‘টেসলা স্মার্ট ইলেকট্রিক কার’ বিশ্বের সেরা ধনী ‘ইলন মাস্ক’র প্রতিষ্ঠিত ‘টেসলা’ কোম্পানির ব্যাটারি চালিত স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ি, যা এই মুহূর্ত বিশ্বজুড়ে গাড়িপ্রেমীদের কাছে পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে। এক সময় ‘পেপ্যাল মাফিয়া’ খ্যাত ‘ইলন মাস্ক’ অনলাইন ফিন্যান্সশিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ‘পেপ্যাল’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রযুক্তি জগতে আলোড়ন তুললেও বর্তমানে টেসলা’র একের পর এক ভিন্ন মডেলের ‘স্মার্ট ইলেকট্রিক কার’র জন্যে বিগত কয়েক দশকজুড়ে বেশ সাড়া ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। টেসলা প্রথম জেনারেশন’র প্রথম ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক গাড়ি ‘রোডস্টার’ নিয়ে আসে ২০০৮ সালে, যেটা মূলত ২ আসনের স্পোর্টস ইলেকট্রিক গাড়ি ছিল। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৭ বছরে ‘টেসলা’ ৬.৭ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি করে, আর ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ৭১.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে ১.৭৫ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রয় করে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টেসলা’র গাড়ি উৎপাদন ৪০০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে গাড়ির মার্কেটের ১২.৩২ ভাগ অংশ ‘টেসলা’ দখল করে রেখেছিল, যেখানে বিশ্বে ১৩.৮ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি হয় যার ১.৭ মিলিয়ন গাড়ি ‘টেসলা’ কোম্পানির তৈরি করা। টেসলা’র জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ির মধ্যে ‘মডেল ওয়াই’ গাড়ি ২০২৩ সালে ছিল টেসলা কর্তৃক সবচেয়ে বিক্রিত, যা ১.১৬ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি হয়। আর ‘মডেল ওয়াই’ পরে ‘টেসলা মডেল থ্রি’ দ্বিতীয় বিক্রির লিস্টে রয়েছে, যেটা ৫১৮,০৭২ টি বিক্রি হয়, এরপরে ‘মডেল এক্স’ ৩০,৩৪৩ টি এবং ‘মডেল এস’ ২৩,৮৭৮ টি বিক্রি হয় ২০২৩ সালে।
টেসলা উৎপাদিত বর্তমানে গাড়িপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় ৪ টি মডেল যেমনঃ মডেল এস, মডেল থ্রি, মডেল এক্স এবং মডেল ওয়াই সিরিজের স্মার্ট ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর বৈশিষ্ট্য, সেগুলোর বিক্রয় মূল্য, কতদিন সেগুলো পরিচালনা করতে পারবেন সেটার সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষিত তথ্য উপাত্ত বিষয়াদি টেসলা গাড়িপ্রেমীদের কাছে তুলে ধরা হলো।
টেসলা মডেল এস
