সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ও প্রচলনকে প্রযুক্তিবান্ধব করা জরুরি
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির চরম আত্মোৎসর্গের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের মানুষ অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছে বাংলা ভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার এক মহান ব্রতে। এই ভাষার দাবি কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল স্বাধিকারের আন্দোলন। এরই প্রেক্ষাপটে পরিচালিত হলো সশস্ত্র সংগ্রাম; অর্জিত হলো আমাদের মহান স্বাধীনতা। বাংলা ভাষাকে বিশ্বপরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম কখনো থেমে ছিল না। অবশেষে ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো কানাডা প্রবাসী বাঙালি তরুণদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে একুশের চেতনা ধারণ করে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর ২০০০ সালের ১৬ মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদাসহকারে বিশ্বের প্রতিটি দেশ উদযাপন করবে। উল্লেখ করা হয় বিশ্বব্যাপী সব মানুষের ভাষার সুরক্ষা এবং উপস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি করাই হবে লক্ষ্য। এ হচ্ছে ভাষাপ্রেমিক বাঙালি জাতির বিশাল অর্জন।
সর্বস্তরের বাংলা ভাষার প্রচলনকে গুরুত্ব দিয়েই ভাষা বিকাশের ধারাকে উজ্জীবিত রাখতে হবে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার বিকাশ সাধনে গবেষণা, অনুবাদ, পরিভাষা, শুদ্ধ ভাষার কথন ও উচ্চারণ, প্রমিত বাংলা বানানরীতি, ভাষানীতি ইত্যাদি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মাতৃভাষা বাংলার বিকশিত রূপই একদিন তাকে জাতিসংঘের ব্যবহারিক ভাষার দাবিতে পরিণত করবে এবং বাংলা হবে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। আর এভাবেই বাংলা ভাষা বিশ্বায়নের ওপরে এক গভীর ও সুবিশাল প্রভাব বলয় তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরো মুখরিত করে তুলবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের তাদের স্ব-স্ব মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভাষার ওপর কোনো ঔপনিবেশিক চাপ, চক্রান্ত ও ভাষাদূষণের মতো ন্যক্কারজনক কাজকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার জন্য ভাষাপ্রেমিক সব মানুষের প্রধান কাজ।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনকে গুরুত্ব দিয়েই ভাষা বিকাশের ধারাকে উজ্জীবিত রাখতে হবে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার বিকাশ সাধনে গবেষণা, অনুবাদ, পরিভাষা, শুদ্ধ ভাষার কথন ও উচ্চারণ, প্রমিত বাংলা বানানরীতি, ভাষানীতি ইত্যাদি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মাতৃভাষা বাংলার বিকশিত রূপই একদিন তাকে জাতিসংঘের ব্যবহারিক ভাষার দাবিতে পরিণত করবে এবং বাংলা হবে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। আর এভাবেই বাংলা ভাষা বিশ্বায়নের ওপরে এক গভীর ও সুবিশাল প্রভাব বলয় তৈরি করবে।
বাংলা বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা ও সরকারি ভাষা। এক কালের ‘ভাবের ভাষা’ একালের কাজের ভাষাও বটে। বাংলাদেশের সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি অফিস, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রসমূহ, সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও সমাজ জীবনের বিভিন্ন স্তরে বাংলা ভাষা বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, মননজীবী সবাই তাদের ধ্যান-ধারণায়, চিন্তা-চেতনায় ও কর্মজীবনে নানাভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দ, সুখ ও গর্বের বিষয়। কেননা ভাষা স্থবির নয় বরং জঙ্গম। তা প্রবাহমান নদীর মতো দু’কূল ছাপিয়ে চলে উদ্দাম গতিতে। পথে নানা স্থান হতে সংগৃহীত হয় নানা উপকরণ, যা ভাষাকে সতত সমৃদ্ধ করে চলে। তাই ভাষার বহুমাত্রিক ও কলেবর ক্রমাগত বেড়েই চলে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, কালের পর কাল। যুগ যুগ ধরে ভাষা সমৃদ্ধশালী হয়। পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয় নতুন আঙ্গিক ও অবয়বে।
বাংলা অনেক সমৃদ্ধ ভাষা। এর শব্দভাণ্ডার অফুরন্ত। রয়েছে নানা বৈচিত্র্য এবং মাধুর্য। শিক্ষিত সমাজ, শিক্ষকদের এবং গণমাধ্যমের জন্য একটি পরিমিত বাংলা ভাষা দরকার। শিক্ষকরা যদি নিজেই ভালো বাংলা না বলতে পারেন তাহলে শিক্ষার্থীদের শেখার কোনো সুযোগ নেই। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করার আগে জরুরি হলো আমরা শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে এবং লিখতে পারি কি না তা যাচাই করা। যারা বাংলায় লেখালেখি করেন তারা অবগত আছেন ব্যাকরণসম্মতভাবে বাংলা বাক্য তৈরি করা এবং শুদ্ধ বানানে বাংলা শব্দ লেখা কতটা কঠিন। প্রথমত, আমাদের কতকগুলো বিষয় আইনগত বাধ্যবাধকতার ভেতর নিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই সর্বস্তরে বাংলা চালু হোক, বাংলা ভাষা যথাযথ মর্যাদা পাক কিন্তু এই ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে তা সম্ভব হবে না।
এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকেও আধুনিক প্রযুক্তির ভাষা হতে হবে। নইলে বাংলাদেশ বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাবে। বাংলা ভাষাকে এগোতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারিই পারে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে যাওয়ার সেই উদ্দীপনা দিতে। ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষাবিদদের পাশাপাশি রাষ্ট্র এবং প্রযুক্তিবিদদেরও সক্রিয় হতে হবে। মায়ের ভাষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রযুক্তিমনস্ক সরকার ক্ষমতায়। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও চর্চা এবং ভাষাকে টেকসই করায় বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে উৎসারিত সরকারি কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যার ও টুলসের ব্যবহার শুরু হলে তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাংলা ভাষাকে বৈশ্বিকরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ডিজিটাল ডিভাইসে আরও ভালোভাবে এবং সহজে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও অনুবাদ সহজ হবে।
যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগে এগিয়ে আছে, তারা সবাই প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার ব্যবহার করছে। চীন আমাদের সামনে বড় উদাহরণ হতে পারে। চীনা ভাষার অক্ষরগুলো অত্যন্ত জটিল, কিন্তু তারা থেমে থাকেনি। প্রযুক্তিতে মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ায় বর্তমানে চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বহু আগেই ৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে আমাদের দেশে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার চর্চা হলেও এ মুহূর্তে বাংলায় ভালো কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের ১৭ কোটির বেশি মোবাইল ফোন, ১৩ কোটিরও বেশি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ কোটির বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে মাতৃভাষায় ভালো ভালো কনটেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হবে। আর তা করা হলে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্ঞানার্জন এবং তথ্য ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে না, মাতৃভাষাকে বাঙালির মাঝে চিরঞ্জীব করতে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান নিয়ে অংশীজনের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সংলাপ ও নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচনায় বেরিয়ে আসছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যাটার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের ভূমিকা রয়েছে। এই কনসোর্টিয়াম আমাদের ভাষায় এমন জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য না করে তারা আমাদের বাংলা ভাষাকে দেবনাগড়ির অনুসারী করে রেখেছে। এতে আমাদের প্রচণ্ডরকম ক্ষতি হয়েছে এবং বাঙালিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এই জন্যই এখনো আমাদের নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হয়। অথচ বংলা বর্ণে কোনো নোক্তা নেই। ইউনিকোড যদি বাংলাকে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলত, তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন ফেস করতে হচ্ছে তা করতে হতো না।
আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে দেয়াল আছে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে নীতিনির্ধারকরা উল্লেখ করেন। দেরি করে হলেও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে ২০১০ সালে। তারপরও ইউনিকোড কনভার্সনে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়; এই অপরাধ ইউনিকোডের। তাই এখনো আমরা ইউনিকোডের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাই তাদের মেধা-মনন দিয়ে এই যুদ্ধ জয় করবে বলে সংশ্লিষ্ট ও বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
