রপ্তানি বহুমুখীকরণে তথ্যপ্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে
২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা রয়েছে বাংলাদেশের। দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে তৈরি ডিজিটাল ডিভাইসের রপ্তানি আয় বর্তমানের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। একই সময়ে আইসিটি পণ্য ও আইটি-এনাবল সার্ভিসের অভ্যন্তরীণ বাজারও ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী চার বছরের মধ্যে দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বাজার ধরতে ডিজিটাল ডিভাইস তথা মোবাইল ফোন, কমপিউটার ও ল্যাপটপের মতো আইটি পণ্য বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্প স্থাপনের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ রোডম্যাপ নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)।
এ রোডম্যাপের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হবে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। সম্প্রতি আইসিটি বিভাগের প্রস্তুত করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগের আশা, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আইসিটি এবং আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) পণ্য উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হবে। এটি সরকারের সবার জন্য ডিজিটাল এক্সেস এজেন্ডা বাস্তবায়নেরও সহায়ক হবে।
দেশের উদীয়মান মধ্যবিত্ত ও সচ্ছল শ্রেণির ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ডিভাইস ও কনজ্যুমার গ্যাজেটের চাহিদা আন্তর্জাতিক হাইটেক শিল্পে বাংলাদেশের প্রবেশে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রোডম্যাপে সরকারি কেনাকাটায় দেশে উৎপাদিত আইসিটি পণ্যের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে কেনাটাকায় জড়িত সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি সহজ করতে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইংল্যান্ড বা অন্য কোনো দেশে হাব স্থাপনেরও প্রচেষ্টা চলছে।
নতুন রোডম্যাপটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, পণ্যের মান উন্নয়ন, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বৈশ্বিক চাহিদা নিরূপণ, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি পণ্যের ইমেজ বৃদ্ধি, মেধাস্বত্ব রক্ষা, গবেষণা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সরকারের আইসিটি বিভাগ ছাড়াও বিশাল এ কর্মযজ্ঞে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআই, বিটাক, দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একযোগে কাজ করবে। রোডম্যাপ সফল করতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সংগঠনেরও থাকবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কো-অপারেশন (আইডিসি) সূত্রমতে, ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৪০ লাখ মোবাইল ফোন আমদানি করে বাংলাদেশ, যার মূল্য ছিল ১১৮ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে এদেশের ল্যাপটপ বাজারের মূল্যায়ন ৩০ কোটি ডলার করেছে সংস্থাটি। সম্ভাবনাময় এ অভ্যন্তরীণ বাজারের সুবিধা নিতে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এজন্য দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু সিরিজ প্রণোদনা। আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠাতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়কর রেয়াত ঘোষণা করেছে বিএইচটিপিএ। এছাড়া দেশে এটিএম কিয়স্ক, সিসিটিভি ক্যামেরা উৎপাদনে দেওয়া হবে আমদানি ও রেগুলেটরি শুল্ক অব্যাহতিসহ সম্পূরক শুল্ক ছাড়। এছাড়া, বিনিয়োগকারীরা মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ উপকরণ আমদানিতেও শুল্ক অব্যাহতি পাবেন। এসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’কে উদ্যোগকে গতিশীল করতেই নতুন রোডম্যাপটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
তাছাড়া তুলনামূলক প্রতিযোগী বেতন-কাঠামোয় শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা, স্থানীয় বাজার চাহিদা এবং সরকারি নীতির সহায়ক কাঠামো বাংলাদেশকে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনের আকর্ষণীয় বাজারে পরিণত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছে আইসিটি বিভাগ।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই সফলভাবে প্রোডাকশন লাইন স্থাপনকারী ওয়ালটন, স্যামসাং, অপ্পো, ডেটা সফটের উদাহরণ দিয়ে বিভাগটি বলছেÑ এসব উদ্যোগ আগামীতে স্থানীয়ভাবে ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে আরও উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। তবে রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কিছু বাধাও চিহ্নিত করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ; এর মধ্যে বাংলাদেশে অধিক পুঁজি খরচের দিকটিকে শীর্ষে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষতার অভাব, শিল্প-সহায়ক বাস্তুতন্ত্রের দুর্বলতা, মান নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্তির সমস্যা, সরকারি ক্রয়ে স্থানীয় পণ্যকে অগ্রাধিকার দানে দরকারি বিধিমালার অভাব, স্থানীয় পণ্যের ব্যাপারে জনসচেতনতার অভাব এবং ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুুতকারকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার অভাবকে প্রধান প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কৌশলগত দিক : চারটি কৌশলগত বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন এ রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে : সরকারি-বেসরকারি খাতে স্থানীয় পর্যায়ে সক্ষমতা উন্নয়ন, সচেতনতা সৃষ্টি ও ব্র্যান্ডিং, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং নীতি-সহায়তা। এর আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য স্বল্পমেয়াদে, ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে মধ্যমেয়াদে ও ২০৩১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। স্বল্পমেয়াদে প্রযুক্তিপণ্যের দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে চাহিদা নিরূপণ, সক্ষমতা উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণের কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হবে।
এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোগে আইটিপণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হবে টেস্টিং ল্যাব। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইংল্যান্ড বা অন্য কোনো দেশে হাব স্থাপন করা হবে। আইসিটি বিভাগের সহায়তায় এ সময়ে দেশে আইসিটি খাতের জন্য দক্ষ পাঁচ লাখ কর্মী গড়ে তুলবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ মডিউল ও সিলেবাস তৈরি করবে দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্যান্য দেশের মনোভাব উপলব্ধি ও নেতিবাচক মনোভাব থেকে উত্তরণের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশে উৎপাদিত আইসিটি পণ্যের বিবরণ নিয়ে আইসিটি বিভাগ তৈরি করবে জাতীয় পোর্টাল। তাছাড়া এ সময়ে সরকারি কেনাকাটায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেশীয় পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ডিজিটাল ডিভাইস ও এর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও কর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
আইসিটি পণ্যের উৎপাদনকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর এসব পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনার বিষয়টি দেখবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইসিটি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি কমিয়ে আনার পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির পরিকল্পনা না থাকলে এ ধরনের উদ্যোগে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না। প্রযুক্তি পণ্যের অধিকাংশ উদ্যোক্তা প্রায় শতভাগ উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশীয় কারখানায় শুধু সংযোজন করছেন। এর ফলে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে শুল্কায়ন না হওয়ায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র সংযোজনের কাজ হওয়ায় নামমাত্র লোক নিয়োগ দিয়েই কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই চালু হওয়া চীনা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড শাওমির দেশীয় কারখানায় মাত্র আড়াইশ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ শতভাগ উপকরণ দেশে উৎপাদন করলে, কয়েক হাজার লোক দরকার হতো। আমাদের দেশে শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়া হলেও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের বিষয়টি বরাবরই অবহেলিত থাকছে। কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদন করা না গেলে মূল্য সংযোজন বাড়বে না। কর্মসংস্থানও হবে না। দেশীয় শিল্প হিসেবে প্রযুক্তি পণ্যের উদ্যোক্তাদের করমুক্তিসহ অন্যান্য সুযোগ দিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য সংযোজনে বাধ্যবাধকতা আরোপের ব্যবস্থা করা।
দেশে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও সলিউশন্স খাত একটি স্থিতিশীল অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এখন সফটওয়্যার শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের হার্ডওয়্যার শিল্পকেও শক্তিশালী করতে হবে। দেশে কয়েক ডজন কোম্পানি বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদন করলেও, খুবই কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ল্যাপটপ প্রস্তুতে গেছে প্রাথমিক অবস্থায় স্থানীয় কারখানাগুলো ডিজিটাল ডিভাইস শুধু সংযোজন করবে এটাই বাস্তবতা, দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমাদের মূল্য সংযোজন একটি সন্তোষজনক মাত্রায় পৌঁছাতে বেশ সময় লাগবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্য সংযোজন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। হাইটেক পার্ক স্থাপনে এখনও খুব কম বিনিয়োগ হওয়ায় এই রোডম্যাপটি খুবই দরকারি ছিল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইস শিল্পে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। নতুন রোডম্যাপটি সমন্বয় নিশ্চিত করলে বিনিয়োগও বাড়বে।
তৈরি পোশাক খাত বা আরএমজি খাত বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য একটি সফল মডেল কিন্তু এখন সময় এসেছে চামড়া, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি এবং হালকা প্রকৌশলের মতো অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে সামনে নয়ে আসার। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলি (এলডিসি)
