ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন যুব সমাজ এবং ডিজিটাল সংযুক্তি অপরিহার্য। প্রচলিত শিক্ষা চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের উপযোগী না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের বড় অন্তরায়। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী শক্তি হিসেবে তৈরি করাই যুব সমাজের বড় চ্যালেঞ্জ। মন্ত্রী স্মার্ট মানব সম্পদ তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী গতকাল রোববার রাতে ঢাকায় অফিসার্স ক্লাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের ২৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুব সমাজ শীর্ষক সেমিনার ও শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ উপলক্ষ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান, এমপি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.কামরুল ইসলাম, নির্বাহী সভাপতি মো: ইবরাহিম হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ম. হামিদ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব রাশেদুল হাসান শেলী প্রমূখ বক্তৃতা করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো: আবদুস সামাদ।
ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর নামে সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রবর্তনের উদ্যোগকে একটি মহতি প্রচেষ্টা আখ্যায়িত করে বলেন, সৈয়দ নজরুল জাতির চ্যালেঞ্জিং সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহবাসির অহংকার। আমরা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহবাসি গর্ব করে বলতে পারবো মুজিব নগর সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ৫৪‘র যুক্ত ফ্রন্ট ৬২‘র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬‘র ছয় দফা, ৬৮‘র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯‘র গণঅভ্যূত্থান, ৭০‘র সাধারণ নির্বাচন এবং একাত্তরের মহান মুক্তি সংগ্রামে যুব সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, যুবকরাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চালিকা শক্তি। তাদেরকে ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কাগজের বইয়ে লেখা পড়া হয় না। কাগজের বই ডিজিটাল উপাত্তে রূপান্তর করে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানো হচ্ছে। তিনি শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, বিটিআরসির এসওএফ তহবিলের অর্থায়নে ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে আমরা দেশের সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের ২৮টি পাড়া কেন্দ্রে ডিজিটাল যন্ত্রে ডিজিটাল উপাত্ত দিয়ে শিশুদেরকে ডিজিটাল যুগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি ডিজিটাল মানব সম্পদ এবং ডিজিটাল সংযুক্তি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অত্যাবশ্যক উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকা মোবাইলের ফোর জি ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে।
ফোর-জিকে ফাইভজিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া আমরা গ্রহণ করেছি। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিয়েছি। দেশের প্রতিটি গ্রামে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। মন্ত্রী অনুষ্ঠানে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী দিনের চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলার জন্য ডিজিটাল দক্ষতা তোমাদের অর্জন করতেই হবে। আগামী দিনে প্রযুক্তি হবে মানুষের স্থলাভিসিক্ত । ইতোমধ্যেই এআই চ্যাট জিপিটির প্রভাব তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছো। তবে আমরা মানুষের বিকল্প হিসেবে নয়, যতটুকু প্রযুক্তি প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই গ্রহণ করবো। প্রযুক্তি ও মানুষের মিশেলে সরকার স্মার্ট সাম্য সমাজ প্র্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বৃহত্তর ময়মনসিংহের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার চলমান কার্যক্রমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের সহযোগিতার প্রশংসা করেন।
সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে বৃত্তি প্রদান করায় আমরা গৌরব বোধ করছি। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় মো: আবুল কালাম আজাদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মূল প্রবন্ধে মো: আবদুস সামাদ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়সহ বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বৃত্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তির টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।








.png)


০ টি মন্তব্য