ওয়েব ৩.০
কমপিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নাসলি ১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের যাত্রা শুরু করেন, আর তখন থেকে ওয়েব ১.০ দুনিয়ার শুরু। পরবর্তীতে ওয়েব ২.০ প্রজন্ম ২০০৫ সাল থেকে এখনো চলমান। ১৯৯৩ সালে গেøাবাল কমিউনিকেশনে ১ ভাগ কার্যক্রম ইন্টারনেট দ্বারা সম্পাদিত হতো, যেটা ২০০০ সালে ৫১ ভাগে উন্নীত হয় এবং ২০০৭ সালে ৯৭ ভাগ কার্যক্রম ইন্টারনেট দখল করে নেয়। ইন্টারনেট বিশ্বের অগ্রসর যত দ্রুত হচ্ছে, ওয়েব দুনিয়ার পরিবর্তন ও ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনেও তার প্র্রভাব শুরু হয়েছে। আর ওয়েব ৩.০ বর্তমানে মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, বøকচেইন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে রিয়েল টাইম প্রযুক্তির মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত, যোগাযোগে সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট তৈরি করে। ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর ‘ফেসবুক ইঙ্ক’ প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল জগতের ‘মেটাভার্স’-এর অপরিমেয় সুবিধা নিয়ে বিশ্ব ব্যবসায়িক কাঠামোতে প্রবেশ করে নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা ইঙ্ক’ রাখে, আর এর মাধ্যমে ওয়েব ৩.০ যুগের নতুন মাত্রা শুরু হয়। ক্রিপ্টো ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ‘গ্রেস্কেল’-এর মতে, মেটাভার্সভিত্তিক ওয়েব ৩.০ মার্কেট ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর্কইনভেস্টের হিসাবে ভার্চুয়াল গেমিং বিশ্ব ২০২৫ সাল নাগাদ ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উত্তীর্ণ হবে। ব্লুমবার্গ ইন্টিলিজেন্সের গবেষণাতে মেটাভার্স মার্কেট ২০২৪ সালে ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ওয়েব ৩.০ ক্রিপ্টো মেটাভার্স নেটওয়ার্কে পে টু আর্ন (পিটুই) কাজ করে, যেখানে খেলোয়াড়রা সময় এবং তাদের প্রচেষ্টাকে মনিটাইজ করে ডিজিটাল অ্যাসেট মেটাভার্স দুনিয়াতে তৈরি করেন। খেলোয়াড়দের নন-ফানজিবল টোকেন (এনএফটি) থাকে, এই টোকেন গেমে ফিয়াট অর্থের বিনিময় কিংবা বিক্রয় করা যায়।
ওয়েব ৩.০ কী
ওয়েব ৩.০ হচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট পরিষেবাÑ যা ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কাজ করে। তীক্ষè বুদ্ধিদীপ্ত মেশিনভিত্তিক ডাটানির্ভর, সিমেন্টিক ওয়েব আধিক্য ও যোগাযোগে উন্নত ওয়েবসাইট নির্মাণ কাঠামো। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার জন মার্কঅফ ২০০৬ সালে ওয়েব ৩.০ নাম প্রস্তাব করেন যাকে ‘দ্য ইন্টিলিজেন্ট ওয়েব’ বলা যায়। ১৯৯৯ সালে ‘সিমেন্টিক ওয়েব’ ধারণাটির মাধ্যমে কমপিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নাসলি ওয়েব ৩.০ বিষয়টি আলোচনাতে আনেন, যেখানে মেশিনের সহায়তায় ইন্টারনেট ডাটা পর্যবেক্ষণ ও মানুষের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া ওয়েব ৩.০ কাজ করতে পারবে।
