অক্সিজেট বুয়েট উদ্ভাবিত কমদামের ভেন্টিলেটর
অক্সিজেট বুয়েট উদ্ভাবিত কমদামের ভেন্টিলেটর
অক্সিজেট বুয়েট উদ্ভাবিত কমদামের ভেন্টিলেটরভেন্টিলেটর। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বহুল আলোচিত একটি যন্ত্রের নাম। এটি রোগীদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েটের একটি গবেষক দল উদ্ভাবন করেছে কমদামের একটি ভেন্টিলেটর। এর নাম দেয়া হয়েছে অক্সিজেট (OxyJet)। এটি বাংলাদেশের মতো ব্যাপকভাবে কোভিড সংক্রমিত দেশে শ্বাসকষ্টে ভোগা করোনা রোগীদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহে জীবনদায়ী যন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি কম দামের হলেও ভালো চাপে উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সরবরাহের ভেন্টিলেটর। এটি চালাতে কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।অক্সিজেট হাতে গবেষক দলের নেতা অধ্যাপক ড. তৌফিক হাসানবুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই গবেষক দলে রয়েছেন: ¯œাতক গবেষণা সহকারী মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ আলমান ও ফারহান মুহিব, প্রভাষক কায়সার আহমেদ ও সাইদুর রহমান এবং এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌফিক হাসান। ড. হাসানের তত্ত¡াবধানে এই গবেষণার সার্বিক কর্মকাÐ পরিচালিত হয়। এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল টিমে রয়েছেন অভিজ্ঞ চিকিৎক-ব্যক্তিত্ব। এরা এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি সার্বিকভাবে দেখাশোন করবেন। এই গবেষক দলের উদ্ভাবিত ‘অক্সিজেট’ নামের এই সি-পিএপি (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ার-ওয়ে প্রেসার) ভেন্টিলেটর কোভিড ও অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।এই গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মতেÑ অক্সিজেটে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় পজিটিভ প্রেসারে উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন কার্যকরভাবে সরবরাহ করা যাবে। করোনাভাইরাসমানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে, যার ফলে রোগী শ্বাসকষ্টে ভোগেন। এসব রোগীর প্রয়োজন হয় অক্সিজেন ভেন্টিলেটর। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অক্সিজেট হচ্ছে একটি সি-পিএপি ভেন্টিলেটর। এটি মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎস থেকে জেট-মিক্সিং প্রিন্সিপল ব্যবহার করে বায়ুর ও অক্সিজেনের মিশ্রণের উচ্চ-প্রবাহ সৃষ্টি করে। বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল বিভাগের এই গবেষণা প্রকল্পের দলনেতা ড. তৌফিক হাসান জানিয়েছেন, এটি প্রতিমিনিটে ৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। হাই-ফ্লো অক্সিজেন সৃষ্টি করতে প্রয়োজন হয় একটি সি-পিএপি ভেন্টিলেটর। প্রচলিত একটি ভেন্টিলেটরের দাম ১ লাখ টাকার মতো। অক্সিজেট কিনতে এত বেশি টকা লাগবে না। তা ছাড়া এটি এ সমস্যা সমাধানে আরো বেশিকার্যকর। প্রথমত, এই প্রকল্প সূত্রমতে এই সিস্টেমটি পুরোপুরি মেকানিক্যাল এবং এর জন্য কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। প্রচলিত সি-পিএপি’র তুলনায় এটি অক্সিজেটের একটি অতিরিক্ত সুবিধা। প্রচলিত সি-পিএপি চালনার জন্য প্রয়োজনঅব্যাহত বিদ্যুৎ। কিন্তু অক্সিজেটে এর প্রয়োজন নেই। সে কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিংবা অ্যাম্বুলেসে এটি ব্যবহার সুবিধাজনক।