলো ব্যাপ্তি থাকেনা, আরেক ঘর কিংবা অফিসের অন্য কক্ষে এর ব্যবহার করা যায় না। সেই তুলনায় ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি রেডিও মাইক্রোওয়েবে হওয়ায় অনেক সুবিস্তৃত পরিসরে নেটওয়ার্ক সুবিধা প্রদান করে।   

সেটআপ খরচ ব্যয়বহুল 

এলইডি লাইটের কারণে লাই-প্রযুক্তি ব্যয় কিছুটা স্বল্প, কিন্তু ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় এই প্রযুক্তি সেটআপ ব্যয়সাপেক্ষ। প্রত্যেক ঘরে ভিন্ন করে লাই-ফাই সুইচ নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহার করতে হয়।      

লাই-ফাই প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রুংর, গতির জন্য বেশ জনপ্রিয় হলেও আলো থাকা এই প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ করে এবং নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া ব্যবহার করা যায়না। এই বিষয়গুলো থাকা সত্তে¡ও প্রযুক্তিবিদরা আশাবাদী, কারণ প্রত্যেকটা লাইট বাল্ব ডেটা প্রেরণ করে বিশ্বকে নিরাপদ ও দ্রæত প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করে কাজে গতি আনবে।লাই-ফাইপ্রযুক্তি

আপনার বাসার প্র্রতিটা বাল্ব থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মি যদি আলো দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটের উৎস হয়, তাহলে কেমন হবে? লাই-ফাই বা Light-Fidelity সংক্ষেপে (Li-Fi) প্রযুক্তির বিষয়টা ঠিক এমন। একটি নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে যতটুকু আলোক রশ্মি গমন করবে ঠিক সেই জায়গার সবাই দ্রæতগতির নিরাপদ ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। 

লাই-ফাই প্রযুক্তি কী

লাই-ফাই প্রযুক্তি একটি যুগান্তকারী ওয়্যারলেস অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিং উদ্ভাবন, যে পদ্ধতিতে অসংখ্য পরিমাণ ডেটা লাইট এমেটিং ডায়োড বা এলইডির মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। ভিজ্যুয়াল লাইট বাল্ব বা আলোর যোগাযোগের দ্বারা সম্পাদিত এক কার্যপদ্ধতি, যেটা  দ্রæত, নিরাপদ এবং বর্তমানের ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) প্রযুক্তির চেয়ে শক্তির দিক থেকে এবং গতিতে ১০০ গুণ বেশি অগ্রগামী। লাই-ফাই বা Light-Fidelity বা আলোর প্রখরতার ওপর নির্ভরশীল। 

ওয়াই-ফাই সাধারণত ওয়্যারলেস কাভারেজের জন্য ব্যবহার হলেও লাই-ফাই প্রযুক্তি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য উচ্চ তীব্রতার ওয়্যারলেস ডেটা কাভারেজ মডেল, যেখানে কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হয়না সেখানে এটি ব্যবহার করা যায়। মূলত, লাই-ফাই প্রযুক্তি আলোক ব্যবস্থানির্ভর ওয়াই-ফাই কাঠামো, যেখানে মডেমের বদলে লাইট বাল্ব আলোক রশ্মি প্রেরণের দ্বারা ইন্টারনেট প্রদান করতে পারে। এটি ভিএলসি প্রযুক্তিকে নির্দেশিত করে, যা ওয়াই-ফাইয়ের চেয়েও উচ্চ গতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। এজন্য লাই-ফাই ভালো কার্যকারিতা, ব্যান্ডউইডথ এবং  দ্রæতগতির জন্য সমাদৃত।                