ওয়েব ১.০-এর ব্যাপ্তি ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিল, যা স্ট্যাটিক ওয়েব সার্ভিস প্রোভাইডার এবং এর মাধ্যমে টেক্সটনির্ভর ইন্টারফেস সুবিধা ও অনলাইনে ওয়েবসাইট থেকে তথ্য পড়তে পারবেন। এখানে পাঠকের সাথে অন্য কারো ইন্টারেক্ট বা মিথস্ক্রিয়া করার সুবিধা নেই। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ডেভেলপমেন্টের প্রথম ধাপ ছিল ওয়েব ১.০। ওয়েব ১.০তে ওয়েবের তথ্য সার্চ করে পড়া যাবে, যা এইচটিএমএল (হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ) স্ট্যাটিক পেজের ব্যবহার করে তৈরি। আর ওয়েব ২.০ যাত্রা শুরু ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের একটি প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো যেমনÑ ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে সামাজিকভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ তৈরি করতে পারে। ওয়েব ২.০ মোবাইল ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও ক্লাউড কমপিউটিং দিয়ে ডেভেলপ করা। ওয়েব ২.০তে পিএইচপি, এইচটিএমএল, মাইএসকিউএল এবং জাভা স্ক্রিপ্টের ব্যবহার রয়েছে। এতে ব্লক তৈরি, ভিডিও শেয়ার, রিভিউ লেখা এবং ভয়েস সার্চের মতো সুবিধা ব্যবহারকারীরা পেয়ে থাকেন। অপরদিকে ওয়েব ৩.০ নতুন ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবনে যেমন এডজ কমপিউটিং, ডিসেন্ট্রালাইজ ডাটা নেটওয়ার্ক, ব্চেলকইন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ সার্চ, ডাটা মাইনিং, এপিআইএস, ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার হয়।
ওয়েব ৩.০-এর কাজ কত দ্রæত ইমার্জিং প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে ডাটা ক্যাটাগরি ভাগ করে সোশ্যাল বুকমার্কিং সার্চ ইঞ্জিন থেকে আরও কত ভালো রেজাল্ট মানুষকে দিতে পারে। তথ্য সংরক্ষণ ও ধরন অনুযায়ী সিমেন্টিক ওয়েব ডাটা ভাগ করে তথ্য বা ডাটা বুঝতে সহায়তা করবে; অর্থাৎ, সার্চ কোয়েরিতে কোনো শব্দ বা কিওয়ার্ড রাখলে সেটা এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সুবিধা নিয়ে ভালো ও নতুনত্ব তথ্য প্রদানে সহায়তা করবে। ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারী একসাথে বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং সার্ভিস পরিচালনা ও কাস্টমাইজ করতে পারে।
ওয়েব ৩.০ ফিচার
নতুন কোনো ধারণা নয় ওয়েব ৩.০, টিম বার্নাসলি স্বয়ংক্রিয় এবং সবার জন্য উন্মুক্ত একটি স্মার্ট ইন্টারনেট ব্যবস্থার কল্পনা করেন। তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেটভিত্তিক সার্ভিসটি ‘দ্য ইন্টিলিজেন্ট ওয়েব’ নামে পরিচিত। ওয়েব ৩.০-এর নিম্নোক্ত ফিচার বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন
সিমেন্টিক ওয়েব
ওয়েব ৩.০ কিওয়ার্ড ও অংকের মানের ওপর নির্ভর করে ফটো, ভিডিও অথবা অডিও এবং জটিল বিষয়াদি যেমনÑ প্রোডাক্ট, লোকেশন এবং সুনির্দিষ্ট বিহেভিয়ারের কনটেন্ট বুঝতে পারে। এছাড়া সিমেন্টিক ওয়েব আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং ধারণা ব্যবহারে উচ্চ পরিমাণ ডাটা প্রক্রিয়া করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। টিম বার্নাসলি’র সিমেন্টিক ওয়েব কনসেপ্টে আরডিএফ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করা, যেখানে নেটওয়ার্কের কনটেন্ট মেটাডাটা অথবা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্যের সাথে ট্যাগ করা ছিল। এই মেটাডাটা ব্রাউজারকে সহায়তা এবং ওয়েবপেজকে ভাষান্তরিত করে সহজে যা পেজের ডাটার প্রসঙ্গকে ব্যাখ্যা করে। এটি মেশিন রিডেবল ওয়েব, যেখানে ব্যবহারকারীরা ডাটা ইনপুট করে, আর মানুষের প্রেক্ষাপটে মেশিন সেই ডাটা পড়ে ও ব্যবহার করে। বর্তমানে ওয়েব ৩.০ সিমেন্টিক ওয়েবের থেকে আরও বেশি কিছু। এটি এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং বøকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইডিয়াকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এটি হচ্ছে ওয়েবে ডাটাকে ভ্যালুয়েবল ওয়েবে রূপান্তরিত করা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব ৩.