https://powerinai.com/

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ
 
বর্তমান সরকার যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়, তার মধ্যে শীর্ষে আছে তথ্যপ্রযুক্তি। এ খাতে দেশ যথেষ্ট এগিয়েও আছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা সহজ হয়েছে। 

গত এক যুগের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা আমাদেরকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি করেছে। দেশের তরুণরা এখন কেবল স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে। বাংলাদেশের অদম্য যাত্রায় অচিরেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।

তথ্যপ্রযুক্তি সেবা কৃষি বাতায়ন ও কৃষক বন্ধু কলসেন্টার চালু করা হয়েছে। ‘কৃষক বন্ধু’-৩৩৩১ কলসেন্টারের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ‘কভিড-১৯’-এ বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ। জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মতো একটি ফোনসেবার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, নিত্যপণ্য সরবরাহসহ সরকারি তথ্য ও সেবা প্রদান করছে। গর্ভবতী নারী, মা ও শিশুর নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মা টেলিহেলথ সেন্টার সার্ভিস তৈরি করা হয়েছে, করোনা ট্রেসার বিডি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিতকরণের কাজ করছে। এছাড়া মিসইনফরশেন, ডিসইনফরমেশন ও ম্যালইনফরমেশন রোধে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিশ্বসভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্বদানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন। আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিক্যাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউমেন, বায়োলজিক্যাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউমেন মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো মাথায় প্রবেশ করাতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ করতে পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল।

বিচারিক কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিচার বিভাগীয় বাতায়ন উচ্চ ও অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগের সব কার্যক্রম নথিভুক্ত করছে। এছাড়া ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৮৭টি নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি সুরক্ষিত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। 

তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। 

কাগজ ও কালির আবিষ্কার এবং পরবর্তীতে ছাপাখানার উদ্ভব মানুষের তথ্য বিস্তারের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যকার পার্থক্যের দেয়ালে চির ধরিয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কমপিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবের ব্যাপকতা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতা ও এ সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থা বিশ্বের সরকারগুলোর সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীনও করেছে। বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পিছিয়ে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বিশেষ ভ‚মিকা রাখছে। ‘মুক্তপাঠ’ বাংলা ভাষায় সর্বৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে যা দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিকসেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। 

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পাঁচটি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেগুলো হলো ডিজিটাল সেন্টার, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড, অ্যাম্পেথি ট্রেনিং, টিসিভি ও এসডিজি ট্রেকার। 

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে সরকার। এছাড়া অনেকগুলো বিধি, নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটির কয়েকটি ধারা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১০ সালে করা হয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন। ২০১৮ সালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। এছাড়া ২০২০ সালে তিনটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ এটুআই বাংলাদেশ ইনোভেশন এজেন্সি আইন, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি আইন এবং ডাটা প্রটেকশন আইন। ডাটা প্রটেকশন আইনটি পাস হলে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষগুলো এ দেশে অফিস করতে এবং দেশের তথ্য দেশের ডাটা সেন্টারে রাখতে বাধ্য হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশের মানুষের ১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন দিন, ৮ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ এবং ১ মিলিয়ন বার যাতায়াত কমেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) চালু করায় মানুষ বাড়ির কাছেই সেবা পাওয়ায় সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমেছে। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটিসেবা সরবরাহ হচ্ছে। এ খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ৩৯টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি শেষ হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চালু হওয়া পাঁচটি পার্কে ১২০টি প্রতিষ্ঠান ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আইটিতে দক্ষ ১৩ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আইওটি, রোবোটিকস, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চপ্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 







০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।