চার দরজার ফুল সাইজ ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক গাড়ি ‘টেসলা মডেল এস’ কার। ২০১২ সালে প্রথম জেনারেশন মডেল এস বাজারে টেসলা নিয়ে আসে, গাড়িটি এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ বিক্রি হয়েছে এবং সর্বনিম্ন বিক্রয় মূল্য গাড়ি প্রতি ৬৮,৪৯০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু। মাত্র ১.৯৯ সেকেন্ডে ঘণ্টা প্রতি শূন্য থেকে ৬০ মাইল পর্যন্ত এর গতি আনা যায় এবং কোয়াটার মাইল ৯.৪ সেকেন্ডে ১৫০.০ মাইল ঘণ্টা প্রতি যায়। মডেল এস গাড়ি অ্যালুমিনিয়াম এর তৈরি বডি এবং মধ্যম সারির লাক্সারি ক্রস ওভার এসইউভি অর্থাৎ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল। তাৎক্ষণিকভাবে মাল্টি ডিভাইস ব্লুটুথ অথবা ৩৬ ওয়াট’র ইউএসবি ওয়্যারলেস চার্জ’র সাথে কানেক্ট হতে পারে। একটি ২২-স্পিকার, ৯৬০-ওয়াট অডিও সিস্টেম একটিভ রোড নয়েজ হ্রাস করার অফারসহ এবং স্টুডিও গ্রেড সাউন্ড কোয়ালিটি এবং ফ্রন্ট ও রেয়ার ট্রাংক ফল্ড ফ্লাট সিট সম্পন্ন। তিনটি ব্যাটারি কনফিগারেশনে, ব্যাটারি প্যাক গাড়ির ফ্লোরে থাকে, যা হাজার সিলিন্ড্রিকাল ১৮৬৫০ ব্যাটারি সেল’তে গঠিত, সেলগুলো গ্রাফাইট বা সিলিকন অ্যানোড এবং একটি নিকেল কবাল্ট অ্যালুমিনিয়াম ক্যাথোড বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। মডেল এস ১৮ ইঞ্চি সেন্টার অব গ্রাভিটি উচ্চতা।
২০১৬ সালে মডেল এস’তে ফেসলাইট সুবিধা নিয়ে আসে টেসলা, তাদের আপডেট মডেলে এলইডি অ্যাডাপটিভ হেডলাইট রয়েছে, যা গাড়ি রাতের বেলা দেখতে সাহায্য করে। ২০১৪ সালে টেসলা অটোপাইলট চালু করে, যা অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্টেন্ট সিস্টেম। যা ক্যামেরা, রাডার এবং আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে রাস্তার নির্দেশনা, লেন মার্কিং, বাধা, ফুটপাথ, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ট্র্যাফিক লাইট নির্ধারণ করে এবং লেন দেখার জন্য ১৭ ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন রয়েছে। অটোপাইলটের অন্তর্ভুক্ত অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কনট্রোল, লেন পরিবর্তন, অটো পার্কিং, সেমি স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং। মডেল এস’র অপারেটিং সিস্টেম ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ভিত্তিক, যাতে লিনাক্স, উবুন্টু ব্যবহার হয়। ২০২১ সাল থেকে ‘টেসলা ভিশন’ নামে সিস্টেম ব্যবহার করে যা ক্যামেরা’র ওপর নির্ভর করে, যা পূর্বের রাডার ভিত্তিক সেন্সর’র বিকল্প। ‘মডেল এস’ আসলে একটি হ্যাসব্যাক, অর্থাৎ, এর প্রচুর রেয়ার কার্গো স্পেস রয়েছে, এবং ফ্রন্ট ট্রাংক যা এর সুবিধা। সিডান কার’র মতন ভেতরগত সৌন্দর্য, ২১ ইঞ্চি চাকা