০ উদ্ভাবন, প্রায় সকল প্রযুক্তি কোম্পানি ‘এআই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা ডাটাকে মানুষের সাথে যুক্ত করে কমপিউটারকে বুঝতে, ভাষান্তরিত করে নতুন কনটেন্ট তৈরি করে, যেমন ছবি, ভিডিও এবং টেক্সট ইত্যাদি। ডাটাকে ভালো মতো বুঝে সেটা নিখুঁতভাবে সমাধানে কাজে লাগায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সফটওয়্যার ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডিক্রিপ্ট এবং উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে। এটি বিশ্বন্ত ডাটা সূত্র বের করে সঠিক তথ্য দেয়। এআই ব্যবহারকারীকে দ্রুত নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ডাটা অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ইন্টারনেট দিয়ে সরবরাহ করে।
বিকেন্দ্রীকরণ প্রযুক্তি
ওয়েব ৩.০ পিয়ার টু পিয়ার প্রযুক্তির মূল বিষয়কে প্রাধান্য দেয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, অ্যালগরিদম, স্কেল সিস্টেম, বৃহৎ জনসংখ্যার ডাটাবেজ একীভ‚ত করে কাজ করে, যেখানে ওয়েব ২.০তে কমপিউটার এইচটিটিপি প্রটোকল ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট জায়গার সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য বা ডাটা খুঁজে থাকে।
থ্রিডি
ত্রিমাত্রিক ডিজাইনে ভবিষ্যতে মানুষ বেশি আকৃষ্ট হবে, কারণ ওয়েব ৩.০ ডেভেলপমেন্টে অনেক অ্যাপ্লিকেশন যেমন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং থ্রিডি প্রোডাক্ট ভিজ্যুয়ালেজন ব্যবহার হয়। রিয়েল লাইফ জায়গা, বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং পছন্দের অবজেক্ট থ্রিডি গ্রাফিক্স ও ভিআর প্রযুক্তি একীভূত করে পরিষেবা প্রদান করে।
ট্রাস্টলেস এবং পারমিশনলেস
ট্রাস্টলেস মানে যেখানে কোনো থার্ড পার্টির প্রয়োজন নেই দুটি গ্রুপের মধ্যে লেনদেন করতে। এজন্য সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনার জন্য কোনো অথরিটি থাকে না তথ্য সরবরাহ করতে। সুপারভিশন অথবা অনুমোদন ছাড়া ডাটা ফ্রি আদান-প্রদান করা যায়। অপরদিকে পারমিশনলেস হচ্ছে ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন, প্রবেশ কিংবা অবদান রাখতে কোনো প্রকার অনুমোদন কেন্দ্রীয় অথরিটি থেকে গ্রহণ করে না।
নিজস্ব পরিচালন ব্যবস্থা
কেন্দ্রীয় সিস্টেমে একটি একক অথরিটি অথবা গ্রুপ যেমন প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্লিকেশন চালু করে যাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। কেউ পরিবর্তন কিংবা প্রভাব অ্যাপ্লিকেশন কোডে অথরিটির অনুমতি ছাড়া করতে পারে না। ওয়েব ৩.০তে কোনো কেন্দ্রীয় অথরিটি থাকে না নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করতে, তার পরিবর্তে ব্যবহারকারীদের দ্বারা পরিচালিত হয় যারা অবদান ও মেইনটেনেন্স করে। ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রেভিনিউ বণ্টন হয়।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি দ্বারা ওয়েব ৩.০ পরিচালিত