থেকে উত্তরণের পর কীভাবে তার রপ্তানির পরিধি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন শুরু করেছে। এই সম্পর্কিত ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে কম খরচে এবং সহজে অর্থের প্রবেশাধিকার, পর্যাপ্ত নীতি সহায়তার পাশাপাশি পোশাক-বহির্ভূত রপ্তানি খাতের জন্য আর্থিক এবং অ-আর্থিক প্রণোদনা এবং সমান আচরণ এবং দক্ষতা বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য। আমাদের উচিত ভালো রপ্তানি সম্ভাবনা সহ পোশাক বহির্ভূত খাতগুলিতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত কারণ দেশের রপ্তানিকে বৈচিত্র্যময় করা ২০২৬ সালে এলডিসির উত্তরণের পরে বিদ্যমান এবং নতুন চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় সহায়তা করবে। স্নাতক হওয়ার পরে এই ধরনের সুবিধা উপভোগ করা, সম্মতি একটি প্রধান সমস্যা হবে।
সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলির উচিত দেশীয় প্রবিধানগুলি প্রয়োগ করা যা বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার অনুগত কারণ শিল্পের প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কে শক্তিশালী করতে হবে যাতে স্থানীয় পণ্যগুলিকে স্বীকৃতি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষার সম্মুখিন হয় সেগুলো ভালোভাবে মান যাচাই করা। দেশের আইনি সক্ষমতাও বাড়াতে হবে কারণ বাণিজ্যিক বিরোধ এলডিসি উত্তরণ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। স্নাতকের পর আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি এবং অন্যান্য উদীয়মান খাতের মতো ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সব ধরনের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। ঐতিহ্যগত শিল্পের পাশাপাশি ভৌগলিক বৈচিত্র্য এবং পরিষেবা খাত।
আমাদের ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যেও দেশগুলিতে আরও বেশি রপ্তানি সহজতর করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে কেবলমাত্র সম্ভাব্য রাজস্ব লাভের কথা বিবেচনা না করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার সুবিধাগুলি চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমানে, বাংলাদেশ পাট খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে তবে বৈশ্বিক জলবায়ুু পরিবর্তন এবং টেকসই উনয়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রæতি বাড়ানোর বিবেচনায় এই শিল্পটি ৫ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।
পাট এখন বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক চাওয়া প্রাকৃতিক ফাইবার হয়ে উঠেছে। সুতরাং, স্নাতকের পর প্রতিযোগিতামূলক হতে আমাদের এই সেক্টরে মূল্য সংযোজন করতে হবে। বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৭০ শতাংশ ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা দেশের গ্রামীণ শ্রমশক্তির প্রায় ৪৫ শতাংশ নিয়োজিত। আমাদের প্রযুক্তি অভিযোজন বাড়াতে হবে, বেসরকারি খাতের গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে হবে, ভালো কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, দেশের ফসল-পরবর্তী ক্ষমতা এবং ব্র্যান্ডের উন্নয়ন করতে হবে।
স্থানীয় আইসিটি খাত বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে কিন্তু একটি ডিজিটাল ওয়ালেট বা পেপ্যালের মতো অর্থপ্রদানের ব্যবস্থার অভাবের কারণে সবকিছু সময়মতো রিপোর্ট করা হয় না। এই খাতের বিকাশের জন্য অর্থের অপ্রচলিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের একটি স্বল্প ব্যয়ের তহবিল তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া ওষুধের প্রায় ৮০ শতাংশই পেটেন্টের বাইরে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা রপ্তানি বহুমুখিকরণের কথা বলে আসছেন। এটিও সদ্য সমাপ্ত 'বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১'-এর অন্যতম একটি পদক্ষেপ, যা দেশে এবং বিদেশে অব্যবহৃত ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য নীতি এবং আইনি সংস্কারের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। কার্যত, বাংলাদেশ তার রপ্তানি আয়ের জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রায় একটি খাতের ওপর নির্ভরশীল। এখন রপ্তানির ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাকের অংশ অন্যান্য শিল্প ও উৎপাদন উপাদানের সুস্থ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কবে নেমে আসবে তা কেউ জানে না।
চামড়া ও পাদুকা, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, আইটি ও সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য, সংযোজন শিল্প, হস্তশিল্প, হিমায়ত খাদ্য, কৃষিভিত্তিক আইটেম এবং আরও কয়েকটি খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং কনফারেন্সে এবং শেয়ার করা ধারণাগুলি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি গবেষণাগারে গবেষণা প্রকল্প দ্বারা পরীক্ষা করা হয় না। নীতিনির্ধারকরাও বাস্তবতায় পরিবর্তন আনার জন্য স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের দাবির প্রতি নমনীয়তা দেখানোর চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সময় সমস্যা এবং ধারণাগুলি মোকাবেলা করার সময় আরও গুরুতর দেখায়।