বিশিষ্ট স্বল্প ক্লাসি টায়ার সাইডওয়াল এবং ১,০২০ হর্স পাওয়ার। উচ্চ পারফর্মের কার্বন সিরামিক ব্রেক, এবং ‘জিওট্যাব’র ডাটা অনুযায়ী, যদি ডিগ্রেডেশন রেট নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে পুরো ব্যাটারি অনেক সময় সার্ভিস দিবে আর ১৫০,০০০ বা ৮ বছর সমপরিমাণ। প্রতি ঘণ্টায় চার্জে ৬২ মাইল পর্যন্ত টেসলা মডেল এস চলতে পারে, আর ‘টেসলা ডেসটিনেশন’ নামে পাবলিক চার্জিং নেটওয়ার্ক সরবরাহ করতে টেসলা ওয়াল কানেক্টর ইনস্টল করে।
মডেল এস’র একটি সিঙ্গেল স্পিড রিডাকশন গিয়ার ট্রান্সমিশন এবং অল্টারনেটিং কারেন্ট ইন্ডিকেশন মোটর রয়েছে, যা ‘পার্মানেন্ট ম্যাগনেট সিনক্রোনাস রিলাক্টেন্স ইউনিট’ দ্বারা পুনঃস্থাপিত হয়। মডেল এস’র ৪৬ ভাগ ওয়েট ডিস্ট্রিভিউসন ফ্রন্টে এবং ৫৪ ভাগ রেয়ার’তে। মডেল এস টেসলা’র পাওয়ার ফ্রন্ট এবং রেয়ার হুইলে, যার ফলশ্রুতিতে সকল চাকা পাওয়ারটেইন, আর দুইটা মোটর একসাথে যথাক্রম ৫১৫ কিলোওয়াট বা ৬৯১ হর্সপাওয়ার এবং ৯৩১ নিউটন মিটার উৎপন্ন করে ২৭৫ মাইল রেঞ্জ চলাচল করতে। ফ্রন্ট এক্সেল এবং রেয়ারে থাকে দুইটি ইলেকট্রিক মোটর। ২০১২ সালের শেষদিকে টেসলা ‘সুপার চার্জারস’ নামে ৪৮০ ভল্টের চার্জিং স্টেশন নেটওয়ার্ক অপারেটিং শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশানাল হাইওয়ে ট্র্যাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’র কর্তৃক ২০১৫ সালে পরিচালিত জরিপে টেসলা মডেল এস ৫ তারকা রেটিং পায়। আমেরিকার ‘টাইম ম্যাগাজিন’ কর্তৃক ২০১২ সালে ‘বেস্ট ২৫ ইনভেনশন’র মধ্যে মডেল এস টেসলা জায়গা করে নেয়।
টেসলা মডেল থ্রি
ফাস্ট ট্র্যাক বডি স্টাইল’র তৈরি ব্যাটারি ইলেকট্রিক চালিত মাঝারি সাইজের সিডান গাড়ি ‘টেসলা মডেল থ্রি’। ২০১৭ সালে ‘টেসলা ইঙ্ক’ মার্কেটে ‘মডেল থ্রি’ সকলের কাছে পরিচিত করায়, যা পরবর্তীতে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সেরা বিক্রিত ‘প্লাগইন ইলেকট্রিক কার’ ছিল। ২০২১ সালের জুনে প্রথম ইলেকট্রিক কার হিসেবে ‘টেসলা মডেল থ্রি’ গাড়ি বিশ্বে ১ মিলিয়ন বিক্রি হয়। মডেলটির ‘ইপিএ’ রেট অর্থাৎ, ‘এনভারনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ কর্তৃক অফিসিয়াল রেটিং ২১৫ মাইল দেয়। একটি পাঁচ আসনের ক্ষমতাসম্পন্ন, ফ্রন্ট এবং রেয়ার ট্রাঙ্ক ও স্পোর্টস কার লেভেল’র গতি সম্পন্ন গাড়ি, যা টেসলা কর্তৃক পাঁচ তারকা নিরাপত্তা রেটিং পেয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ‘টেসলা মডেল থ্রি’ ৮০৪,১৯৭ টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রয় হয়। আর প্রতিটি গাড়ির বিক্রয় মূল্য ৪৪,১৩০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।