লাই-ফাই প্রযুক্তির শুরু এবং ক্রমবিকাশ   

যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জার্মান পদার্থবিদ হ্যারাল্ড হ্যাশ ও তার গবেষণা দল ২০০৬ সাল থেকে ভিএলসি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছিলেন এবং গমন-আগমন দুই উপায়ে আলোর মাধ্যমে ডেটা পাঠানো নিয়ে কাজে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যা লাই-ফাই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভ‚মিকা রাখে। প্রথমবারের মতো ‘গেøাবাল ট্রেড টক’তে আগস্ট ২০১১ সালের জুলাইয়ে হ্যারাল্ড হ্যাশ লাই-ফাই প্রযুক্তিকে জনসমুখে এইচডি ভিডিও এলইডি ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্রিমিং করে সবার কাছে পরিচিত করান। একক এলইডি বা লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে আলোক বিচ্ছুরণ প্রেরণ সেলুলারের থেকেও বেশি পরিমাণ ডেটা বা তথ্যপ্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ল্যাবের রেকর্ড অনুযায়ী সেই সময় ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত গতিতে ডেটা প্রেরণ করেছিলেন, যার মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ জিবি এর ফাইল ডাউনলোড করা সম্ভব হয়েছিল। অধ্যাপক হ্যাশ ‘পিউরভিএলসি’ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন, ২০১২ সালে যারা বানিজ্যিকভাবে সবার জন্যে লাই-ফাই প্রযুক্তি উন্মুক্ত করেন। পরবর্তীতে ‘পিউরলাইফাই’ নামে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নতুন নামকরণ করে এবং এলইডি সিস্টেম প্রযুক্তির প্রোডাক্ট উৎপাদন করে। যদিও চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’ প্রথম লাই-প্রযুক্তির ওপর ২০০৬ সালে প্যাটেন্ট করে।                

লাই-ফাই প্রযুক্তি ভিজিবল লাইট স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, অধ্যাপক হ্যাশ-এর তথ্যে একটি স্পেকট্রাম রেডিও ব্যান্ডউইডথের থেকে ধারণক্ষমতা ১০ হাজার গুণ বেশি। ওয়াই-ফাইতে যখন বিশাল পরিমাণ ডেটা প্রেরণ হয়, তখন সেটা ধীর হয়, সেখানে লাই-ফাই প্রযুক্তি  দ্রæত এবং নিয়মিতভাবে বিপুল সংখ্যক ডেটা লাইট এমিটিং ডায়োডের মাধ্যমে পাঠাতে পারে, যা ডেটার জগতে লাই-ফাইকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। লাই-ফাই পদ্ধতিতে এলইডি’র ড্রাইভার সার্কিট সংকেতাকারে ডেটা প্রেরণ করে লেড বা লাইট এমিটিং ডায়োড চালু করে। মানুষের অলক্ষ্যে এটি ঘটে এবং ল্যাপটপ বা ফোনের একটি অপটিক্যাল সেন্সর সংকেত আকারে ডেটা গ্রহণ করে। লাই-ফাই নেটওয়ার্ক দেয়াল ভেদ করে যেতে পারেনা, অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রণ এজন্য নিরাপদ এবং স্থায়িত্ব।

২০১১ সালে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার প্রযুক্তিজগতের নেতারা লাই-ফাই, অপটিক্যাল ওয়্যারলেস এবং ফাইবার অপটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রত্যাশায় ‘লাই-ফাই কনসোর্টিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে আমেরিকার লাসভেগাসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো’তে সিসকো স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন থেকে কীভাবে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে ডেটা আদান-প্রদান করা যায় তা সবার সামনে প্রদর্শন করা হয়। ২০১৩ সালের আগস্টে লাই-ফাই পদ্ধতিতে ১.৬ জিবিটসের বেশি ডেটা প্রদর্শন করা সক্ষম হলো। একই বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রেস রিলিজে প্রকাশ করা হলো যে, লাই-ফাই অথবা ভিএলসি পদ্ধতিতে লাইন অব সাইট অবস্থা যোগাযোগে প্রয়োজন নেই। অক্টোবরে চীনা প্রস্তুতকারীরা এবং প্রধান বিজ্ঞানী চিন্যান লাই-ফাইয়ের যন্ত্র উন্নয়নে কাজ করেন। গবেষকরা বলেন, ১৫০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডেটার গতি মাইক্রোচিপের কল্যাণে করা সম্ভব। আর এটার ওপর ভিত্তি করে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ, মাইক্রোচিপ ডিজাইন এবং উৎপাদনে বাণিজ্যিকভাবে লাই-ফাই প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতাতে তারা আস্থা রাখে।        

রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘স্টিন্স কমান’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিম ক্যাস্টার উন্নয়নের ঘোষণা দেয়, ১.২৫ জিবিটস ডেটা প্রেরণের সক্ষমতা নিয়ে লাই-ফাই লোকাল নেটওয়ার্ক। অধ্যাপক হ্যাশ ২০১৭ সালের মার্চে তার গবেষণা দলসহ তাদের মাইক্রো লেড নিয়ে উচ্চক্ষমতা ব্যান্ডউইডথের লাই-ফাই ঠিক করেন। ১১.৯৫ জিবিটস গতির রেকর্ড করে তাদের উৎপাদিত বেগুনি মাইক্রো এলইডি। বিশ্ব যোগাযোগ সেবাতে এর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ২০২০ সালে ২৬.৩ বিলিয়ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস করে।

‘পিউরলাইফাই’ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে লাই-ফাই প্রযুক্তির জন্য বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি উন্নীতকরণে গুরুত্ব প্রদান করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্মার্টফোন এবং নেটওয়ার্ক নির্ভর ডিভাইসগুলোতে এই যন্ত্রপাতি একীভ‚ত করে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১ জিবিটস লাই-ফাই সিস্টেম ব্যবহারে ল্যাপটপ বাজারে প্রদর্শন করে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ‘প্যানাসনিক’ কোম্পানির ‘লাই-ফাই’ প্রযুক্তির ৬০টি প্যাটেন্ট রয়েছে, ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্যামসাং’র অধীনে ২৫টি প্যাটেন্ট ছিল, বর্তমানে ৩০টি প্যাটার্ন তাদের রয়েছে।  

লাই-ফাই এবং ওয়াই-ফাইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী

ওয়াই-ফাই যেখানে Wireless Fidelity-এর ওপর ভিত্তি করে রাউটার ও রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে, সেখানে লাই-ফাই Light Fidelity-এর ওপর ভিত্তি করে এলইডি লাইট বাল্ব এবং আলোক রশ্মির সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে। ওয়াই-ফাই ১৯৯১ সালে আবিষ্কার হলেও লাই-ফাই জনসম্মুখে ২০১১ সালে পরিচিত পায়। ওয়াই-ফাই WLAN 802.11/B/G/N/AC/D  ভিত্তির ডিভাইস ও পাশাপাশি ১৫০ এমবিপিএস থেকে ২ জিবিপিএস গতিতে তরঙ্গ প্রেরণ করে এবং তরঙ্গ ২.৪ গিগাহার্টজ, ৪.৯ গিগাহার্টজ, ৫ গিগাহার্টজ। অপরদিকে, লাই-ফাই IrDA সম্বলিত থাকে ডিভাইসে ও ডেটা প্রেরণের গতি ১ জিবিপিএস আর রেডিও তরঙ্গ থেকে ১০ হাজার গুণ বেশি। ওয়াই-ফাই ৩২ মিটার পর্যন্ত আর লাই-ফাই ১০ মিটার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।     

লাই-ফাই প্রযুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ 

ওয়্যারলেস ডেটা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠছে। ওয়াই-ফাই এখন সর্বত্র, কিন্তু সব সময়ের জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারিনা। রেডিও তরঙ্গ যে প্রযুক্তি ওয়াই-ফাইতে ব্যবহার করি তা ডিজিটাল বিপ্লবে যথেষ্ট নয়। ২০১৬ সালে মোবাইল ডেটা ট্র্যাফিক ৬৩ ভাগ বেড়ে যায় এবং সে বছর ৪২৯ মিলিয়ন মোবাইল ডিভাইস কানেকশন নেয়া হয়, সে হিসেবে ২০২১ সালে ১১.৬ বিলিয়ন মোবাইল কানেক্টেড ডিভাইস ছাড়িয়ে যাবে। 

ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ডেটার চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে বিশ্বে প্রয়োজন মেটাতে পারবেনা। অপরদিকে, লাই-ফাই প্রযুক্তি ১০০০ গুণ বেশি স্পেকট্রাম রেডিও তরঙ্গের তুলনায় ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজনে অনেক ডেটা দ্রæত গ্রহণ করে। অধ্যাপক হ্যাশ’র মতে, ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি’র দিকে খেয়াল করলে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যাপকহারে কাজ চালাতে পারেনা যখন একটি জায়গায় অনেক ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেক্ষেত্রে লাই-ফাই  দ্রæত ডেটা প্রেরণে সমাধান করে। 

লাই-ফাই প্রযুক্তি কিছু সেক্টরে কাজের অগ্রগতিতে বেশ অত্যাবশ্যকীয়, যেমনÑ হাসপাতালে অপারেটিং রুমে অনেক সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি থাকে এবং এজন্য অপটিক্যাল ফাইবার সেটআপ করা বেশ কষ্টকর, এতে লাই-ফাই ডিভাইস ব্যবহার সমাধান দিতে পারে। হাসপাতালে নিয়মিত তথ্য অথবা ডেটা সংরক্ষণ, পর্যবেক্ষণ এবং দরকারি তথ্য প্রেরণের দরকার পরে এজন্য রেডিও ওয়েব ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বিষয় থাকে, তাই ভিএলসি পদ্ধতি অথবা লাই-প্রযুক্তি ব্যবহার উত্তম। 

এরোপ্লেনে কয়েকশ যাত্রীর জন্য উচ্চমানের সংকেত ব্যবহার করা সহজ নয়, কিন্তু লাই-ফাই’র মাধ্যমে আলোক তরঙ্গ ব্যবহার করে দ্রæত ভালো পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব।      

ওয়াই-ফাই এবং অন্যান্য রেডিও ওয়েভ তরঙ্গ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট’র মতো জায়গায় ব্যবহার চিন্তার বিষয়, নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে  দ্রæত এবং ইন্টারকানেক্টেড ডেটা সিস্টেম বা পদ্ধতি ডিমান্ড, তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে থাকা আবশ্যক। লাই-ফাই নিরাপদ, অবিচল সংযোগ এরকম জায়গায় অব্যাহত রাখে। তাই সঠিক পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং অর্থনৈতিকভাবে বিশাল সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাস্তবায়ন কাজ সহজ করে।  

পানির নিচে রেডিও তরঙ্গ খুব স্বল্প হয়, এ ধরনের যন্ত্র ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু আলোকরশ্মি পানির নিচে ২০০ মিটার পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে যায়। এজন্য লাই-ফাই মাধ্যম পানির নিচে যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে ভালো।   

 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় কিংবা লেখাপড়া রিসোর্স পেতে ক্লাসরুমে অনেক শিক্ষার্থী একে অন্যের ডিভাইসের সাথে লাই-ফাই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে তথ্য আদান-প্রদান দ্রæত করতে পারে।   

প্রযুক্তিগতভাবে লাই-ফাই কাঠামো

ভিএলসি সিস্টেমে লাই-ফাই প্রযুক্তির ট্রান্সমিটার (প্রেরণকারী) এবং রিসিভার(গ্রহণকারী) নামে দুটি অংশ আছে। আর এই অংশগুলোর কাঠামোতে ফিজিক্যাল, ম্যাক(মিডিয়া এক্সেস কন্ট্রোল) এবং অ্যাপ্লিকেশন নামে ৩টি লেয়ার বা স্তর বিদ্যমান। 