ওয়েব ৩.০ বøকচেইন প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে ডাটা বা তথ্য বøকচেইন ভিত্তিতে বিকেন্দ্রীয়করণ স্টোরেজ সিস্টেমে সংরক্ষণ করে। এটি একসাথে প্রটোকল ব্যবহার করে কোনো অংশের ডাটা নির্ধারণ এবং প্রেরণ করতে হবে সেটা নির্ধারণ করে। কেউ একটি সার্ভারের ডাটা চুরি করতে পারে না, তথ্য বা ডাটা বিভিন্ন জায়গাতে সংরক্ষিত থাকে। বøকচেইন প্রযুক্তিতে ব্যবহারকারীরা নির্ভরযোগ্য জায়গাতে ডাটা রাখা কিংবা শেয়ার করতে পারে। সকল ডাটা ক্রিপ্টোগ্রাফিকেলি সাইন করা, এতে কোনো প্রকার পরিবর্তন ট্র্যাক কিংবা পর্যবেক্ষণ করা যায়। গতানুগতিক ধারার ওয়েবে লেনদেন ফিয়াট অর্থ যেমনÑ ডলারের মাধ্যমে বিনিময় হয় কিন্তু ওয়েব ৩.০তে ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন সোলানা, ব্যাট এবং ইথারিয়াম বøকচেইন প্রযুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত। টোকেন অংশগ্রহণকারীদের প্রবেশ ও নেটওয়ার্কে কাজ যেমন কনটেন্ট তৈরি করে; টোকেন তথ্য এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে মান বিনিময় সুযোগ দেয়। একজন ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীকে অর্থ প্রদান করতে পারেন নির্দিষ্ট কাজের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীরা ওয়েব ৩.০ প্ল্যাটফর্মে টোকেন ব্যবহার করে অন্য সার্ভিস কিনতে পারেন। নেটওয়ার্ক প্রটোকল এবং নতুন ফিচার যুক্ত করতে টোকেনের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন।
ব্যবহারকারীরা ডাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীরা কনটেন্ট শুধু তৈরি করেন না, অংশগ্রহণ করেন। ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীদের ডাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। ব্যবহারকারীরা তাদের কাজের ভ্যালু নির্ধারণ করেন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পড়ে, যা পূর্ববর্তী গুগল ও ফেসবুকের মডেলে সম্ভব ছিল না। ওয়েব ৩.০ অবদানের জন্য ব্যবহারকারীদের যেমনÑ কেউ যদি আর্টিকেল কিংবা ছবি আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে, তাহলে টোকেনের মাধ্যমে পুরস্কৃত হবেন।
কেনো ওয়েব ৩.০ গুরুত্বপূর্ণ
• সহজে তথ্য বা ডাটাতে প্রবেশ করতে পারবেন, কারণ সিমেন্টিক ওয়েবে যেকোনো লোকেশন থেকে ডাটা ধারণ করে স্মার্টফোন ও ক্লাউড সার্ভিসে ব্যবহার করা যায়।
• ডাটা সিকিউরিটি ও নিয়ন্ত্রণের বিষয় আছে। এতে ডাটা এনক্রিপ্ট সুবিধা থাকায় ব্যবহারকারীদের ডাটা সুরক্ষা থাকে এবং প্রযুক্তি জায়ান্ট যেমন ফেসবুক ইউজার কর্তৃক তৈরি ডাটা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করতে পারে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়েব ৩.০ পূর্ণাঙ্গ ডাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
• সিমেন্টিক ওয়েবের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না। একটি অ্যাড্রেস তৈরি করে প্রত্যেকে তালিকাভুক্ত ও ইন্টারনেট এনগেজ হতে পারে। বয়স, ঠিকানা, আয় এবং সোশ্যাল ভেরিয়েবলের মতো আরও অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
• বিকেন্দ্রীকরণ তথ্য ব্যবস্থাপনার কারণে যেকোনো পরিবেশে তথ্য বা ডাটাতে প্রবেশ নিশ্চিত করে। ক্লায়েন্ট বেশ কিছু ব্যাকআপ গ্রহণ করে, যদি সার্ভারে সমস্যা হয় তখন যেনো সাপোর্ট করতে পারে।
• ওয়েব ৩.০ ব্যবহারে পৃথকভাবে প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে একক প্রোফাইল তৈরির প্রয়োজন পড়ে না, একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল প্রত্যেক ওয়েবসাইটে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং প্রত্যেকের নিজেদের সব ডাটা বা তথ্য পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওয়েব ৩.০-এর কাজ