প্রথম ৪.৯ সেকেন্ডের মধ্যে ‘টেসলা মডেল থ্রি’ গাড়ি শূন্য থেকে ৬০ মাইল স্পিড গতি আনতে পারে। ‘জিওট্যাব’র ডাটা অনুযায়ী ইলেকট্রিক ব্যাটারি ওয়ারেন্টি ৮ বছর বা ১০০,০০০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। টেসলা মডেল থ্রি বডি আলট্রা হাই স্ট্রেন্থ স্টিল’র তৈরি, সকল হুইল ড্রাইভ পাওয়ারট্রেইন পাম্প একসাথে ৫১০ হর্সপাওয়ার পর্যন্ত পারফর্মেন্স প্রদান করে এবং আপগ্রেড ব্রেক, ও টায়ার চাকা ইনস্টল করে। রেয়ার হুইল ড্রাইভ রেঞ্জ মডেল ৩৬৩ মাইল ড্রাইভিং রেঞ্জ এবং সকল হুইল ড্রাইভ লং রেঞ্জ মডেল ৩৪১ মাইল রেঞ্জ অফার করে। ফাস্ট চার্জিং স্টেশন ‘সুপারচার্জার’, অ্যাডাপ্টার ফর ডিসি পাবলিক চার্জিং স্টেশন, ২৪০ এবং ১২০ ভল্ট আঊটলেট এবং একটি হোম চার্জিং স্টেশন টেসলা নেটওয়ার্ক প্রদান করে। মডেল থ্রি ১১৩ থেকে ১৩৮ এমপিজিই অর্থাৎ, ‘মাইল পার গ্যালন গ্যাসোলিন’র সমপরিমাণ জ্বালানি দরকার ঘণ্টা প্রতি ৭৫ মাইল যেতে পারে হাইওয়ে ফুয়েল ইকোনমি টেস্ট অনুযায়ী। গতানুগতিক ইনডাকশন মতর’র পরিবর্তে মডেল থ্রি ইন্টারনাল পার্মানেন্ট ম্যাগনেট’র সাথে সিনক্রোনাইজ রিলাকটেন্স মোটর ব্যবহার করে। অ্যালুমিনিয়াম সিকুইরাল কেজ রটোর আয়রন রটোর দ্বারা বদলি হয়েছে।
১৭ টি স্পিকার সাবউফার এবং ডুয়েল অ্যামপ্লিফায়ার সাবলাইম সাউন্ড, ৮ ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন এক্সেস সুবিধা রেয়ার প্যাসেঞ্জারদের জন্য বিনোদন ও ক্লাইমেট কনট্রোলসহ। সামনের সিটে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাইমেট কনট্রোল’র মাধ্যমে, আর আপগ্রেটেড মাইক্রোফোন, এবং একইসাথে দুইটি ফোন চার্জ করা যায়। টেসলা অ্যাপ থেকে রিমোর্টভাবে ভেহিকেল, কেবিন গরম অথবা ঠাণ্ডা করা, আর চার্জিং স্লট হিসেব করে রুট প্ল্যান করা যায়। অটোপাইলট গাড়ির স্টিয়ারিং, আক্সিলেরেট এবং ব্রেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর লেনে একটিভ সুপারভিশন’র অধীনে থাকে। ১৫.৪ সেন্টার টাচস্ক্রিন, ১৮ থেকে ১৯ ইঞ্চি চাকা, ১৮৫.৮ ইঞ্চি লম্বা, ৭৬.১ ইঞ্চি ফোল্ডেড ও ৮২.২ ইঞ্চি প্রশস্ত এক্সটেন্টেড আয়না এবং ৪,০৩০ পাউন্ড ভর টেসলা মডেল থ্রি।
টেসলা মডেল এক্স
ব্যাটারি ইলেকট্রিক চালিত মাঝারি আকারের লাক্সারি ক্রসওভার স্পোর্টস ইউলিটি ভেহিকেল ‘টেসলা মডেল এক্স’। ‘মডেল এস’র ফুল সাইজ সেডান প্ল্যাটফর্ম থেকে ২০১৫ সালে ‘টেসলা মডেল এক্স’ ডেভেলপ করা হয়, যাতে প্যাসেঞ্জারদের প্রবেশের জন্য ফ্যালকন উইং ডোর ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের প্লাগইন কার বিক্রয়ে ৭তম অবস্থানে ছিল গাড়িটি। এর প্যানারমিক উইন্ডশিল্ড রয়েছে, এবং টেসলা সিইও এলন মাস্ক’র হিসেবে মডেল এক্স’র সাইড ও ফ্রন্টাল ইমপেক্ট’র কারণে নিরাপদ স্পোর্টস ইউলিটি গাড়ি। অটোপাইলট