ট্রান্সমিটার 

ভিএলসি ট্রান্সমিটার আলোর মূল উৎস, লাইট এমিটিং ডায়োডের উদ্ভাবন এই কাজ সহজ করেছে, যা ইলেকট্রিক ফিলামেন্ট বা গ্যাস ব্যবহার করেনা। এলইডি যথেষ্ট উজ্জ্বল, নির্ভরযোগ্য আলোক শক্তির কারণে আলো যতদূর পর্যন্ত গমন করে তরঙ্গ ততদূর পর্যন্ত যায়। এলইডি লাইট বাল্ব সাদা হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ, উচ্চক্ষমতা ব্যান্ডউইডথ এবং অনেক ডেটা প্রেরণ করা, যদিও নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন।    

রিসিভার

ভিএলসির রিসিভার অপটিক্যাল ফিল্টার, অপটিক্যাল কনসেন্টেটর এবং অ্যামপ্লিফিকেশন সার্কিট নিয়ে গঠিত। ট্রান্সমিটার থেকে আলো আসে ডেটা প্রেরণ করে, এই আলোকরশ্মি বিকিরণের কারণে অনেক শক্তিশালী হয়না কারণ এলইডি অনেক জায়গাজুড়ে আলো দেয়। আর এই আলোক রশ্মি অপটিক্যাল কনসেন্টটর দ্বারা ধারণ করে সংকেত প্রেরণ করে। এরপরে সংকেত ফটোডায়োডের মাধ্যমে গ্রহণ করে ফটো বিদ্যুতে পরিণত করে। সিলিকন ফটোডায়োড, পিনডায়োড ভিএলসি সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয়। সূর্যের আলো কিংবা অন্য আলোক উৎসের কারণে ভিএলসি সিস্টেমে বাধার কারণ হতে পারে, এজন্য অপটিক্যাল ফিল্টার সংকেত পেতে বাধা না পেতে হয় তার জন্যে ব্যবহার করা হয়। 

ফিজিক্যাল লেয়ার 

ভিএলসি ডিভাইস এবং মাধ্যমের মধ্যে ডেটা প্রেরণে ফিজিক্যাল স্তর ব্যবহারে সম্পর্ক তৈরি করে। ফিজিক্যাল স্তরে ডেটা প্রদান করা হয় আলোক উৎসে পৌঁছানোর আগে, এরপরে সেই আলোক উৎস অপটিক্যাল চ্যানেলের মাধ্যমে সংকেতাকারে ফোটন নির্গমন করে। এই সংকেতগুলোই পরবর্তীতে ফটোডায়োড ডিভাইস দ্বারা গ্রহণ করে, যা আউটপুট ডেটা হিসেবে গমন করে। এতে ক্ষুদ্র ইউনিট বা প্যাকেটের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণে সম্পন্ন করে এবং ডেটা প্রেরণে পরিমাণের ওপর নির্ভর কয়েকটি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেমনÑ১২-২৬৭ কেবিপিএস এর ডেটা গমনের হার, এটি বাসার বাহিরে কার্যক্রমে ব্যবহার হয় এবং এটি ফিজিক্যাল লেয়ার ১। আর ঘরের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী ফিজিক্যাল লেয়ার ২ এর ডেটা প্রেরণের হার ১.২৫-৯৬ এমবিপিএস। অপরদিকে, আলোক উৎস ও ডিটেকটরে ফিজিক্যাল লেয়ার ৩ থাকে, যেখানে উচ্চগতির ডেটা হার ১২-৯৬ এমবিপিএস। 

ম্যাক (মিডিয়া অ্যাক্সেস কন্ট্রোল) লেয়ার 

ম্যাক বা মিডিয়া অ্যাক্সেস কন্ট্রোল স্তর ডেটা প্যাকেট নেটওয়ার্ক থেকে গ্রহণ এবং প্রেরণে ভ‚মিকা রাখে। প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, প্রত্যেক নোডকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য নোডের সাথে যোগাযোগের পথ করে দেয়া। মোট কথা, ম্যাক স্তর ডেটার প্যাকেটকে গন্তব্যে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় এবং ভিএলসি সিস্টেমে এই স্তর মোবাইল সাপোর্ট, ভিজিবিলিটি সাপোর্ট, নিরাপত্তা, নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভরযোগ্য অবস্থা প্রদান করে।   

অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার 

অ্যাপ্লিকেশন স্তরটি ভিপিএন(ভিএলসি পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) বা লাই-ফাই ডিভাইস দ্বারা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনায় খেয়াল রাখে। ডিএমই বা ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট এনটিটি লাই-ফাই বা ভিপিএন কাঠামো সাপোর্ট করে।       

লাই-ফাই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে 

ডাউনলিংক ট্রান্সমিটারে লাইট বাল্ব ব্যবহার করে লাই-ফাই কাজ হয়। লাইট বাল্ব প্রতিনিয়ত দ্রæত বিচ্ছুরিত হতে থাকে, একারণে বিমান কিংবা হাসপাতালে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার না করে লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তি কার্যক্রম খুব সাধারণ, যদি লাইট এমেটিং ডায়োড চালু থাকে ডিজিটালভাবে এক (১) নির্দেশিত হবে এবং অফ থাকলে শূন্য (০) নির্দেশিত হয়। এলইডি খুব দ্রæত চালু ও অফ হয়, এ জন্য ডেটা  দ্রæত প্রেরণের সুযোগ তৈরি হয়। এলইডি এবং কন্ট্রোলার দরকার যা ডেটাকে এলইডির আলোর বিচ্ছুরণ সংকেতাকারে প্রেরণ করবে। বাল্বে যত এলইডি থাকবে, তত ডেটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ওয়াই-ফাইয়ের মতো রাউটার ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণের বদলে এলইডি লাইট বাল্ব ভিজিবল লাইট স্পেকট্রামের মাধ্যমে ডেটা পাঠায়। কারণ বাসাবাড়ির এলইডি বাল্ব থেকে আলোক তরঙ্গের মাধ্যমে লাই-ফাই প্রযুক্তি কাজ করে। ভিজিবল লাইট বা আলো যত বেশি প্রশস্ত হবে তত বেশি ব্যান্ডউইডথ হবে। লাই-ফাই সুবিধাসংবলিত ডিভাইস ব্যাপক পরিমাণ ডেটা গ্রহণ কিংবা প্রেরণ  দ্রæতগতিতে ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে পাঠাতে পারবে। 

 লাই-ফাই দেয়ালের ভেতর দিয়ে তরঙ্গ প্রেরণ করতে পারেনা, আলোক উৎস কাজের জায়গায় অ্যাকটিভ থাকতে হবে। যদি লাই-ফাই আপনার স্মার্ট ঘরে পরিচালিত করতে চান তাহলে এলইডি লাইট ঘরজুড়ে রাখতে হবে। ব্যাপকহারে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণকে ভিএলসি বা ভিজিবল লাইট কমিউনিকেশন হিসেবে নির্দেশিত করা হয়। ভিএলসি ৪০০ টিএইচজেড থেকে ৮০০ টিএইচজেড মধ্যে ডেটা প্রেরণ করে। ডেটার পরিমাণ ১০০ এমবিপিএসের চেয়ে বেশি করা সম্ভব উচ্চ গতি সম্পন্নের এলইডি ব্যবহার করে।    

লাই-ফাই প্রযুক্তির সুবিধা 

লাই-ফাই প্রযুক্তি ইনফ্রারেড লাইট, উজ্জ্বল আলোক রশ্মির ওপর ভিত্তি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমনÑ

দ্রুত ডেটা প্রেরণ 

লাই-ফাই উদ্ভাবনের পেছনে তথ্য বা ডেটা ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে  দ্রæত প্রেরণ করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে আলোক রশ্মির ব্যাপ্তি ও ডেটা প্রেরণের ধারণক্ষমতা রেডিও মাইক্রোওয়েভ পরিসরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লাই-ফাইয়ের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে লক্ষ্য করে নিশ্চিত করেছে, প্রতি সেকেন্ডে আলোক রশ্মি ২২৪ গিগাবিটস পর্যন্ত গতিতে উভয়দিকে গমন করতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ডেটা প্রতি সেকেন্ডে ২০ মেগাবিটসে প্রেরণ করে এবং গতি দূরত্ব ও বাধার ওপর নির্ভর করে। ওয়াই-ফাইয়ের ৩০০ গিগাহার্টজ রেডিও স্পেকট্রামের তুলনায় লাই-প্রযুক্তির ভিজিবল লাইট স্পেকট্রাম ১০০০ গুণ বিশাল হয়। এজন্য লাই-ফাইয়ের মাধ্যমে ডেটা ১০০ গুণ  দ্রæত প্রেরণ করা সম্ভব হয়।    