ইউনিকোডে বাংলা লিপি ঢ-ঢ়, ড-ড়, য-য়-তে সমস্যা থাকাতে বড় তথ্য (বিগ ডাটা) বিশ্লেষণ, সার্চ ইঞ্জিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এবং ইন্টারনেট অব থিংসে বেশ সংকট দেখা দিচ্ছে। মুদ্রণ জগতে ইংলিশ লিপির সাথে বাংলা লিপির সাইজের ক্ষেত্রে তারতম্য। বিভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারে বাংলা লিপিতে চন্দ্রবিন্দুর ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ করা যায়। যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট। বাংলা ডাটা মাইনিং এখনো ইন্ডাস্ট্রির সমতুল্য হয়নি। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল করতে দেখা যাচ্ছে বাংলা করপাসে বেশ সমস্যা। বাংলা লিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন নীতি থাকা দরকার। স্পেল চেকার, অভিধান, ওসিআর ইত্যাদিসহ বাংলা লিপি ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলা লিপি নিয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে কাজ না করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কয়টি সমস্যা তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করতে হবে। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে আরো সোচ্চার হতে হবে।
বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যা ৩৫ কোটি। ১৯৫২ সালে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা। ভাষা কোনো অবস্থাতেই বন্দি জীবনযাপন করে না। আমরা চতুর্থ শিল্পবিল্পবের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছি। এই সময় যদি ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারে সংকট দূর করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা হারাবে।
সংস্কৃতি মানুষের আত্মার কাজ করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিকেন্দ্রিক আমাদের নিজস্ব একটি সংস্কৃতিবলয় তৈরি হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন। ভাষা আন্দোলনে মুখ্য-চাওয়া ছিল মাতৃভাষা বাংলা টিকিয়ে রাখা। কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। না-হলে মাতৃভাষার আন্দোলনে বিজয় পাওয়ার পরেও আন্দোলন টিকে থাকত না। বলা যেতে পারে, স্বাধীনতা অর্জন করাটাও ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এ দেশের জনগণের ভাষা ছিল সব সময়ই বাংলা। কিন্তু একাত্তরের আগের শাসকদের ভাষা সব সময়ই ছিল অন্য।
সাতচল্লিশের আগে প্রায় দুইশ বছর ছিল ইংরেজি। তার আগে কখনো সংস্কৃত, কখনো ফারসি বা ইউরোপীয় কোনো এক ভাষার লোকরা এ দেশের জনগণকে শাসন করেছে। আমরা যদি সাতচল্লিশ থেকে ভাষা-আন্দোলন করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে ব্যর্থ হতাম তাহলে এখনো হয়তো বিদেশি বা ভিন্ন ভাষার লোকেরা শাসন করত।
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন একটি সম্মানজনক ও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের নাম উচ্চস্বরে ব্যবহার হচ্ছে, বাংলাদেশ আজ এক উন্নয়নের মডেল। নতুন বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, আবার দক্ষতার সাথে সফলভাবে সেগুলো মোকাবিলা করছে। এমডিজি ও এসডিজি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে, এখনো রাখছে। জাতীয়তাবাদের চেতনায় আমাদের সব সময় এগিয়ে যেতে হবে। বাঙালি অতীতে কখনো হারেনি, ভবিষ্যতেও হারবে না। দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতায় আমাদের বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে দেশের মানুষকে নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছে, প্রাণ দিতে হয়েছে। আমরাই একমাত্র সাহসী জাতি যারা একটি প্রশিক্ষিত, সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে তাদের পরাজিত করেছি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষকে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করতে থাকে। মাত্র ৮ শতাংশ উর্দুভাষী মানুষ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করে যেখানে ৫৬ শতাংশেরও বেশি বাংলাভাষী। বাংলার মানুষ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে।
রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার জাতীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এমন উদাহরণ বিশ্বে বিরল। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন ভাষা আন্দোলনকে বিশ্ব ইতিহাসেরও গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত করে।
বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে নিজের ভাষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলায় বক্তৃতা করে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পরিচয় করানো নয়, বাঙালির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বার্তাও পৌঁছে দেন।
কিন্তু যে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এত আন্দোলন, এত আত্মত্যাগ সেই ভাষা আজ কতটা টেকসই? শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাকে ইংরেজির চেয়ে কঠিন মনে করে। ইংরেজি ভাষার আগ্রাসনের কারণে অনেক দেশের ভাষাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।