সুবিধাসম্বলিত, যার পুরো সেলফ ড্রাইভিং সিস্টেম রয়েছে। এছাড়া রাডার বেজড স্বয়ংক্রিয় ইমারজেন্সি ব্রেকিং এবং সাইড ডিরেক্টেড আল্ট্রাসাউন্ড ডিটেকশন থাকে, যেকোন সমস্যা থেকে গাড়ি রক্ষা করে। টেসলা ওয়াইড বেন্ড রাডার সিস্টেম ব্যবহার করে ফেলকন উইং ডোরকে খোলা ও বন্ধ করার সময় যেকোন অবজেক্টের সাথে আঘাত পাওয়া থেকে। ৬৫,৯৯০ থেকে ‘টেসলা মডেল এক্স’র মূল্য শুরু, ২২০০x ১৩০০ রেজ্যুলেশন’র ১৭ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন লেফট রাইট টিল্ট অফার করে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক গন্তব্য ঠিক করে, তাৎক্ষণিকভাবে মাল্টি ডিভাইস ব্লুটুথ, ওয়্যারলেস ফাস্ট চার্জিং ডিভাইস সংযোগ করে ৩৬ ওয়াট ইউএসবি সি চার্জিং’র সাথে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা’র এক্স মডেল গাড়ি ১৪৮,৭০০ টি বিক্রি হয়।
একটি ২২-স্পিকার, ৯৬ ওয়াট অডিও সিস্টেম একটিভ রোড নয়েজ রিডাকশন অফার করে ভালো শুনার অভিজ্ঞতা প্রদান করে টেসলা মডেল এক্স। এতে ৮ ইঞ্চি রেয়ার সিট টাচ স্ক্রিন, নেভিগেশন, ওয়্যারলেস ডিভাইস চার্জিং, এইচডি রেডিও, স্যাটেলাইট রেডিও, ব্লুথুট, ইউএসবি পোর্ট, এলইডি ইনটেরিয়র লাইটিং এবং ট্রাই-জোন অটোমেটিক ক্লাইমেট কনট্রোল রয়েছে। মডেল এক্স প্ল্যাটফর্ম পাওয়ারটেইন এবং ব্যাটারি প্রযুক্তির সংযোগ করে পারফর্মেন্স, রেঞ্জ এবং দক্ষতার জন্য। নতুন মডিউল, ব্যাটারি ১০০ কিলোওয়াটআওয়ার লিথিয়াম আয়ন, ব্যাটারি প্যাক এবং প্যাক থার্মাল কাঠামো দ্রুত চার্জ প্রদান ও শক্তিশালী করে। প্রথম ৩.৮ সেকেন্ডের মধ্যে ঘন্টা প্রতি শূন্য থেকে ৬০ মাইল গতি উঠে। মডেল এক্স’র ৬৭০ হর্স পাওয়ার এবং এক্স প্লেইড’র সর্বোচ্চ ১০২০ হর্স পাওয়ার। জিওট্যাব’র ডাটা অনুযায়ী, ইলেকট্রিক ব্যাটারি ওয়ারেন্টি ৮ বছর বা ১৫০,০০০ মাইল। গাড়ির ছাদ কাঁচের তৈরি, যার কারণে টেসলা’র ভর স্বল্প হয় এবং অধিক আলো গাড়ির মধ্যে যেতে দেয় এবং একই লেভেলের আল্ট্রা ভায়োলেট প্রোটেকশন ধরে রাখে। টেসলা মডেল এক্স’র ভর ৫,১৪৮ পাউন্ড, ৭৭ কিউবিক ফিট কার্গো স্পেস রয়েছে, আর টেসলা’র অন্যতম উদ্ভাবন হচ্ছে ‘ওভার দ্য এয়ার’ আপডেট, যা নতুন ফিচার এবং সিস্টেম অপটিমাইজেশন আপডেট করে। একইসাথে বড় সেন্টার স্ক্রিন সাথে ক্রিস্পি গ্রাফিক্স ও চমৎকার গুগল বেজড নেভ সিস্টেম। তিনটি মোটর পাওয়ারটেইন, ২০ বা ২২ ইঞ্চি চাকা এবং সর্বোচ্চ ৭ টি পর্যন্ত সিট থাকে। স্ট্যান্ডার্ডে দুই সারির কনফিগারেশনে মডেল এক্স’তে রেয়ার সিটের পিছনে ৩৭ কিউবিক ফিট এবং ৮৫ কিউবিক ফিট ফোল্ডেড সিটের জন্য। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র’র ‘এনভারনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ)’র ফুয়েল ইকোনমি নির্ধারণ করে শহরে ১০৭ এমপিজি (মাইল পার গ্যালন গ্যাসোলিন’র সমান) জ্বালানি এবং হাইওয়ে’তে ৯৭ এমপিজি ডুয়েল মোটর কনফিগারেশন’তে দরকার পরে।