ফলস্বরূপ, অসংখ্য নীতি বাস্তবায়নের সময়োপযোগিতা হারায় এবং গ্রহণের আবেদন করে। এই সময়ের মধ্যে, নতুন সমস্যা দেখা দেয় এবং পুরানোগুলিও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তারপরে কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক লভ্যাংশ আঁকতে বোধগম্যভাবে নতুন নীতি এবং উদ্যোগ গ্রহণ করে, রকবল ব্যবসায়ীদের মনে রাখা রেকর্ডগুলি ভুলে যায়। একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর ধারণাটি একটি আকর্ষণীয় এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ১০০ টির মতো তৈরি করেছে যাতে সেগুলিকে অর্থনীতির জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে ব্যবহার করতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে না।
বাংলাদেশকে তার বিনিয়োয়োগের পরিবেশ অর্জন করতে হবে। আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে পছন্দ করি যখন তারা আমাদের সামাজিক খাতের অগ্রগতি এবং ২০৩১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ অতিদরিদ্র বিহীন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জাতীয় উচ্চাকাক্সক্ষার প্রশংসা করে। ব্যবসায়ীদের উচিত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং ক্ষেত্রে তাদের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গবেষণায় মনোনিবেশ করা। রপ্তানি ও বাণিজ্যের। পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ব্যবসায়ীরা বাজার ঠিক রাখতে এবং উন্নতি করতে পারে। আমাদের ব্র্যান্ডিং তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যবসায় আমাদের আরও গবেষণা দরকার। প্রতিটি ব্যবসায় শিল্পের মালিক ও উদ্যোক্তারা পণ্যের চাহিদা ও গুণগত মান নির্ধারণ করে এবং রপ্তানির জন্য পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে তাদেও দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার উদ্যোগ নেন।
বিশ্বে প্রযুক্তির যুগ এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগে আমরা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মহামারী চলাকালীন এটি সবই চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকার অতীতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে এবং আশা করছে ভবিষ্যতে তা ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২৩টি দেশের ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। অন্য কথায়, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, আমরা আমাদের সামনে আসতে পারে এমন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি।
অন্যান্য সম্ভাব্য নন-গার্মেন্ট সেক্টরের সাথে জড়িত উদ্যোক্তাদের তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং তাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। বৈশ্বিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেক্সটাইল পণ্যে বৈচিত্র্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই জিনিস সব সময় পছন্দের নাও হতে পারে। পোশাকের নকশা, রং সবকিছুই পরিবর্তন করতে হয়।
বিশ্ব পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে বিশ্ববাজারের মাত্র ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার। তাই আমাদের এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়াতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পোশাক শিল্পের বিকাশ ও প্রবৃদ্ধিতে এবং বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বেসরকারী খাত সর্বাগ্রে। তাই রপ্তানি বহুমুখিকরণে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
থাইল্যান্ড, রপ্তানি বহুমুখিকরণের একটি সফল উদাহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ-ভিত্তিক শিল্প (যেমন কৃষি ও মৎস্য পণ্য) আপগ্রেড করার জন্য এবং শ্রম-নিবিড় উৎপাদিত রপ্তানি, বিশেষ কওে পোশাক এবং ইলেকট্রনিক্সকে উৎসাহিত করার জন্য একটি দ্বৈত কৌশল গ্রহণ করেছে। চীনের সাথে সমস্ত পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের উত্থানের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে ক্রস-কান্ট্রি প্রোডাকশন নেটওয়ার্কের একীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন চেইনের অবস্থান সংহতকরণ কারণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলি জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে কম খরচে উৎপাদন সুবিধা চেয়েছিল এবং সহায়ক স্থানীয় নীতি উদ্যোগের উপর পুঁজি করে।