১৯৫২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৭০ বছর হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক বড় বাধার মুখোমুখি হয়েছে, আমরা তা অতিক্রম করেছি এবং আমরা এখনও সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছি। যতদিন আমরা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি মনে রাখব, ততদিনই আমরা অদম্য থাকব। যতদিন আমরা আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মনে রাখব; ততদিন বাংলাদেশকে কেউ আটকাতে পারবে না।
বাংলা পৃথিবীর অন্য দশটা ভাষার মতো সাধারণ ভাষা নয়। বাংলা ভাষার শক্তি অনেক সুদৃঢ়। বিশ্বের কোনো ভাষারই এমন কোনো উচ্চারণ নেই, যা বাংলা হরফ দিয়ে লেখা যায় না। এমনকি চীনা ভাষায় হাজার হাজার বর্ণ থাকার পরও লেখা যায় না। বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের আগে ডিজিটাল যন্ত্রে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা লেখার কোনো উপায়ই ছিল না। এই সফটওয়্যারে সীসার টাইপের ৪৫৪ বর্ণকে মাত্র ২৬টি বোতামে নিয়ে আসা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের মধ্যে দেশের প্রায় সব পত্রিকা এবং বইসহ বিভিন্ন প্রকাশনা বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রকাশনা ও মুদ্রণশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সরকারের আইসিটি বিভাগ। ১৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য ১৬টি সফটওয়্যার, টুল বা উপাদান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় আইসিটি বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
কথা ছিল, তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্প শেষ হবে ২০১৯ সালে। কিন্তু দুই দফা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এ প্রকল্প এখন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২০২৪ সালে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধযুগ পেরোতে চললেও ১৬টি টুলের মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে মাত্র একটি। প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বাংলা ভাষাভিত্তিক এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃস্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে অভিযোজন করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয় আইসিটি বিভাগ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে ১৬টি টুল উন্নয়নের কথা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলা করপাস, বাংলা থেকে পৃথিবীর প্রধান ১০টি ভাষায় স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক, বাংলা ওসিআর (টাইপ করা ও হাতের লেখা স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ও কম্পোজ), কথা থেকে লেখা ও লেখা থেকে কথায় রূপান্তর সফটওয়্যার, জাতীয় কিবোর্ড (বাংলা), বাংলা ফন্ট রূপান্তর ইঞ্জিন, বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধক, স্টিক্রন রিডার (লিখিত টেক্সট স্বয়ংক্রিয় পড়ে শোনানোর সফটওয়্যার), অনুভূতি বিশ্লেষণ সফটওয়্যার এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য কিবোর্ড। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মুখে উচ্চারিত বাংলা ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পোজ করা যাবে, লিখিত টেক্সট কমপিউটার ডিভাইস পড়ে শোনাবে, মুদ্রিত বই দলিল দ্রুত সফটকপিতে রূপান্তর হবে, বাংলা ভাষায় সঠিক যান্ত্রিক অনুবাদ পাওয়া যাবে এবং এ ভাষার বিশাল মৌখিক ও লিখিত অনুবাদ (করপাস) গড়ে উঠবে। এ কার্যক্রমে উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনআক্স সমর্থিত ৯টিরও বেশি সফটওয়্যার, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সমর্থিত সাতটিরও বেশি অ্যাপস ডেভেলপ করার কথা রয়েছে। টুলগুলো ডেভেলপের মাধ্যমে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি পেতে চেষ্টা চালাবে সরকার।
এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত অবমুক্ত হয়েছে মাত্র একটি টুল। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষায় উচ্চারিত রূপকে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে লেখার জন্য ‘বাংলা টু আইপিএ অটোমেটিক কনভার্টার’ শীর্ষক এ টুল উন্মোচন করা হয়। অনুভূতি বিশ্লেষণে সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস সফটওয়্যারের ডেমো (পরীক্ষামূলক সংস্করণ) উন্মোচন করা হবে। মার্চে উন্মোচন করা হবে বাংলা ওসিআর এবং জুনে বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধকের ডেমো।