স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে টেসলা মডেল এক্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যারেজ অথবা পার্কিং জায়গা থেকে সহজে বের করা যায়, ফাংশন ব্যবহার করে ড্রাইভ করা সম্ভব। সেন্ট্রাল স্টেক কনট্রোল’র মাধ্যমে হেজার্ড লাইট এবং গ্লোব বক্স’র জন্য বাটন রয়েছে, যা ১৭ ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিরাপত্তা বিষয়ক কলিউশন এভয়েড সিস্টেম এবং অটোমেটিক ইমারজেন্সি ব্রেকিং সিস্টেম ‘সেন্ট্রি মোড’ থাকায় গাড়ি যখন পার্ক করা হবে তার আশেপাশে এবং লক’ সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায়। ‘পিন টু ড্রাইভ’ নামে একটি ফিচার রয়েছে যা পিন কোড’র মাধ্যমে গাড়ি চালু করতে প্রয়োজন, যা সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে প্রবেশে ব্যবহার হয়। ‘অটোপাইলট মোড’র মাধ্যমে গাড়ি পরিচালনা করে নির্দিষ্ট অবস্থার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে সেন্সর এবং ক্যামেরার ভিড় থাকে যা গুরুত্বপূর্ণ ডাটা প্রক্রিয়া করে এবং কমিউটিং ইউনিট’র মাধ্যমে গাড়িতে প্রেরণ করে।
টেসলা মডেল ওয়াই
২০১৯ সালে টেসলা মাঝারি আকারের ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক ক্রসওভার স্পোর্টস ইউলিটি ভেহিকেল ‘মডেল ওয়াই’ প্রথম সকলের কাছে পরিচিত করে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কার্লিফোনিয়া’র ফ্রিমন্ট ফ্যাক্টরি ও চীন’র ‘গিগা সাংহাই’তে ‘মডেল ওয়াই’ উৎপাদন শুরু হয়। মডেল থ্রি সিডান’র ওপর ভিত্তি করে দুই সারির সিট নিয়ে কনফিগার করা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রে ৭ জন যাত্রী বসার চিন্তা করে তিন সারির ধারণ ক্ষমতা নিয়ে ‘টেসলা মডেল ওয়াই’ মার্কেটে নিয়ে আসে টেসলা প্রতিষ্ঠান। ‘মডেল ওয়াই’ টেসলা’র তৈরি প্রথম গাড়ি যেখানে ইনটেরিয়র কেবিন হিট’তে ইলেকট্রিক রেজিস্টেন্ট’র বদলে একটি হিট পাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। টেসলা হিট ম্যাপ সিস্টেম’তে ‘সুপার ম্যানিওল্ড’ এবং ‘অক্টোভালভ’ ইউনিক ফিচার অন্তর্ভুক্ত। প্রথম ৪.৪ সেকেন্ড’র মধ্যে ঘণ্টা প্রতি ৬০ মাইল বেগ গতি আনে, সকল চাকা ৩১০ মাইল লং রেঞ্জ অফার করে এবং ১৯ ইঞ্চি স্ট্যান্ডার্ড রেঞ্জ মডেল চাকা ‘মডেল ওয়াই’ টেসলা’র, যা পরবর্তীতে ২০ ইঞ্চি চাকা কোম্পানিটি নিয়ে আসে। জিওট্যাব’র ডাটা অনুযায়ী, ১০০,০০০ মাইল বা ৮ বছর সমপরিমাণ ইলেকট্রিক ব্যাটারি ওয়ারেন্টি রয়েছে, যা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। ‘টেসলা মডেল ওয়াই’র গাড়ির মূল্য ৪৪,৬৩০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের সেরা সেলিং গাড়ি হিসেবে ১.২ মিলিয়ন বিক্রি হয়, আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২.১৬ মিলিয়ন ‘টেসলা মডেল ওয়াই’ গাড়ি বিক্রি হয়, যা এ যাবত কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ির কাতারে রেখেছে মডেলটিকে।