ওয়েব ৩.০ বিকেন্দ্রীকরণ ইন্টারনেট এবং তৃতীয় প্রজন্মের ওয়েব। বর্তমানে ওয়েব ২.০ অর্থাৎ ইন্টানেটে দ্বিতীয় ভার্সনের ওয়েব আমরা ব্যবহার করছি। ওয়েব ৩.০-এর লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তিগত এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য বা ডাটা দ্রæততার সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং অ্যাডভান্সড মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্ট সার্চ অ্যালগরিদম এবং বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্স ডেভেলপ অর্থাৎ মেশিন বুঝতে এবং কনটেন্ট সুপারিশ করতে পারে। ওয়েব ৩.০ কনটেন্টের মালিকানা ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে প্রবেশে সাপোর্ট করে। বর্তমানে স্ট্যাটিক তথ্য বা ব্যবহারকারী কর্তৃক কনটেন্ট প্রদর্শিত হয়, যেমন ফোরাম অথবা সোশ্যাল মিডিয়া। এটি ডাটা ব্যাপক পরিসরে সরবরাহ করে কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে একজন ব্যবহারকারীর প্রয়োজন মেটায় না। একটি ওয়েবের তথ্য বা ডাটা তৈরি করা উচিত, যা প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে তথ্য দেবে এবং একই সাথে বাস্তব জগতে গতিশীল মানুষ কর্তৃক যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করবে। ওয়েব ২.০তে একবার তথ্য অনলাইনে এলে ব্যবহারকারীরা সেটার মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
ওয়েব ৩.০ বিভিন্ন সিস্টেমে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন শ্রেণিবিন্যাস করে। এই কারণে একক ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করে না। বøকচেইন প্রযুক্তির কারণে ওয়েব ৩.০ এ যাবতকালের শক্তিশালী প্রযুক্তি। যেকোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনে ওয়েব ৩.০তে ব্যক্তিগত তথ্যাদির দরকার পড়ে না, যা স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য এবং কারও নিয়ন্ত্রণ করার দরকার পড়ে না, নিজে থেকে পরিচালিত হয়। ওয়েব ৩.০ কমপিউটিং পরিচালনা বৃদ্ধি ও বিকেন্দ্রীকরণ করা, যা পুরো প্রক্রিয়াকে নিরাপদ করে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যায়। পিয়ার টু পিয়ার নোড প্রযুক্তির কারণে বøকচেইন কাজ করা ওয়েব ৩.০ ডাউন হয় না।
ওয়েব ৩.০ অনেক প্রজেক্ট ডিসেন্ট্রালাইজ বা বিকেন্দ্রীকরণ অ্যাপ, যা ইথারিয়াম ব্লকচেইন দ্বারা পরিচালিত। ডাটা সংরক্ষিত থাকে বিকেন্দ্রীকরণ স্টোরেজে, ডাটা যা সরবরাহ হয় সেটা ডিজিটাল লেজারে রেজিস্টার্ড হয়। ওয়েব ৩.০তে সকল পেমেন্ট সিস্টেম কেন্দ্রীয় পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বিকেন্দ্রীকরণ পেমেন্ট সিস্টেম যেমন ইথারিয়াম, বিটকয়েনে রূপান্তর হয়, যেমনÑ টিথারের ভ্যালু বা মান* ১ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। ওয়েব ৩.০ ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও আস্থার ব্যবস্থা করে এবং অনলাইন তথ্যে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে সিমেন্থিক ওয়েব তৈরি করে, অর্থাৎ মেশিন দ্রুত পড়তে ও সহজে ইউজারের তৈরি কনটেন্ট প্রক্রিয়া করতে পারে।
ওয়েব ৩.০ কাঠামো কেমন
ওয়েব ৩.০ কাঠামো হচ্ছে ডিঅ্যাপস, যা ডিসেন্ট্রালাইজ বা বিকেন্দ্রীকরণ অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ওয়েব ৩.০ ব্যাকএন্ড লেয়ার, ফ্রন্টএন্ড লেয়ার, ডাটা লেয়ারের মতো স্তর নিয়ে গঠিত।
ব্যাকএন্ড লেয়ার ওয়েব ৩.০ ডিঅ্যাপস