আমাদের পণ্য বৈচিত্র্য, ভৌগলিক বৈচিত্র্যত্র্য মধ্যবর্তী পণ্য বৈচিত্র্য, পণ্য বৈচিত্র্য, গুণগত বৈচিত্র্য, পণ্য থেকে পরিষেবা বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবতে হবে। আরএমজি রপ্তানি আংশিকভাবে বিনিময় হারের গতিবিধি থেকে রক্ষা পায় কারণ বিশেষ আমদানি ক্রেডিট সিস্টেম (ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি) যা রপ্তানি আয় থেকে আমদানি খরচ কভার করে। রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট এর দ্বারা নন-আরএমজি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইমার্জেন্সি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট তাদের জন্য সঠিক হতে হবে। রপ্তানি বহুমুখিকরণ ঘটতে, শুল্ক ব্যবস্থার একটি রপ্তানি-বিরোধী পক্ষপাত দূর করতে হবে যাতে আরএমজি ছাড়াও রপ্তানি পণ্য বাড়ানো যায়। আমাদের খরচ, গুণমান, সময় এবং নির্ভরযোগ্যতার চারটি মাত্রার কথা ভাবতে হবে। আরএমজি এই সমস্ত বিষয়গুলিতে অন্যদের থেকে এগিয়ে বিশ্বব্যাপী, দুটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত সূচক হল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এনাবলিং ট্রেড ইনডেক্স (ইটিআই) এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ট্রেড লজিস্টিক পারফরমেন্স ইনডেক্স (এলপিআই)। সমস্ত সেক্টরে, বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে, কিন্তু দক্ষতার ঘাটতি, প্রযুক্তি আপগ্রেড করার প্রয়োজন, দুর্বল অবকাঠামো বা আন্তর্জাতিক মান ও সম্মতি পূরণে অসুবিধার মতো বাধার সম্মুখীন হয়।
এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশ খারাপ করে কিন্তু পরিবহন ও বিদ্যুতের স্কোর বিশেষত কম যা উৎপাদন খাতে গুরুতর বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি যুক্তি দেওয়া হয়েছে কম বেতনের অদক্ষ শ্রমের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে। কোনো দেশের রপ্তানির জন্য কোনো একটি উৎসের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া কখনোই ভালো নয়। প্রতিযোগিতা একটি বিশ্বব্যাপী অনুশীলন এবং আমাদের এটি মনে রাখা উচিত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই বৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখী করতে হবে। এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবে নারীরাও।
তবে এ জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে নতুন কারখানা স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদী তহবিল, কর ছাড়, প্রণোদনাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া বাজেটে আলাদা করে ১০০ কোটি ডলার রাখার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের যে দীর্ঘ সময় পথ পাড়ি দিতে হয়, সেই সময় কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন আলোচকরা। পোশাক খাতকে সরকার দিনের পর দিন যেভাবে প্রণোদনা দিয়ে আসছে; রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতকেও সমানভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ থেকে ১৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয় জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে। বাকি ১৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ আয়। কিন্তু এই এক হাজার ৩০০ পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে। এসব খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে এসব খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছরে ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি স্থিতিশীল গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার রপ্তানিপণ্য বহুমুখি করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। রপ্তানি খাতে করহার, কর আদায় পদ্ধতি ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে। আবার গবেষণায়ও জোর দিতে হবে, যাতে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা যায়।
একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে এগোনো যাবে না। রপ্তানির অন্যান্য খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ভিয়েতনামের নিজস্ব চামড়া নেই। আবার জনসংখ্যাও কম। কিন্তু ভিয়েতনাম বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তুবাংলাদেশের নিজস্ব চামড়া ও পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্তে¡ও রপ্তানি হচ্ছে এক বিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিকের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। তবে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে।
কোভিডের অভিঘাত কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি এখন চাঙ্গা হচ্ছে। গতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। দেশের রপ্তানি খাতেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে, বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে পণ্য রপ্তানি হয়েছে সরকারের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। রপ্তানির ঊর্ধ্বগতিতে বরাবরের মতো এবারো বড় ভূমিকা রেখে চলেছে তৈরি পোশাক খাত। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রেও রপ্তানির গতি ইতিবাচক।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে লক্ষ্যের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৯৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। সে হিসেবে এবার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত শীর্ষ তিন ক্যাটাগরির পণ্য হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আইসটি সেবা ও পণ্য রপ্তানী বৃদ্ধি কওে এ খাতকে একটি ইমার্জিং খাত হেিসবে গড়ে তুলতে হবে।
নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষিজাত শিল্পপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্রান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় এর বাজার বিস্তৃৃতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূসিকা পালন করতে পারে।
০ টি মন্তব্য