একটি এলিভেটেড সিটিং পজিশন এবং লো ড্যাশ টেসলা মডেল ওয়াই’তে বিদ্যমান, যেটা ড্রাইভারকে রোড ভিউ দেখার কমান্ড করা অফার করে। যথেষ্ট স্টোরেজ ধারণক্ষমতা, ছাদের সকল গ্লাস অ্যাকুয়েস্টিক গ্লাস কাঠামো দ্বারা নির্মিত, তাপমাত্রা এবং আলট্রাভায়োলেট প্রোটেকশন আরামদায়ক ও স্বস্তিকর ভ্রমণ সুবিধা প্রদান করে। ফুল সেলফ ড্রাইভিং (সুপারভাইজড) অ্যাসিস্টেন্ট ডিজাইন ফিচার সুবিধা যেটা আপনার একটিভ সুপারভিশনে গাড়ি চালনাতে সাহায্য করে, আর ফোল্ড ফ্লাট সিট, দুইটি ট্রাঙ্ক এবং ৩,৫০০ পাউন্ড ভর টোয়িং ধারণক্ষমতা রয়েছে। ফোল্ডেড মিরর ৭৭.৯ এবং এক্সটেন্ডেড মিরর ৮৩.৪ ইঞ্চি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভারনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’র হিসেবে লং রেঞ্জ ওয়াই মডেল ১২৭ এমপিজি বা মাইলস পার গ্যালন গ্যাসোলিন’র সমপরিমাণ জ্বালানি দরকার শহরে এবং হাইওয়ে’তে ১১৭ এমপিজি প্রয়োজন। অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কনট্রোল, অটোমেটিক হাই বিম হেডলাইট, ফ্রন্ট এবং রেয়ার পার্কিং সেন্সর, ল্যান্ড ডিপার্টচার ওয়ার্নিং, লেন কিপ অ্যাসিস্ট, ফুটপাথ ও সাইকেল পথ খুঁজে বের করা, রেয়ার ক্রস ট্র্যাফিক অ্যালার্ট, রেয়ারভিউ ক্যামেরা’র এবং রোড দিকনির্দেশনার মতন বিভিন্ন ফিচার সুবিধা দেয় ‘মডেল ওয়াই’ গাড়ি।
দুই সারির কনফিগারেশন ‘মডেল ওয়াই’র কার্গো ইনটেরিয়রে, রেয়ার সিটের পিছনে ৩০.২ কিউবিক ফিট ফোল্ডেড ডাউনে ৭২.১ কিউবিক ফিট স্পেস রয়েছে। ৪.১ কিউবিক ফুট ফ্রন্ট ট্রাংক, যা অতিরিক্ত জায়গার সুবিধা দেয় এবং তৃতীয় সারির কার্গো ধারণক্ষমতা ২৬.৬ কিউবিক। অ্যালুমিনিয়াম’র তৈরি রেয়ার হুইল ১৯ X ৯.৫ ইঞ্চি, ৪ চাকার অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম, ১৪ ইঞ্চি ফ্রন্ট ব্রেক রোটর প্রস্থ, রেয়ার ব্রেক রোটর ১৩.২ ইঞ্চি। ইলেকট্রিক পাওয়ার অ্যাসিস্টেন্ট স্পিড সেন্স স্টিয়ারিং, মাল্টি লিংক রেয়ার কয়েল স্প্রিং, বডি কালার ফ্রন্ট ও রেয়ার বাম্পার, কালো সাইড উইন্ডো ট্রিম এবং ফিক্সড রেয়ার উইন্ডো ও বৃষ্টি নিরূপণে উইপার পার্ক রয়েছে। এছাড়া স্মার্ট ডিভাইস ইন্টিগ্রেশন, ড্রাইভার ইনফরমেশন সেন্টার, এয়ার ফিল্টার এবং সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রদান করে মডেল ওয়াই টেসলা।
০ টি মন্তব্য