বিকেন্দ্রীকরণ মূল পার্থক্য করেছে ডিঅ্যাপে, আপনার কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ বা সার্ভারের প্রয়োজন নেই এবং ব্লকচেইনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন অ্যাপ্লিকেশন বণ্টনে কমপিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে। ব্লকচেইন ‘স্টেট মেশিন’র ন্যায় কাজ করে, প্রোগ্রাম স্টেট নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা করতে পূর্বনির্ধারিত নিয়ম বৈধতা দেয়ার মধ্য দিয়ে। স্টেট মেশিন অংশগ্রহণকারীদের বøকচেইন নেটওয়ার্ক ও ভেলিডেশন প্রোগ্রাম স্থিতিশীলতার ঐকমত্যেমধ্য দিয়ে সংরক্ষিত করে। স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মধ্য দিয়ে ব্যাকএন্ড লজিক বাস্তবায়িত হয়, যা পরবর্তীতে স্টেট মেশিন (ব্লকচেইন) শেয়ার্ডে শ্রেণিবিন্যাস করে। পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক পাশাপাশি কিছু বিষয়াদি মিলে অবদান রাখে।
ফ্রন্টেড লেয়ার ওয়েব ৩.০ ডিঅ্যাপ
ফ্রন্টেড কাঠামো ডিঅ্যাপ কমিউনিকেশনে স্মার্ট কন্ট্রাক্টের (ডিসেন্ট্রাইজ প্রোগ্রাম) ওপর নির্ভর এবং ফ্রন্টেড-ব্যাকএন্ড কমিউনিকেশনে ভিন্নতা থাকে। ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে প্রত্যেক নোড প্রোগ্রাম বহন করে, যদি আপনি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট যোগাযোগে ব্যবহার করতে চান তাহলে থার্ড পার্টি নোড প্রোভাইডার যেমন ইনফুরা, আলকেমি এবং কুইকনোড রাখতে পারেন অথবা স্টেট মেশিন পরিচালনা করতে নোড সেটআপ করতে পারেন।
ব্লকচেইন কাঠামো শুরু করা বেশ কঠিন, বিশেষ করে যখন অনেকগুলো নোড যুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে। সকল প্রোভাইডার জেসন-আরপিসি বাস্তবায়ন করে ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক যোগাযোগ করে। আরপিসি অথবা রিমোর্ট প্রসিডিউর কল একটি রিকুয়েস্ট রেসপন্স প্রটোকল, যা ক্লায়েন্টকে নিয়ম অনুসরণ করে মেসেজ রিমোর্ট মেশিন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পাঠানো হয় ও রেসপন্স পুনরুদ্ধার করে। এরকম যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম ক্লায়েন্ট মেশিন এলাকাতে পরিচালিত হয়। ক্লায়েন্ট রিমোর্ট মেশিন চিনে না এবং যোগাযোগ এইচটিটিপি (হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল) অথবা ওয়েব সকেটের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।
যখন প্রোভাইডাররা ব্লকচেইনের সাথে যুক্ত থাকে তখন ক্লায়েন্ট বøকচেইন স্টেট সম্পর্কে তথ্য পেতে সক্ষম হয়। কিন্তু বøকচেইন নেটওয়ার্কে কীভাবে ক্লায়েন্ট লিখবে? সকল প্রকার লেখার রিকুয়েস্ট ট্রানজেকশন ক্লায়েন্টের ‘প্রাইভেট কি’র মাধ্যমে সাইন করতে হবে। প্রত্যেক লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ক্লায়েন্টকে ফি দিতে হবে, যা অন্য নোডে যাবে এবং লেনদেন ভেরিফাই করবে। মেটামাস্কের লেনদেনের সাইনার ও প্রোভাইডার। এটি ব্রাউজার ও সাইনিংয়ে ‘প্রাইভেট কি’ সংরক্ষণ করে যখন লেনদেন রিকুয়েস্ট ক্লায়েন্ট করে, যা বøকচেইন নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে।
ডাটা লেয়ার ওয়েব ৩.০ ডিঅ্যাপ
ব্লকচেইনে ডাটা সংরক্ষণ বেশ খরুচে লেনদেন ফি’র কারণে, বরং ব্লকচেইন নয় এমন পিয়ার টু পিয়ার স্টোরেজ সলিউশন যেমন আইপিএফএস অথবা এসওয়ার্ম ব্যবহার সাশ্রয়ী।
আইপিএফএস হচ্ছে পিয়ার টু পিয়ার ফাইল সিস্টেম প্রটোকল, যা মেশিনের নেটওয়ার্ক জুড়ে ডাটা সংরক্ষণের কাজ করে। জনপ্রিয় ব্রাউজারের ন্যাটিভ সাপোর্ট ব্যতীত আইপিএফএস প্রাইভেট অথবা পাবলিক গেটওয়ে ব্যবহার করে নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে।
এসওয়ার্ম কিছুটা আইপিএফএসের মতো, যার একমাত্র পার্থক্য হলো ইথারিয়াম ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে সিস্টেম স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ধরে রাখা। আপনি চাইলে ফ্রন্টেড তৈরি করতে বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি পিয়ার টু পিয়ার স্টোরেজ সলিউশন ব্যবহার করতে পারেন।