এদিকে প্রকল্প নেওয়ার পর বাংলা ভার্চুয়াল সহকারী টুলটি উপযোগিতা হারিয়েছে। এর পরিবর্তে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহৃত বাংলা সাইটগুলো আন্তর্জাতিক ভাষায় রূপান্তর টুল উন্নয়ন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যেই যদি কোনো টুল তার উপযোগিতা হারায়, তবে তা চূড়ান্ত অদূরদর্শিতা। গুগলের অনুবাদক সফটওয়্যারের (গুগল ট্রান্সলেটর) মতো টুলগুলো ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখন গুগল ট্রান্সলেটরে বিভিন্ন ভাষা থেকেই বাংলা ভাষায় মোটামুটি ভালো মানের অনুবাদ মিলছে। সামনে যে আরও টুল তার উপযোগিতা হারাবে না, তার গ্যারান্টি নেইÑ বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
১৩টি টুল ডেভেলপমেন্টে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছে আইসিটি বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রিভ সিস্টেমস ও ই-জেনারেশন এককভাবে তিনটি করে, রিভ সিস্টেমস অপূর্ব টেকনোলজিসের সাথে যৌথভাবে একটি, গিগাটেক, টিম ইঞ্জিন ও বেক্সিমকো কমপিউটার যৌথভাবে দুটি, সেমস জেনওয়েবটু, ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ ও টিটিটি লিমিটেড একটি করে টুল উন্নয়নের কাজ পেয়েছে। গিগাটেক ও বেক্সিমকোর সাথে একটি টুল উন্নয়নে ড্রিম ডোর এবং অন্যটি উন্নয়নে সিসটেক কাজ করছে। সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম, বাংলা চ্যাটবট ও জাতীয় কিবোর্ডের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় থাকায় এখনও টেন্ডারেই যেতে পারেননি প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা।
মানসম্মত টুল উপহার দিতে প্রকল্পটির সাথে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলা একাডেমি, বেসিস প্রতিনিধিসহ বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। মূলত দেশে বাংলা ভাষা ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানি তেমন নেই, যারা এসব টুল উন্নয়নে কাজ করতে পারে। তবে আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে টুলগুলো উন্নয়ন ও গবেষণার (আরএনডি) কাজ করেছি। ২০২৪ সালের আগেই টুলগুলো উন্মোচন করতে চাই।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী ও নানা অংশ সংযোজন-বিয়োজন করা হলেও তৃতীয় অনুচ্ছেদে কোনো আঁচড় লাগেনি। ওই অনুচ্ছেদে তিন শব্দে উল্লিখিত বাক্য ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ প্রথম থেকেই বিদ্যমান। এ নিয়ে কারো কোনো বিরোধিতা নেই। এ বিষয়ে কোনো সংশোধনীর প্রস্তাবনা নেই। বাংলা ভাষার প্রকাশ্য কোনো শত্রুও নেই।
বাংলাদেশে প্রযুক্তির ভাষা ইংরেজি, প্রযুক্তি শিক্ষার ভাষাও ইংরেজি। দেশের প্রযুক্তিবিদ, ব্যবস্থাপকরাও কার্যক্ষেত্রে ইংরেজি ব্যবহার করেন। অধিকাংশ এখনো ইংরেজিনিষ্ঠ। ইংরেজিই তাদের শিক্ষা, আভিজাত্য ও যোগ্যতার মানদণ্ড। ইংরেজিতেই অনেকের ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষিত হয় বলে ইংরেজি ব্যবহারেই তারা বেশি উৎসাহ বোধ করেন।
১৯৮৭ সালে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ এবং ২০১২ ও ২০১৪ সালে সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন, বেতার-দূরদর্শনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণরোধে হাইকোর্টের রুল জারির কার্যকর ফলাফলের তেমন কোনো দৃষ্টান্তও স্থাপিত হয়নি।
জাপানিরা জনসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের ভাষার ব্যবহার আবশ্যিক করেছে। চীনের ভাষার মধ্যে কোনো বিদেশি ভাষার শব্দ-বাক্য মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না বলে সে দেশের সরকার আইন করেছে। আমাদেরও বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা ও বিস্তারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ইংরেজি ভাষার যেমন একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যবহারবিধি আছে, বাংলা ভাষায় সেই ব্যবহারবিধি ভেঙে গেছে। যার যেমন খুশি বাংলা লিখছেন। লন্ডনে আশির দশকে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল স্কুলে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছিল। এই মঞ্জুরি এখন তারা বাতিল করে দিয়েছে। কারণ বাংলায় শিক্ষালাভের জন্য কোনো ছাত্র পাওয়া যায় না। এই ছাত্র না পাওয়ার একটা বড় কারণ বাংলা ব্যবহারিক ভাষা নয়।
আমরা ভাষা দিবস নিয়ে উৎসব করি। ভাষা সংস্কারে মন দিইনি। বাংলা ভাষার আগে টার্কিশ, পর্তুগিজ, ইংলিশ ভাষা থেকে দেদার শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলা ভাষার গ্রহণীশক্তি এই নবপ্রযুক্তির যুগেও অব্যাহত আছে। দরকার মুনীর চৌধুরী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠপুস্তকে তার ব্যবহার এবং জনজীবনেও তার ব্যবহার নিশ্চিত করা।
মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি? জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভাল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ছবি : ইন্টারনেট
০ টি মন্তব্য