https://gocon.live/

বিশেষ স্বরণে

আজও ভুলিনি কাদের ভাইকে

আজও ভুলিনি কাদের ভাইকে আজও ভুলিনি কাদের ভাইকে
 

এখন জুলাই ২০২২। তেমনি এক জুলাইয়ে, সেই ২০০৩ সালের ৩ জুলাইয়ে কমপিউটার জগৎ পরিবার তো বটেই, সাথে সাথে এ দেশের প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট মানুষ হারায় তাদের এক প্রিয় মানুষকে। বিভিন্ন মহলে এদেশের ‘তথ ̈প্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক’ অভিধায় অভিহিত এই মানুষটি আমাদের কাদের ভাই। দুই দশকেরও আগে মাত্র সামান ̈ কয়টি বছর আমি তার সান্নিধ ̈ পেয়েছিলাম। এই কয় বছর তার প্রতিটি ব্যবহার ও কর্মকুশলতায় সত্যিই তিনি আমার কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক অনন্য ̈ শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যার কাছে আসা প্রতিটি মানুষকে তিনি তার প্রাপ্য ̈ সম্মান ও আদর-শ্নেহ-ভালোবাসা দিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। এর বিনিময়ে কার্যত তিনি নিজে তাদের কাছে হয়ে উঠতেন অনন্য ̈ এক শ্রদ্ধার প্রাত্র।


উনিশটি বছর ধরে আমরা কমপিউটার জগৎ পরিবার পথ হাঁটছি ‘কাদের ভাই বিহীন’ এক পরিবেশে। পরিবর্তিত নানামাত্রিক পরিস্থিতিতে প্রকাশ করে চলেছি তার সন্তানতুল্য ̈ পত্রিকা কমপিউটার জগৎ’। তবে এই সময়েও আমরা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছি তার রেখে যাওয়া নীতি-আদর্শ : জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার অগ্রাধিকার। তার


শেখানো সাংবাদিকতা সৃজনশীল ধারা: সাংবাদিকতাকে রূপান্তর করতে হবে আন্দোলনে, যার মোক্ষম হাতিয়ার হবে একটি পত্রিকা। তাই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমরা আজও ভুলিনি কাদের ভাইকে। আর ভোলার কথাও নয়। কারণ, তিনি মাত্র কয় বছরের প্রকাশনাসূত্রে কমপিউটার জগৎ পরিবারকে দিয়ে গেছেন এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ও সুপরিচিত তথ্য প্রযুক্তি মাসিক কমপিউটার জগৎ’-এ। আর তিনি তার কর্মতৎপরতার মাধ্যমে বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে হয়ে ওঠেন তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সমধিক আলোচিত এক নাম। বিভিন্ন মহলে আজও তিনি অভিহিত হন ‘বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক’ অভিধায়। আর কমপিউটার জগৎ আজ এদেশে পরিচিত তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের এক হাতিয়ার হিসেবে।


সে যাই হোক, অল্প কয় বছরে যে কাদের ভাইকে আমি দেখেছি,তাতে মনে হয়েছে তিনি ছিলেন এক সম্পূর্ণ মানুষ। একজন সম্পূর্ণ মানুষ আমরা তাকেই বলি, যিনি তার অবস্থান থেকে জীবনে তার ওপর আরোপিত সব দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে যেতে পারেন। যেহেতু তিনি একটি পরিবারের, একটি সমাজের ও সেই সাথে একটি দেশের একজন; তাই  তাকে পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেই হয়ে উঠতে হয় একজন সম্পূর্ণ মানুষ। পরিবার, সমাজ ও দেশের সবার প্রতি আছে তার দায়িত্ব পালনের ভার। এসব দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন যথেষ্ট সচেতন ও সেই সাথে নির্মোহ। এর বিনিময়ে কারো কাছ থেকে তিনি কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা কখনই করেননি। সে কারণেই তার আরেক পরিচয় ছিল ‘নির্মোহ প্রচারবিমুখ এক মানুষ’। তিনি তার নিজের পরিবার ও ভাইদের ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করাসহ তার এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা উন্নয়নে যে সুপরিকল্পিত ও অসমান্তরাল অবদান রেখে গেছেন, তা আমরা শুধু জানতে পারি তার মৃত্যুর পর।


কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল কাদের আমাদের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার জগতে চলে গেছেন আজ থেকে ১৯ বছর আগে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যেন এই কিছুদিন আগেও আমি কমপিউটার জগৎ অফিসে তার সাথে বসে লেখাজোখা নিয়ে আলাপ করেছি। সে স্মৃতি আজও জায়মান, যা মনের অজান্তে মাঝেমধ্যেই আমাকে তাড়িত করে। কমপিউটার জগৎ অফিসে এলে কাদের ভাই সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষীয় চেয়ারে না বসে বসতেন অতিথিদের জন্য রাখা সাধারণ চেয়ারে, যদিও তিনি ছিলেন এর কর্ণধার। স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় কথা সেরে চলে যেতেন। তবে সবার কাজের প্রতি ছিল তার তীক্ষè নজর, যা ছিল তার প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচায়ক। স্বল্পভাষী কাদের ভাই কথা বলতেন নিচু স্বরে । মার্জিত শব্দ প্রয়োগে; ছোট-বড় সবার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল থেকে। এর বিনিময়ে তিনি নিজের করে নিতেন তার জন্য অপরের শ্রদ্ধা।


সর্বোপরি আমার কাছে তিনি একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না, তিনি তার কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে কখন যে হয়ে ওঠেন এক ইনস্টিটিউশন, তা তিনি নিজেই জানতেন না। কিন্তু আমরা যারা বাংলাদেশের প্রযুক্তি জগতের সাথে কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম, তারা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিÑ তিনি ব্যক্তি থেকে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন এক ইনস্টিটিউশনে। তার এই রূপান্তর এমনি এমনি ঘটেনি। এর পেছনে নিয়ামক ছিল তার নির্মোহ কর্মসাধনা। একটি ইনস্টিটিউশন হিসেবে তিনি কাজ করে গেছেন এক মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সে লক্ষ্য ছিল : এ জাতিকে সব মহলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্যদিয়ে অগ্রগতি আর সমৃদ্ধি বর্ণশিখরে পৌঁছানোর। আর এ জন্য প্রয়োজন ছিল জাতীয় জীবনে একটি সার্বজনীন প্ল্যাটফরম তৈরির। আর এ ক্ষেত্রে তিনি ‘মাসিক কমপিউটার জগৎ’-কে গড়ে তুলেন সে ধরনেরই একটি প্ল্যাটফরমে। একই সাথে এক সময় আমরা দেখলাম, কমপিউটার জগৎ আর অধ্যাপক


আবদুল কাদের মিলেমিশে একাকার। এই দুই সমান্তরাল সত্তা এক সময় পরিণত হয় এক শঙ্কর-সত্তায়। ফলে কমপিউটার জগৎ-এর নাম উচ্চারিত হলে সেখানে অবধারিতভাবে চলে আসে অধ্যাপক কাদেরের নামটি। উল্টোদিকে অধ্যাপক কাদেরের নামটি উচ্চারিত হলে সেখানে চলে আসে কমপিউটার জগৎ-এর নামটি। সে জন্য বলছি কমপিউটার জগৎ ও অধ্যাপক কাদের এখন যেন এক শঙ্করায়িত ইনস্টিটিউশন।


এ ধরনের একজন মানুষকে ভুলে থাকা যায় না। তাই হয়তো আজও ভুলিনি। যতদিন বাঁচি হয়তো তাকে ভুলতে পারব না। তার আজকের এই ধরণের দিনে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা : আল্লাহ তুমি তাকে জান্নাতে ফেরদৌসে দাখিল করুন








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।