নিরাপদ 

আলোক রশ্মি দেয়াল বা অন্য কোনো বাধার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারেনা, নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে এর গমন আবদ্ধ থাকে। ইনফ্রারেড আলো এবং উজ্জ্বল বিকিরণের সমতুল্য। লাই-ফাই যন্ত্র এবং ডেটা নির্দিষ্ট জায়গার ভেতর সংকেত প্রেরণ করে। এই কারণে ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে নিরাপত্তার ধাপ দিয়ে উত্তম। 

সাশ্রয়ী এবং কার্যকর 

লাই-ফাই অনেক বেশি শক্তি কার্যকরভাবে ধরে রাখতে পারে এবং এলইডি বাল্বের কারণে সাশ্রয়ী। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমনÑ রাউটার, মডেম, সিগন্যাল রিপিটর, ওয়েব অ্যামপ্লিফায়ার এবং অ্যান্টিনা ব্যতীত ঘর এবং অফিস-আদালতের খরচ সাশ্রয় করে। এই ডিভাইসগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হয়, কিন্তু লাই-ফাই প্রযুক্তিতে এলইডি লাইট কাঠামোতে থাকাতে অতিরিক্ত খরচ হয়না। পিউরলাইফাই কোম্পানির সোলার সেল ওয়্যারলেস ব্যাটারি চার্জ এবং স্বতঃস্ফূর্ত ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবস্থা করে।    

সহজলভ্যতা

প্রত্যেকটি লাইট উৎস আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগে যুক্ত করতে পারে। ভবিষ্যতে যখন লাই-ফাই প্রযুক্তি সর্বত্র আসবে, তখন রাস্তার লাইট, বাড়ির লাইট এবং যানবাহনের লাইট ওয়্যারলেসের মাধ্যমে যুক্ত হবে এবং আপনি যেখানেই থাকুন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।  

লাই-ফাইয়ের অসুবিধা 

যদিও লাই-ফাই দ্রুত, নিরাপদ সেবা প্রদান করে, তবুও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমনÑ

যোগাযোগ পরিসর সীমিত 

লাই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার নিরাপদ হলেও নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া লেড আলো ব্যাপ্তি থাকেনা, আরেক ঘর কিংবা অফিসের অন্য কক্ষে এর ব্যবহার করা যায় না। সেই তুলনায় ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি রেডিও মাইক্রোওয়েবে হওয়ায় অনেক সুবিস্তৃত পরিসরে নেটওয়ার্ক সুবিধা প্রদান করে।   

সেটআপ খরচ ব্যয়বহুল 

এলইডি লাইটের কারণে লাই-প্রযুক্তি ব্যয় কিছুটা স্বল্প, কিন্তু ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় এই প্রযুক্তি সেটআপ ব্যয়সাপেক্ষ। প্রত্যেক ঘরে ভিন্ন করে লাই-ফাই সুইচ নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহার করতে হয়।      

লাই-ফাই প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রুংর, গতির জন্য বেশ জনপ্রিয় হলেও আলো থাকা এই প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ করে এবং নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া ব্যবহার করা যায়না। এই বিষয়গুলো থাকা সত্তে¡ও প্রযুক্তিবিদরা আশাবাদী, কারণ প্রত্যেকটা লাইট বাল্ব ডেটা প্রেরণ করে বিশ্বকে নিরাপদ ও দ্রæত প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করে কাজে গতি আনবে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।