ব্লকচেইন বা পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কে কোয়েরি সহজতর করে ডাটা সংরক্ষণ করা যায়। এটি গ্রাফকিউএলকে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ইভেন্ট এবং পিয়ার টু পিয়ার গেটওয়ে রূপান্তর করে।
ওয়েব ৩.০-এর জনপ্রিয় ৯টি ব্যবহার
অনেক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন প্রযুক্তি ডেভেলপ হচ্ছে ওয়েব ৩.০ প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে, আর সেগুলোর কিছু উল্লেখ করা হলো
এনএফটি
নন-ফানজিবল টোকেন একটি ইউনিক লকড টোকেন, যা ক্রিপ্টো বøকচেইন ন্যাটিভ টোকেন। শুধুমাত্র আর্ট, মিউজিক, অটোগ্রাফ, ঘরবাড়ির রেকর্ড এবং অন্যান্য। বর্তমানে এনএফটির জন্য জনপ্রিয় ক্রিপ্টো বøকচেইন হচ্ছে ইথারিয়াম, সোলানা। এনএফটির ডাটা নন-ফানজিবল, অর্থাৎ এটি অন্য কারো দ্বারা প্রতিলিপি করা যায় না এবং মানুষ শেয়ার দেখতে এবং পরিবর্তন করতে পারেন। অ্যাডিডাসের ব্র্যান্ডেড এনএফটি যাত্রা শুরুর পর ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে। আর এতে ওয়েব ৩.০ মার্কেটিংয়ে কী প্রভাব রাখছে তা অনুমেয়।
মেটাভার্স
প্রযুক্তিটি মানুষ ও ব্র্যান্ডের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে ভার্চুয়াল অ্যানিমেটেড বিশ্বে ভার্চুয়াল ত্রিমাত্রিক অ্যাভাটার ব্যবহার করে। এটি বাস্তব জগতের মতো হলেও এতে ক্ষুদ্র পার্থক্য থাকে, যেমনÑ ম্যানচেস্টার সিটি এফসি সাম্প্রতিককালে মেটাভার্স বিশ্বে ইতিহাদ স্টেডিয়ামের প্রতিলিপি তৈরির পরিকল্পনা করে। এই ব্যবস্থা ম্যানচেস্টারের ভক্তদের থ্রিডি লাইভ ফুটবল খেলা দেখার সুবিধা করে। অসংখ্য ব্র্যান্ড, ফ্যাশন লেবেল আছে যারা মেটাভার্স বিশ্বের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। যদি ক্রেতারা ভার্চুয়াল জগতে আরও বেশি সময় অতিবাহিত করা শুরু করেন, তাহলে ভার্চুয়াল জগতে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি বাড়বে। অ্যাভাটারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে চিন্তা করার সুযোগ ক্রেতারা পাবেন।
ফাইলকয়েন
ফাইলকয়েনের উদ্দেশ্য বর্তমান ক্লাউড স্টোরেজের পরিবর্তে অর্থাৎ, ড্রপবক্স এবং গুগল ড্রাইভের পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকরণ ফাইল স্টোরেজ সিস্টেম তৈরি করে সেটা নিরাপদ ও ব্যক্তিগত রাখে। এই নেটওয়ার্কে পিয়াররা ফাইলকয়েনের টোকেন আয় করে ডিস্কে ডাটা বা তথ্য হোস্ট বা সংরক্ষণ করে। এটি সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কাঠামো, যেখানে স্টোরেজ জায়গার ওপর ভিত্তি করে অর্থ প্রদান করতে হয়।
বিকেন্দ্রীভূত গেমিং (গেমফাই)
বিকেন্দ্রীভ‚ত গেমিং হচ্ছে যেখানে সকল ডাটা ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয়, এবং ব্যবহারকারীরা যারা গেমটি খেলেন তারা ফিচারের ওপর ভিত্তি করে ভোট প্রদান করেন। উদাহরণ হিসেবে এক্সএল ইনফিনিটি গেমের কথা বলা যায়, যেখানে খেলোয়াড়রা এএক্সই ক্রিপ্টো টোকেন আয় করতে পারেন নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে এবং তাদের ভোটিং নিজের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারেন। অনেক সিদ্ধান্ত আছে কিন্তু গেমপে ম্যাকানিক্স, গেম গ্রাফিক্স, কনটেন্ট এবং অন্যান্য বিষয়াদি নির্দিষ্ট নয়। এজন্য ওয়েব ৩.০ গেম এক্সপেরিয়েন্স বা অভিজ্ঞতা ক্রেতাকেন্দ্রিক এবং স্বতন্ত্র প্রোডাক্ট নয়, একটি সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার হয়।
ব্রেভ ব্রাউজার