দ্বিতীয়ত, অক্সিজেট কিনতে লাগবে মাত্র ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত পুরো সিস্টেম, মাস্ক ও সিলিন্ডার অন্যান্য খরচ। সহজেই অনুমেয়, প্রচলিত সি-পিএপি ভেন্টিলেটরের তুলনায় এর দাম একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। এই গবেষক দলের দলনেতা বলেন,‘কনভেনশনাল সি-পিএপি ব্যবহার করে একটি ভেন্টেড মাস্ক, যা এয়ারোসালাইজেশনের মাধ্যমে ভাইরাস পার্টিকল বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। আর আমরা ব্যবহার করি ভাইরাল ফিল্টারসমৃদ্ধ টাইট-ফিটেড নন-ভেন্টেড একটি সি-পিএপি মাস্ক, যা কমিয়ে আনে দূষণ সংক্রমণ।’তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সব ধরনের প্রচলিত সি-পিএপির ইনলেটে অক্সিজেন পোর্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে না। অতএব এতে সুযোগ নেই ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন কনস্ট্রেশনের (FiO2)। অক্সিজেট সি-পিএপি ডিজাইন করা হয়েছে হাইপোক্সেমিক রোগীদের কথা মাথায় রেখে এবং তা জোগান দেবে ১০০ শতাংশ FiO2। তা ছাড়া ডাক্তারদের জন্য অক্সিজেট ব্যবহার খুবই সহজ। কারণ, এর ইউজার ইন্টারফেসে রয়েছে একটি ফ্লো-মিটার নব (nob), যা ঘুরিয়ে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ানো-কমানো যায়।’ এ প্রকল্প সম্পর্কে মীমনূররশিদ বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে সব হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে। আইসিইউ সঙ্কট ও বিদ্যুৎ সমস্যাও বাড়ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অক্সিজেট রোগীদের জন্য সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। এর দাম কম। এর জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। এর সাহায্যে উচ্চ-প্রবাহের অক্সিজেন সরাসরি রোগীকে সরবরাহ করা যাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে। এই গবেষক দল মনে করেÑ এই প্রকল্পটি প্রতিশ্রæতিশীল। কারণ, এটি এমনকি মহামারী-উত্তর সময়ের রোগীদের জন্য কমদামের সাশ্রয়ী জ্বালানির একটি মূল্যবান উচ্চ চাপের অক্সিজেন প্রবাহ যন্ত্র। এটি আরো উন্নয়নেরপর্যায়ে ছিল বিগত ১০ মাস। এখন এটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর দামও অবিশ্বাস্য মাত্রায় কম। এটি হতে পার ‘হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা’র বিকল্প।ড. তৌফিক হাসান এর বৃহদাকার উৎপাদন সম্পর্কে বলেন, আমরা পরিকল্পনা করছি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে এর ডিজাইনকে ওপেন-সোর্স করার জন্য। বৃহদাকার ও ব্যাপক উৎপাদনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বুয়েট প্রশাসন। ড. তৌফিক হাসান আরো বলেনÑ আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশসহ অন্যান্য যেসব উন্নয়নশীল দেশে আইসিইউ সুবিধা সীমিত, সেসব দেশে এই ডিভাইসটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড যদি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তখন সারা দেশে অক্সিজেটের প্রয়োজন বেড়ে যাবে। এই ডিভাউসটি তখন হয়ে উঠবে আশার আলো। তখন আমরা অনেক গুরুতর রোগীর জন্য সহজে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম হব। এটি বিদ্যমান আইসিইউ সমস্যা অনেকটা কমিয়ে আনবে।’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জগৎ থেকে এ ধরনের একটি কম খরচের মেডিক্যাল ডিভাইসের কার্যকর উদ্ভাবন খুবই উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ। এই সি-পিএপি ডিভাইস সেইসব দেশের জন্য কার্যকর সমাধান হতে পারে, যেগুলো ভয়াবহ কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করছে।
আরও পড়ুন
মতামত দিন আপনার ইমেল প্রকাশিত হবে না।
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।
রিভিউ ( ০ / ৫ )
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।
০ টি মন্তব্য