ওয়েব ব্রাউজারটি ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে প্রাক্তন মজিলা সিইও ব্রেনডান ইচ শুরু করেন। ব্রাউজারটি বেসিক অ্যাটেনশন টোকেন দ্বারা পরিচালিত, যেখানে ব্যবহারকারীকে তাদের মনোযোগের ওপর প্রদান করা হয়। এটি ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি ব্লকিং ট্রেকার এবং অ্যাডসের মাধ্যমে রক্ষা করা হয় ওয়েব জগত জুড়ে। ব্যবহারকারীরা বেসিক অ্যাটেনশন টোকেনে পেইড থাকে যখন তারা ব্রাউজারে অ্যাড বা বিজ্ঞাপন খেয়াল করে।
বিকেন্দ্রীভূত ফিন্যান্স (ডিফি)
বিকেন্দ্রীভ‚ত ফিন্যান্স একটি প্রটোকল, যেখানে ক্রিপ্টো ও ফিয়াট কারেন্সি প্রক্রিয়াতে কিছু অর্থ আয় করতে ব্যবহারকারীরা অর্থ ধার বা গ্রহণ এবং প্রদান করেন। কেন্দ্রীয় ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান যেমনÑ ব্যাংক এবং বিকেন্দ্রীভ‚ত ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়াইএফএল, এভিএএক্স এবং অন্যগুলোর সাথে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও ব্লকচেইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
বিকেন্দ্র্রীভূত সায়েন্স (ডিসি)
করোনা এখন শেষ কিন্তু যখন শুরু হয়েছিল তখন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিলেন, সেজন্য গবেষকরা বিপুল পরিমাণে ভাইরাসের ডিএনএ জিনোম সম্পর্কিত ডাটা বা তথ্যবিন্যাস ও টেকনিক্যাল ডাটা বøকচেইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত করছিল। এছাড়া ভ্যাকসিন সরবরাহ ও লজিস্টিক বিশ্বব্যাপী বøকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিল। এজন্য ভ্যাকসিন অপচয় হয়নি, যেহেতু পুরো ডাটা বা তথ্য স্বচ্ছ ও নিরাপদ ছিল। আইবিএম পরিচালিত ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিভিউশন নেটওয়ার্ক সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন হয়েছে রিকল ম্যানেজমেন্টের উন্নতির মাধ্যমে। পরিবেশকরা রিয়েল টাইম প্রদর্শন এবং সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাতে সাড়া প্রদান করেন। এবং ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
স্টিমিট
ব্লগিং ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট স্টিমিট, যেখানে নেটওয়ার্কে প্রত্যেকে মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি, নির্বাচন ও সংগঠিত করে। এটি মানুষের ইন্টারেক্ট বা মিথস্ক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে মানসম্মত কনটেন্ট আপডেট করে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বিকেন্দ্রীকরণ, যেখানে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেটওয়ার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকে না। প্ল্যাটফর্মটি অংশগ্রহণকারীদের বøকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরস্কৃত করার কাজে ব্যবহার হয়।
লাইভপিয়ার
বিকেন্দ্রীকরণ ভিডিও স্ট্রিমিং প্রটোকল ‘লাইভপিয়ার’, যেখানে প্রত্যেকে যারা অংশগ্রহণ করেন তারা অর্থ প্রদান করেন। এই প্রটোকলে ব্রডকাস্টাররা দর্শকদের মানসম্মত কনটেন্ট সরবরাহ করে টোকেন আয় করেন।
ওয়েব ৩.০ ভবিষ্যতের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে, যেখানে ডিস্ট্রিভিউটেড ব্যবহারকারীরা এবং মেশিন ইন্টারেক্ট বা যোগাযোগ তৈরি করে ডাটা, ভ্যালু এবং অন্যান্য পার্টির সাথে ‘পিয়ার টু পিয়ার’ নেটওয়ার্ক কোনো প্রকার থার্ড পার্টি সাহায্য ব্যতীত ব্যবহার হয়। এতে করে সুবিন্যস্ত মানুষ কেন্দ্রিক এবং প্রাইভেসি সংরক্ষিত কমপিউটিং ফেব্রিক তৈরি করে পরবর্তী প্রজন্মের ওয়েব কাঠামো গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে।
০ টি মন্তব্য